ফুলদানি

স্বাধীনতা (মার্চ ২০২০)

Lubna Negar
  • ৪৭
ঘড়ির কাটা টিক টিক করে এগিয়ে যাচ্ছে । উদ্বিগ্ন ভাবে ঘড়ির দিকে তাকালেন শিউলি আদনান । স্বপন আদনানের স্ত্রী । সাড়ে ছয়টা বাজতে বেশি দেরি নেই । দ্রুত মুখে মেকআপ করেছে সে । স্বামী অফিস থেকে বাড়ি ফিরবার আগেই তার সাজসজ্জা সমাপ্ত হওয়া চাই । শিউলি অফিস থেকে ফিরেছেন পাঁচটার সময় । ফিরেই কোনো রকমে শাড়িটা পাল্টে রান্নাঘরে ঢুকেছেন । বাড়িতে যদিও তিনজন কাজের মহিলা ও একজন ড্রাইভার আছে , তবু বিকালের জলখাবার ও রাতের জন্য শিউলি কে রান্না করতে হয় । বড় মেয়ে টি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে । মায়ের মতো অসামান্যা সুন্দরী ।লেখাপড়ার পাশাপাশি রান্নার কোর্স করা, বুটিকসে সেলাই শেখা ইত্যাদি সব বিষয়ে সে পারদর্শি । তাকে নিয়ে মায়ের ভাবনা কম । মায়ের সাথে সে সপ্তাহে দুইবার বিউটি পার্লারে যায় । গাড়িতে যাবার সময় মা মেয়েকে উপদেশ দেয় ,
প্রেম করার মতো বোকামী করবে না । তুমি সুন্দরী । মা বাবা চাকরি করে । দামী পাত্র জুটবে । দরকার মতো পরিস্থিতির সদ্বব্যবহার করবে । অবশ্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বড়লোকের ছেলে পড়তে আসে । তোমার সাথে পড়ে একটা ছেলে , ওর বাবার শুনেছি গার্মেন্টস আছে ।ছেলেটার নাম যেন কি ?
ফারিয়া স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিল । তবে মায়ের কথাও শুনছিল । তাদের ক্লাসে এই ছেলেটির কাছে এখনো সে যেতে পারেনি । ছেলেটির বাবার টাকা আছে । সেটা অন্য মেয়েরাও জানে । শিকারের আশায় তার আশেপাশে ঘুরঘুর করে । ফারিয়ার পক্ষে ভাব জমানো সম্ভব হয়নি । এখন মায়ের সামনে স্বীকার করতে হলো ছেলেটির নাম সে জানে না ।
শিউলি বিরক্ত হলেন, এইজন্য তোদের কিছু হবে না । সমাজে উপরে উঠতে হলে এই ধরণের ছেলেদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয় ।
আজ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সাজতে সাজতে এইসব কথা ভাছিলেন তিনি । মনে পড়লো নিজের বিয়ের কথা । শিউলির জন্ম নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে । বাবা ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্লার্ক । তবে প্রতিবেশীদের কাছে তিনি অফিসার বলে নিজের পরিচয় দিতেন । পাচঁ ভাইবোনের সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকতো । শিউলি ছিলেন সুন্দরী । ছোটবেলা থেকে সমাজ যখন তার মাথায় এই ধারণা ঢুকিয়ে দিলো, তখনই তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন । যে ভাবেই হোক উপরের শ্রেণীর সদস্য অর্থাৎ বড়লোক তাকে হতে হবে । সেই লক্ষ্য নিয়ে শিউলি লেখাপড়া শিখেছিলেন । লেখাপড়ার যে একটা মানবিক দিক আছে এবং এই বিষয়গুলো যে মানুষের মুক্তির কথা বলে সে সম্পর্কে শিউলি কখনো ভাবেননি । ।মাস্টার্স পাস করার পর বাবার অফিসে ঘুষ দিয়ে এবং ধরাধরি করে তার একটা চাকরিও জুটে যায় । রূপ ও চাকরির সুবাদে তার বিয়ে হয় সরকারি অফিসার স্বপন আদনানের সাথে । আজ তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত । জীবনে যা চেয়েছিলন তা পেয়েছেন ।
