অফিস থেকে বের হয়ে মনে হলো আবহাওয়াটার চেহারা যেন ঠিক নিজের মনের মতন। এরকম দিনে বাড়ি ফেরার জন্য কোন যানবাহন পেতে খুব কষ্ট হয়। তবে আজ যেন অদৃশ্য জানে যে শাওনের অবস্থা-- তাই মন ভাল করে দেয়ার ছুতো খুঁজছে। কথা নেই, বার্তা নেই, একটা সিএনজি ড্রাইভার শাওনের কাছে দিয়ে যাবার সময় বলল, ‘মামা, কোথায় যাবেন?’ এমন অলৌকিক ঘটনায় অন্য সময় নিশ্চয় খুব আনন্দ লাগত- কিন্তু শাওন কিছু অনুভব করল না- মন এতটাই খারাপ। সিএনজিওয়ালা, ধীরগতিতে পাশে পাশে চালাতে চালাতে বলল, ‘মামা, আপনি মোহাম্মদপুরের দিকে যাইবেন, না? আমি ঐ দিকেই যাচ্ছি।’ শাওন এবার লোকটার চেহারার দিকে তাকাল। ও আচ্ছা, ইনি তো একদিন তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল, রাস্তায় অনেক গল্প হয়েছিল। উনি বোধ হয় মনে রেখেছেন শাওনকে, তাই এত খাতির! আজ কথা বলার মুড নেই, হাত নাড়িয়ে অনিচ্ছা জানিয়ে দেয়। সিএনজি চলে যায়।
কিছুদূর হাঁটার পর যখন পায়ের স্যান্ডেলে কাদা ওঠা শুরু করে, তখন হঠাৎ নিজের সিদ্ধান্তে আফসোস হয়। সৃষ্টিকর্তা নিজে থেকে বৃষ্টির দিনে তার জন্য সিএনজি পাঠিয়েছিল, আর সে কি না সেই বর প্রত্যাখ্যান করেছে! এখন আর কোন খালি সিএনজি চোখে পড়ছে না। কাদা মেশানো পানি লেগে স্যান্ডেলটা আঠালো হয়ে গিয়েছে- এ অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়। তাই সাধারণত বৃষ্টির দিনে হিলওয়ালা জুতো পড়ে শাওন। কিন্তু আজ অফিসের মিটিংয়ের প্রেজেন্টশনের চিন্তা করতে করতে এসব তুচ্ছ ব্যাপার মাথায় ছিল না, তাই সামনে যে ফ্লাট স্যান্ডেলটা পেয়েছিল তাই পরে অফিসে এসেছিল।
মিটিংয়ের কথা মাথায় আসতে অজান্তেই শাওন মুখ-চোখ শক্ত করে ফেলে। এটা ওর সমস্যা একটা, মনের আবহাওয়া খারাপ হলে সবসময় তা মেঘের মতন চেহারায় আভাস ফেলে। মিটিংএর সময় খালেক স্যারও মনে হয় শাওনের চেহারা দেখেই বুঝেছিলেন যে ওর মনের ভেতর কি চলছিল।
মিটিং শেষ হতেই, উনি শাওনকে আলাদা করে ডেকে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি জানি তুমি ভাবছ যে তোমার ওপর আমি অবিচার করছি। কিন্তু একদিন বুঝতে পারবে যে আসলে আমি তোমার ভাল ভেবেই এ সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।’
শাওন জানত যে মুখ খুললে ও এমন কোন কথা বলবে যার জন্য পরে হয়তো অনুশোচনা হতে পারে। রাগ-মাথায় ও কখনই গুছিয়ে, যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারে না। তাই চুপ করেছিল।
স্যার ওর মনের ঝড়টা বুঝেছিলেন। নিজে থেকেই ব্যাখ্যা করেছিলেন তার সিদ্ধান্তের কারণ। ‘দেখ, আমি তোমাকে খুব স্নেহ করি, তোমাকে আমি আমার নিজের মেয়ের মতনই মনে করি। ঠিক, সেই জন্য আমি তোমাকে প্রজেক্ট ডিরেক্টরের পদটাতে দেখছি না।’
মুখে চুপ করে থাকলেও শাওনের মনে তখন মুখরা কথা চলছে। ‘সিরিয়াসলি? আপনি কি আমার সাথে ফাজলামি করছেন? আমি না থাকলে জীবনেও আপনার কোম্পানি এই প্রজেক্টটা পেত না। কোটি টাকার প্রজেক্ট, পাঁচ বছরের কন্ট্রাক্ট। পিচ করা, প্লানিং করা থেকে শুরু করে সব কিছু আমি এক হাতে করেছি। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে স্বল্প বাজেটে বাজার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রজেক্টের জন্য আইডিয়া বের করেছি। সেটা স্মার্টলি প্রেজেন্ট করেছি ক্লায়েন্টের কাছে। আর এখন প্রজেক্টটা হাতে পাওয়ার পর আমাকে প্রোমোশন দেবার বদলে আপনি কিনা বিদেশি ডিগ্রিওয়ালা কাউকে নিয়োগ করার চিন্তা করছেন?’
