ফেরা

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

কাজী প্রিয়াংকা সিলমী
মোট ভোট ১০ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৩৩
  • ৭১
“টুং” করে শব্দ হল মোবাইল ফোনে। দেখবে না দেখবে না চিন্তা করেও কম্পিউটারের কীবোর্ড থেকে আঙ্গুল সরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিল নাফিসা। সাধারণত কাজ করার সময় মনোযোগ বিঘ্নকারী সব কিছু বন্ধ করে রাখে সে, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার। টাইম ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপে শেখা টেকনিক। কিন্তু আজ কি ভাবে যেন ফোন বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।
তাকিয়ে দেখল হোয়াটসআপ মেসেজ পাঠিয়েছে অনন্যা । একবার মনে করল খুলবে না। অনন্যার সাথে গত চার-পাঁচ বছরে তেমন নিয়মিত যোগাযোগ হত না। কিন্তু সত্যিকারের বন্ধু হলে বোধ-হয় চার-পাঁচ বছরের অল্প যোগাযোগ কোন ব্যাপার না। পাঁচ-ছয় মাস আগে অনন্যা স্মার্টফোন কেনার পর হোয়াটসআপে খুব আড্ডা হচ্ছে আজকাল, সেই আগের মতন। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেসেজ করতে থাকে অনন্যা । সেটা নাফিসার রুটিন করে লেখালেখি করার সময় হয় সাধারণত। কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে একবার ফোনের দিকে তাকালেই হল- প্রায়শই দেখা যায় হোয়াটসআপ আড্ডা দিতে দিতে সেদিন আর নাফিসার কিছু লেখা হয় না। তবে আজ এ লেখাটা শেষ করতেই হবে। জার্নালের প্রথম ডেডলাইন ধরতে পারেনি, দৈবক্রমে সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে কতৃপক্ষ। তাই এবার এত সতর্কতা।
সতর্কতা খুব একটা কাজে দিল না। নাফিসার অবাধ্য হাতটা ফোনের লকটা খুলল। উঁকি দিয়ে মেসেজটা পড়ে বুঝতে পারল, আজো বুঝি লেখাটা শেষ হল না।
“দোস্ত, আমি বিয়ে করছি ডিসেম্বারে!!!! *দাঁত বের করা হাস্যোজ্জল হলুদ মুখ*
নাফিসা প্রথমে লেখলঃ “হঠাৎ?”…তারপর আবার মুছে ফেলল। ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগের এই একটা সুবিধা আছে। পাঠানোর আগে পর্যন্ত বার্তা বদলানোর সুযোগ পাওয়া যায়। যদি সে খবরটা ফোনে বা সামনা-সামনি জানত তবে এত চিন্তা করে উত্তর করার সুযোগ হত না। তারপর লেখল, ‘কংগ্রাচুলেশন্স! অবাক হলাম, কিন্তু খুব খুশি লাগছে!” *দাঁত বের করা হাস্যোজ্জল হলুদ মুখ*
“থ্যাংক ইয়ু…রাতে বাসায় ফিরে কথা হবে, ঘুমিয়ে যাস না, পুরো কাহিনী বলব! *মুখ টেপা হাস্যোজ্জল হলুদ মুখ*’
নাফিসা একবার ভাবল লিখে যে সে চাইলেও ঘুমাতে পারবে না। তার সময়ে এখন সকাল। আর কিছুক্ষণ পর তৈরি হয়ে অফিসে যেতে হবে। তারপর সারাদিন ক্লাস নিতে হবে। কিন্তু লিখল না। অনন্যার কখনোই মনে থাকে না যে নাফিসা অন্য টাইমজোনে বাস করে। মাঝে-সাঝেই মধ্য রাতে ফোন দিয়ে বসে আর সাড়া না পেলে পরে তা নিয়ে রাগারাগি করে। সে রাগারাগি শুনতে অবশ্য খারাপ লাগে না। নাফিসার কাছে আজকাল কেউ দাবি নিয়ে কিছু বলে না। সবাই যেন ওর সুবিধাটা সামলে চলে। এমনকি মা পর্যন্ত সরাসরি ফোন করে না। সব সময় প্রথমে মেসেজ করে জিজ্ঞাসা করে, “ফ্রি আছো? তাহলে ফোন দেব”। নাফিসার যে জীবন তাতে “ফ্রি” থাকার সুযোগ কম। প্রায়ই এমন মেসেজের উত্তর দেয়া হয় না, সে তো অবসরে থাকে না তেমন একটা। অনন্যার সাথে তাই অনেক কথা হয়, কারণ ও হঠাৎ করে ফোন করে, মেসেজ দিয়ে লম্বা গল্প করা শুরু করে।
তবে সে দিনও বোধহয় ফুরালো। অনন্যাই বান্ধবীদের মধ্যে শেষতম অবিবাহিত বান্ধবী ছিল। দি লাস্ট সামুরাই, নাকি দি লাস্ট অফ দি মহিকান। নাহ, সবই ছেলে হিরো। মেয়েরা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে তাতে কোন বীরত্ব নেই বোধ হয়। বাংলাদেশে ছেলেদের বিয়ে ঠিক হলে বলা হয় সে শহীদ হতে যাচ্ছে, মেয়েদের সময় এমন কিছু বলা হয় না। অথচ আক্ষরিক ভাবে হিসেব করলে মেয়েদের অবিবাহিত জীবনটারই বেশী অংশ বিয়ের পর মৃত্যুবরণ করে।
অনন্যা র বিয়ের কথা শুনে কি নাফিসার মন খারাপ হল? কে জানে! হয়তো বা। বিয়ের পর অনন্যা কি আর নাফিসার সাথে এত বকবক করবে? হয়তো বা করবে! ঢাকার যানজট তো আর দূর হবে না, তখন হয়তো ভাইবারে মেসেজ দিবে। পুরাতন বান্ধবীকে হারানোর ভয়েই কি নাফিসার চেহারায় মেসেজের “দাঁত বের করা হাস্যোজ্জল হলুদ মুখ” এর মতন সত্যিকারের হাসি দেখা দেয় নি? নাকি একা হয়ে যাবার ভয়? পুরাতন বান্ধবীদের সাথে কথা হলে সবাই বলতো “তোরা কবে বিয়ে করবি”, এখন কি “তোরা” এর জায়গায় “তুই কবে বিয়ে করবি” শুনতে ভাল লাগবে?কে জানে, কে জানে!
এসব আকাশ-পাতাল চিন্তা করতে করতে কখন সময় পার হয়ে গেল! সকালের ইয়োগাটাও করা হল না। গোসল করতে যাবার রিমাইন্ডার এলার্মটা বেজে উঠল। এত বছর প্রবাসে থেকে দেশে থাকার সময়ের কোন অভ্যাসই আর টিকে নেই। সেটা বেলা করে ঘুমানো হোক, সকালে চা খাওইয়া হোক আর ফটফট করে হাইহিল পড়ে হাঁটাই হোক । আগে মা কত বকা দিত ফজরের ওয়াক্তে উঠে নামাজ পড়ার জন্য, সকালে চুল আঁচড়ানোর জন্য, দিনে ৮-১০ কাপ চা না খাওয়ার জন্য- কোনটাই মানা হত না। অথচ মা এখন জানেও না যে বকা ছাড়াই নাফিসা নামাজ পড়ে, চুল বাঁধে, চা পান করা শুধু কমায়ই নি বরং পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। পুরাতন অভ্যাসের মধ্যে শুধু এই একটা টিকে আছে এখনও। সকালে গোসল না করে বাসা থেকে বের হতে পারে না নাফিসা। যখন প্রচন্ড শীত পড়ে, অনেকে তখন সপ্তাহের পর সপ্তাহ গোসল করে না এখানে। নাফিসাকে তখনও গোসল করতে হবে প্রতিদিন, এক-দু দিন না গোসল করে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অস্থির লাগে!
