'নুরজাহান, নুরজাহান... ঐ নুরজাহান ছুঁড়ি, কই গেলি, আমি ডাকি কানে যায়না?'-- নুরজাহানের মা আছিয়া নুরজাহানকে ডাকতে থাকে। নুরজাহান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে কাছে আসতে থাকে। মাকে অনেক ভয় করে সে। ছোটবেলা থেকেই বাবার চেয়ে মাকেই বেশী ভয় করে সে। বাবা মারা যাবার পর থেকে মা আরও যেন রাগি হয়েছে। মা কোন কিছুতে রেগে গেলে তাকে গালিগালাজ করতে থাকে। তার নানা আবুল কাসেম মাঝে মাঝে আছিয়াকে পিতৃসুলভ ধমক দেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়না। কারণ প্রদীপের আগুন মুখের ফুঁৎকারে নেভে কিন্তু উনুনের আগুন নিভাতে জল প্রয়োগ করতে হয়। আবুল কাসেমের সামর্থ্য নাই এই বৃদ্ধ বয়সে উনুনে জল প্রয়োগ করার। সুতরাং আছিয়া শান্ত হয়না।
নুরজাহান মার কাছে আসল। মা বলল, কিরে মাগি, কই গেছলি?
সে বলল, দোকানে...
মা বলল, তোকে না বলছি এই ঢ্যামনা মাগি হয়ে যেখানে সেখানে ঘুরবি না...
সে বলল, নানাজান কইলো দুইটা বিড়ি আইনা দিতে।
মা বলল, ঠিক আছে যা, ভাল করে গোছল করবি। কালকে তোকে দেখতে আসবে, খেয়াল আছে?
সে বলল, মা... ওমা, আমি তো এখন বিয়া করতে চাইনা...
মা বলল, হ, তোর নানাজান তোকে সারাজীবন বসে খাওয়াবে?
সে বলল, আমি তো মা... বেশী ভাত খাই না...
মা রেগে বলল, চুপ থাক মাগি!!
নুরজাহান জানে এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। তাহলে কপালে দুঃখ আছে। সে মার কাছ থেকে সরে এল। মন খারাপ হয়ে গেল ওর। পোষা খরগোশ বিনুর কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগল। অনেক আদরের খরগোশ তার। সারাদিন অনেক যত্নে আর আদরে রাখে তাকে। মাঠ থেকে ঘাস এনে খাওয়ায়, কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, কখনও কখনও নানার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কলা কেনে ওর জন্য। এই অভাবের পরিবারে নুরজাহানের একমাত্র আনন্দের উৎস বিনু। বিনু যখন খুব মজা করে কলা খায়, ওর দেখতে খুব আনন্দ লাগে। মাঝে মাঝে বাহিরে থেকে ঘুরে আনে। মা বিনুর ব্যাপারে প্রথম প্রথম অনেক বিরক্তবোধ করলেও এখন কিছু বলে না। খরগোশ কেনার সময় বিক্রেতা ওকে জোড়া খরগোশ নিতে বলেছিল। এক খরগোশ পালন করা নাকি কষ্টের। তবে নানার টাকার কথা ভেবে সে একটা খরগোশই কিনে নেয়। তবে বিনুকে কখনই সে একা মনে করতে দেয়নি। সবসময় বিনুর সাথী হয়ে আছে নুরজাহান। কেবল স্কুলে যাবার সময় তাকে খাঁচায় রাখতে হয়। মা তার বিয়ের কথা ভাবছে। বিয়ে হয়ে গেলে বিনুকে কে দেখাশোনা করবে? তার শ্বশুরবাড়িতে যদি বিনুকে না নিতে দেয়? নানা ভাবনায় নুরজাহানের চোখে জল এসে গেল। মাত্র ২০ দিনের বাচ্চা বিনুকে যখন সে কিনে এনেছিল, তখন খুবই অসহায় ছিল বাচ্চাটা। সারাদিন একটু একটু করে হাঁটাহাঁটি করত আর ঘুমাত। নুরজাহান কাপড়ের বিছানায় রেখে ওর মুখে ঘাস তুলে দিত। ওর খাওয়া দেখে নুরজাহানের খুব মায়া লাগত। বিনুর বয়স যখন ৫ মাস তখন একবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিল না নুরজাহান। মা বলেছিল ওকে ফেলে দিতে। নুরজাহান ভালবাসার টানে সেটা করতে পারেনি। বান্ধবী আর স্যারদের কাছ থেকে টাকা সাহায্য নেয়। ভেট ডাক্তারের ওষুধ আর পরামর্শ নিয়ে বিনুকে সুস্থ করে তোলে। বিনুর বয়স এখন ১০ মাস। ও এখন নুরজাহানকে ছাড়া কিছু বোঝে না।
