রূপকথা

শীতের সকাল (জানুয়ারী ২০২৪)

Lubna Negar
  • ১০০
ঘড়িতে এখন সকাল নয়টা বাজে। আজকের মতো রুমার ডিউটি শেষ। রুমা মানসিক হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স। তাকে প্রতিদিন ৯ নং ওয়ার্ডে নৈশকালীন ডিউটির কাজ করতে হয়। নার্সের পোশাক পরিবর্তন করে সে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। হঠাৎ তার মনে পড়ে ৫৯ নং বেডের রোগীর কথা। এই মহিলা সম্পর্কে কর্তব্যরত ডাক্তার রুমা কে সতর্ক করে দিয়েছেন। মহিলার বয়স সত্তর্দ্ধো। তিনি স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। নিজে ওষুধ খেতে পারেন না। একটু ইতস্তত বোধ করে রুমা। তার জায়গায় এখন সুফিয়া এসে গেছে। সুফিয়া কে নার্সের পরিবর্তে সিকিউরিটির কাজ দিলে ভালো হত। লম্বা, চওড়া, শক্ত সমর্থ মেয়ে সুফিয়া। প্রয়োজনে সে রোগীর গায়ে হাত তোলে। এই বিষয়ে রুমা একদিন মৃদু আপত্তি জানালে সুফিয়া বাজখাই গলায় বলেছে, তোর কাছ থেকে আমার কাজ শিখতে হবে? সেই থেকে রুমা সুফিয়া কে এড়িয়ে চলে।
তবু রুমা ৯ নং ওয়ার্ডের দিকে যায়। ৫৯নং বেডের রোগী কে রুমা আন্টি বলে ডাকে। রাতে তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। নয়তো সারারাত সে হল্লা করে। কাল রাতে ইনজেকশন দেয়ার আগে অবশ্য আন্টি কোনো চীৎকার হল্লা করেনি। তবে নিজের বেডে বসে সে বিকারগ্রস্থ মানুষের মতো কাদঁছিল। আর গুণ গুণ করে গান গাইছিল,
ই ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর।
আন্টির হাতে ওষুধ দিলে সে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। যদিও তাকে দেখাশোনার জন্য একজন আত্নীয়া সার্বক্ষণিক ভাবে থাকে। তবু রুমার দুশ্চিন্তা যায় না। রুমা গিয়ে দেখে আন্টি ততোক্ষণে জেগে গেছে। বেডের উপর বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। জানালার বাইরে শ্যামলি শিশুমেলা। সন্ধ্যা থেকে সবগুলো রাইডার কে বর্নিল আলোক সজ্জ্বায় সাজানো হয়। প্রাকৃতিক দৃশ্যের চেয়ে সেই সৌন্দর্য কম আকর্ষণীয় নয়। রুমা আন্টির পাশে গিয়ে নিঃশব্দে দাড়াঁয়। তার অবিন্যস্থ চুল পিঠের উপর বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। দেখে এখনো বোঝা যায়, একসময় সে মেঘের মতো ঘন কালো চুলের অধিকারী ছিল। নীরবতা ভেঙ্গে রুমা প্রশ্ন করে, আন্টি নাস্তা করেছো?
চমকে উঠে আন্টি রুমার দিকে তাকায়। তারপর বলে।, ও তুই, মুখপুড়ী আবার জ্বালাতে এসেছিস? পাশের থেকে আত্নীয়াটি বলে ওঠে, সকালে কিছু খেতে চায় না। সিদ্ধ ডিম, কলা, আর রুটি দিয়েছি। ডিমটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। রুক্ষ্ণ ভাবে আন্টি বলে, অতো আদ্যিখেতার দরকার নেই। ওরা সব সম্পত্তি নেয়ার জন্য আমাকে দেখাশোনা করে। রুমা আন্টির কাছে এগিয়ে আসে। তারপর জিজ্ঞাসা করে, তোমার কি খেতে ইচ্ছা করে? আন্টি গভীর দৃষ্টিতে রুমার দিকে তাকায়। তারপর বলে, আমাকে বেশি করে দুধ , চিনি দিয়ে এক কাপ চা এনে দিবি? রুমা মাথা নেড়ে বলে, দুধ চা আনতে পারি। কিন্তু চিনি ছাড়া। তোমার তো ডায়বেটিস। আন্টি তখনো রুমার দিকে তাকিয়ে আছে। ধীরে ধীরে সে বলে, তোর মুখটা ঠিক ফুটন্ত গোলাপের মতো। ইংল্যান্ডের রোজ গার্ডেন নয়। আমাদের দেশের কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের বারান্দায় টবে লাগানো শখের গোলাপের মতো সুন্দর তুই। রুমা কোনো উত্তর দেয় না। তার মুখে একটা বিষন্ন ছায়া পড়ে।