স্যার কি যেন বলছিলেন, শাওন শুধু তার মুখ নাড়ানোটা দেখছিল, কোন কথা কানে ঢোকাচ্ছিল না। নিজের মনের উত্তর শেষ হবার পর স্যারের কথা শোনার চেষ্টা করে, ‘তোমার মতন ইয়াং, ব্রাইট, সিন্সিয়ার এমপ্লয়ি এ কোম্পানিতে আর একজনও নেই…’
‘আচ্ছা, তাই নাকি? ব্রাইট এমপ্লয়িদের আপনি তাহলে এভাবেই পুরষ্কার দেন?’ শাওনের মনের উত্তর।
‘আমার মেয়েও ঠিক তোমার মতন। কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় ওর অফিসের সব কাজ ও একাই করে।’
‘তাই নাকি! অভিনন্দন আপনার মেয়েকে! তার বিশাল ভাগ্য যে সে আপনার অফিসে কাজ করে না।’ মনের কথা হয়েই চলে শাওনের।
‘নিজের মেয়েকে দেখেই বুঝেছি যে তোমার এখন প্রমোশন হলে সেটা তোমার জন্য ভাল হবে না। এ বছরের শেষে বিয়ে করছ তুমি, তারপর কিছুদিনের মধ্যেই নিশ্চয় ফ্যামিলি নিবে। ওরকম সময় এত্ত বড় প্রজেক্ট তোমার মাথার ওপর থাকলে তুমি তোমার স্বামী-সন্তানকেও সময় দিতে পারবে না। আবার অফিসেও মন টিকবে না। আমি জানি তুমি কত সিন্সিয়ার, অফিসটাকেই হয়তো প্রায়োরিটি দেবে ফ্যামিলির ওপরে। এরকম মেয়ে অফিসের জন্য সম্পদ হলেও, সমাজ বা পরিবারের চোখে বিষকাঁটা। আমার মেয়েটার তো এ কারণেই ডিভোর্সটা হল। বড় ভাল আমার মেয়েটা, কিন্তু কেউ সেটা বুঝল না।’ স্যার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
শাওন বিস্ফোরিত চোখে স্যারের দিকে তাকাল। ‘আপনি কি সিরিয়াসলি ভাবছেন যে আপনি বাবা সেজে বিশাল উপকার করছেন আমার? আশ্চর্য! আমার হবু-স্বামী আপনার মেয়ের স্বামীর মতন পুরুষতান্ত্রিক নয়। আমি যাকে পছন্দ করেছি, সে সব সময় আমার ক্যারিয়ারকে সহযোগিতা করেছে। সে খুব ভাল ভাবে জানে আমি কেমন- তার সাথে আমার ডিভোর্স ঠেকানোর চেষ্টা আপনাকে না করলেও চলবে!’ এমন উত্তরই এসেছিল মাথায়, কিন্তু তা মুখে আনেনি। তাছাড়া, নিজের প্রমোশনের জন্য হবু-স্বামীর গুনগান করার দরকার হওয়াটাও অপমানজনক। প্রফেশনাল রীতি মেনে বলেছিল, ‘স্যার, আমার ফ্যামিলি লাইফের জন্য কি ভাল, সেটা আমার খুব ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেটার ভিত্তিতে আমার পেশাগত মূল্যায়ন করাটার যুক্তি বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।’
স্যার হেসেছিলেন,অবুঝ সন্তান জেদ ধরে দামী খেলনা কিনতে চাইলে বাবারা এমন হাসি দেয়। ‘মাথায় চুল তো এমনি পাঁকেনি। এখন বুঝতে পারছ না। কিন্তু একদিন বুঝবে আমি তোমার ভাল ভেবেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।’
শাওন তার কিউবিকেলে এসেই রেজিগনেশন লেটারটা টাইপ করেছিল। এমন নারী-বিদ্বেষী কোম্পানিতে কাজ করতে চায় না সে। চিঠিটার কোন হেতু করার আগেই সাদের ফোনটা আসল। হবুস্বামীর কথাতেই চিঠিটা আর পাঠায় নি।
