মুক্ত করো ভয়

দাসত্ব (এপ্রিল ২০২৫)

Lubna Negar
  • 0
  • ২৮
রাত দুটোর উপরে বাজে। ঘড়ি না দেখেও আন্দাজ করে মহসিন। রাস্তা সুনসান নীরব। ধানমন্ডি সাতাশ নম্বর ব্যস্ত সড়কে লোকজন নেই বললেই চলে। তবু রাস্তায় বের হওয়ার পর দূরে নাইটগার্ডের উচ্চকন্ঠ শোনা যাচ্ছে। মহসিন যে বাড়ির সামনে দাড়িঁয়ে আছে সেটার নাম পর্ণকুটির। নাম পর্ণকুটির হলেও বাড়িটা টালির ছাদবিশিষ্ঠ তিনতলা সুরম্য অট্টালিকা। চিত্রনায়িকা সুহানার বাসস্থান। মহসিন ঢাকার একটা বহুল প্রচারিত পত্রিকার কর্মরত সাংবাদিক। বর্তমান বিনোদন জগতে টপ নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম সুহানা। তার স্বল্প বসনা নিটোল দেহ, সুশ্রী মুখায়ব আর চাউনির মাদকতার জন্য সে তরুণ প্রজন্মের কাছে রীতিমত হার্টথ্রব।
সুহানার সর্বশেষ আ্যফেয়ারের ভাঙ্গন আর উঠতি নায়ক আদনানের সাথে তার প্রেমের খবর প্রায় দিনই বিভিন্ন পত্রিকার বিনোদন পাতায় বের হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম তো বটে, কিশোররাও খবরগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মহসিন এইসব চটকদার খবরের যোগানদার। আজ সুহানার ফ্ল্যাটে তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য মহসিন গিয়েছিল। সময় আগে ঠিক করা ছিল। সুহানা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছে। শুটিংয়ের শিডিউল তো আছে। তাছাড়াও তাকে বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে হয়। আজ তার বাড়িতে পার্টি ছিল। তার দুই বছরের ছেলের জন্মদিন। সুহানা মহসিন কে ইচ্ছা করে আজ ইন্টারভিউয়ের জন্য সময় দিয়েছে। সে চেয়েছে অনুষ্ঠানটার কথা মিডিয়ায় প্রচার হোক। তার নতুন সিনেমা রিলিজ হবার আগে এই প্রচারনা বেশ কাজে লাগবে।
ইন্টারভিউয়ের সময় সুহানা বলছিল, মহসিন ভাই, আপনারা সাংবাদিক। কেচ্ছা রটিয়ে খালাস। এদিকে একটা মুভি হিট করার জন্য আমাদের কত কৌশল অবলম্বন করতে হয়। মহসিন বোকার মতো প্রশ্ন করেছিল, ফিল্ম স্টার হওয়ার সাথে মাতৃত্বের সম্পর্ক কি? আমরা তো জানি কোনো নায়িকা মা হয়েছে জানতে পারলে দর্শকের কাছে তার আবেদন কমে যায়। রহস্যময় হেসে সুহানা বলে, যুগের পরিবর্তনের সাথে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়। বর্তমানে মানুষ স্বল্প বসনা নায়িকা অথচ কোলে শিশু এই ধরণের ইমেজ পছন্দ করছে। রবিনকে আমি ভেবেচিন্তে দত্তক নিয়েছি। ফিল্ম ইনডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে নটি থেকে মা গিরি সবই করতে হয়।
সুহানার বাড়িতে আপ্যায়ন, মদ্যপান সব পেয়েছে মহসিন। এখন সে নেশাগ্রস্থ। রাস্তায় হাটঁতে গিয়ে সে ভারসাম্য রাখতে পারছে না। এই সময় তার প্রায় শরীর ঘেষে একটা সাদা টয়োটা চলে যায়। ঘাড় ফিরিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে একটা মুখ ক্ষণিকের জন্য চোখে পড়ে। সুহানা তার রাত্রিকালীন ডিউটি তথা অভিসারে বের হয়েছে। মহসিন জানে কোন মন্ত্রীর বাড়ির সদর দরজার সামনে এই গাড়ি থামবে। আগামীকাল পত্রিকার পাতায় সুহানার নতুন প্রেম, মাতৃত্ব, এবং আসন্ন মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা সম্পর্কে খবর বের হবে। শুধু এই অভিসারের কথা কেউ জানবে না। কারণ এইসব খবর প্রকাশিত হয় না।