বিনুকে খাচায় রাখল সে। তার অনেক কাজ আছে। বন্দী খরগোশ নুরজাহানের মুখের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকল। তার মালিক এখন চলে যাবে বিনু বুঝতে পেরেছে।
টিউবওয়েল পাড়ে গিয়ে গোছল সেরে নিল নুরজাহান। তারপর খাবার ঘরে গেল। মা ভাত রেঁধে রেখেছিল। একা একা ভাত বেড়ে খেয়ে নিল।
স্যার এর বাসায় প্রাইভেট পড়া আছে। পড়তে যাবার আগে আবার মার সামনে পড়ল নুরজাহান। মা তাকে বলল, শোন কাল থেকে তোকে আর পড়া লাগবে না। আজ স্যারকে বলবি কাল থেকে আর আসতে পারবি না। তাই বলে স্যার এর হাতে এই টাকা দিবি।
সে বলল, আচ্ছা...
স্যার এর বাসায় যাবার পথে বান্ধবী আমিনা ওর মুখ দেখে বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। তারা দুজন একসাথে হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। আমিনা বলল, নুরজাহান, তোর মন খারাপ?
সে বলল, হ...
আমিনা বলল, কেন, চাচী আবার তোকে মারছে?
সে বলল, না...
আমিনা বলল, তো?
সে বলল, আমার বিয়া ঠিক করছে নানা। কাল আমারে দেখতে আসবে...
আমিনা বলল, তুই কি এখন বিয়া করবি?
সে বিদ্রুপের সুরে বলল, হ, বিয়া করমু। এতদিন খালি মার গাল খাইলাম। এখন স্বামীর গাল খাই। সাথে পিটন ফ্রি!!
আমিনা বলল, তুই কিছু বলিসনি?
সে বলল, তারা আমার কথা শুনলে তো...
আমিনা বলল, এইটা তো দেখি বিরাট বিপদ।
সেদিন কথায় কথায় আমিনা প্রাইভেটের সবাইকে বলে ফেলল নুরজাহানের বিয়ের কথা। আনিসুল স্যার এর কানেও গেলো কথাটা। তিনি নুরজাহানকে কিছু বললেন না।
পরদিন তিনি নুরজাহানের বাড়ি আসলেন। নুরজাহানের নানা আবুল কাসেম স্যার কে দেখামাত্র এগিয়ে এসে বলল, আসেন আসেন স্যার, আসসালামুআলাইকুম।
স্যার বললেন, ওয়ালাইকুম। কেমন আছেন?
কাসেম বলল, ভাল স্যার।
স্যার বললেন, শুনলাম আপনারা নুরজাহানের বিয়ে দিচ্ছেন?
কাসেম বলল, কে বলল স্যার?
স্যার বললেন, যেই বলুক... কথাটা সত্য কিনা তাই বলেন।
কাসেম বলল, আপনার কাছে মিথ্যা বলব না স্যার।
স্যার বললেন, কিন্তু ওর এখন বিয়ে দিবেন কেন? ওর তো পড়ালেখা চলছে।
কাসেম বলল, আমরা গরিব মানুষ স্যার। আমার ছেলেটা কিছু টাকা বিদেশ থেকে পাঠায় বলে সংসারটা টিকে আছে। নুরজাহানের বাপ মারা যাওয়ার পর আছিয়া মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছে। আমার অল্প কিছু জমি। সেটাতে চাষবাস করে কোন রকমে বড় টানাটানি করে সংসার চলছে। মেয়েকে পড়ালেখা করার খরচ কিভাবে দিব?
স্যার বললেন, কিন্তু নুরজাহান তো উপবৃত্তি পাচ্ছে...
কাসেম বলল, তা পাচ্ছে, কিন্তু ওর ভাত আর কাপড়ের খরচ তো সরকার দিচ্ছে না।
স্যার অবাক হয়ে বললেন, কি বললেন!! ওর ভাত কাপড়ের খরচও সরকার দিবে?!
কাসেম বলল, তাতো স্যার দিবে না, সেটা জানি... সেই জন্যই আমার পক্ষে তার খরচ বহন করা অসম্ভব।
স্যার বললেন, কিন্তু আপনার নাতনী তো লেখাপড়াতে আগ্রহী। একটু কষ্ট হলেও আপনার উচিত ওর লেখাপড়াতে সাহায্য করা।
কাসেম বলল, উপায় থাকলে কি আর বিয়ে দিতাম?
স্যার বললেন, কিন্তু ওর তো বয়সও অল্প?
কাসেম বলল, বয়স অল্প বলেই তো বিয়ে দিতে পারছি। বেশী বয়স হলে বাপ মরা মেয়েকে কে বিয়ে করতে চাইতো?
স্যার বললেন, আবুল কাসেম চাচা... আপনি বুঝতে পারছেন না, এখন মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে অনেক লাভ...
কাসেম বলল, ও স্যার আপনার কাছে মাফ চাই, আপনি আমাকে আর স্বপ্ন দেখায়েন না।
সেদিন বিকেলে ঘটক সুজা মিয়াকে সাথে নিয়ে ছেলেপক্ষ দেখতে আসল নুরজাহানকে। বরের বয়স একটু বেশী। আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। সেটা ছাড়াছাড়ি হয়েছে। ছেলের ফার্নিচারের ব্যবসা। ছেলের সাথে ছেলের মা এবং মামা আসছে। ঘরে নুরজাহানের নানা এবং মা বসে আছে। একটু পরে পাশের বাড়ির ভাবি সম্পর্কের এক মহিলা নুরজাহানকে সাজিয়ে, শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে তাদের সামনে আনল।
আবুল কাসেম ছেলের মাকে বলল, কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করেন মেয়েকে।
ছেলের মা বলল, মেয়েকে আবার কি জিজ্ঞেস করতে হবে? আপনাদের মেয়ে যখন তখন ভালোই হবে।
আবুল কাসেম বলল, তারপরও কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করেন।
ছেলের মা বলল, আপনার নাতনীর খোঁজ আমরা নিয়েছি, ভাল মেয়ে।
ছেলে, ছেলের মা এবং মামা একে ওপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। একটু পরে ছেলের মামা মুখ খুলল। সে নুরজাহানের নানাকে বলল, আপনার নাতনীকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
কাসেম বলল, আলহামদুলিল্লাহ্।
ছেলের মামা বলল, কিন্তু এসব বিয়ে বেশী দেরি করা যাবে না। পাড়ার লোকজন তো আছেই, তাছাড়া পুলিশেরও ভয় আছে।
কাসেম বলল, ঠিক বলেছেন। কে কখন কোথায় থেকে বাগড়া দেয় তার ঠিক নাই।
ছেলের মামা বলল, তাহলে আমরা আগামি বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলাই। কাজি আমি আনবো নি। আপনার কোন ভয় নাই।
কাসেম বলল, সেই ভালো। রাতের বেলাই উত্তম সময়। কেউ জানতে পারবেনা।
এসময় ছেলের মা বলল, কিন্তু আসল কথাটার কি হল?
ছেলের মামা বলল, দাঁড়াও তো আপা...... আমি বলছি। তাহলে বেয়াইন সাহেবা, ঘটক সাহেব আপনাদের সব কথা বলেছে তো?
নুরজাহানের মা বলল, হ্যাঁ বলেছে।
ছেলের মা বলল, টাকা কিন্তু আশি হাজারের কম হবে না। নেহাত ছেলের আমার দ্বিতীয় পক্ষের বিয়ে আর মেয়ের বয়স কম, না হলে তিন লাখের কমে ছাড়তাম না।
নুরজাহানের নানা বলল, আর মোহরানা?
