ভগ্ন যাত্রার অগ্নিগান

প্লেন ক্র্যাশ (সেপ্টেম্বর ২০২৫)

ওয়াহেদ কাজী
  • 0
  • ২৯
মেঘলা দুপুর, কুর্মিটোলা আকাশ,
ঝড়ের গর্জনে থেমে গেল শ্বাস।
একটি প্লেন, আশার চিহ্ন,
সেই আকাশেই হারাল দিকবোধ, নিঃশব্দে বিছিন্ন।

শিশুরা হাসলো, বইখাতা খুলে,
স্বপ্নে ছুঁয়েছিল তারা সূর্যের কূলে।
কিন্তু মুহূর্তে এলো আগুনের চুম্বন,
স্কুলঘরটা হল এক দাহ্য বন্ধন।

ছেঁড়া খাতার পাতা উড়ে যায় হাওয়ায়,
পোড়া ইউনিফর্ম পড়ে থাকে ছায়ায়।
চোখে যে ছিলো মায়াবী আলো,
আজ সে নিঃপ্রাণ, নিস্তব্ধ, কেবলই ছায়া কালো।

ঢাকা মেডিকেল, শীতল গন্ধ,
মর্গে সারি সারি, পুড়ে যাওয়া দেহরন্ধ।
শিশুর হাতে পেন্সিল গলে গেছে,
স্মৃতির আঁচড় হৃদয়ে রয়ে গেছে।

"জানলার পাশে বসেছিল মেয়ে",
বললেন এক মা, নিঃশব্দ বুকে ব্যথা নিয়ে।
কচি অবুঝ মেয়েটির বয়স ছিল নয়,
সে আজ শুধু দুঃস্মৃতি, এক শোকের ক্ষয়।

অন্য প্রান্তে ভারতের আকাশ,
বিমানের ভগ্ন ডানায় উড়ে গেল মৃত্যুর নিঃশ্বাস।
মেডিকেল কলেজ, ছেলে-মেয়েরা খাচ্ছিল,
অন্য ভবনে ছাত্র, কেউ হাসছিল, কেউ স্বপ্ন দেখ ছিল।

হঠাৎ আগুনে ছুটল বিভীষিকা,
কণ্ঠে কণ্ঠে বাজল মৃত্যুর দহিকা।
খাবারের থালা রইল অগ্নির তলে,
তরুণ স্বপ্ন ঝরে গেল অনন্ত ছলে।

লন্ডন থেকে এক স্বপ্ন যাত্রা,
প্রতীক, কোমী আর তিন সন্তান সাথা।
সেলফি তুলেছে, চোখে নতুন সকাল,
বিমানে চেপেছে – ফিরবে না আর কাল।

দু’দিন আগেও ছিল হাসি, ঘরবসতি,
আজ ছাই, কফিন, আর এক শূন্য গহ্বরের গীতি।
স্বপ্ন যে পুড়ে গেলো আকাশের বুকে,
কে দেবে তার জবাব, কে রাখবে তাদের সুখে?

ভারত-বাংলার বুক জুড়ে জ্বলে,
শোকের আগুন, চোখে কান্না গলে।
এই কি তবে নিয়তি লেখা?
এই কি সভ্যতার মুখে এক নিঃশব্দ তামাশা?

শিশুর মৃত্যুর প্রশ্ন কে নেবে কাঁধে?
বিমানের মেরামতি, ভবনের বাধে?
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, রাজনীতি, ব্যর্থ কাঠামো,
সব মিলিয়ে হলো শুধু ছাইয়ের সাম্যবাদের প্রণাম।

জীবন এক থালা কাঁচের স্বপ্ন,
এক মুহূর্তেই ভাঙে, শেষ হয় সম্ভ্রম।
কাল যে আসবে – এমন কথা কে বলেছে?
আজকেই বাঁচো, এমন জীবনই তো শেষ পর্যন্ত রচে।

মায়ের চোখে রাত জেগে থাকা,
বাবার হাতে মেয়ের পুড়ে যাওয়া ফ্রক রাখা।
এই দৃশ্য যেন কেউ না দেখে আর,
এই প্রার্থনাই হোক এখন সার্বজনীন আদর্শের দ্বার।