গোসল করতে করতে, অফিসের জন্য তৈরি হতে হতেও অনন্যার বিয়ের চিন্তাটা মাথা থেকে গেল না নাফিসার। নিঃসন্দেহে অনন্যা ওকে বিয়েতে যাবার জন্য খুব পিড়াপিড়ি করবে। আমেরিকাতে কনের সবচাইতে কাছের বান্ধবী বা বোনকে সাধারণত কনের “মেইড অফ অনার” হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। “মেইড অফ অনার” হওয়াটা খুব সম্মানের ব্যাপার। সব চাইতে কাছের বান্ধবী বা আপন বোনকে সেই সম্মান না দেয়া হলে খুবই মন খারাপ করে অনেকে। বাংলাদেশে সেরকম কোন ব্যাপার থাকলে নাফিসাকে নিঃসন্দেহে অনন্যা ওর “মেইড অফ অনার” হিসেবে নিযুক্ত করতো। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু সেরকম কোন ব্যাপার নেই, হয়তো বা নাফিসা কোন ভাবে বিয়েতে না যাওয়ার ব্যাবস্থা করতে পারবে। যদিও অনন্যাকে ঠিক বিশ্বাস নেই, নাফিসা যেতে বাধ্য করার জন্য ওলটপালট পাগলামী কিছু করে ফেলতে পারে। অনন্যার ২০তম জন্মদিনে নাফিসার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অনন্যা একবার ওর সব টাকা খরচ করে বরিশাল থেকে ঢাকার প্লেনের টিকেট কেটে ফেলেছিল। তখন ওরা ভার্সিটিতে পড়ত, অনন্যা হাতখরচ চালানোর জন্য টিউশনি করে। সেই এক প্লেনের টিকেট সম্ভবত অনন্যার এক বছরের জমানো টাকার সমান ছিল।
অনন্যা গানবাজনা-উৎসব করতে খুব ভালবাসত, এখনো বাসে। সবার জন্মদিনে কিছু না কিছু পরিকল্পনা করত, একটা ছোট্ট কেক, সবার শুভেচ্ছা সহ কার্ড বা মধ্যরাতে সারপ্রাইজ। নিজের জন্মদিনেও নিজে নিজেই উদযাপন করার ব্যবস্থা করত অনন্যা । জন্মদিন, বিয়ে, সাদ- যাই হোক না কেন অনন্যার আত্মীয়-বন্ধুরা ওকে ছাড়া কোন কিছু আয়োজন করার কথা ভাবতে পারেনা। বান্ধবীদের মধ্যে সবার বিয়ের মূল ইভেন্ট-প্ল্যানারের দায়িত্ব সবসময় সানন্দে পালন করেছে অনন্যা । সেই ফার্স্ট ইয়ারে চৈতীর বিয়ে থেকে শুরু করে ভার্সিটি পাশ করার পর কাছের-দূরের বন্ধু-বান্ধবীদের বিয়ে, সব বিয়েতেই নিজ আগ্রহে গুরু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে অনন্যা । কোন কিছু পাওয়ার আশাও যেন রাখে না মেয়েটা। প্রতি বিয়েতেই অবধারিত ভাবে কোন ঝামেলা হয়, কোন মন কষাকষি, কারো হয়ত ডালার ডিজাইন পছন্দ হয় না, কারো হয়ত মিষ্টির রঙ, অথবা মেহেদির কোয়ালিটি। মাঝেমাঝেই এর-ওর অকৃতজ্ঞ চেহারাটা বের হয়ে আসে । অনন্যা কিভাবে যেন সব কিছু মেনে নেয়। শুরুর দিকে এগুলো শুনে নাফিসা বিরক্ত হয়ে যেত, বান্ধবীর প্রতি এ অবহেলা ওর কখনই ভাল লাগতনা। একবার বলেছিলও অনন্যা কে, “আমি দেখব তো কয়জন তোর বিয়েতে এমন জান-প্রাণ দিয়ে তোর জন্য এত খাটুনি করে!” অনন্যা স্মিত হেসে বলেছিল “আমি কি ওরা আমার বিয়েতে কি করবে সে জন্য করি? আমি করি কারণ আমার ভাল লাগে। আমার বিয়েতে কাউকে দরকার হবে না,সব দায়িত্ব তোর ঘাড়ে দিয়ে দেব!”