‘একটু ক’টা দিন সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নাও,’ বলেছিল সাদ। ‘পরে আবার যেন আফসোস না হয়। তুমি যেমন কাজ-পাগল। আমার ভয় হয় যে এভাবে চাকরী ছেড়ে দিলে তোমার নিজেরই কষ্ট হবে সবচেয়ে বেশি। আর কাজ ছেড়ে দিলে কি করেই বা সময় কাটাবে? যদি ছাড়তেই হয়, তাহলে অন্য জায়গায় এপ্লাই কর। অন্য একটা কিছু হলে, এদের লাথি দিয়ে চাকরী ছেড়ে দিও।’
সাদের কথার যুক্তি বুঝতে পেরেছিল শাওন। আসলেই তো, চাকরী ছাড়া জীবনটা কেমন তা মনেই করতে পারে না শাওন। নিজের কাজটা তার নিজের অস্তিত্বের একটা বড় অংশ এখন। প্রায় দশ বছর ধরে এ কোম্পানিতে কাজ করছে সে। ভার্সিটির সেই থার্ড ইয়ারে পার্ট-টাইম কপিরাইটার হিসেবে ঢুকেছিল এই এডফার্মে। তখন দশ হাজার টাকা বেতন ছিল তার। তখন থেকেই ওর কাজের প্রতি আন্তরিকতার অনেক বাহবা পেয়েছে সিনিয়ারদের কাছে। পাশ করার পর কোম্পানিতে যখন ফুল-টাইমার হিসেবে নিয়োগ পেল, তখন ওর পরিশ্রমের অবমূল্যায়ন করা হয় নি। অন্য যেকোন বন্ধু-বান্ধবের চাইতে বেশি বেতন পেত সে।
মধ্যবিত্ত বাবা-মা যখন চব্বিশ-পঁচিশ হবার পরই বিয়ের জন্য তাড়া দিতে লাগলেন, তখন এই চাকরীটাই ছিল ওর সহায়। সরাসরি বলে দিয়েছিল -- যতদিনই লাগুক না কেন, সাদের জন্যই অপেক্ষা করবে সে; বিয়ের জন্য বেশি চাপাচাপি করলে মা-বাবার বাসা ছেড়ে একা কোন বাসা নিয়ে থাকবে। মা-বাবা ওর দাবি মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। জানত যে, শাওন সাবলম্বি -- ওর ওপর চাইলেই জোরাজুরি করা যাবে না। দীর্ঘ আট বছর লেগেছে সাদের স্টার্ট-আপটা দাঁড় করাতে। কোনদিন শাওন সাদকে চাপাচাপি করে নি। যেভাবে পেরেছে সাহায্য করেছে। বলেছে, ‘আমি আছি তোমার সাথে। তুমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াও।’ শাওন-সাদের জুটিটাকে ওদের বন্ধু সার্কেলে সবাই বলে ‘লেজেণ্ড’। প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের ক্যারিয়ারে এত সাপোর্ট করার নমুনার সবাই প্রশংসা করে।
এত বছর অপেক্ষার পর, এই বছর শুরুর দিকে ওরা ঠিক করেছিল যে ওরা এখন দুজনেই বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত। জানুয়ারীতে ঘটা করে এঙ্গেজমেন্ট হয়েছিল, দুজনে নিজের খরচেই জমকালো আয়োজন করেছিল। পরিবারের কাছে হাত পাততে হয় নি। খালেক স্যারও তো এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। মনে আছে, মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার অনেক গুণগানও গেয়েছিলেন কোন প্রসঙ্গে। আর সেই তিনিই কিনা শাওনের ঘর বাঁচানোর দোহাই দিয়ে ওর প্রাপ্য প্রোমোশন থেকে ওকে বঞ্চিত করছেন? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, কেন বেশিরভাগ পুরুষ সব সময় ধরেই নেয় যে ঘরে-বাইরে মেয়েদের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নেয়ার অধিকার তাদের আছে?