এলোমেলো ভাবে হাটঁতে হাটঁতে হঠাৎ মহসিনের সমরেশ মজুমদারের কথা মনে পড়ে। পৃথিবীর সব হেমা মালিনীদের কারা পায়? সমরেশ বাবু প্রশ্ন করেছিলেন। ধর্মেন্দ্র আর রাজেশ খান্নারা? না, তাদের পায় মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ আমলা এবং কোটিপতি ব্যবসায়ীরা। একদা মহসিন যাদের বলতো শোষক শ্রেণী। স্বৃতিটুকু মনে আসায় চমকে ওঠে মহসিন।
আজ থেকে ঠিক বার বছর আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ভবনের ক্যাম্পাসে হাটঁছে মহসিন। পাশে রানু। তখন সে আবর্জনার কীট খোজাঁ সাংবাদিক নয়। বাইশ বছরের টগবগে তরুণ। বর্ষাকালে সারি সারি কৃষ্ণচুড়া গাছে আগুন রাঙ্গা ফুল ফুটেছে। তার তলা দিয়ে হেটেঁ চলেছে। মহসিন আর রানু। মহসিন তুখোর ছাত্রনেতা। তার দুই চোখে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। এক পাঠচক্রে রানুর সাথে পরিচয় হয়। শ্যামাঙ্গী , তন্বী রানু ছিল নাট্যকলার ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে কণ্ঠশীলনে আবৃত্তির ক্লাস নেয়। একদিন স্টাডি গ্রুপে মহসিন আর তমালের মধ্যে তুমুল তর্ক হয়। মহসিন বলছিল, ট্রটস্কি ঠিকই বলেছে, পৃথিবীর বড় বড় পরাশক্তিধর দেশগুলোতে বিপ্লব সংঘটিত না হলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। তমাল উত্তেজিতভাবে বলে, চীন তো বিপ্লবের আগে পরাশক্তি ছিল না। তবু সেখানে বিপ্লব সফল হয়েছিল। কোনো দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ঠ্য অনুযায়ী সেই দেশে রণকৌশল নির্ধারন করতে হয়।
আরেফ ভাই মনযোগ দিয়ে দুই জনের কথা শুনছিলেন। তার মুখে মৃদু হাসি। হঠাৎ তিনি দুইজন কে থামিয়ে বলেন, আমরা অনেকক্ষণ ধরে আলোচনা করছি। এখন রানু, তুই একটা কবিতা পড়। মহসিন চোখ তুলে রানুর দিকে তাকায়। রানুর আচরনে কোনো আড়ষ্ঠতা নেই। নিজের জায়গায় বসে উদাত্ত কণ্ঠে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পড়ে,
বন্ধু ফুল খেলবার দিন নেই অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
হয় হোক সে অতি দূর্গম যাত্রা
চিনে নেবে যৌবন আত্না।
তমাল মারা গিয়েছিল ক্রসফায়ারে। আরেফ ভাই আন্ডারগ্রাউন্ডে আত্নগোপন করে আছেন। কিন্তু মহসিন তো রানু কে পেয়েছে। তবে কেন সে পুজিঁর দাসত্ব মেনে নিলো? বিত্ত, বেসাতির কাছে আত্না বিক্রী করলো?
ট্যাক্সিক্যাব এসে মিরপুর রোডে দাড়াঁয়। রাত তিনটার সময় শুক্রাবাদ এলাকার ঘুপচি গলির ভিতর ড্রাইভার যেতে রাজী হয় না। অগত্যা মহসিন প্রধান সড়কে নেমে পড়ে। তারপর টলতে টলতে হাটাঁ শুরু করে। মূল সড়ক থেকে দুটো গলির পর চারতলা বাড়ি। বাড়িটি পাকিস্তান যুগে নির্মিত। মুক্তিযুদ্ধের পর বাড়ির বিহারি মালিক পাকিস্তানে সপরিবারে চলে যায়। বর্তমান বাড়িওয়ালা তখন নামমাত্র দামে বাড়িটা কিনে নেয়। এখন জীর্নদশা দেখে বোঝা যায় বাড়ির সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান মালিকের বিভিন্ন ওয়ারিশের মধ্যে দ্বন্ধ থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। রানু বাড়িওয়ালার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর প্রথম সন্তান। এই বাড়িতে তার জন্ম। শৈশবে মায়ের ঝি গিরি আর চরম বঞ্চনা তাকে পৃথিবী সম্পর্কে ভিন্ন জ্ঞান অর্জন করতে সমর্থ করেছে। লেখাপড়া করাটা ছিল রানুর জন্য রীতিমত যুদ্ধ। নিজের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ কে সে জীবনে পেয়েছে। কিন্তু রানু কি এই চেয়েছিল?