সেটা সেই ভার্সিটির কথা। তারপর কত বছর গড়ালো! অনন্যা কি এখনো নাফিসা সব করবে সে আশা করে? নাফিসার উপর সব দায়িত্ব পড়লে কি সে অদৌ সব ঠিক-ঠাক মতন করতে পারবে। প্রায় ছয় বছর হয়ে গেছে দেশে যায় না। আগে সব বিয়ে সরঞ্জমাদি এলিফেন্ট রোডে পাওয়া যেত, এখন তো ফেসবুকে দেখা যায় কত পেজ থেকে মানুষ সাজানো ডালা অর্ডার দেয়। হলুদের যারা নাচবে তাদের জন্য শাড়ি কি এখনও গাউসিয়ায় কাপড় কিনে বানানো যায়? অথবা আরো সস্তা পেতে চাইলে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির হাটে? নাফিসা তো ভাল করে দরদাম করতে পারত না, আমেরিকা এসে অনভ্যাসে সে দক্ষতা নিশ্চয়ই আরো খারাপ হয়ে গেছে। ও কি পারবে সব কিছু ঠিকঠাক করে করতে?
এসব চিন্তা করতে করতে কখন যেন ফেসবুকে বিয়ের পেজ বেড়ানো শুরু করেছে মনের অজান্তে টেরও পায়নি নাফিসা। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজ মনে হেসে ফেলল। সত্যি যদি যেতে চায় তাহলে কি ডালা-কুলা আ্রর শাড়ি কেনার জ্ঞ্যান না থাকাটা প্রধান সমস্যা? এমনটা হলে নাফিসার চাইতে সবচেয়ে সুখী তো আর কেউ হত না। সব চাইতে বড় সমস্যা কি হবে? মায়ের মন খারাপ করা কালো মুখ নাকি আত্মীয়-স্বজনদের ঘটকালী করার প্রচেষ্টা? নাকি নাফিসার ব্যাপারে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বাঁকা কথা? সম্ভবত মায়ের মনখারাপ করা মুখ, যা না দেখার জন্য নাফিসা শুধু ফোনে কথা বলে, স্কাইপ বা কোন ভিডিও চ্যাটিং সার্ভিস ব্যবহার করে না। আশা করা যায় যে আত্মীয়-স্বজনদের মোকাবেলা করা হয়তোবা খুব কঠিন হবে না। এই ছয় বছরে প্রবাস জীবনের জন্য হোক আর বয়সের সাথে ম্যাচিউর হওয়ার কারণে হোক, নাফিসার গায়ের চামড়া অনেক পুরু হয়েছে। মানুষের কথা এখন অগ্রাহ্য করতে খুব একটা সমস্যা হয় না। তা না পারলে এদেশে বাঙালী কমিউনিটিতে মেশা যেত না বা দেশে কারো সাথে যোগাযোগ রাখাও অসম্ভব হত।
কিন্তু মা, মাকে অগ্রাহ্য করা যে খুব মুশকিল। যদিও মা আজকাল অভিমান করেই হোক বা হাল ছেড়ে দিয়েই হোক কিছুটা ক্ষান্ত দিয়েছে। বিয়ে নিয়ে শেষ কথোপকথনটা এখনো মনে আছে নাফিসার। আটলান্টার এক অতি সুপাত্রকে বিয়ে না করতে চাওয়ায় যত বিড়ম্বনা।
“আমি কি দোষ করেছি বল, তুই কেন আমার সাথে এমন করছিস?”