আবার সাজতে বসেছো ? পিছন থেকে প্রশ্ন করল তানিয়া । তানিয়া শিউলি আদনানের ছোট মেয়ে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে । মা- বোনের তুলনায় ওর গায়ের রং অনেকটা কালো । শুধু গায়ের রং নয় , পুরো বাড়ির পরিবেশের সাথে তানিয়া বুঝিবা বেমানান ।
মা কে লক্ষ্য করে বলল , অফিস থেকে এসেছো , একটু বিশ্রাম নাও । সারা জীবন তো স্বামীর সেবা করলে ।
চকিতে সজাগ হলেন শিউলি । এই মেয়েটি কে তিনি নিজের মতো করে মানুষ করতে পারেননি । তানিয়া ছেলে না হয়ে মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে আক্ষেপ হতো তার । এই কারণে শ্বশুড়বাড়ির কাছ থেকে শিউলি কম গঞ্জনা সহ্য করেননি। কিন্তু এখন সেসব কথা মেয়ের সামনে উল্লেখ করলেন না । শুধু বললেন ,
স্বামীর সেবা করা প্রত্যেক নারীর পরম কর্তব্য । শ্বশুড়বাড়ি তো যেতে হবে । কত করে বলি নিজের যত্ন নাও । গায়ের রং কালো তো কি হয়েছে ? আজকাল সুন্দর হওয়ার কত পন্থা বের হয়েছে।
তানিয়া বলল , অর্থাৎ রং ফর্সাকারী কৃম মেখে পাত্র ধরতে বের হতে হবে । কালো বলে আমার কোনো আফসোস নেই । মানুষের পরিচয় তার গায়ের রংয়ে নয় , যোগ্যতায় ।
তা কি হবে তুমি শুনি ? শিউলি আদনান ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন করলেন , ঝাসিঁর রানি লক্ষ্ণী?
তানিয়া আর কথা বাড়ালো না । শুধু যাবার সময় বলল , ঝাসিঁর রানি লক্ষ্ণী হতে পারলে তো বেচেঁ যেতাম । রানি লক্ষ্ণী ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। আমি না হয় যে সমাজ নারীদের শুধু ভোগ্যপণ্য আর সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র বলে মনে করে , তার বিরুদ্ধে দাড়াঁতে পারতাম ।
এই সময় গেটে গাড়ি থামার শব্দ শোনা গেল । স্বপন আদনান বাড়ি ফিরেছেন । এখন ভয় করতে লাগলো শিউলির । পঞ্চাশোর্ধ বছর বয়সী শিউলি আদনানের সৌন্দর্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে । নানা প্রকার মেকআপ করে তিনি সযত্নে তার ঘাটতিটুকু লুকিয়ে রাখেন । গত রাতেও স্বামীর সাথে তার ঝগড়া হয়েছে । আজ অর্ধ সাজে পৌঢ়া শিউলি আদনান কে কুৎসিত দেখাচ্ছে । স্বপন আদনান ঘরে প্রবেশ করলেন । তিনি নেশাগ্রস্ত । স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বিকৃত কণ্ঠে বলে উঠলেন, বুড়ি ! তারপর শিউলির দিকে ফুলদানি ছুড়ে মারলেন । নিজের ঘরে একাকি গোপনে কাদঁছিলেন শিউলি । স্বপন আদনান চলে গেছেন । তিনি আজ রাতে আর বাড়ি ফিরবেন না । ঢাকা শহরেই অন্য নারীর সাথে রাত কাটাবেন । সব কথা শিউলি জানেন । আকুল হয়ে কাদঁছিলেন তিনি । এই দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তির উপায় শিউলির জানা নেই ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ খুব ভালো লাগল।ভোট রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ফয়জুল মহী অনুপম লেখা। সুচিন্তিতভাবে প্রকাশ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বর্তমান সমাজে এক শ্রেণীর নারীদের জীবন এবং নারী স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গ নিয়ে এই গল্প ।

০৩ মার্চ - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৩৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