এক জীবনের গল্প

বাবারা এমনই হয় (জুন ২০১৯)

সাজ্জাদুর রহমান
  • 0
  • ২৯
তখন আমার বয়স কত? খুব কম করে হলেও ১৩ বা ১৪। কিংবা ১১-১২ ও হতে পারে। সেই বয়সের এক বালকের কাছে দুনিয়ার চাকচিক্য অচেনা নয়। সে জানতে শিখেছে, বুঝতে শিখেছে টাকাই সব। যে মুখ যত বড় বুলিই আওড়াক না কেন, টাকার ঘোরে আসলে সে নিজেও বিমোহিত।
আমি নিজেও তখন এসবের বাইরে নই। অবশ্য আমি টাকার জন্য লালায়িত ছিলাম না। তার কারণ এই নয় যে আমি খুব সৎ বা আদর্শবান ছিলাম। তার কারণ হল, আমার বাবার ছিল প্রচুর টাকা। সেজন্য আমায় লালা ফেলতে হত না, মুখ হা করলেই টাকা এসে যেত।তবুও বাবার কিছু কমত না।
ঢাকায় ৩টা ডপ্লেক্স বাড়ি আর গ্রামে অর্ধশত বিঘা জমি নিয়ে ভালই চলছিল আমাদের জীবন। কিন্তু নারে..এ জীবন হঠাৎ থমকে দাড়াল। অচেনা কি এক রোগে আক্রান্ত হলাম। বাবার একমাত্র ছেলের রোগে লোকটা কাতর হয়ে পড়লেন। আমাকে নিয়ে ছুটলেন দেশ বিদেশ। আমি তখনো রোগের ভয়াবহতা সমপর্কে জানি না। বিদেশ ঘোরার তক্কে আমি মগ্ন। তখনো আমি জানি না, ঢাকার আমাদের ডুপ্লেক্স বাড়ি আর গ্রামের অর্ধেক জমি খরচ হয়ে গিয়েছে আমার বুকের জন্য, ভুল বললাম..বুকের শুধু এক পাশের জন্য। হ্যা!বাম। পাশের সেই অংগটির জন্য যা সারাদিন ধুক..ধুক! ধুক..ধুক! করে৷ দেড় বছর পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ঘুরে যখন আমি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলাম ততদিনে আমাদের জীবনের চাকা ঘুরে গেছে। দেশে ফিরে ডুপ্লেক্স বাড়িতে নয়,উঠলাম জিগাতলার ২ রুমের এক ছোট্ট খুপড়িতে। বাবার তখন কী টানাপোড়ন বুকের মাঝে বাবার জন্য রাগে অভিমানে ফেটে পড়তাম। "আমি থাকব এই বাসায়?"
"কোন গাড়ি থাকবে না?স্কুলে যাব কীভাবে?"
"হোয়াইট! মাসে মাত্র এই কটা হাজার টাকা পকেট মানি?"
তবে সারাজীবন এরকম থাকল না। খোদা মুখ তুলে তাকালেন। নিজে খুব উচ্চভিলাষী থাকলেও বখে যাইনি। বুয়েটে চান্স পর পর থেকে চেষ্টা করলাম একটু একটু করে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে। পাস করে IT ফার্ম খুললাম। এবার উত্তরাতে একটা ফ্ল্যাট কিনে বাবা-মাকে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখাতে লাগলাম। পরিবারটাকে আবারও সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাবার চিন্তায় আমি তখন মশগুল, হঠাৎ বাধ সাজলেন বাবা। খোদার ইচ্ছাই পাশার দান উল্টে গেল। ছোটবেলার বাবার চরিত্রে এবার আমি আর আমার চরিত্রের বাবা। তিনিও আক্রান্ত হলেন মরণব্যাধি রোগে।
বাবার চরিত্রে নিজেকে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারেনি। কতই না নিষ্ঠুর আমি! বাবার দেহের একটা কিডনির নিজের শরীরের মাঝে নিয়েও স্বার্থপরের মত একবার বাবার দিকে তাকাই আর একবার তাকাই টাকার দিকে, আমার ভবিষ্যতের দিকে। বাবাই আমাকে মুক্তি দিলেন। তিনি টুপ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে নিতে পারতাম। আমি, হয়তো তাতে সুস্থও হয়ে যেতেন। নেইনি। বাবার মৃত্যু হল ঢাকা মেডিকেল কলেজের জেনারেল ওয়ার্ডের কোলাহলের কোন এক ফাকে। স্বার্থের খেলায় শেষে আমিই জয়ী। সুঠম হাতে গড়া স্বপ্ন এক ঢিলে চুরমাড় করতেও রাজি। আর আমরা সন্তানেরা?
অদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আজই দূরে ঠেলে দেই বাবাদের। যে বাবারা প্রত্যেকেই একেকজন হিমুর বাবার মত মহাপুরুষ। এক জীবনের গল্প শেষ। খুব ছোট তাই না?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান লেখালেখির বয়সটা এতটাই কম য, অবাক হলাম,যদি কম বয়সের অনেক উদাহরন আছে। চলুক তবে.....

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটি লেখা হয়েছে মিথ্যাবাদী বাবাকে নিয়ে।কিন্তু এই মিথ্যাবাদী বাবাই ছেলের জীবনে সুখ এনে দিয়েছে।বাবার প্রতিটি মিথ্যা কথার পেছনে রয়েছে ছেলের মংগল।তাই বাবার এ কবিতা আমি সাজাতে চেয়েছি শুধু বাবা ও ছেলেকে নিয়ে।তাই তৃতীয় কোন চরিত্র কবিতায় নেই।

২১ জানুয়ারী - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