একটি সাধারণ জীবনের গল্প

ভ্যালেন্টাইন (ফেব্রুয়ারী ২০১৯)

হায় চিল
  • 0
  • ২৯

বালুর মাঠ পেরিয়ে যে রাস্তাটা মুশুরিখোলার দিকে চলে গেছে সেখানে কয়েকটা ছেলে আমাকে ঘেরাও করলো। খুব বেশী রাত হয়নি। বড় জোর সাড়ে আটটা মতন বাজে। গারমেন্টস থেকে ফিরছিলাম আমি। ব্যাপারটায় পুরোপুরি হকচকিয়ে গেলাম। শুধু আমি কেন অন্য কেউ হলেও খানিকটা ঘাবরে যেত বৈকি। বড় ধরনের কোন স্নায়ুবিক উত্তেজনায় পড়লে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে। কথা জড়িয়ে যায়। এখন আমার হয়েছে সেই দশা। সারা শরীর কাপছে। তোতলামি ভর করেছে আমার উপরে। তবু যথাসম্ভব স্বাভাবিক সুরে বললাম, আপনারা কারা? কি চান?
-আমার তোকে চাই।
-বলুন কেন?
-তানদুরি বানানো হবে।
সবাই হা হা করে হাসতে লাগলো। একজন বলল, আরে না ব্যাটা, ঝাউচরে যে ব্রিজটা বানানো হইছে না ওই খানে একটা মানুষের মাথা দেওন লাগবো।
-ব্যাটা, আগে কস নাই ক।
-ক্যান কি হইছে?
-ছুড়ি আনতে যে ভুইলাগেছি।
সবাই আবার গলা ফাটিয়ে হা হা করে হাসতে লাগলো।

কিছু না বোঝার আগেই এলোপাথারি কিল ঘুষি পড়তে লাগলো আমার উপর। প্রতিরোধ বা চিৎকার করার কোন চেষ্টাই করিনি আমি। চেষ্টা করেই লাভ কি আমিতো রেনডি ওরটন বা আনডার টাইগার নই যে মেরে কুপোকাত করবো ওদের। ৫২-৫৩ কেজি ওজনের হালকা পাতলা গড়নের একজন সাধারন মানুষ আমি। তাই শুধু সয়ে গেলাম নীরবে।

ওদের মধ্যে থেকে একজন বলল, সালমারে চিনোস?
-কোন সালমা?
-ন্যাকামি করস ক্যা, কোন সালমা হ্যা? ওই শালা সালমারে একদিন না দেখলে তর প্যাডের ভাত হজম হয় না, এহন কস কোন সালমা। ক চিনোস কিনা মাইরা এক্কেরে হাড্ডিগুড্ডি গুড়া কইরা ফালামু হালার ঘরের হালা....

মাস চারেক হলো সালমা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক দানা বেধে উঠছে। খারাপ কোন দিকে এখনো মোর নেয়নি। সাধারনত প্রেম যখন দৈহিক সম্পর্কের দিকে গড়ায় সেটাকে আমারা খারাপ বলেই ধরে থাকি। কেন খারাপের দিকে মোর নেয়নি তার পিছে অবশ্যি কারনও আছে। ভালোবাসাবাসির তৃতীয় মাসে এসে আমি জানতে পারলাম সালমা প্রেগন্যান্ট। আর ওর বিয়ে হওয়ার বছর পেরিয়েছে। আমরা দুজন যে গারমেন্টসে চাকরি করি। ওর স্বামীও সেই একই গারমেন্টসে অন্য ফ্লোরে চাকরি করে। এতসব জানার পরও সালমাকে মন থেকে একেবারে ধুয়েমুছে ফেলতে পারলাম না। কেননা ভাগ্যের ইশারা না থাকলে এমন রূপবতী মেয়ের সান্নিধ্য মেলে না। অপুর্ব মেয়ে সালমা। আশ্চার্য তার দৈহিক গঠন। কথা হাসি দু'টিই নেশা ধরানো।সেই নেশায় আসক্ত হয়েই পরিচয়ের শুরুতেই কয়েকসেট দামি পোশাক কিনে দিলাম আমি। ঘুরতেও গেলাম একদিন। সোহরাওয়ারর্দী উদ্যানে ও আমার হাতে হাত রেখে বলল, চলো আমরা ঢাকার বাইরে কোথাও যাই, সেখানে গিয়ে চাকরি নেই।
-এত ব্যস্ত হওয়ার কি আছে, কয়েক মাস যাক।
-না, না, তুমি বুঝবে না, অনেক ঝামেলা আছে।
-কি ঝামেলা?
-উহ্ তুমি আসলে কিছুই বোঝ না, আমার বিয়ের কথা হচ্ছে।
-কোথায়? কার সাথে?
-অতকিছুতো তোমার জানার দরকার নাই, যা বলছি তাই করবা।
-দেখি আগামী মাসে কি করা যায়।
-দেখিনা সব ব্যবস্থা করে রাখবে।