আল্লাহ, হে ঈশ্বর, হে পরম করুণা,
এই মাটি যেন না গিলে ফেলে করো করুণা।
আর যেন না কাঁদে প্রতীকের ছবি,
শিশুর মৃত্যুতে না লিখে কোনো কবি।
ভারত-বাংলা, দুই নদীর দেশ,
স্বপ্ন দেখে, গড়ে তোলে, আবার সব হয় শেষ।

কিন্তু থেমে যাবে না ভালবাসা,
এই মৃত্যু ছাপিয়ে উঠে আসবে নতুন বিশ্বাসের আশা।
শিশুর হাসি, শিক্ষার আলো,
জীবনের জয়গান, মানবতার জন্য ভালো।
ছাইয়ের নিচে একদিন ফুটবেই ফুল,
এই প্রতিজ্ঞায় বাঁচুক ভারত ও বাংলার স্কুল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মেহেদী মারুফ বাহ! অত্যন্ত চমৎকার ভাবে আপনার ছন্দময় কবিতা উপস্থাপন করেছেন। পড়তে বেশ আরাম লাগছিলাম। তবে কাহিনীটা বুক ভেদ করে হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করছিলো। দুই ভিন্ন বাংলায় ঘটে যাওয়া বিমান দূর্ঘটনা একই প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠেছিলো। "এমন আর না হোক, হৃদয়ে আগুন লাগানো শোক।" শুভ কামনা রইলো!
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি ভালো কবিতা কাহিনী বিন্যাস বেশ সুচারু ভাবে ফুটে উঠেছে। অন্তমিল গুলোও ভালো। অনেক ধন্যবাদ কাজী ভাই।
ফয়জুল মহী বেশ চমৎকার একটা কবিতা। শুভকামনা সবসময় কবি।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এই কবিতাটি সরাসরি “প্লেন ক্র্যাশ” এবং “দুর্ঘটনা-জনিত মৃত্যুর বেদনা” বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত। কুর্মিটোলার আকাশে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে স্কুলশিশুর প্রাণহানি, পোড়া খাতা, ছেঁড়া ইউনিফর্ম—সবকিছু এখানে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। শুধু বিমানের দুর্ঘটনাই নয়, ভারতের আহমেদাবাদে মেডিকেল কলেজ দিনের উপরে বিমান ভেঙে পড়া কিংবা এক পরিবারের লন্ডন থেকে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া—এসব ঘটনার সমান্তরাল বর্ণনায় কবিতাটি একটি বৃহত্তর মানবিক ট্র্যাজেডির চিত্র তুলে ধরে। কবিতায় ফুটে উঠেছে শিশুর হাসি, বই-খাতা, পেন্সিল—যা মুহূর্তেই ছাই হয়ে গেছে। আবার দেখা যায় বাবা-মায়ের আর্তনাদ, ঢাকা মেডিকেলের মর্গের শীতলতা, কিংবা এক মায়ের ভাঙা হৃদয়ের স্মৃতি। এই চিত্রগুলো “প্লেন ক্র্যাশ” বিষয়কে শুধু একটি দুর্ঘটনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং সমকালীন সমাজে অবহেলা, দুর্বল অবকাঠামো, এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফলে ঘটে যাওয়া মৃত্যুকে একই সূত্রে গেঁথে তুলেছে। সবশেষে কবিতাটি মৃত্যু ও ধ্বংসের ওপরে উঠে আসে এক আশার আলোয়—যেখানে শিশুদের হাসি, শিক্ষার দীপ্তি, আর মানবতার জয়গান ধ্বনিত হয়। তাই এই রচনা শুধু প্লেন দুর্ঘটনার বেদনা নয়, বরং ভারত-বাংলার অভিন্ন শোক ও নতুন আশার অঙ্গীকারকে ধারণ করে, যা “প্লেন ক্র্যাশ” বিষয়টির সঙ্গে গভীর সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১৬ মার্চ - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "হতাশা”
কবিতার বিষয় "হতাশা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর,২০২৫