“মা, আমি তোমার সাথে কিছু করছি না। আমি আমার সাথে এমন করছি। আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি না কারণ আমার জন্য। তুমি এখানে দোষ কর নি কোন!”
“আমার উপর রাগ করে নিজের সাথে এমন করিস না “
“মা, আমার তোমার উপর কোন রাগ নেই। কারো উপর রাগ করেও আমি কিছু করছি না। আমি যা করছি তা আমার নিজের ইচ্ছা, নিজের খুশি!”
প্রায় এক ঘন্টা ধরে এ ধরণের কথপোকথনের পর মার শেষ কথা ছিল, “তুই বিয়ে না করলে আমি ভাবব যে তুই আমার সাথে রাগ করে আছিস এখনো। এই শোক নিয়েই হয়তো আমি একদিন তোর বাবার মতন ওপারে চলে যাব...”
বাংলাদেশের কিছু বাবা-মায়েরা মাঝেমাঝে তাদের সন্তানদের থেকে কিছুটা অন্যায়ভাবে অনেক কিছু আদায় করে নিতে চায়। কাজটা তারা করে প্রবল ভালবাসা থেকে, কিন্তু তাতে যে তাদের সন্তানদের জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারটা তারা যেন কোন ভাবেই বুঝতে পারে না। বিশেষ করে সন্তানের বিয়ে বা সঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে এই ট্রাম্পকার্ডটা সব চাইতে বেশি ব্যবহার করা হয়। “আমার মরা মুখ দেখবি” বা “তুই আর আমার মেয়ে থাকবি না” এমন হুমকির মুখে কত সন্তান (বিশেষ করে মেয়েরা) যে তাদের জীবনটা কোন অচেনা, ভুল সঙ্গীর হাতে সঁপে দিয়েছে সেটা নিয়ে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণা করা সম্ভব।
ছয় বছর আগে হলে মায়ের এই কথায় নাফিসা গলে গিয়ে আটলান্টার সেই প্রফেসর ভদ্রলোককে বিয়ে করে এতদিনে হয়তো তার সাথে বাচ্চার নাম গবেষণা করত। কিন্তু এ ছয় বছরে কিছুটা হলেও নাফিসা বুঝতে শিখেছে সে নিজে কি চায়। অনেক গবেষণা উপস্থাপনা, ছাত্র-পড়ানো বা লেখালিখির ফলে কিনা কে জানে, নিজের চিন্তা পরিষ্কারভাবের প্রকাশ করাও শিখেছে। মায়ের কান্নার মধ্যেও নিজের চোখে না পানি না এনে গলা না কাঁপিয়ে নাফিসা ওর মনের কথা বলতে পেরেছিল।
“মা, আমার তোমার প্রতি কোন রাগ বা অভিমান নেই। আমি বিয়ে করছি না কারণ আমি একসাথে জীবন কাটাতে চাই এমন কোন মানুষ খুঁজে পাইনি। এরকম কাউকে আমি আকুল হয়ে খুঁজতেও চাই না। যদি স্বাভাবিকভাবে এমন কাউকে পাই, তখন আমি তাকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করতে পারি।“
এরপর মা একমাস ফোন করে নি, নাফিসার ফোনকলের উত্তর ও দেয়নি। ছোটভাই নাজামের কাছে শুনেছিল যে মা নাকি বলেছেন আমেরিকা তার মেয়ের হৃদয় পাষাণ করে দিয়েছে। নাফিসার খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছিল যে মায়ের এই সাময়িক মন খারাপ দূর করার জন্য নিজের সারা জীবনটাকে সপে দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মায়ের মন্তব্যের একটা সত্যতা ছিল, দূরপ্রবাসের একা একা স্বাধীনভাবে না থাকলে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারত না।