সদর দরজায় দাড়িঁয়ে মহসিন রানু কে ফোন করে। রানু নিঃশব্দে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসে দরজা খোলে । মহসিন স্ত্রীর দিকে তাকায়। রানু নীরব। গাড়ি বারান্দার ম্লান আলোয় রানুর মুখে নির্বিকার ঔদাসীন্যের ছাপ স্পষ্ট। মহসিন খেকিঁয়ে ওঠে, কখন থেকে ফোন করছি। দরজা খুলতে এত দেরী হয়? রানু শান্তভাবে বলে, চীৎকার করো না। ঘরে চলো। মহসিনের রাগ আরও বেড়ে যায়, বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ সবই তো মাসে মাসে পায়। দারোয়ান এসে গেট খুলতে পারে না? রানু ঠান্ডা গলায় বলে, মাতলামি করতে চাও, তোমার স্যাঙ্গাতদের সাথে করবে। এখন রাত তিনটা বাজে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তুমি ইচ্ছা হলে ঘরে চলো নয়তো বাইরে থাকো। আমি গেট বন্ধ করে চলে যাচ্ছি। মহসিন ক্রোধে কাপঁতে থাকে। তবে মাতাল হলেও তার বাস্তব বুদ্ধি বলে, এই সময় ঝামেলা করা ঠিক হবে না।
ঘরে ফিরে মুখ ধোয়ার পর মহসিন কিছুটা স্থির হয়। আর তখন চোখে পড়ে টেবিলের উপর তার জন্য ভাত তরকারি ঢাকা দেয়া রয়েছে। পাশে পায়েসের বাটি। কাল অন্তুর জন্মদিন ছিল। মহসিন অন্তু কে কথা দিয়েছিল, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরবে। মাকে এড়িয়ে গোপনে বাবার কানে ফিসফিস করে সে বলেছিল, আমার জন্য একটা লাল হারমোনিয়াম নিয়ে এসো। অন্তুর কণ্ঠটা রানুর মতো সুরেলা। এই আট বছর বয়সেই মায়ের কাছে বসে আধ ঘন্টা রেওয়াজ করে। রীতিমত সাধনা। এতক্ষণে নিজের উপর রাগ হয় মহসিনের। সে তো অন্তত ছেলের জন্য উপহারটা আনতে পারতো। রানুর দিকে তাকিয়ে বিব্রত স্বরে বলে, সারাদিন অফিসের কাজে আটকে ছিলাম। বিকালের পর দুই জায়গায় যেতে হয়েছে। ইন্টারভিউটা জরুরি ছিল। মহসিন হয়তো আরো কিছু বলতো। কিন্তু রানুকে দেখে থেমে যায়। কঠিন স্বরে রানু বলে, ফিল্ম স্টার সুহানার ইন্টারভিউ? ওসব আমার শুনে কাজ নেই। আবর্জনা যত ঘাটা যায়, ততো দূর্গন্ধ ছড়ায়। রাত বাড়ছে শুয়ে পড়ো।
ভোর হতে আর বেশি বাকি নেই। রানু ছেলে কে নিয়ে মেঝেতে বিছানা করে শুয়েছে। তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। খাটে মহসিন একা শুয়ে আছে। ঘন্টাখানেক পার হলেও তার ঘুম আসছে না। একটা অস্বস্তিকর চিন্তা তার মনে ঘুরপাক দিচ্ছে। হ্যাঁ, সে নিজের আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছে। সরকারি দলে যোগ দিয়েছে আত্নপ্রতিষ্ঠার জন্য। এখন সে সচ্ছল। ইচ্ছা করলে স্ত্রী পুত্র নিয়ে বারিধারা বা উত্তরার মতো জায়গায় ভাড়া থাকতে পারে। উচ্চ মধ্যবিত্তের কাতারে নাম লেখাতে পারে। কিন্তু রানুর এই ঔদাসীন্য তাকে পীড়িত করে। অথচ বছর দশেক আগে বিয়ের প্রথম দিনগুলোতে এক বেলার বেশি খাবার জুটতো না। তিনটে টিউশনি করে মহসিন যখন ঘরে ফিরতো রানুর দুই চোখে তখন ভালোবাসার অঞ্জন। মহসিনের বুকটা মমতায় ভরে যেত। তখন স্বামীর পাশাপাশি রানুও চাকরির চেষ্টা করছে। বিছানায় বালিশের পাশে সাধারণ জ্ঞানের বই ছাড়াও ছিল কার্ল মার্কসের দাস ক্যাপিট্যালের প্রথম খন্ড। কিঞ্চিত অবসর পেলে রানু এই দুরহ বইটা বোঝার চেষ্টা করতো।
মহসিন নিজে কে বোঝায় জীবনে উন্নতি করতে কে না চায়? হ্যাঁ, সে উপরের সিড়িতে ওঠার জন্য কিছু অন্যায় কাজ করেছে। তমালের গোপন অবস্থান সম্পর্কে পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছিল মহসিন। কিন্তু রানু বা অন্তুর প্রতি সে তো কোনো অবহেলা করেনি। তবু রানু কেনো আজ তার কাছে অপরিচিত?