সব ব্যবস্থাই করে রেখেছিলাম আমি। ব্যাংকে সঞ্চিত চুয়াল্লিশ হাজার টাকা সালমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। ও বললো আমার কাছে দাও নিরাপদে থাকবে, তুমি হারিয়ে ফেলতে পারো, যে বেখেয়াল মানুষ তুমি। তারপর হেসে বলল, সপ্তাহে দু'দিন যে মানুষের প্যান্টের চেন খোলা থাকে।

কিন্তু পরের মাসে সালমার ভিন্নরুপ দেখলাম। ও বলল, এ মাসে না পরের মাসে যাই।
-কেন? আমিতো রেডি।
-তুমি রেডি হলেও আমি রেডি না।
-মানে, কি হইছে?
-কিছু হয় নাই।
-তাহলে?
-সব কথা তোমাকে বলতে হবে নাকি, আজবতো।

আর আজ এই রাতের অন্ধকারে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো আমার কল্পনার বাইরে ছিলো। আমি সালমাকে চিনি কি না চিনি এটা কেন রাস্তার গুন্ডা বখাটে ছেলেদের বলতে হবে আমাকে ?

-ওই হালার পোলা চুপ মাইরা গেলি ক্যা?
-চিনি। ও আর আমি এক সাথেই কাজ করি।
-ওর যে বিয়া অইছে বাচ্চা প্যাডে এডা জানোস?
-জানি।
-তারপরও তুই ওর পিছ ছারস না ক্যা?
-ও আমার কাছে কিছু টাকা নিছে?
-কয় ট্যাকা?
-পঞ্চাশ হাজারের মত।
- এক্কেরে ঠিক করছে হালার ঘরের হালা, মাইয়্যার গায়ে হাত দিবি, আদর করবি, ফস্টিনস্টি করবি, ট্যাকা ভাঙ্গান লাগবো না। এই তুই কোনোদিন বেশ্যার কাছে যাস নাই।
-না যাই নাই।
-ক্যান যাস নাই ক্যা?
-আমার ইচ্ছা হয় নাই, যাই নাই।
-খুব খারাপ লাগলে অগো কাছে যাবি, বিয়ায়িত মাইয়্যার দিকে হাত বাড়াস ক্যা? শোন কাইল থেকেই গারমেন্টসে তুই যাবি না। এক সপ্তাহ টাইম দিলাম এর মধ্যে হেমায়েতপুর ছারবি। আর কোনো ভাবেই সালমার লগে দেহা করার চেষ্টা করবি না। যদি শুনি করছস। তাইলে তুই আর বাইচা থাকার আশা করিস না। যা এহন বাসায় যা। খাইয়া দাইয়া একটা ঘুম দে। ওই ওরে একটা সিগারেট দে, টানতে টানতে যাক, বেচারা খুব ডরাইছে....

সত্যি আমি ভীষণ পেয়েছিলাম সে রাতে। ভয় পাওয়ার কারনও আছে। কিছুদিন আগেও সুইচটেক এলাকায় একটা লাশ পড়েছিল। যুবক ছেলে। পড়নে লুঙি শার্ট। কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে তার দেহ। আমার যে সেই ছেলেটির দশা হবে না তা কে বলতে পারে। আমার জীবন আমার কাছে মূল্যবান। তাই পরদিনই চলে এলাম ধামরাই এলাকায়। এখানেই পরিচিত এক লোকের বাসায় উঠলাম। সপ্তাহ দুই পর চাকরিও জুটিয়ে নিলাম একমি ওষুধ কোম্পানিতে।

বকেয়া বেতন তোলার জন্য আবার হেমায়েতপুর এলাম একদিন। কিন্তু না দেওয়ার অসীকৃতি জানালো কতৃর্পক্ষ। এখন কি করি কাকে ধরি একটু রেফারেন্সের জন্য। সেরকম রুই কাতলা টাইপ কারো সাথে যোগাযোগ নেই আমার। আমাকে দ্বিতীয় বার অপমান করার জন্য রেফারেন্সের জন্য এগিয়ে এলেন স্বয়ং সালামার স্বামী। রেজিকলেশন লেটারটা অনেক হাত বদলা বদলির পর অবশেষে টাকাটা পেলাম। ক্ষমা করে দিলাম তাদের। জীবনটা খুব ছোট। আর ছোট বলেই মহান। একবার হার্টবিটের সময় যতটা তার চেয়েও কম। কারো দোষ মনে রেখে লাভটা কি?

এখন আমি বিবাহিত। আমার সন্তান আছে দু'টি। বহুদিন আগের সেই সালমার কথা তেমন মনে নেই আর। কিন্তু একটা সময় ধামরাই -এ কি কষ্টে দিনগুলি যে কেটেছে আমার। প্রিয় মানুষ থেকে দুরে থাকার কি ব্যথা তা টের পেয়েছিলাম। এখন জানি সেটা বয়সেরই একটা প্রভাব ছিল মাত্র। বর্ষাকালে যেমন নদীতে পানি আসে, গ্রীষ্মকালে যেমন আম পাকে তেমন। সবকিছুরই একটা সময় থাকে। সেই সময় পার করে এসেছি আমি।

কিন্তু গতকাল এটা কি বললো সালামা ও নাকি একা থাকবে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের হাহাকার আর স্বামীর কুৎসা রটনা ব্যতিত কিছুই নেই। আমি বুঝিনা এসব মানুষকে জানানোর দরকার কি! ঘরের কথা পরে কেন জানবে। প্রাইভেসী বলেতো একটা কথা আছে। সালমার মত বুদ্ধিমতী মেয়ে এমন করলে অন্যরা করবে কি? আর কি সব আজেবাজে কমেন্টে ভরপুর ওঠে সালাম পোস্ট করা স্ট্যাটাস গুলো। একদিনতো এক ছেলের সাথে খুবজোড় তর্কাতর্কি লেগে গেল আমার।
-এই শালা তোর মত অভদ্ররা ফেসবুকটারে একেবারে ডাস্টবিন বানায়ে ফেলছে।
-তুই বলার কে শালা, সালমা তোর বউ হয়?
-আগে বল জুকারবার্গ তোর বাপ হয়?
- হয়, তোর তাতে সমস্যা কি?
-আমার সমস্যা তুই সালমাকে নিয়ে আজেবাজে কমেন্ট ক্যান করবি?
-একশোবার করবো শালা, তোর বউকে মানা কর এমন স্ট্যাটাস পোস্ট করতে।
-দাড়া শালা এক্ষুনি তোর নামে রিপোর্ট করছি।
-কর, কর, ফেসবুক আইডির অভাব নাই আমার....

সালমা তখন থাকে গাজিপুর। ইচ্ছা হলো একদিন যাই। বকাবকি করে আসি ইচ্ছে রকম। গেলাম না। গিয়ে লাভটা কি? কে ফেরাবে ওকে? কিছুদিন বাদেই হয়তো দেখতে পাবো অন্য কোনো হাস্যমুখী ছেলের সাথে সেলফি তুলে বসে আছে । তার পূর্বাভাস যে পাওয়া যায়নি তাও ঠিক না। সালমা তার স্ট্যাটাসে লিখেছে, অনিক আর আমি..... কে এই অনিক? তা জানার মৃদু একটু হাহাকার আমার আছে বৈকি। কিন্তু সেই হাহাকার আমার নিত্যকার বাজার করা, অফিসে যাওয়া, মেয়েকে রাতের বেলা পড়ানো....এসব কর্মকাণ্ডে বাঁধা হয়ে দাড়াবেনা কখনো। আর সালমাও কোনো দিন জানবে না 'গাঙচিল' নামে যে আইডিটা ওর পক্ষ হয়ে কমেন্টের পর কমেন্ট লিখে যায় সেটা স্বয়ং আমি।






আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হুসাইন গল্পের শুরুতেই মুশুরিখোলার নাম নিয়েছেন,আমার জীবনের হাজার স্মৃতি জড়ানো রয়েছে এইমুশুরিখোলা এবং তার পার্শবর্তী এলাকা ঘিরে।ভোট রইলো।আমার লেখা গল্প ভিখারিনির ছেলে ও কবিতা গমনীয় পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম।পড়বেন আশা করি।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
রুহুল আমীন রাজু বেশ সুন্দর লেখা ... ভাল লাগল । অনেক শুভ কামনা লেখকের প্রতি।আমার পাতায় 'চোখের জলভোজ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

জীবনে প্রেম আসাটা খুবই ন্যাচারাল একটা ব্যাপার। কিন্তু এই গল্পে প্রেম পড়াটা হয়ে যায় বিভেষিকা আর ভীতির ব্যাপার। সে যাহোক প্রেমতো প্রেমই। তা মানুষের জীবনকে যে খাতেই পরিচালিত করুক না কেন।

০২ জানুয়ারী - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