দেয়াল

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০২১)

মোঃ আব্দুল মুক্তাদির
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৩.৯৭
  • ১১২
অনার্স পরীক্ষা শেষ করে বসে ছিলাম। কিছু একটা কাজ করার জন্য খুঁজছি। আমার বাবার অনেক আছে বলে আমি কোন কাজ করব না, এটা আমার পছন্দ না। আমাদের পরিবারে আমি একমাত্র ছেলে। আমার তিনটা বোন আছে। বাবা তাদের বিয়ে দিয়েছেন। বাবা একটা হার্ডওয়্যারের ব্যবসা দিয়েছেন। সেখানে নিজে বসেন। তাছাড়া গ্রামে আমাদের একটা ফার্ম হাউস আছে। পড়া শেষ করে কবে চাকুরী হবে তার কোন ঠিক নাই। তার আগে একটা কাজে ঢুকে থাকা ভাল। এই মনে করে আমি ফার্ম হাউসটার কাজে যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। আতকানির আসাকুনি গ্রামের শেষ মাথায় একটি ফার্ম হাউজ গড়ে তুলেছেন আমার বাবা। তাতে মুরগি, মাছ, ফলের বাগানের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি। এত দিন বাবা নিজেই ফার্মে গিয়ে বিভিন্ন রেজিস্ট্রার বুক চেক করতেন। এখন আমি গিয়ে ফার্মের ম্যানেজিং দায়িত্বটা নিতে মনস্থির করলাম।
প্রথম যখন ছায়াঘেরা সবুজে ভরা শান্ত এই আসাকুনি গ্রামে আসি, তখন ফার্ম হাউসটার চারপাশের দৃশ্য দেখে আমার মন তাজা হয়ে গিয়েছিল। আমি ছোট কাল থেকে শহরে বড় হয়েছি। আমার বাবা নিজে মাঝে মাঝে এখানে থেকে লোকদের সাহায্যে এটা গড়ে তুললেও আমি এখানে আগে তেমন আসিনি। এখানে এসে এত সবুজকে একসাথে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেল। প্রায় দুই একর জায়গা নিয়ে এই ফার্ম হাউস গড়ে তুলেছেন বাবা। এখানে দোতলাবিশিষ্ট একটা চার রুমের বিল্ডিং আছে। নিচতলায় অফিসরুম এবং ফার্মের জিনিসপত্র রাখার ঘর করা হয়েছে। উপরতলার একটা ঘরে আমি থাকি। মুরগি, মাছ, ফলের ব্যবসার রেজিস্ট্রার খাতাগুলো আমি দেখি এবং বিভিন্ন হিসাব লিপিবদ্ধ করে রাখি। ফার্ম এ কাজের চাপ কম নয়। আমি সপ্তাহে ছয় দিনই এখানে থাকি। মাঝে একদিন বাড়ি যাই। কোন কোন সপ্তাহে সেটাও হয়না। যাহোক ফার্মের কাজ বুঝে নিতে নিতে ধীরে ধীরে আমি এই ফার্ম এর এক আপনজন হয়ে গেলাম।
নবনীল ফার্ম হাউস এ মাছ, মুরগি, ফলের চাষ করা হয়। একেবারে ছোট থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত এগুলোকে সবসময় যত্ন করতে হয়। যখন এগুলো বিক্রি উপযোগী হয় তখন পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। আমরা সাধারণত খুচরা এসব জিনিস বিক্রি করিনা। তবে বাবা আমাদের বলেছেন আশেপাশের লোকজন দু একটা জিনিস কিনতে আসলে যেন বিক্রি করা হয়। আমরা তাই কেউ ফার্ম এ জিনিস কিনতে আসলে তাকে ফিরিয়ে দেই না। এতে করে যদিও আমার কিছুটা হিসাবের কাজ বেড়ে গেছে তারপরও আমি খুশী মনে কাজটা করি।


একদিন সকালে এক মেয়েকে আমার অফিসের সামনে দেখলাম। বয়স ২২-২৩ হবে, গায়ে বোরখা। মেয়েটা আমাকে বলল---
-'আসসালামু আলাইকুম।'
-'ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবেন?'
-'আপনি কি মিনহাজ সাহেব?'
-'হ্যাঁ...'
-'আমি এখানে আগে আসিনি। শুনলাম আপনারা এখানে মুরগি বিক্রি করেন। আমার চারটা মুরগি লাগবে স্যার।'
-'তা দিচ্ছি... কিন্তু আপা আমাকে স্যার বলবেন না, লজ্জা লাগে।'
মেয়েটা দেখলাম মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকাল। আমি বুঝলাম না এতে হাসি আসার কি আছে! মেয়েটা কি একটু বেশী হাসে? তাকে বললাম--
-'বাড়ি কোথায় আপা?'
-'রাখিপুর।'
ফার্ম এর কেয়ারটেকার জসিম এখনো আসেনি। আমি নিজেই মেয়েটাকে মুরগির খাঁচার সামনে নিয়ে গেলাম। সে মুরগি পছন্দ করল। তারপর মুরগি নিয়ে টাকা দিয়ে চলে গেল।