আনমনে হাঁটতে হাঁটতে দিগ্বিদিক়্ হুশ নেই। হঠাৎ খেয়াল করে নির্জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে সে। বৃষ্টির দিন বলেই হয়তো প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায় নামে নি। আধো অন্ধকারে হঠাৎ একটু ভয় ভয় লাগে। অফিস-বাসায় যতই দাঁপিয়ে বেড়াক, নির্জন পরিবেশ, আঁধারের রাস্তা খুব ভয় পায় শাওন। নারী স্বাধীনতা তার মন থেকে এই ভয় দূর করতে পারেনি। এটা নিজের দূর্বলতা নাকি সমাজের,সেটা বলা মুশকিল।
কিছুটা হাঁটার পর, রাস্তা চিনতে না পারার জন্য নিজেকেই বকা দেয় শাওন। এই রাস্তা চিনতে তার কি ভাবে ভুল হয়? জীবনের দীর্ঘ বারোটা বছর সে এ পথে হেঁটেছে। এ রাস্তার প্রতিটি কোণা তার নখদর্পণে ছিল এক সময়। চিনতে পেরে স্বস্তি হয়। এখান থেকে সবচেয়ে কাছের বাসস্টপটা আড়াই কিলোমিটারের মতন-- দশ মিনিটের রিকশার পথ, একবার দৌড়ে পনের মিনিটে গিয়েছিল। আর হেঁটে যেতে লাগে আধা ঘণ্টার মতন। নাইন-টেনে ওঠার পর আঁচার খাবার জন্য রিকশা ভাড়া বাঁচানোর জন্য স্কুলের বান্ধবীরা মিলে হেঁটে যেত।
ঠিক করে, আধা ঘণ্টা হেঁটেই বাসস্টপ পর্যন্ত যাবে সে, সেখানে নিশ্চয় বাড়ি যাবার জন্য কিছু একটা পাওয়া যাবে। হাঁটতে হাটতে মেজাজটা কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। আর রাস্তা চেনার পর ভয়টাও চলে গেছে। এ রাস্তাটা নির্জন হলেও বিপজ্জনক না। পুরোটা জুড়েই স্কুলের সীমানার দেয়াল, প্রায় পঞ্চাশ একর জায়গা নিয়ে স্কুল ও কলেজের ক্যাম্পাস। এখন বোধহয় গরমের ছুটি চলার কথা, এ সময় এদিকে কেউ আসে না। চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী-রেপিস্টদের আসারও কোন কারণ নেই।
স্কুলের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে নতুন চিন্তায় মনের তেতো ভাবটা চলে যায়। এই দেয়াল টপকে আগে ছেলেরা স্কুল পালাত। এখন আর সে সুযোগ নেই। দেয়াল আরো উঁচু করা হয়েছে, তার ওপর দেয়া হয়েছে কাঁটাতার। আজকালকার ছাত্র-ছাত্রীদের দূর্ভাগ্যে কিছুটা করুণা হয়।
হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের শেষ গেটটার কাছে চলে এসেছে । আরও মিনিট পনের হাঁটার পথ বাকি। মেঘের গর্জন ছাড়াই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। নিজের জন্য ভাবনা না, শাওনের মাথা ব্যাথা অফিসের ল্যাপটপটা নিয়ে। মনে হয় ল্যাপটপের ব্যাগটা ওয়াটার-প্রুফ, কিন্তু যদি না হয়? পনের মিনিট বৃষ্টিতে ভিজিয়ে পরীক্ষা করতে চায় না সে। খুব বেশি চিন্তা না করেই সে স্কুলের গেটে জোরে জোরে কড়া নাড়ে। স্কুল বন্ধ জানে। তাও মনে ক্ষীণ আশা - যদি কেউ দরজা খোলে। ওদের সময় এ গেটের পাশেই স্কুলের ম্যানেজারের বাসা ছিল। যে মেয়েরা পেছনের এ গেট দিয়ে স্কুল পালানোর সময় ধরা পরত, তারা ওনাকে ডাকত ‘হিটলার মামা’। আর অন্য সবাই ডাকত, ‘ঘণ্টা মামা’। স্কুলের দেখভালের অন্য কাজও নিশ্চয় করতেন তিনি, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে চিনত স্কুলের ঘণ্টা বাজানোর জন্য।
সে বারো বছর আগের কথা। ঘণ্টা মামা এখনও স্কুলে কাজ করে কী না জানা নেই। তার নামটাও মনে আসছে না। তাও আশা নিয়ে আরও জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দেয়। মনে হয় অনন্তকাল, কিন্তু আসলে মনে হয় মিনিটখানেক পরেই দরজাটা খোলে। ছাতা মাথায় টর্চ হাতে একজন ছোটখাটো গড়নের মানুষ। চেহারা ভাল করে না দেখতেও পেলেও শাওন চিনতে পারে যে ইনিই তাদের সেই ঘণ্টা মামা।
বৃষ্টিতে বিপদে পড়ে আশ্রয় চাওয়ার অনুরোধ করার দরকার পড়ে না। তার আগেই ঘণ্টা মামা শাওনকে চিনতে পারেন। ‘তুমি শাওন, না? এসো এসো! তোমার চেহারা তো একটুও বদলায় নি।’
শাওন কিছুটা লজ্জা পায়, তার নাম ঠিকই মনে আছে মামার, ওনার নাম মনে নেই তার। তাড়াতাড়ি গেট দিয়ে ঢুকে ছাউনির নীচে দাঁড়ায়। কতদিন এ ছাউনির নীচে দাঁড়িয়ে থেকেছে বৃষ্টির দিনে। বৃষ্টি হলে এ গেটটা খুলে দেয়া হত, তখন রিকশাওয়ালারা স্কুলের ভেতরে এসে ছাউনির নীচে দাঁড়ানো ছাত্র-ছাত্রীদের রিকশায় ওঠাত ।
‘তুমি এখানে অপেক্ষা কর, আমি ঘর থেকে চাবি নিয়ে ওয়েটিং রুমটা খুলে দিচ্ছি।’ ঘণ্টা মামা শাওনের হাতে টর্চ দিয়ে ছাতা মাথায় চলে যায়। এই ওয়েটিং রুমটাকে কী না ভয় পেত তারা। ছাত্র-ছাত্রীরা কোন ঝামেলা করলে অভিভাবকদের ডাকা হত। শিক্ষক বা প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করার আগে এখানেই অপেক্ষা করতে হতো অভিভাবক ও অভিযুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের। একবারই অমন ডাক পড়েছিল শাওনের। তখন মনে হয় নাইন-টেনে পড়ে। স্কুলের দেয়ালিকায় প্রেমের থিমের কবিতা না ছোটগল্প লিখেছিল একটা। সেটা গুরুজন শিক্ষকদের পছন্দ হয়নি, তাদের ধারণা হয়েছিল শাওন নিশ্চয় প্রেম করছে, এ জন্যই এই কাজ করেছে - যেন অন্যের লেখা প্রেমের কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়ে প্রেমের ভাবনা হওয়া সম্ভব না। মেয়ের ব্যাপারে সাবধান করে দিতেই ডাকা হয়েছিল শাওনের বাবা-মাকে। শেষ-মেষ কি হয়েছিল, মনে করতে পারে না শাওন। এক সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো সময়ের সাথে কত সহজেই গুরুত্বহীন হয়ে যায়!
ছাউনির নীচে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও ঘণ্টামামার কোন দেখা নেই। বৃষ্টি থামারও কোন নিদর্শন দেখা যাচ্ছে না। শাওন ঠিক করে সে নিজেই মামার ঘরের দিকে যাবে, কে জানে, উনি পিছলে গিয়ে পড়ে-টড়ে ব্যাথা পেয়েছেন কি না। শৈশব থেকেই তার মাথায় পাঁকা চুল দেখেছে। বয়স তো অনেক হওয়ার কথা ওনার।
এরকম চিন্তা করছে, তখনই ঘণ্টা-মামাকে আবার দেখা যায়। এসে খুব কাঁচুমাচু করে বলেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখলাম। আসলে ওয়েটিং রুমের চাবিটা খুঁজে পাচ্ছি না। একটা ছেলে আজকাল আমাকে সাহায্য করে- ওকেই দিয়েছিলাম কি না মনে করতে পারছি না। তুমি যদি কিছু মনে না করো, তাহলে আমার ঘরে এসে বসতে পারো।’
শাওন নিজেই ওনার ঘরের দিকে যাচ্ছিল, কিন্তু মামার আহবানে কেমন সন্দেহ হয়। যতটুক মনে পড়ে উনি অবিবাহিত ছিলেন বা বিপত্নীক- ওনার পরিবারের কাউকে কখনও দেখেনি। একা একটা মেয়ে একটা পুরুষের ঘরে যাওয়াটা কতটা নিরাপদ? তারপর নিজেকেই বকা দেয়, এটা তো ওদের ঘণ্টামামা-- দীর্ঘ বারো বছর ধরে দেখেছে তাকে, ছয় বছর বয়স থেকে চেনে তাকে। তাকে কেন সন্দেহ হচ্ছে শাওনের? কিন্তু আজকাল বাবা-চাচা-দাদা-শিক্ষক-প্রতিবেশী সবার হাতে নারী-শিশু ধর্ষণের এত খবর পত্রিকায় পড়ে যে আর কাউকেই বিশ্বাস হয় না। তারপর নিজেকেই সাহস দেয়- সে তো আর শিশু বা অবলা নারী না, সে প্রাপ্তবয়স্ক, সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন জিম করে। একসময় জুডোও শিখেছিল- ব্রাউন বেল্ট পর্যন্ত গিয়েছিল। এই বুড়ো খারাপ কিছু করার চেষ্টা করলে নিশ্চয় নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
শাওনের ইতস্ততাটা যেন মামা বোঝেন। বলেন, ‘আম্মা, আপনি এখানে দাঁড়াতে চাইলেও অসুবিধা নাই। আমি আপনার সাথে অপেক্ষা করি।’
এবার শাওন লজ্জা পায়। ঘণ্টা মামা তাকে হঠাৎ ‘আপনি’ ডাকছেন। শাওন একটা কথা না বলেও তাকে যেন বুঝিয়ে দিয়েছে, সে এখন আর ছোট নেই, বড় হয়ে গিয়েছে। এখন মামা আর সে ভিন্ন শ্রেণির মানুষ। শাওন তাড়াতাড়ি বলে, ‘না মামা, আপনার ঘরে গিয়েই বসি। এখানে একটু বৃষ্টির ছাঁটও লাগছে। এখানে দাঁড়ালে আমাদের দুজনেরই ঠান্ডা লেগে যাবে।’
সাবধান পায়ে বৃষ্টিভেজা পথ মাড়িয়ে ওরা মামার ঘরের দিকে এগোয়। এ জায়গাটা মনে হয় মাটি দিয়ে ঊঁচু করা হয়েছে বা বৃষ্টির পানি যাওয়ার নালা তৈরি করা হয়েছে কোন, আগের মতন এক হাঁটু পানি জমে নেই আর।
মামার ঘরে ঢুকে শাওন অবাক। এত ছোট জায়গায় এত বেশি বইয়ের সম্ভার আর কোথাও দেখেনি সে। দুপাশে দেয়াল ভর্তি বইয়ের তাক। এক দিকে রাখা লম্বা টেবিলেরও বেশিটা জুড়ে বই। বিছানার নীচেও বই রাখা, বোঝা যাচ্ছে না যে স্তূপ করে রাখা বই দিয়েই খাট বানানো হয়েছে নাকি ঠেশে ঠেশে বই ঢুকানো হয়েছে চৌকির নিচে। মাটিতে এমন কি বিছানার উপরেও বই। এই ঘরে একটা চাবি কেন ছোটখাটো একটা শিশু হারিয়ে যাওয়াও অসম্ভব না।
ঘণ্টা মামা শাওনকে টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসতে দেয়। চেয়ারের পাশে স্তুপ করে রাখা আরো বই। শাওনের মনে হয়, মামা শাওনকে তার ঘরে ডাকার আগে বসার জন্য কোনমতে এই জায়গাটা খালি করেছেন।
‘আম্মা, আপনাকে চা বানায় দেই?’ ঘণ্টা মামা জিজ্ঞাসা করেন।
‘না, না, চা লাগবে না।’ এবার কোন সন্দেহ থেকে চা প্রত্যাখ্যান করে না শাওন। মামার সাথে গল্প করার লোভে চায়ের লোভটাকে সংবরণ করে, ‘আপনি বসেন। আপনার সাথে গল্প করি।’
মামার চোখের অস্বস্তি ভাবটা কিছুটা দূর হয়। তিনি আরেক স্তুপ বই সরিয়ে ওনার বিছানায় বসেন।
‘আপনি এত বড় বইয়ের পোকা, তা তো আগে জানতাম না। আগে জানলে স্কুলে থাকতে আপনার থেকে কত বই ধার করা যেত,’ শাওন বলে।
ঘন্টা মামা হাসেন। ‘আমি তো সবসময়ই বই পড়তাম। এই জন্যই তো এই চাকরীটা নেয়া। থাকার কোন খরচ নেই, স্কুল খোলা থাকলে স্কুলেই খাই। বই কেনা ও পড়ার জন্য এর চাইতে ভাল চাকরী আর হয় না।’
শাওনের মনে পড়ে দু-একটা দৃশ্য- ঘণ্টা মামা গেটের পাশে টুলে বসে মাথা নীচু করে বই পড়ছেন। ওরা কেন ওনাকে ‘বই মামা’ ডাকত না?
‘আপনি বিয়েশাদী করেন নি?’ জিজ্ঞাসা করেই শাওনের মনে হয় একটু মনে হয় বেশি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয়ে গিয়েছে।
'করেছিলাম তো। কিন্তু বাচ্চা হতে গিয়ে মারা গেল বউটা। এই স্কুলেই তো কাজ করত, আয়া হিসেবে। তোমরা মনে হয় তাকে হাসি খালা ডাকতা।’ ঘণ্টা মামার ধীরে ধীরে আগের মতন সহজ গলায় কথা বলেন।
‘হাসি খালা, আপনার বৌ ছিল?’ শাওন অবাক হয়ে তাকায়। হাসি খালার কথা খুব ভাল করে মনে আছে শাওনের। অথচ উনি মনে হয় মারা গিয়েছিলেন ওরা যখন ক্লাস টু তে পড়ে। ওনার নামের মতনই হাসিখুশি ছিলেন। মনে আছে, হাসি খালাকেও অবসরে বই পড়তে দেখেছে।
‘আপনারা দুজনেই বই পড়তে খুব ভালবাসতেন, তাই না?’ শাওন হেসে বলে।
‘হ্যা, ওকে পড়ালেখা আমিই শিখাইছিলাম। ওর বয়স কম ছিল, বাপ-মা ধরে আমার মতন বুড়ার সাথে বিয়া দিল । তখন বুঝি নাই, নাহলে অত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতাম না। কমবয়সে বাচ্চা নিতে গিয়ে যে বাংলাদেশে এত মা মারা যায়, তা তখন জানতাম না।’ মামার দুঃখী স্বর শুনে নিজেকে অপরাধী মনে হয় শাওনের- উনি তাকে সাহায্য করল, আর সে কি না তাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দুঃখের কথা মনে করাচ্ছে।
‘এই স-অব বই আপনার?’ শাওন কথা ঘোরানোর জন্য বলে।
‘হ্যা। আমারই তো। আগে অনেক বেশি বই কিনতাম। তবে এখন ইন্টারনেট হবার পর মোবাইলে পড়ি, বা নীলক্ষেত থেকে ভাড়া করে আনি। নতুন বই রাখার আর জায়গা নেই।’ বিশাল কোন অপরাধের সাফাই গাইছেন, এমন লাজুক ভাবে বলেন মামা। ‘কিন্তু একটা বই নেই আমার কাছে।’
‘কোন বই?’ শাওন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
‘তোমার বই।’
‘আমার বই মানে?’ এবার শাওনের আরও অবাক হওয়ার পালা।
‘তুমি কোন বই ছাপাও নি এখনও?’ মামা যেন খুব অবাক হন।
‘বই ছাপাব কেন?’ শাওন প্রশ্ন করে। মনে ক্ষীণ সন্দেহ মামা অন্য কারও সাথে তাকে গুলিয়ে ফেলেছেন। কত তো ছাত্র-ছাত্রীকে চিনেন মামা। হয়তো শাওন নামের অন্য কোন ছাত্র বা ছাত্রী হয়তো লেখক।
‘তুমি লেখিকা হও নাই?’ মামা যেন একটু অভিমান করে জিজ্ঞাসা করেন।
‘না, তো।’ শাওন বোকা হয়ে উত্তর দেয়।
‘তুমি করো কি?’
‘আমি একটা মাল্টিন্যাশনাল এডফার্মে আছি। ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার হিসেবে। বিজ্ঞাপন বানাই।’
‘সেখানে লেখালিখি করতে হয় না?’
‘হ্যা, তাতো হয়ই।’ বই পাগল এই লোক বিজ্ঞাপনের কপিকে লেখালিখি বলে মেনে নেবে নাকি কে জানে, তাও নিজের কাজকে বোঝানোর চেষ্টা করে শাওন। ‘ঐ যে ফুল দিয়ে বাচ্চারা শহীদ মিনার বানায়, ঐ বিজ্ঞাপনটা দেখেছেন? সেটা আমার বানানো।’
‘আমি টেলিভিশন দেখি না,’ মুখ কালো করে বলেন মামা। ‘কিন্তু ওরকম তোমার একটা গল্প ছিল, স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। কিছু পথশিশু যে ফুল দিয়ে শহীদ মিনার বানায় সেই গল্প?’
শাওন হতবাক হয়ে যায়। হ্যা, এরকম একটা গল্প তো সে স্কুলে থাকতে লিখেছিল। ভুলেই গিয়েছিল। সেই গল্প থেকেই তাহলে এই বিজ্ঞাপনের গল্পটা পাওয়া?
‘তুমি এখনও বই ছাপাও নাই কেন? আমি তো ভাবতাম আমিই মনে হয় খুঁজে পাই নাই। প্রতি বছর বইমেলায় গিয়ে তোমার নামের বই খুঁজি।’ মামা রাগ রাগ গলায় বলেন।
‘মামা, সেগুলো তো স্কুল-কলেজে লেখতাম, বহুদিন তো আর গল্প লিখি না,’ শাওনে বলে। মনে মনে ভাবে, যেগুলো গল্প লিখি সেগুলো আর সাহিত্য নয়, বিজ্ঞাপনের কন্সেপ্ট।
‘কেন তুমি কলেজ ছাড়ার পরেও তো পত্রিকায় তো তোমার লেখা পড়েছিলাম।’ মামা যেন নাছোড়বান্দা।
ও হ্যা, কিছু গল্পও তো ছাপা হয়েছিল। এডফার্মে কোন বিজ্ঞাপনের জন্য চিন্তা করা প্রিয় কোন কন্সেপ্ট যদি ক্লায়েন্ট বাতিল করে দিত, তখন ও সেটাকে গল্প হিসেবে লিখে পত্রিকায় পাঠিয়ে দিত। কিন্তু সেটাও অনেক আগের কথা। অফিসে সফল হবার ধাপে যতই ঊর্ধগামী হয়েছে, সাহিত্যচর্চা করার সময়-ইচ্ছা দুটোই হয়েছে নিম্নগামী। লেখিকা হিসেবে নিজের অস্তিত্ব কোথায় হারিয়ে গিয়েছে।
‘দাঁড়াও, আমি একটু আসতিছি,’ মামা হঠাৎ পাশের একটা দরজা দিয়ে কোথাও যান।
শাওন বাইরে তাকিয়ে দেখে যে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু, ঘণ্টা মামার দেখা নেই। পাশের ঘর থেকে জিনিস-পত্র সরানোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শাওন কল্পনা করে যে, সেখানেও অনেক বই থেকে কিছু খুঁজছেন মামা।
ধূলোপড়া একটা হ্লুদ খাম আর একটা বড় কাগজের আর্টপেপার হাতে মামা আবার ঘরে ঢোকেন। ‘এখানে তোমার ছাপা হওয়া সব গল্প-কবিতা আছে। স্কুল ম্যাগাজিনে একটা ধারাবাহিক উপন্যাসও শুরু করেছিলা, সেটা আর শেষ কর নাই। আর এইটা সেই দেয়ালিকা, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে ছিঁড়ে ফেলতে বলেছিল, আমি রেখে দিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, যখন তুমি নামকরা লেখক হবে, তখন তোমাকে দেব। এখন তো মনে হচ্ছে তুমি আর লিখালিখি করো না, পুরানো গল্পের কথাও মনে রাখ নাই। চাইলে এগুলো নিতে পার। কিন্তু ফটোকপি করে আবার আমাকে ফেরত দিতে হবে। অন্য আরও অনেকের লেখা আছে।’ মামা খুব গম্ভীর গলায় বলেন।
শাওন কিছুটা বিব্রত হয়ে জিনিসগুলো নেয়। ক্লাস টু তে থাকতে তার প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল। নিজে বা মা-বাবা কারও মাথাতেই এত যত্ন করে লেখাগুলো সংরক্ষণ করার চিন্তা মাথায় আসে নি। বাসায় খুঁজলে মনে হয় কিছু লেখা পাওয়া যাবে, বেশির ভাগই পাওয়া যাবে না। দেয়ালিকায় লেখা প্রেমের কবিতার দিকে তাকাতেই চেনা চেনা লাগে-- এরকম লিরিকের একটা এড আছে শাওনের বানানো।
একটা ছোট শিশুকে যেভাবে ছোঁয় সেই ভাবে আলতো করে শাওন খাম আর কাগজগুলো নেয়। যেন নিজের অস্তিত্বকে প্রথম কোলে নেয়ার অভিজ্ঞতা। যে ঘণ্টা মামার নাম ভুলে গিয়েছে, সে মানুষটাই ঘণ্টা বাজিয়ে চেনা অস্তিত্বটার ছুটি দিয়ে ভুলে যাওয়া নিজেকে খোঁজার ডাক দিয়েছে। । স্কুলের শিক্ষকদের কাছে শেখা হয়েছিল নানান পুঁথিবিদ্যা, কিন্তু বহু বছর পর এই স্বল্পশিক্ষিত শিক্ষকের থেকে পাওয়া হল জীবনের শিক্ষা।