মহসিনের ঘুম ভাঙ্গে সকাল দশটায়। অন্তু অনেক আগে উঠে পড়েছে। মেঝেতে মাদুর পাতা। সেখানে বসে মুড়ি খাচ্ছে। মহসিনের মনে পড়লো, আজ সকাল সাড়ে দশটার দিকে অন্তু শিশু একাডেমীতে যাবে। রানু প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। সপ্তাহের অন্যান্য দিন তার চাকরি ছাড়াও টিউশনি থাকে। তবু শুক্রবার সময় করে অন্তু কে নিয়ে সে আবৃত্তি ক্লাসে যায়। বাবার ঘুম ভেঙ্গেছে দেখছে অন্তু মিঠে করে হাসে। তার চোখেমুখে কোনো নালিশ বা অভিমান নেই। মহসিন খাট থেকে নেমে এসে ছেলের পাশে বসে। এক হাতে অন্তু কে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করে, আজ তোরা কি কবিতা প্রাকটিস করবি? অন্তু বলে, আজ আমরা কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা পড়বো। আগামীকাল ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে এই কবিতা সমবেতভাবে আবৃত্তি করবো। মহসিন বলে, পড় দেখি কি কবিতা। অন্তু তার কচি কণ্ঠে আবৃত্তি শুরু করে,
তোমরা মুকুল, ফুটিবার আগে
তোমাদের গায়ে গোলামির ছোয়াঁ না লাগে।
গোলামির চেয়ে শহিদী দরজা
অনেক উর্ধ্বে জেনো,
চাপরাসির ঐ তকমার চেয়ে
তলোয়ার বড় মেনো।
স্নান শেষ করে রানু একদম তৈরী হয়ে ঘরে আসে। তার পরনে হালকা গোলাপী তাতেঁর শাড়ি। সাদা চিকন পাড়। মুখখানা প্রসাধন বর্জিত। সংসারের খরচ রানু চালায়। মহসিন শুধু বাড়ি ভাড়া দেয়। মাঝে মাঝে মহসিনের মনে হয়, আর্থিক সঙ্গতি থাকলে রানু তার টাকা স্পর্শ করতো না। ঘরে প্রবেশ করে রানু অন্তু কে তাড়া দেয়, ক্লাসে দেরী হয়ে যাবে। শার্ট পড়ে নাও। টেবিলের উপর মহসিনের নাস্তা ঢাকা দেয়া আছে। ওরা চলে গেলে একটা বিষন্নতাবোধ মহসিন কে আচ্ছন্ন করে। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তমালের মুখটা স্বৃতিতে ভেসে আসে।
মধুর ক্যান্টিনে বসে তমাল বলতো, এক টুকরো রুটি, বাচার জন্য একটু আশ্রয়, এর জন্য সব ছলনা, প্রতারনা করতে হবে। চরম নিচ অবস্থানে নেমে পরষ্পরের সঙ্গে মারামারি করতে হবে। না, না এই জীবন অসহ্য। আশ্চর্য বিশ্বাস ছিল ওর আদর্শের প্রতি। মাঝে মাঝে ছেলে মানুষের মতো মাথা নেড়ে প্রশ্ন করতো, মানুষ আর কত দিন মিথ্যা কথা বলবে? মহসিন এড়িয়ে যেতে চাইলেও প্রশ্নটা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
মহসিন হাত বাড়িয়ে তার ল্যাপটপ চালু করে। কিছুক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে সুহানা বা অন্য কোনো নায়িকার ছবি নেই। ডেস্কটপে চারমাস আগে টাইপ করা তিন কিস্তির একটা রিপোর্ট আছে। রিপোর্টটা মহসিন অনুসন্ধানী তদন্তের ভিত্তিতে তৈরী করেছে। রিপোর্টের শেষে তথ্য, প্রমাণের উৎসের কথা উল্লেখ করেছে। গত চারমাস মহসিন কয়েকশ বার ভেবেছে রিপোর্টটা ডিলিট করবে। কিন্তু সে করেনি। মহসিন মোবাইলে একটা নম্বরে ফোন দেয়। নম্বরটা সেভ করা না থাকলেও তার মুখস্থ আছে। দুইবার রিং হবার পর একটা পুরুষকণ্ঠ ফোন রিসিভ করে বলে, কে মহসিন?