এর একমাস পরে আবার এক সকালে সেই মেয়েটাকে ফার্ম  এ আসতে দেখলাম। সাথে একটা ছেলে। মনে হয় ছোট ভাই টাই হবে। এবার আর বোরখা পড়ে আসেনি। কোথাও যাবে মনে হয়। একেবারে সেজে বের হয়েছে। চুল ছেড়ে দেয়া। কপালে টিপ, হাতে কাঁচের চুড়ি, পড়নে নীল রঙের শাড়ি। কালো লম্বা চুলগুলো ঘাড়ের ওপর দিয়ে সামনে এনেছে মেয়েটা। লম্বা এবং গোলের মাঝামাঝি মুখমণ্ডল। মাঝারি ঠোঁট। তাতে হালকা লাল লিপস্টিক দিয়েছে। চিকন ভ্রুযুগল আর চোখের হাল্কা কাজলে মেয়েটাকে রহস্যময়ী লাগছে। নাকে নাকফুল, কানে ঝোলানো ঝুমকাতে আমি কল্পনাতে ডুবে গেলাম... এই নির্জন আসাকুনি গ্রামে আমার স্বপ্নকন্যা এসেছে!। ওগো সুন্দরী তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? তোমার সাথে আগে কেন দেখা হলো না!। ছিঃ ছিঃ এ আমি কি ভাবছি! এটা তো আমার খরিদ্দার। আমি মেয়েটার দিক থেকে চোখ সরালাম। সবচেয়ে যে বিষয়টা আমাকে আকর্ষণ করলো সেটা হচ্ছে তার মিষ্টি কণ্ঠস্বর।  মেয়েটা আমাকে বলল---
-'ভাইয়া, টাকাটা নেন আর ঐ ছেলেটার হাতে চারটা মুরগি দিবেন। আমি এক অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। আমার সময় নাই।'
মেয়েটা চলে গেল। আমি ছেলেটাকে মুরগি দেবার সময় বললাম---
-'ঐ আপা তোমার কে হয়?'
-'কেউ না স্যার, পাড়া সম্পর্কের আপা হয়।'
-'নাম কি তোমার আপার?'
-'শারমিন।'
-'মেয়েটা মাঝে মাঝে নিজে এখানে আসে দেখি। বাড়িতে ছেলে মানুষ কেউ নাই?'
-'চাচা বিদেশ থাকে। শারমিন আপার ছোট ভাই আছে একটা নাম সোহাগ। বাড়ির কোন কাজই করে না। সোহাগ আসল না দেখেই তো আমাকে সাথে করে আনল শারমিন আপা।'

ছেলেটাকে মুরগি দিয়ে বিদায় করে দিলাম। সারাদিন এই মেয়েটার কথা মনে পড়ল। কি সুন্দর! এমন মেয়েকে লাইফ-পার্টনার হিসেবে পেলে আর কিছু লাগেনা!।
রাতে শোবার সময় আবার মেয়েটা আমার ভাবনায় উপস্থিত হল। গ্রামের এই সাধারণ মেয়েটার মাঝে কি এমন আছে যা আমাকে এত আকর্ষণ করছে! কলেজে, আমার শহরে কত মেয়েকে দেখেছি, তারা তো আমাকে এত আকর্ষণ করে না। তবে আমি কি তার প্রেমে পড়ে গেলাম!। আচ্ছা সে কি আমাকে পছন্দ করবে? এসব নানাবিধ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে আবার মেয়েটার কথা মনে পড়ল। তার দেখা পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকলাম। কিন্তু সে একমাস হয়ে গেল আর মুরগি কিনতে আসছিল না। আমার চঞ্চল প্রেমিক মন তখন পাগল হয়ে আছে। একবার মনে হল রাখিপুর গ্রামে গিয়ে শারমিনকে খুঁজে বের করি। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তারপর ভাবলাম, না, একটা গ্রামে গিয়ে অবিবাহিত মেয়ের খোঁজ করা ঠিক হবে না। তাতে আমার এবং তার বদনাম হবে। গ্রামের লোকরা এসব খবর রসিয়ে রসিয়ে প্রচার করে।