আন্টি কে ওষুধ খাইয়ে রুমা চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। নৈশকালীন নার্সের মতো ওয়ার্ডের গেটের সিকিউরিটি গার্ডও পরিবর্তন হয়। রাতে গেটের পাহাড়ায় থাকে আনিস। নম্র স্বভাবের লাজুক মুখের তরুণ। রুমা বাড়ি যাবার সময় প্রত্যেক দিন তার সাথে দেখা হয়। সে বুঝতে পারে না আনিসের সামনে এলে কেন যেন তার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করে। রুমার মনে হয় প্রতিদিন ডিউটি শেষে তাকে একটু দেখার জন্য আনিস অপেক্ষা করে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় না। রুমা কে দেখে আনিস প্রশ্ন করে, বাড়ি যাচ্ছেন? রুমা মাথা নেড়ে বলে , হ্যাঁ। আনিস আবার প্রশ্ন করে, নাস্তা করেছেন? রুমা উওর দেয়, বাড়ি গিয়ে করবো। আনিস বলে, আপনার বাড়ি তো রামপুরা। বাসে যেতে অনেক সময় লাগবে। রুমা বলে, বাড়িতে মা নাস্তা বানিয়ে অপেক্ষা করছে। তারপর একটু ইতস্তত করে বলে, আনিস ভাই নিচের দোকান থেকে এক কাপ চিনি ছাড়া দুধ চা এনে দেবেন? ৫৯ নং বেডের আন্টি চাইছিল। এইটুকু কাজ করতে পেরে আনিসের মন আনন্দে ভরে যায়। সে তক্ষুণি চা আনতে নিচে নেমে যায়।
শীতের সকাল। কনকনে ঠান্ডা। ভাগ্যিস রুমা বাসে সিট পেয়েছে। অন্যমনস্ক ভাবে সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। গত রবি বার আন্টি ঘুমিয়ে পড়লে আত্নীয়াটি তার জীবনের গল্প বলছিল। ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আন্টি। দেখতে অনিন্দ্য সুন্দরী হওয়ায় ধনী ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হয়। স্বামী ছিল মদ্যপ এবং পরনারীতে আসক্ত। বিয়ের পরও তার স্বভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আন্টি ছিল অভিজাত পরিবারের শোকেসে শাড়ি এবং অলংকার দিয়ে সাজানো পুতুল। বিলাসিতার সব উপকরণ তার ছিল। শুধু ছিল না মানুষের মর্যাদা। বাস রামপুরায় এসে থেমেছে। হেলপারের ডাকে রুমার ঘোর ভাঙ্গে। বাস স্ট্যান্ড থেকে রাস্তা পার হলে বাজার। তার পিছনে সরু গলিতে জীর্ন তিন তলা বাড়ির দুই তলায় রুমা আর তার মা ভাড়া থাকে। দুই তলায় চারটে রুম। প্রত্যেক রুমে একজন করে ভাড়াটে থাকে। ঘড়ির দিকে তাকায় রুমা। সাড়ে দশটা বাজে। এই সময় পরিবারের কর্তারা যে যার কর্মক্ষেত্রে চলে যায়। এখন স্নানঘরটা খালি পাওয়া যাবে। সপ্তাহে একদিন কাপড় ধোয় রুমা।
দরজা খুলে মা নিঃশব্দে ঘরের ভিতর চলে যায়। হাতমুখ ধুয়ে রুমা খেতে বসে। রাতের ডিউটি থেকে ফিরে সে বেশ ক্ষুধার্ত থাকে। রুমা কোনো দিকে না তাকিয়ে খাচ্ছিল। হঠাৎ খেয়াল হল চৌকি থেকে একটু দূরে মা চুপ করে বসে আছে। রুমা প্রশ্ন করে, রাতে ঘুম হয়েছে, মা? মা নীরব। রুমা আবার জিজ্ঞাসা করে, নাস্তা করেছো? মায়ের মুখে কথা নেই। রুমা খাওয়া বন্ধ করে মায়ের দিকে তাকায়। তার মুখে চোখের জলের শুকিয়ে যাওয়া দাগ। রুমা আস্তে আস্তে প্রশ্ন করে, মা কি হয়েছে? মা বলে, আমি খোকন কে ফোন করেছিলাম। ওরা এখন তিন রুমের একটা বাসায় ভাড়া থাকে। খোকন রুমার বড় ভাই। রুমা বলে, ভাইয়া রাজপ্রাসাদে বাস করলেও সেখানে তোমার আর আমার ঠাই হবে না। মা কাতরভাবে বললেন, তুই যদি বউমার কাছে ক্ষমা চাস তাহলে ওদের বাড়ি আমরা থাকতে পারবো। শুনে রেগে উঠে রুমা। বলে, অন্যায় করেছে ভাবী আর ক্ষমা চাইবো আমি? ভাইয়া যেদিন আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল, সেদিন নিজের মায়ের কথা ভেবেছিল? আমি এখন কাজ করি, উপার্জন করি। তুমি তিন বেলা খেতে পার। মাথার উপর ছাদ আছে। অন্যের দয়ার দরকার আমাদের নেই।
মা তিক্ত কণ্ঠে বলেন, অহঙ্কার। তোর সব গেছে। কিন্তু অহঙ্কার যায়নি। তুই সমাজ কে কতটুকু জানিস? রুমা স্থির চোখে মায়ের দিকে তাকায়। মা আবার বলেন, কাল রাত এগারোটার সময় পাশের রুমের বুলির মা আমাকে রান্নাঘর পরিষ্কার করতে বলে। এই কাজ আমি প্রায় করি। কিন্তু অন্য তিন রুমের ভাড়াটেরা কক্ষণো করে না। কথাটা বলার পর ঝগড়া বেধে যায়। বুলির মা মুখের উপর বলে, মেয়ে কে ভাড়া খাটিয়ে তো ভালই রোজগার করছেন। এত যদি ফুটানি তবে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকলে হয়। কথাগুলো রুমার মর্মে গিয়ে বিধেঁ। কান ঝা ঝা করে । কোনো কথা না বলে বালতিতে কাপড় নিয়ে স্নানঘরের দিকে চলে যায়। কল দিয়ে পানি পড়ছে। যন্ত্রের মতো কাপড় ধোয়া শেষ করে। বেসিনে ভেজা কাপড়গুলো রাখে। উপরে একটা আয়না লাগানো। রুমা চেষ্টা করে সেদিকে না তাকাতে। কিন্তু শত চেষ্টা সত্ত্বেও তার দৃষ্টি আয়নার দিকে নিবন্ধ হয়। এখন তার মাথায় হিজাব নেই। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চোখ ফেটে জল আসে। দাতঁ চেপে কান্না থামায় রুমা।
গোসল শেষে সে ঘরে আসে। মুখে চোখের জলের চিহ্ন নাই। তবে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। চুল আচড়েঁ মাথায় হিজাব পড়ে। তারপর ব্যাগটা কাধেঁ নিয়ে বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। মা প্রশ্ন করে, এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস? রুমা উত্তর দেয়, দুই দিন আগে পাশের গলিতে টু লেট লাগানো দেখেছি। খোজঁ নিয়ে আসি। যদি দুই রুমের একটা বাসা ভাড়া পাই। মা কোনো কথা বলে না। রুমা চলে গেলে নিঃশব্দে চোখের জল মোছে।
আজ বিকালে রুমা ডিউটিতে এসে প্রচন্ড চিৎকার আর উত্তেজিত কথাবার্তার শব্দ শুনতে পায়। শব্দটা ৫৯ নং ওয়ার্ড থেকে আসছে। শব্দ লক্ষ্য করে রুমা এগিয়ে গিয়ে দেখে, ওয়ার্ডের গ্রিলের গেটে বাইরে থেকে তালা দেওয়া। একটা বিশ বাইশ বছরের মেয়ে চিৎকার করছে আর গ্রিল ধরে ঝাকাচ্ছে। তার পোশাক এলোমেলো। চুল অবিন্যস্থ। নার্স সুফিয়া এবং দুইজন মহিলা সিকিউরিটি গার্ড তাকে সামলাতে পারছে না। মেয়েটি কাদঁতে কাদঁতে বলছে, ছেড়ে দে আমাকে। আমি আমার স্বামীর কাছে যাবো। রুমার পাশে সিনিয়র নার্স নাজমা দাড়িঁয়ে ছিল। সে নিচু স্বরে বলে, আজ সকাল ১১ টার দিকে ভর্তি হয়েছে। মেয়েটার প্রেমের বিয়ে। অথচ দুই বছরও সংসার করতে পারেনি। শ্বশুড়বাড়ি যৌতুকের জন্য নির্যাতন তো ছিল। এর মধ্যে স্বামী আবার বিয়ে করেছে। ডিভোর্সের বিষয়টা সে মেনে নিতে পারেনি। বেশ আগে থেকে মেয়েটা ডিপ্রেশনে ভুগছিল। এখন চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। কথাগুলো শুনে রুমা ঠোটঁ কামড়ায়। নাজমা কে জিজ্ঞাসা করে, মেয়েটার সাথে কে এসেছে? নাজমা বলে, ওর মা এসেছে। একটু চুপ করে থেকে বলে, এই ওয়ার্ডের ডিউটি তোমার। সামলাতে পারবে? রুমা উত্তর দেয় , পারতে হবে।
চারদিন পার হয়ে গেছে। মেয়েটির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো সে উম্মত্ত। বেডে তাকে হাতে পায়ে বেল্ট দিয়ে বেধেঁ রাখতে হয়। ইনজেকশন দেয়ার সময় চারজন নার্স তাকে ধরে রাখে। সকালে রুমা যখন ডিউটি শেষ করে বাড়ি যাচ্ছিল তখন সে পুরোপুরি অবসন্ন। তাই গেটে দাড়িঁয়ে থাকা আনিস কে দেখতে পায়নি। আনিস একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করে, নতুন আসা মেয়েটা বুঝি খুব অসুস্থ? রুমা বলে, ওকে বেধেঁ রাখলেও স্বামীর কাছে যাবার জন্য চিৎকার করছে। আনিস প্রশ্ন করে, ওর স্বামীর সাথে যোগাযোগ করা যায় না? রুমা নির্লিপ্তভাবে বলে, মেয়েটার মা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। মা বলে, এখন অন্তত মেয়েটা বেচেঁ আছে। স্বামীর হাতে পড়লে নির্ঘাত খুন হবে। আনিস কি বলবে বুঝতে পারে না।রুমা আগের মতো নির্বিকার। আনিসের দিকে তাকিয়ে বলে, চলেন দেখি আজ সকালে আমরা নিচের হোটেলে বসে চা খাই। সহসা আনিসের মুখে কথা যোগায় না। সত্যি শুনছে সে? লিফটে নিচে নেমে হাসপাতালের পাশের হোটেলে একটা টেবিলে দুইজন মুখোমুখি বসে। রুমা চায়ের সাথে সিঙ্গারার অর্ডার দেয়। রুমা বলে, শীতের সকালে বাইরে ঠান্ডা হলেও হোটেলের ভিতরে গরম। হিজাবটা খুলে ফেলি। আনিস একটু অবাক হয়।
রুমা হিজাব খুলে ফেলেছে। হাতের গ্লাভস দুটোও খোলা। কামিজের থ্রি কোয়ার্টার হাতায় তার কনুই থেকে কব্জী পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। আনিস সেদিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুমার মাথার বাম দিক থেকে হাতের কব্জী পর্যন্ত পোড়া গভীর ক্ষতের দাগ। সে আনিসের দৃষ্টি লক্ষ্য করছিল। আস্তে আস্তে বলে, আমার প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের ভালোবাসার চিহ্ন। একটু থেমে রুমা আবার বলে, গ্রামে স্কুলে যাবার পথে তিন চার জন ছেলে ইভ টিজিং করতো। প্রতিবাদ করে বা বোরখা পরে বের হয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। বাধ্য হয়ে আমার পরিবার বিয়ের আয়োজন করে। খবরটা শুনে ওরা আরও বেপরোয়া হয়ে যায়। এরই মাঝে একদিন খালাবাড়ি থেকে আসার পথে ওরা পথরোধ করে। তারপর এসিড ছুড়ে মোটর সাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে ছিলাম আটমাস। সেখানে এসিড আক্রান্ত ভিকটিমদের নিয়ে কাজ করে এরকম একটা এনজিওর সাথে পরিচয় হয়। ওদের সহায়তায় আমি পূনর্বাসন প্রোগামে অংশগ্রহণ করি। পাশাপাশি বোরখা পড়ে কলেজে যেতাম। পরে নার্সিংয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। দুই বছর আগে এই হাসপাতালে আমার চাকরি হয়। স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শোনে আনিস। তার মুখে কোনো কথা যোগায় না।
দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস এসে গেছে। ঢাকার বাইরে শীত জেকে বসেছে। পড়ন্ত বিকালে আন্টি তার বিছানায় বসে আছে। রুমা এক প্যাকেট বিস্কুট আর দুধ চা নিয়ে ওয়ার্ডে আসে। আন্টি কে উদ্দেশ্য করে বলে, দেখো তোমার জন্য গরম দুধ চা আর বিস্কুট এনেছি। আন্টি ফিরেও তাকায় না। তার দৃষ্টি রুমার দিকে। সেই অন্তর্ভেদি দৃষ্টির সামনে রুমা বিচলিত বোধ করে। আন্টি প্রশ্ন করে, তুই কি কিছু গোপন করছিস? রুমা নির্বাক। আন্টি আস্তে আস্তে বলে, কাউকে যদি ভালোবাসতে ইচ্ছা করে তো ভালোবাসবি। চমকে উঠে তাকায় রুমা। আন্টি কি সর্বজ্ঞ?