আপনি আমার কথা মনে রেখেছেন, আরেফ ভাই? মহসিন প্রশ্ন করে। আরেফ রহমান মৃদু হেসে বলেন, জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে পরিচয় হয়। কারো কারো কথা মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে। মহসিন বলে, আরেফ ভাই, আমি আপনাদের গণশক্তি পত্রিকায় একটা রিপোর্ট প্রকাশ করতে চাই। আরেফ রহমানের প্রশ্ন, তোমার রিপোর্টের বিষয়বস্তু কি?
কুইক রেন্টাল পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারের দূর্নীতি প্রসঙ্গ। মহসিন উত্তর দেয়। আরেফ রহমান কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন, তুমি রিপোর্ট নিয়ে আজ বিকালে আমাদের পার্টি অফিসে দেখা করতে পারবে? মহসিন সম্মতি জানায়।
মহসিনের রিপোর্টের প্রথম কিস্তি প্রকাশ হওয়ার পর দেশব্যপী আলোড়ন পড়ে যায়। সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা রিপোর্টটা যে মিথ্যা সে সম্পর্কে সর্বাত্নক প্রচারনা চালায়। গণশক্তি পত্রিকার সার্কুলেসন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ সোমবার। সারাদিন বাইরে তপ্ত রোদ ছিল। এখন সন্ধ্যা। সূর্যাস্তের পরও প্রকৃতি শীতল হয়নি। ঘরে মহসিন চুপচাপ বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার পাশে রানু তাকে নিঃসাড়ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জানার পর থেকে রানু তাকে এক মূহুর্তের জন্য চোখের আড়াল করেনি। রিপোর্ট প্রকাশের পর মহসিনের চাকরি চলে গেছে। রাত ক্রমে বাড়ছে। জানালা খোলা ছিল। বাইরে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। সেই সাথে বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জন।
ওরা এসেছিল মধ্যরাতে। বাইরে তখন মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। গেটের সামনে জীপগাড়িটা থামে। ওরা ছিল ছয়জন। অনেকক্ষণ করাঘাত করার পর মহসিন গিয়ে দরজা খোলে। ওরা নিজেদের সাদা পোশাকধারী পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। মহসিন কে নিয়ে যাবার সময় রানু সর্বশক্তি দিয়ে বাধাঁ দেয়া চেষ্টা করেছিল। অন্তুর চোখেমুখে বোবা আতঙ্ক। পৃথিবীর পাঠশালায় তার নতুন পাঠ শুরু হলো। গাড়িতে ওঠার সময় মহসিন এক ঝলক ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ প্রকৃতি দেখতে পায়। ঝড়ের ভয়ঙ্কর একটা সৌন্দর্য আছে যা বিদ্রোহের প্রতীক। মহসিন বুঝতে পারে সে আর কোনো দিন ঝড় দেখতে পারবে না।
ওরা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? পুলিশের হেফাজতে? জেলখানায়? অথবা আয়নাঘরে? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মহসিন ভাবে, মুক্তির পথ সর্বদা দীর্ঘ হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহাবুব হাসান খুব ভালো লাগল গল্পটা। ঝরঝরে লেখনী, গল্পের ভেতরে গল্প। বেশ হয়েছে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

রাত দুটোর উপরে বাজে। ঘড়ি না দেখেও আন্দাজ করে মহসিন। রাস্তা সুনসান নীরব।

০৩ মার্চ - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৩৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "সংসার”
কবিতার বিষয় "সংসার”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৫