ছেলের মা বললে, সেটা ঘটক বলেনি? চল্লিশ হাজার।
মোহরানার পরিমাণ শুনে কাসেমের একটু মন খারাপ হল। তার আশা ছিল বেশি হবে। সেটা আর হল না। কিন্তু এটা নিয়ে বেশি কথা বলা ঠিক হবে না। ফার্নিচার ব্যবসায়ী ছেলে হাতছাড়া করা বোকামি হবে।
বিনু বাহিরে থেকে ঘরে এসে নুরজাহানের চারপাশে ঘুরঘুর করতে লাগল। আবুল কাসেম ওকে দেখেই হুস হুস করে তাড়িয়ে দিতে চাইল। বলল, এটাকে আবার কে ছেড়ে দিল? নুরজাহান মাটিতে নিচু হয়ে ওকে কোলে তুলে নিল। বিনু শান্ত হয়ে গেল।
ছেলের মা বলল, এটা আপনাদের পোষা খরগোশ?
কাসেম বললেন, ঐ হ্যাঁ...আর কি...
ছেলের মা বলল, কিন্তু মা, এটা কিন্তু তুমি আমাদের বাড়িতে নিতে পারবা না। আমাদের বাড়িতে গরু ছাড়া কোন মুরগি টুরগি নাই।
নুরজাহান কিছু বলল না। কাসেম বলল, আপনারা যা বলবেন তাই হবে।
তিনদিন পরে নুরজাহানের বিয়ে। নুরজাহানের নানা এবং মা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারা পরিকল্পনা করে অত্যন্ত গোপনে বিয়ের বাজার সারল। কাছের দু একজন আত্মীয় ছাড়া কাউকে বলা হলনা।
বৃহস্পতিবার সকাল। নুরজাহানের নানা এবং মা মিলে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিকটাত্মীয় কয়েকজন এসেছে। তারা গোপনে বিয়ের কথাবার্তা বলছে। আছিয়ার চাচাত বোন রমিসা আর তাহেরাকে তাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে এনেছেন আবুল কাসেম। একা তার স্ত্রীর পক্ষে বিয়ের ঝামেলা পাড়ি দেয়া কঠিন। নুরজাহানের নানি আসামন, রমিসা আর তাহেরা রান্নাঘরে নিজেদের মাঝে গল্প করছিল।
রমিসা বলল, চাচী যাক... এতদিন পরে তাও নুরজাহানকে বিয়া দিতে পারলেন।
আসামন বলল, হ, মেয়ের বিয়া দিতে দিতে দেরিই হয়ে গেল।
তাহেরা বলল, চাচী আমি কইতাছি, ঐ খরগোশটাকে খাঁচাতে তুলে গোয়াল ঘরে রাইখেন।
আসামন বলল, কেন মা?
তাহেরা বলল, এখন নুরজাহানের বিয়া, তার ভিতর ঐ খরগোশ যখন তখন বাহির হয়ে নুরজাহানের কোলে বসতে পারে। বরপক্ষের লোকজন এটা পছন্দ করবে না।
আসামন বলল, ঠিক বলেছিস মা।
আছিয়া নুরজাহানের অগোচরে বিনুকে খাঁচায় তুলে গোয়াল ঘরে রেখে এল।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নুরজাহানকে সাজানোর জন্য একজন ডেকে নিল। নুরজাহান সাজগোজ সেরে মাকে বলল, মা বিনু কোথায়?
মা বলল, চুপ থাক। আজকে তুই বিনুর চিন্তা বাদ দে।
সে বলল, মা ওর তো খাবার সময় হয়ে গেছে। আমার কাছে আসল না।
মা বলল, ওকে খাবার দিয়ে আসছি। তুই তোর চিন্তা কর। একটু পরে বরপক্ষের লোকজন আসবে।
সে বলল, ওকে কোথায় রাখছ মা? কুকুর যেন না ধরে...
মা বলল, ধরবে না। খাঁচায় রাখছি।
সে বলল, খাঁচা কোথায়?