বিয়ে তে তো নাফিসার কোন আপত্তি ছিল না। বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রের সাথে এরেঞ্জড বিয়েতেও না। ২০-২১ বছর বয়সে মা যখন বলেছিল, “চিন্তা করিস না। তোর চেহারা সুন্দর আছে, ভাল বিয়ে হবে”, তখন মন্তব্যটা খুব আপত্তিকর শোনালেও কোন প্রতিবাদ করে নি, মুখরা হয়ে বলেনি , “মা, ভাল বিয়ের চিন্তায় রাতে না ঘুম হচ্ছে না এমন ধারণা কেন হলো তোমার জানতে পারি কি!”। ভার্সিটি লাইফে কখনো প্রেম করার প্রতি আগ্রহ হয়নি, না হলে পেছনে ঘুরঘুর করা কোন একটা ছেলের সাথে নিশ্চয় একটা সম্পর্ক হয়ে যেত। সেভাবে প্রেমেও পড়েনি কখনো।
মা-বাবার বাধ্য মেয়ে ছিল নাফিসা। যেদিন নাফিসা হবু শাশুড়িকে ফোন করে তার লম্পট হবুস্বামীর আসল চেহারা ফাঁস করে হুট করে এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দিল, সেদিন মা-বাবাও অবাক হয়ে গিয়েছিল। বাবা সাথে সাথে ফোন করে নিজের মেয়ের ব্যাবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। হতে-পারত শাশুড়িমা বলেছিলেন, নাফিসা যদি নিজে এসে ক্ষমা চায়, তাহলে হয়তো তারা নাফিসাকে ক্ষমা করে ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারেন।
নাফিসা এর আগে জীবনে কোনদিন সাহসী কিছু করেনি। দোলনা বেশি উঁচুতে উঠে গেলেও ভয় পেত। সেই নাফিসা এক কাপড়ে বাসা ছেড়েছিল, আর মাস-খানেক পরে দেশ। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হবার আগে ভাগ্যিস বাইরে পড়তে আসার জন্য এপ্লিকেশনগুলো করেছিল। এখন বুঝে দেশ ছাড়াটা ছিল তার জীবনের নেয়া শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। দেশে থাকলে সামাজিক শেকলের সাথে যুদ্ধটা কতদিন করতে পারত জানা নেই।
মাঝে মাঝে মনে হয় ফেরার পথ নেই। বাবা মারা যাবার পরও দেশে যাবার সাহস হয়নি। আত্মীয়-স্বজন বলে নাফিসার চিন্তায়-চিন্তায়ই বাবা মারা গেলেন। তাদের প্রত্যাশা এখন নাফিসা বিয়ে করে থিতু হলে মায়ের দুঃশ্চিন্তা কাটাতে পারবে।
তারপর ভাবে, সকলের প্রত্যাশার ভারটা ঘাড় থেকে নামানোর সময় হয়েছে কি? সে নিজে তো জানে মানুষের কানকথা গ্রাহ্য করলে সে কোনদিন নিজ যোগ্যতায় আজ আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ডঃ নাফিসা রহমান হতে পারত না।
হঠাৎ খেয়াল করল আমেরিকা আসার পর এই প্রথম নাফিসা ইন্টারনেটে আমেরিকা-বাংলাদেশে প্লেন টিকেটের দাম দেখছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোকাদ্দেস-এ- রাব্বী ভালো লাগার মত গল্প ❤️ শুভ কামনা
Nur Arafat দারুণ। খুব ভালো লাগলো।
ফয়জুল মহী সমৃদ্ধ চিন্তার মনোরম লেখা । মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । মুগ্ধ হলাম লেখায়

১৮ জুন - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৬ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৩৩

বিচারক স্কোরঃ ২.৩৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