অদেখা জীবন

স্বাধীনতা (মার্চ ২০২০)

সাজ্জাদুর রহমান
  • ৫৪
“নাম আমার রুবেল।
ধানমন্ডি জিগাতলায় পিলখানার সাইড দিয়া যে ফুটপাত চইল্যা গ্যাছে আমি সেইখ্যানেই থাকি,বলা যাইতে পারে এইডাই আমার য়েসতায়ি ঠিকানা।মাগার কেবল আমি না,আমার লগে আরো ৬-৭টা পোলাপান আমরা এক লগে থাকি।
পড়ালেখা করি নাকি?
না!একসময় করতাম,কেলাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ছি,তারপর বাপে কাম করবার লাইগ্যা গ্যারেজে ঢুকায়ে দিল,একদম ভাল লাগে নাই,তাই পালায়ে আসছি।এখন স্কুল এ পড়লে হয়তো কেলাস নাইন-টেন এ উঠতাম।
কাম-কাজ কী করি?
হেইডা তো আমিও ঠিক বলতে পারুম না...মনে করেন যখন যেইডার ছিজন চলে,হেই কামেই ঢুইকা পড়ি।এই যেমন কয়দিন আগে নির্বাচন চইলা গেল,তখন আমগো দাম থাকে সবচাইতে বেশি।সারাদিন মিটিং-মিছিলে থাকি,সুন্দর সুন্দর খাওন পাই,সাথে মনে করেন নগদ ক্যাশও দেয়,হেয়বার তো ১০০ টাকা পর্যন্ত পাইছিলাম।অন্য সময় টোকাইগিরি করি,মাঝে মইদ্ধ্যে ওস্তাদের চা-সিঙ্গারার দোকান চালাই।শীতকালে পিডা বেচি।
বড় হইয়া কি হইবার চাই?
হা...হা হাসাইলেন,আমরা আর কি হমু?কে আমগো ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাইবো?
হুনছি আমার দাদা নাকি মুক্তিযোদ্ধা আছিল,জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় দাদার টিম নাকি হেব্বি ফাইট দিছিল,এক ডজন মিলিটারি মাইরা ফেলাইছিল।দাদারা নাকি যুদ্ধ করছিল ,সবাই সমান অধিকার পাবার লাইগ্যা,সঠিক ভাগ পাবার লাইগ্যা...বই-পুস্তকে যেইডারে আপনারা যারে কন “বৈষম্যহীন সমাজ” তার লাইগ্যা।সে মনে কররেন আজ থ্যাইকা বছর পঞ্চাশেক আগের কথা।মাগার আজো কি কিছু পরিবর্তন হইছে?
এই যেমন ধরেন আপনে এখন সোন্দর একটা শাট গায়ে দিয়ে আছেন,তার উপর মোটা সোয়েটার,হাতে পায়ে সুট-বুট।আর আমার দিকে তাকান।আমি গায়ে কি আছে কন দেহি?একটা হাফ-প্যান্ট আর ফুল হাতা ঢলঢলা একটা গেঞ্জি।এইডা দিয়ে শীত যায়,কন?
এহন তো তাও দিনের বেলা,মনে করেন রোদ আছে,রাস্তা-ঘাটে প্রচুর মানুষের গরম,তাই ধরেন দিনের বেলা ভালাভাবে থাকবার পারতাছি,রাত অইলে বুঝতাম ঠেলা।না আছে কোন ক্ষেতা বা ল্যাপ,বুঝজেন?বস্তা গায়ে দিয়া কোনমতে রাত পার কইরা দেই।
এর মধ্যে হেইদিন কি হইছে শুনেন।রাত্রিবেলা ধরে ১১-১২টার দিকে সোন্দর সোন্দর কয়েকজনন টিশটাশধরনের পোলাপান আমগো এইখানে আইসা কয়,আমগো লাইগা নাকি অনেক কম্বল নিয়ে আইছে,সবাইরে দিব।আমরা তো মনে করেন হেব্বি খুশি।আপনারে কইলাম না আমরা ৬-৭ জন এক লগে থাকি?তার মইদ্ধ্যে একজন হইলো রিমা।চেংড়ির বড়লোকি ভাব বুঝজেন?তো টিশটাশ পোলাগো মাঝে একজন রিমারে কইলো “এই মেয়ে তুমি এই কম্বলটা নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাড়াও তো।“চেংড়ি তো মনে করেন সেই খুশি,ছবি তুলবার পারতাছে।মাগার পোলাডা ধমক দিয়ে কইলো “এই!খবরদার হাসবি না!মুখ দুঃখী দুঃখী করে রাখবি,নইলে কম্বল দিবো না।“রিমারে চাইর পাশ থ্যাইকা কয়েক আংগেলে ছবি তুলল।আমরা এদিকে খুশিতে বাক-বাকুম।আমরাও ছবি তুলমু।কে ক্যামনে দাড়ামু তা একে অন্যরে ঢং কইরা দেখাইতেছি আর হাসতাছি।