মা বলল, গোয়ালে।
সে বলল, আমি একটু দেখে আসি।
ওর কথা শুনে আছিয়া বলল, নুরজাহান, তুই ঘরে যা, ওকে আমি দেখব। তুই কি ওকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাবি? অনেক ঝামেলা করে তোর বিয়া ঠিক হইছে। ঐ খরগোশের জন্য ওরা যদি রাগ করে আমি কিন্তু ওটাকে জবাই করব।
নুরজাহান মার মুখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল! সে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেল।
রাত ৮.৩০ মিনিট। ছেলেপক্ষ আসল। বর সাধারণ সাজে এসেছে। ভিতরে এসে বরের পোশাক পড়ল সে। সাথে ছেলের মা আর মামাসহ ৫ জন এসেছে। কাজি সাহেব এনেছেন ছেলের মামা। তিনি বিয়ে পড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় বাহিরে কে যেন 'নুরজাহান নুরজাহান' বলে ডাক দিল। নুরজাহান তার ঘর থেকে বুঝতে পারল এটা আনিসুল স্যার এর কণ্ঠ। সে তাড়াতাড়ি করে বিয়ের ঘোমটা খুলে ফেলল। এদিকে অন্য ঘরে থাকা ছেলেপক্ষের একজন উঠে বাহিরে দেখতে গেল। ভাবল, নুরজাহানের প্রেমিক আসল নাকি? একটু রগড় করে আসি।
একটু পরে ছেলেটা দৌড়ে এসে ভিতরে খবর দিল, সর্বনাশ!!, পুলিশ আসছে!!।
কথাটা শোনা মাত্র নির্জন বাড়িতে যেন বাজি ফুটতে লাগল। বর লাফ দিয়ে উঠে মাথার টোপর খুলে পাঞ্জাবি খুলে দৌড় লাগাল। তাকে অনুসরণ করল অন্যরাও। এই ঘর, ঐ ঘরের দরজা দিয়ে তারা একেবারে নুরজাহানদের গোয়াল ঘরে ঢুকল। গোয়াল ঘরের অন্য দেয়ালে আরেকটা দরজা দেখা গেল। সেটা ভিতর থেকে লাগান ছিল। সেই দরজা খুলে তারা বাড়ির পিছন দিকে বাঁশঝাড় দিয়ে পালিয়ে গেল।
নুরজাহান বাহিরে এসে স্যারকে সালাম করল। আনিসুল স্যার বলল, ইস...ভাগ্য ভালো সময় মতো এসেছিলাম। কোথায় গেলো তারা, পালিয়েছে কেন?
পুলিশের একজন বলল, সরকার এতো চেষ্টা করছে বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে। আর আপনারা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতে বিয়ের আয়োজন করছেন?
আনিসুল স্যার বলল, আমি তো ভাবছিলাম এরা দিনে বিয়ে দেবে। ভাগ্য ভালো খবরটা সন্ধ্যার দিকে পেয়েছিলাম। শুনুন কাসেম চাচা, ভবিষ্যতে এমন বাল্য বিয়ে দিলে আপনার পরিণতি খারাপ হবে। আপনার টানাটানির সংসারে আপনাকে কষ্ট করে আর ভাত যোগাড় করতে হবে না। সেটা ফ্রি পাবেন।
নুরজাহানের নানা আবুল কাসেম মাটির দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকল।
নুরজাহান বলল, স্যার আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে!...---বলেই দৌড় লাগাল।
আনিসুল স্যার অবাক হয়ে বললেন, নুরজাহান কোথায় যাও?! শোন!
নুরজাহান ততক্ষণে চলে গেছে। স্যার ওর পেছনে গেলেন, সাথে পুলিশরাও। নুরজাহান বাড়ির একদিকে গোয়ালঘরে ঢুকে গেল। স্যার অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলেন। তিনি উঠান থেকেই বললেন, নুরজাহান না! আমার কথা শোন...
পুলিশের একজন বলল, স্যার আপনি সরেন। আমি দেখছি।
পুলিশটা আনিসুল স্যারকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যুৎগতিতে গোয়াল ঘরে ঢুকে গেল। কোন কিছু ঘটার আগেই মেয়েটাকে থামাতে হবে। ভিতরে ঢুকে নুরজাহানকে দেখেই তিনি থমকে গেলেন। আনিসুল স্যার নুরজাহানের কান্না শুনে ভিতরে ঢুকে গেলেন। নুরজাহান তার পোষা খরগোশটিকে বুকে চেপে ধরে কাঁদছে...পুলিশটা অবাক হয়ে আনিসুল স্যারের দিকে তাকাল। স্যারের চোখেও জল!