সেদিন আসাকুনি গ্রামে বার্ষিক মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। ফার্ম এর শ্রমিকরা সবাই যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সকাল থেকে। তারা এই মেলায় যাবার জন্য সকাল থেকে তাদের কাজকে গুছিয়ে এনেছে। আমি শহরের অনেক মেলা দেখেছি। গ্রামের এই মেলা আমাকে আকর্ষণ করছিল না। তাই যাবার আগ্রহ দেখাচ্ছিলাম না। অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে নিতান্ত অনিচ্ছার সাথে মেলার দিকে চলে গেলাম। মেলার মাঠে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে লাগলাম। আমার কেউ নাই তো। তাই কারো জন্য কিছু কেনার তাগাদা নাই। এমন সময় পিছন থেকে একটা মেয়ের মুখে আমার নাম শুনে চমকে উঠলাম---
-'মিনহাজ ভাই!!'
তাকিয়ে দেখি শারমিন!। সাথে একটা ছেলে। মনে হয় এটাই সোহাগ। শারমিনের সাথে চেহারার মিল আছে।আমি বললাম---
-'কেমন আছেন?'
-'আমি তো ভালো। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি এই মেলায় আসতে পারেন।'
-'কেন?'
-'এত বড়লোকের ছেলেরা গ্রামের এমন মেলায় ঘোরে?'
-'কেউ না ঘুরলেও আমি ঘুরি।'
-'তাই?'
-'হ্যাঁ। আপনি তো অনেকদিন ফার্ম এ আসেন নি। এখন কিন্তু মুরগির দাম কম...'
-'তাই নাকি? দেখি যাব আবার।'
-'আচ্ছা ঠিক আছে মেলায় ঘোরেন।'
আমি কথাটা বলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরে আসলাম। আমি এখানকার একটা বড় ফার্ম এর হিসাবরক্ষক এবং মালিকপক্ষ। আমাকে অনেকেই চেনে। শারমিনের সাথে কথা বলার সময় দেখলাম কিছু কিছু লোক আমাদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিচ্ছিল।
আমি ফার্ম এ ফিরে আসলাম। মনটা অস্থির হয়ে আছে। শারমিনের সাথে দেখা হল। কিন্তু তাকে কিছুই বলতে পারলাম না।

এক সপ্তাহ কেটে গেল। শারমিন আবার ফার্ম এ আসল। আমি মুরগি দেবার সময় সে বলল--
-'ভাইয়া, আপনি আমার অনেক বড় হবেন। আমাকে তুমি করে বললেই হবে।'
-'তাই!'
-'হ্যাঁ।'
মেয়েটা যখন মুরগি নিয়ে টাকা দিয়ে যেতে চাচ্ছিল আমি তখন বললাম---
-'কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতে চাই...'
-'বলেন! আপনার মতো একটা লোক আমার সাথে কথা বলতে সংকোচ করছেন কেন? গ্রামের লোকরা তো ঠিকই বলে আপনাদের মত নরম মানুষ দেখা পাওয়া বিরল।'
-'তোমার ফোন নাম্বার কি আমাকে দেয়া যাবে?'
-'কেন?'
-'না কিছু না... থাক লাগবে না। মানে...মুরগির দাম কমলে তোমাকে বলতাম আর কি?...'
মেয়েটা আমাকে কিছু না বলে এবং ফোন নাম্বার না দিয়ে চলে গেল।
আমি বড় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। সেই স্কুল থেকে কলেজ অবধি এই প্রথম একটা মেয়েকে আমার মনে ধরল। এই প্রথম সাহস করে একটু এগোতে চাইলাম আর তাতেই বাগড়া! মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল। সারাদিন বিষণ্ণ ভাবে দিন কাটল আমার।

রাতে ফেসবুক ওপেন করলাম। অনেক নোটিফিকেশন দেখলাম। সেগুলো দেখতে মন টানল না। কেবল একটা এসএমএস দেখলাম। যাতে বলা আছে 'আমি আপনার ফার্ম এর মুরগি ক্রেতা শারমিন। দয়া করে আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করুন।'
আমি রিপ্লাই দিলাম, 'আপনার কোন ছবি নাই। আপনি শারমিন, না শারমিনের মা, আমি বুঝতে পারছি না।'
আমি শারমিন সুলতানা নামের আইডিটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। কোন মেয়ের ছবি নাই। শুধু গাছ আর ফুলের ছবি। পনের মিনিট পড়ে রিপ্লাই আসল---
-'আমি আইডিতে কোন ফটো দেই না।'
-'কেন ফটো দিলে কি অসুবিধা?'
-'অসুবিধা আছে।'
-'তুমি তোমার সুন্দর মুখখানা সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছ। সেজে গুজে অনুষ্ঠানে যাচ্ছ আর ফেসবুকে ফটো দিলে অসুবিধা?'
-'আপনি এসব কি বলছেন?!'
-'অহ... স্যরি... মানে জানতে চাচ্ছিলাম তুমি সোহাগ হয়ে আমার সাথে মজাক করছ কিনা?'
-'আপনি তো দেখি সবার নাম জেনে ফেলেছেন...'
-'যাকে...আমি...মানে...আর কি...'
-'কি বলছেন?'
-'কিছু না...'
আমি ফেসবুক লগ আউট করলাম।
পনের মিনিট পরে ফেসবুক খুলে দেখি শারমিন আমাকে রিপ্লাই দিয়েছে, 'বড়লোকের সাথে সম্পর্ক করতে ভয় লাগে।'
আমিও রিপ্লাই দিলাম, 'তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। এটা আমার নাম্বার। তোমার অপেক্ষায় থাকলাম।'
সেদিন সারারাত আমার মনে গান বাজতে থাকল--

"তুমি কোন কাননের ফুল কোন গগনের তারা
তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন স্বপনের পারা।
কবে তুমি গেয়েছিলে আঁখির পানে চেয়েছিলে ভুলে গিয়েছি
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ঐ নয়নের তারা।
তুমি কথা কইও না তুমি চেয়ে চলে যাও
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গলে যাও
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে
চেয়ে থাকি মধুর প্রানে
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা।"


এক মাস কেটে গেল। শারমিনের কোন দেখা নাই। অসহ্য লাগছিল সবকিছু। তারপরও ফার্ম এর কাজে মনকে ধরে রাখলাম।
আরও একমাস কেটে গেল। কিন্তু শারমিনের কোন খবর নাই। ফেসবুক ডিএক্টিভেট করা। আমি তার ভাই সোহাগকে ফেসবুকে পেলাম। কিন্তু তাকে কিছু বলতে পারলাম না। তার বাবার নাম জানতে পারলাম সাখাওয়াত আলী। মালয়েশিয়া থাকেন। আমি ইচ্ছা করলেই তার বাড়ি খুঁজে যেতে পারতাম। সাহসে পারলাম না।

সেদিন ১১টার দিকে আমার অফিসে বসে আছি। ফার্ম এ ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ফার্ম এর শ্রমিকরা বাড়ি গেছে। কেবল আমাকে আর কেয়ারটেকারকে থাকতে হবে আরও দুইদিন। পরশুদিন মুরগির পাইকাররা আসবে। তাদের কাছে মুরগি বিক্রি করে দিয়ে তবেই আমার ছুটি। ফার্মে কেবল আমরা দুজন। আর কেউ নাই। এমন সময় দেখলাম শারমিন ফার্ম এর গেট দিয়ে ঢুকল! খরিদ্দার আসতে দেখে জসিম অফিসের দিকে এগিয়ে আসল।
আমি তাকে বললাম, 'ইনি আমার কাছে এসেছেন। আপনাকে আসতে হবে না।'
জসিম চলে গেল।
আমি শারমিনের দিকে তাকালাম। আরও সুন্দর লাগছে তাকে। হলুদ রঙের ফুলহাতা কলারওয়ালা থ্রি পিস পড়ে এসেছে। চুলগুলো সুন্দর করে এঁটে বাধান। আমি বললাম---
-'আসেন মহারাণী, মহা সুন্দরী, সুন্দরের উপমা, সুন্দরের তিলোত্তমা, রূপের রাগিণী, মোহিনি,হরিণী, স্বপ্নচারিণী।'
-'ভাইয়া আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?'
-'না, রাগ করার প্রশ্নই আসেনা। আপনি কে যে আপনার উপর রাগ করতে হবে?'
-'ভাইয়া আপনি একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখবেন আপনি যা চাইছেন সেটা সম্ভব কিনা?'
-'আমি কিছু চাইছি না...আপনি কি চান বলেন, মুরগি?'
-'হ্যাঁ...'
-'মুরগির বদলে আমাকে নিয়ে জবাই কর শারমিন। তোমার প্রেমে পড়ে মুরগি তো হয়েই গেছি। শুধু জবাই হওয়া বাকি!'
-'ছিঃ মিনহাজ এসব কি বলছেন?'
-'Sorry শারমিন, আমার মাথা ঠিক নাই। তুমি চলো তোমাকে মুরগি দেই...'
আমি শারমিনকে নিয়ে ফার্ম এর ভিতরের দিকে গেলাম। আমি মুরগির খাঁচার দিকে না গিয়ে বাগানের রাস্তা ধরলাম। শারমিন বলল---
-'কোথায় যাচ্ছেন? আপনার মাথা এখনও ঠিক হয়নি?'
-'উফফফ আমাকে আর আপনি করে বলনা তো...'
-'তাই? আচ্ছা ঠিক আছে। বড়লোকের ছেলেকে তুমি করে বলতে পারাও ভাগ্যের ব্যাপার।'
-'ধুরর এই বড়লোক বড়লোক বলে তুমি আমাদের মাঝে একটা দেয়াল দিয়ে রেখেছ।'
আমরা ফার্মের বাগানে পৌঁছে গেলাম। বসার জায়গায় আমরা বসে পড়লাম। শারমিন বলল---
-'আপনাদের বাগানটা খুব সুন্দর। আপনাদের সাধ এবং রুচির প্রশংসা করতে হয়।'
-'আমার বাবা ফার্মটা গড়ে তুলেছেন। আমি আসার পড়ে অবশ্য বাগানটা সাজিয়েছি।'
-'আপনার পছন্দ এবং রুচি আছে বটে।'
-'তাতো বুঝলাম। কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলে না?'
-'কোন কথা?'
-'এই যে তুমি আমাকে বড়লোক বলে নিজেদের মাঝে একটা দেয়াল দিচ্ছ...'
-'আমাদের মাঝে তো দেয়াল উঠেই আছে।'
-'আমি সেই দেয়াল ভাঙব।'
-'চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমাকে এখন যেতে হবে।'
-'থাকনা, আজকে তো এখানে কারো দেখার ভয় নাই। তুমি আর আমি পাশাপাশি গল্প করি...অনেক সুন্দর কাটবে দিনটা...'
-'এহ... শখ কত!!'
-'মানে!!?'
-'আজকে এখানে কেউ নাই... সেই জন্যই থাকা যাবে না।'
-'মানে?'
-'মানে বড়লোকের ছেলেকে বিশ্বাস করা ঠিক না।'
-'কি!!! যাও তুমি এখনই যাও...দূর হয়ে যাও...'
আমি শারমিনকে মুরগি দিলাম, শারমিন যাবার সময় আমার দিকে তাকিয়ে একটা মন চুরি করা হাসি দিল। সে কোন অর্থে এমন হাসি দিল তা সেই জানে। আমার কাছে এ হাসি অনেক দামী। এ হাসি এমন হাসি যা দেখলে কোন দুঃখ কাছে আসেনা। সে চলে গেল। আমি তার হাসিতে ফ্রিজ হয়ে থাকলাম। উফফফ... যাবার পরে আমার হুঁশ হল তার মোবাইল নাম্বার নেয়া হল না। রাতে তাকে ফেসবুকেও পেলাম না। মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে গেল। এ কোন মায়ার ফাঁদে পড়লাম আমি?!

ফার্মে আরও দুদিন থেকে বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে সারাদিন একটুও শান্তি পেলাম না। মনে হচ্ছে কিছু একটা আমার হারিয়েছে।

আজ ঈদ। ঈদের নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে বসে আছি। শারমিনের চিন্তায় মনটা অস্থির। সারাদিন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারলাম না। রাতের ১০ টার দিকে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসল---
-'হ্যালো কে বলছেন?'
-'গলা শুনে চিনে নেন...'
-'কে শারমিন!!?'
-'ঈদের দিনে আপনার কথা মনে পড়ল। কেমন কাটল আপনার ঈদ?'
-'যাক অবশেষে এতদিন পরে তোমার নাম্বার পাওয়া গেল। তোমাকে ছাড়া কোন আনন্দ পাইনি শারমিন...আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না।'
-'আপনি পারবেন এই কথাটা আপনার বাড়ির সবাইকে বলতে!?'
-'দেখতে চাও?'
-'দেখেন ভাই, অনেক পাগলামি হয়েছে আর পাগলামি করবেন না বলে দিলাম।'
-'শারমিন তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?'
-'আপনাকে ভালবাসার সাহস আমার হচ্ছে না। আমি খুবই সাধারণ মেয়ে। আপনাদের বাড়ির যোগ্য আমি নই। যার যে জিনিস পাবার যোগ্যতা নাই, সেটা জোর করে নিলে ধরে রাখতে খুব কষ্ট হয়। আর আমি লোভী নয় যে আপনার সাথে আমাকে ঝুলে পড়তে হবে। আমি চাইনা গোটা গ্রামের লোক আর আপনাদের বাড়ির লোক আমাকে ছেলে ভুলানো রূপসী বলে ডাকুক।'
-'আচ্ছা আমি যদি আমার বাবা মাকে দিয়ে তোমাদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাই তুমি রাজি হবে?'
-'আমার বাবা মা রাজি হলে আমিও রাজি হব।'


আমি পরদিন বাবা আর মাকে ডেকে একসাথে বসালাম। আমি বাবাকে বললাম---
-'বাবা আমার কিছু কথা আছে।'
-'হ্যাঁ বল...'
-'বাবা আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।'
-'কোন মেয়ে!?'
-'ওদের বাড়ি রাখিপুর।'
-'রাখিপুর মানে আসাকুনির পাশে রাখিপুর?'
-'হ্যাঁ।'
-'মেয়েটা কি করে? বাবা কি করে?'
-'মেয়েটা বিএ পাস করেছে। বাবা মালয়েশিয়া থাকে।'
-'মানে প্রবাসী শ্রমিক?'
-'হতে পারে।'
-'কি!!!'
-'বাবা, ওর বাবা শ্রমিক তাতে কোন সমস্যা?'
-'দেখ মিনহাজ, তোমাকে ছোটবেলা থেকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে যাতে তোমার মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয়। তার মানে এই না তুমি সব বুঝে গেছ। তুমি একটা ধনী লোকের ছেলে হয়ে শ্রমিকের মেয়েকে বিয়ে করবে!!!, এতে তোমার নিজের এবং আমাদের পরিবারের সম্মান থাকবে?, তুমি কিভাবে এটা ভাবলে?'
-'বাবা আমি তো তার মেয়েকে বিয়ে করব। তার বাবার পরিচয়...'
-'চুপ কর বেয়াদব!! তোমার সামাজিক কোন জ্ঞানই এখনো হয়নি।... মিনহাজের মা তুমি ওর সাথে কথা বল। আমার ভালো লাগছে না...'

 পরদিন সকালে ফার্ম  এ আসার আগে মার সাথে কথা হল। আমি বললাম--
-'আচ্ছা মা, আমি বুঝতে পারছি না, শারমিন বিয়ে হয়ে এখানে আসবে। তাতে ওর বাবার পরিচয় দিয়ে কি হবে?'
-'মিনহাজ, তুই বুঝে দেখ, যখন কেউ আমাকে বলবে আপনার বেয়াই কি করে? তখন যদি বলি প্রবাসী শ্রমিক, শুনতে কেমন লাগবে? তাছাড়া তোর জন্য আমি ভাল মেয়ে দেখছি। তুই রাখিপুরে কেন বিয়ে করবি?'
-'মা আমাকে আগে বিয়ে দিলে আমি করতাম। কিন্তু আমি শারমিনকে দেখেছি, আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।'


আমি আসাকুনি আসলাম। মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে আছে। কি করি... কি করি... কিছুই বুঝছি না। বড় আপাদেরকে বললাম, দুলাভাইকে বললাম। সবাই বলছে ওখানে বিয়ে করা ঠিক হবেনা। আমার মনটা শিউরে উঠতে লাগল। একটা আসন্ন ঝড়ের গন্ধ পাচ্ছিলাম আমি।
সেদিন রাতে শারমিনকে ফোন করলাম---
-'শারমিন?'
-'হ্যাঁ বলেন। বাড়িতে বলেছেন?'
-'হ্যাঁ।'
-'কি বলল?'
-'আমাদের পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া উপায় নাই।'
-'অসম্ভব!!'
-'কেন?'
-'বিয়ে কেবল দুটো ছেলেমেয়ের ব্যাপার না। একটা বিয়েতে দুই পরিবারের অনেকের চাওয়া পাওয়া থাকে। সবাই ঠিক করে রাখে আর ভাবে, 'ওর বিয়েতে এই করব, ঐ করব। এসবের কি কোন দাম নাই?'
-'কিন্তু তারা তো কেউ রাজি না।'
-'আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম কেউ মানবে না।'
-'কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি শারমিন।'
-'দেখেন ভালবাসা ছাড়াও একটা সংসার টিকে রাখতে গেলে দুই পরিবারের অন্যান্য লোকেরও দরকার হয়। আমরা যদি সেটা না পাই তাহলে আমাদের সংসার সুখের হবেনা।'
-'তুমি আমাকে ভালবাস না?'
-'ভালোবাসি, কিন্তু আমার পরিবারের চেয়ে বেশী নয়। দেখেন, আপনি আমাকে ভালবাসলেন আর আপনার বাবা, আমার বাবাকে অপমান করল। আমার ভালো লাগবে? মানুষ কিন্তু সুখের চেয়ে দুঃখের কথাই মনে করে বেশী। আপনার ভালবাসার চেয়ে আপনার বাবার অপমানই আমার বিঁধবে বেশী। আমার বাবাকে অপমান করবে এমন পরিবারে আমি কিভাবে সুখে থাকব?'
-'এই তোমার মনের কথা?'
-'হ্যাঁ...'
-'তুমি তবে আমার সাথে আসছ না?'
-'সম্ভব না...'

আমি ফোন রেখে দিলাম। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। শারমিনের মতো দৃঢ়চেতা আমার জীবনে খুব দরকার ছিল। কিন্তু অমন পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান মেয়েকে ভালবেসে বড় বিপদে পড়লাম। আমার মন যে তাকেই চায়!!। কিভাবে কি করি?... মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না। উফফফ... কবিরা যা বলে গেছেন সেটা তো আসলেই ঠিক। প্রেমে আসলেই অনেক জ্বালা। এ দুঃখের কথা কাকে বলব? কিভাবে কি করব? কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।
একমাস কেটে গেল। শারমিন আবার ফেসবুক ডিএক্টিভেট করেছে। মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছেনা। বাড়ি যেতে সাহস পাচ্ছিনা। একবার মুখের উপর না বলেছে। এরপর তো বাড়ি যাওয়া যায়না। উফফফ...


শারমিনের কথা ভাবতে ভাবতে আরও দুই মাস কেটে গেল। অসহ্য যন্ত্রনার মাঝে দিন কাটছে আমার।
একদিন এক লোক ফার্ম এ আসল। বলল---
-'ভাই আপনারা মুরগি পাইকারি দিবেন?'
-'আমরা পাইকারি দেই তো। কয়টা নিবেন?'
-'এইতো ৫০টা হলেই আমার হয়ে যাবে। বাড়িতে অনুষ্ঠান কালকে। আমার মেয়ে নাকি এখান থেকে নিয়ে যায়।'
-'আপনার মেয়ে?'
-'হ্যাঁ।'
-'ভাই আপনার বাড়ি রাখিপুর?'
-'হ্যাঁ তো...কিভাবে জানলেন?'
-'না মানে রাখিপুরের এক মেয়ে এখান থেকে মুরগি নেয়। শারমিন নাম।'
-'আমারই মেয়ে ভাই। কাল বিয়ে তার। সেই জন্যই মুরগি কেনা। আমি বিদেশ থেকে ছুটিতে আসছি। ভাবলাম মেয়েটার বিয়ে দেই।'
-'ভাল কথা ভাই...'
আমার বুকের ভিতর হুহু করে উঠল। সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছিল। কোনোমতে শারমিনের বাবাকে বিদায় করে দিলাম।
আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কোথা থেকে কি হয়ে গেল?!! দুনিয়ার সবাই এতো নিষ্ঠুর কেন? আমার ভালবাসার দাম কেউ দিল না। আমি শারমিনকে ছাড়া কিভাবে থাকব? তাকে কিভাবে ভুলে থাকব? সবার উপর রাগ ধরে গেল। আমি সবার জন্য ভাবি। কেউ আমাকে একটু বুঝবে না? কালকে শারমিনের বিয়ে, আমি কিছু করতে পারছি না। এ যেন ঝড়ের মুখে মাটিতে শুয়ে থেকে ঝড়ের তাণ্ডব দেখা।


পাঁচ বছর কেটে গেছে। এই পাঁচ বছর আমি শারমিনের বিরহের আগুনে পুড়ে পুড়ে নিজেকে শক্ত করেছি। শারমিনের বিয়ের পর নিজেকে খুব দুর্বল আর অসহায় মনে হয়েছিল। কিন্তু আমি আমার মনকে বুঝিয়েছি। আমি একজন পুরুষ। আমার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে। এই ফার্মকে উন্নত করতে হবে।

আজ সকালে আমার ফার্ম এর অফিসে বসে আছি। বসে থেকে অতীতের কথা ভাবছি। জীবনটা আমার গুছিয়ে এসেছে। ঠিক করেছি আর কোন মায়ায় জড়াব না। বাবা মা আমাকে বিয়ের জন্য অনেক কথা বলেছে। আমি বলেছি একবার শারমিনের মায়ায় পড়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর কোন মেয়ের মায়ায় জড়াব না।
আপা দুলাভাইরা আমাকে অনেক করে বিয়ের, সংসারের গুরুত্ব বুঝিয়েছে। আমি তাদের বলেছি, 'আজকে তোমরা আমাকে বিয়ের গুরুত্ব বুঝাচ্ছ, যখন শারমিনকে পেতে তোমাদের সমর্থন চেয়েছিলাম, তোমরা কোথায় ছিলে?'
তারা আমাকে আর কিছু বলেনি। জীবনে তো সব চাওয়া পূরণ হয়না। আমি শারমিনকে পাইনি। অন্য একজন আরেক জিনিস পায়নি, এভাবেই সবাইকে চলতে হবে।

ফার্মের গেট দিয়ে ঢুকলেন এক মহিলা। সাথে বছর তিনেকের এক ছেলে। এ তো!!... এ তো!!... শারমিন!! আগের মতো চেহারা আছে। তবে গায়ের রং কিছুটা বদলে গেছে। কিছুটা স্বাস্থ্যও বেড়েছে। তবে মুখের সৌন্দর্য অটুট আছে। আমার বুকের বিট বেড়ে গেল। কিন্তু আমার মন আমাকে বুঝাল, 'মিনহাজ তুমি আর মায়ার টানে পড়বে না। যাকে তুমি দেখছ সে এককালে তোমার ছিল। এখন তোমার নাই। অন্যের জিনিসের উপর ঝুঁকে পড়া তো তোমার স্বভাববিরুদ্ধ মিনহাজ। তুমি আর শারমিনের মায়ার ফাঁদে পড় না।'
আমি আমার মনের কথা শুনলাম। মহিলাটা আমার অফিসে ঢুকে বললেন--
-'কেমন আছেন মিনহাজ?'
-'ভাল। কিছু বলছেন আপা?'
-'আমাকে চিনতে পারেননি মিনহাজ?'
-'চিনেছি। তুমি সুন্দরের উপমা, সুন্দরের তিলোত্তমা, প্রতারণার রাণী, ছলনার কাহিনি...'
-'আমার উপর রাগ করেছেন?'
-'না। তুমি তো আমাকে বলেই দিয়েছিলে... আমি শুধু শুধু একটা অসম্ভবের স্বপ্ন দেখছিলাম।'
-'মানে?'
-'যাক, এটা তোমার ছেলে?'
-'হ্যাঁ। আপনার ছেলে মেয়ে কয়টা?'
-'আমি আর কারো মায়ার ফাঁদে পড়ছি না।'
-'মানে?'
-'আমি বিয়ে করিনি।'
-'কেন, জানতে পারি?'
-'জানতে পার না। বল কেন এসেছ?'
-'তোমাকে দেখার জন্য আসলাম। বাবার বাড়ি আসছিলাম তো...'
-'হাহাহা... যখন দেখার দরকার... তখন দেখা দাওনি। এখন অন্যের স্ত্রী হয়ে প্রেমিককে দেখতে এসেছ? শারমিন তুমি সেদিন একবারও আমাকে বলনি ভালোবাসি। বললে আজকে আমার জীবনটা অন্য রকম হতে পারত। আমি একজন মানুষ, আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল। আমি চেয়েছিলাম সেই প্রেম দিয়ে আমার জীবন সাজাতে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে আমি তোমার আস্থা অর্জন করতে পারিনি। জীবনের প্রথম সাধ-স্বপ্ন ভেঙে গেছে আমার। আগে বইয়ে পড়েছিলাম, কাউকে বেশী ভালবাসতে নেই। তাহলে কষ্ট পেতে হয়। তখন কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি। এখন বিশ্বাস করছি কথাটা। আমি যদি তোমাকে পাগলের মতো ভালো না বাসতাম, তবে এতখানি কষ্ট পেতাম না। আমি আর এমন ভুল করব না। সবাই সবকিছু পায়না, আমি একাই পথ চলতে চাই...'
-'আমি দুঃখিত...আমি দুঃখিত...'
শারমিন চলে গেল। আমি চোয়াল শক্ত করলাম। আমি কখনও আর মায়ায় জড়াব না। আমি এই ফার্ম, এই পরিবেশ, এই বাগান, এই সবুজ, এই জোৎস্না, এই রাত্রি নিয়ে বেশ আছি...।


তিনদিন পরে আমার ফার্মের ঠিকানায় একটা চিঠি এল---

প্রিয় মিনহাজ,
আমাকে ক্ষমা কর। তুমি শুধু আমাকে ভালবেসেই গেছ আমি বুঝেছি। কিন্তু আমি জানতাম তুমি তোমার পরিবারের কাউকে আমার ব্যাপারে রাজি করাতে পারবে না। তাইতো আমি সব সময় তোমাকে দূরে রেখেছি। যদিও আমার প্রেমময় অবচেতন মন মাঝে মাঝে তোমাকে চেয়েছে। আমি তোমাকে ভালবেসেছি কোন পরিণতির কথা না ভেবেই। আমি জানতাম আমাদের প্রেম কখনো সার্থক হবেনা। আমাদের প্রেমটা একটা দেয়াল দিয়ে আড়াল করা ছিল। তোমার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে। এই দেয়ালে তুমি আটকে গিয়েছিলে। আমি ঐ দেয়ালে আটকা পড়লেও তা থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছিলাম। আমাকে ক্ষমা কর। তুমি আমাকে অনেক ভালবেসেছ কিন্তু আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। শুধু এটা মনে রেখ শারমিন নামের একটা মেয়ে একসময় তোমাকে পাবার স্বপ্ন দেখেছিল...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipok Kumar Bhadra শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
Jamal Uddin Ahmed অনেক অভিনন্দন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা দাদাভাই
ফয়জুল মহী   লেখাটি ভীষণ ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

দুজন মানুষ নিজেদের আপন করে পেতে চাইলেই সবসময় পারেনা। তাদের মাঝে একটা অদৃশ্য দেয়াল থেকে যায়...

১১ জুন - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২০ টি

সমন্বিত স্কোর

৩.৯৭

বিচারক স্কোরঃ ২.৫৭ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ১.৪ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