পাশের বেডের মেয়েটির ঘুম ভেঙ্গেছে। এখনো বিছানার সাথে বেল্ট দিয়ে তার হাত পা বাধাঁ। আন্টি তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, এ্যাই ছুকড়ি, চোখের জল মুছে ফেল। তুই যে স্বামীর জন্য কাদঁছিস, সে অন্য নারীর সাথে ঘর বেধেঁছে। তোর কথা ভুলেও ভাবছে না। মানুষের চোখের জল অত্যন্ত মূল্যবান। এইসব অমানুষদের জন্য চোখের জল অপচয় করতে হয় না। তোর তো একটা দুই মাসের বাচ্চা আছে। কাদঁতে হলে তার জন্য কান্না কর। পৃথিবীতে শিশুটির মা দরকার। মেয়েটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কথাগুলো যে সে বুঝতে পেরেছে, সেটা স্পষ্ট। রুমা ত্রস্ত্য পায়ে মেয়েটির কাছে আসে। উদ্বিগ্নভাবে লক্ষ্য করে রোগী উত্তেজিত হয়ে উঠে কি না? কিন্তু মেয়েটি নিস্তেজভাবে শুয়ে আছে। রাত নয়টার দিকে নার্সরা যখন ইনজেকশন দিতে আসে তখন একটা আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করে। মেয়েটির মধ্যে সেই উম্মত্ত আচড়ণ নেই। তবে চোখে মুখে যন্ত্রনার ছাপ স্পষ্ট। রুমার দুশ্চিন্তা যায় না। রাতে সে এসে মেয়েটিকে বেশ কয়েকবার দেখে যায়। সুর্য উঠার পর ওয়ার্ডের জানালা দিয়ে আলো এসে পড়েছে। রুমা এসে দেখে মেয়েটি তখনো ঘুমিয়ে আছে। যেন বহুদিন পর সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
ডিউটি শেষে রুমা বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত হয়। লিফটের সামনে আনিস দাড়িঁয়ে আছে। সেই দিনের পর দুই জনের মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি। রুমা আনিস কে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে আনিস ব্যাকুল স্বরে ডাকে। রুমা ফিরে তাকালে আনিস এগিয়ে এসে বলে, আমার মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছি। রুমা বলে, আপনা কে অভিনন্দন। আনিস আবার বলে, বাড়িতে তোমার কথা বলেছি। আমার বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার্ড করার পর এখনো পেনশন পাননি। আমি এই মূহুর্তে হয়তো ভাল চাকরি যোগাড় করতে পারবো না। কিন্তু আমরা দুইজন তো একসাথে পথ চলতে পারি। সংগ্রাম করে বাচঁতে পারি। বিহ্বলভাবে রুমা আনিসের দিকে তাকায়। তার চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত। ভালবাসার মানুষ প্রনয়ণীর চোখের ভাষা বুঝতে পারে। আনিসও পারলো। মৃদু কণ্ঠে সে বলে, চলো আজ সকালে দুইজন একসাথে নাস্তা করি।
আনিসের পরিবার কি রুমা কে মেনে নেবে? আনিস কি বদলে যাবে? এইসব প্রশ্ন স্থগিত থাক। আপাতত আমরা রূপকথার গল্পের মতো একটা সুন্দর সমাপ্তি কল্পনা করতে পারি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lubna Negar Thank you
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০২৪
Sunil Akash গল্পটা বেশ ভাল হয়েছে
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪
Sharmin Sultana বাহ
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪
Muhsin Ahmed দারুণ লিখেছেন, এতোটা ভালো লিখার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪
ফয়জুল মহী চমৎকার লিখেছেন
জলধারা মোহনা আসলেই.. কল্পনা করতে দোষ কোথায়.. সুন্দর সমাপ্তি আসুক ওদের জীবনে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ঘড়িতে এখন সকাল নয়টা বাজে।

০৩ মার্চ - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৩৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