এমন সময় টিশটাশ আরেকটা পোলা কইলো,”ওই চল,এই ফুটপাতে ৪ টা ছবি হইছে,৩টা বাচ্চা আর একটা বুইড়ার।আর লাগবে না,পার্ক আর হাতিরঝিলে ৩-৪টা ছবি তুলবো,তাহলেই যথেষ্ট।“এরপর হে’রা গট গট কইরা হাইটা গেল।
এইডা দেইখ্যা তো আমরা আকাশ থ্যাইকা পড়লাম।হালার “...”রা কয় কি?গরিব বইল্যা আমরা কি মানুষ নই?হেইদিন তাগো উপর যে রাগটাব উঠছিলোম তা কইয়া বুঝাইবার পারতাম না।সুট-বুট পড়া আপনেগো মত মানুষেরা যে এমন করতে পারে তা আমরা চিন্তাও করতে পারতাম না।
যাই হোক কি আর করমু?মাঝখান থ্যাইকা রিমা একটা কম্বল পাইল,অন্য চেংড়িরা রিমার লগে জড়াজড়ি করে ক্ষেতার মইদ্ধে শোয়,আমরা চেংড়ারা আর কি করমু?দূর থ্যাইকা হিংসায় কাপি।
শোনেন,একটা কথা কই।আপনেগো কাছে গরমকাল মানে “সুযযেরর সোনালি কিরন”,আমগো কাছে চান্দি ফাটা রোদ।
বর্ষাকাল মানে আপনেগো কাছে “ঝরো ঝরো বাদ’লের দিন” কত কবিতা,কত গান লিইখ্যা ফেলাইছেন,আর আমরা?বৃষ্টি হইলে আপনেগো মত ভদ্রলোকেরা হোটেল-মার্কেটে হুট কইরা ঢুইকা পড়েন।মাগার আমরা?আমগো দেখলেই খেদায়ে দেয়।বৃষ্টিতে ভিজি।এক-দুইদিন হইলে বৃষ্টিতে ভিইজ্যা মজা,মাগার প্রতেক দিন ভিজলে কেমনডা লাগে তা যদি বুঝতেন।
শীতকালের কথা আর কি কমু।এমনেই হেইদিন দেখি ভদ্র টাইপের এক ব্যাটা কানে মোবাইল লাগায়া কারে যেন কইতকাসে,”বুঝছিস?এইবার কিন্তু জোস শীত পড়ছে।রাতের ঘুমটা দিয়ে মজা পাইছি না,উঠতেই মন চায় না!”
আমার বুঝে আসে না,আল্লায় হেগো কত টাকা দিছে যে তাগো কাছে শীতকালও মাজাদার।“
রুবেলের চোখে পানি চলে এসেছে।সে আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।কিন্তু আশ্চর্য তার প্রতি আমার কোন মায়া অনুভব হচ্ছে না,কিঞ্চিত দয়া হচ্ছে।কোন সহানূভুতি হচ্ছে না,করূণা হচ্ছে।
এর জন্য দোষটা কার?আমার? না আমাদের?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অতুলনীয় লেখা। সুচিন্তিত l

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম কেবল কতিপয় মুষ্টিমেয় লোকের জন্য অর্জিত হয়নি।এদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সকলে মিলেমিশে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।কিন্তু আজ স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরও আমরা সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি কি?সমান না হোক অন্তত ন্যায্য অধিকার টুকু? তাহলে কেন আজো কতিপয় ছেলে-মেয়ে সুন্দর গাড়িতে চড়ে নামি-দামী স্কুলে যায় আর একদল ছেলে-মেয়ে ভাব স্কুল অনেক দূরের ব্যাপার?তারা কেন ভাবে স্কুল তাদের জন্য না?তারা কেন রাস্তাকে আপন করে নেয়? উত্তরটাকে না,বরং প্রশ্নটাকে গল্পের মাধ্যমে উথাপনের চেষ্টা করেছি।

২১ জানুয়ারী - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী