মিথ্যে কথার শহরে

অবহেলা (মে ২০২৪)

Ahad Adnan
  • ৭৩
আমার একটা প্রিয় গল্প বলি তোমাকে। একটা উড়োজাহাজের গল্প। হাতে বানানো কাগজের উরজাহাজ। একদিন উড়োজাহাজটা খেলায় মেতেছিল মনের সাথে। এক সুন্দরী নারীর মন। ‘আমরা দুজনই উড়ব হাওয়ায় হাওয়ায়। বাঁক নিব নাইট্রোজেন অণুর সাথে সাথে। গতিবেগ পালটাবে প্রতি সেকেন্ডে। দেখি, কে বেশি দিক বদলাতে পারে’।
এই গল্পটা আমি প্রায়ই টেক্সট করতাম এনা’কে। পাল্টা টেক্সট আসত, ‘তুই একটা জাজমেন্টাল নারী বিদ্বেষী’। সাথে ‘অ্যাংরি’ চেহারা’র স্টীকার। 
মাঝরাত। সারা শহরে চলছে তীব্র লকডাউন। লোকজন এমনিতেই কম। পুলিশ চেকপোস্টে আমরা ক’জন ডিউটি করছি। মাঝেমাঝে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসকের গাড়ি, মিডিয়ার গাড়ি, অক্সিজেন সিলিন্ডার বাহন চলাচল করছে। ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এই এলাকার আকাশচুম্বী অট্টালিকার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে খুব মনে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ের সেই উড়োজাহাজের গল্প। 
এনা’কে আপনারা চিনেন। একটা টিভি চ্যানেলে রাত নয়টা-দশটায় টকশো উপস্থাপনা করে। ওর ভাষায় ‘হোস্ট’। বুড়ো বুড়ো বুদ্ধিজীবীদের, নেতাদের কুপোকাত করে দেয় প্রশ্নবাণে। এখনও যখন কথা হয় আমাদের ভিডিও কলে, আর আমি ভুলে যাই ওর চ্যানেলের নাম, রাগ করে খুব। বেশি রাগলে বলি, ‘তাও তোমার চেয়ে ভালো। বয়ফ্রেন্ডের নাম’টা মনে থাকে না, আবার বড় বড় কথা’। দুম করে কল’ই কেটে দেয় মেয়েটা। আজ রাতে ওর বিল্ডিঙটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ডিউটি করছি। মনে না পড়ে উপায় আছে? মেয়েটাকে ভুলে থাকা অসম্ভব।
এটা যে ওর বিল্ডিং, কিছুদিন আগেও অবশ্য জানা ছিল না আমার। হ্যা, আমি জানতাম ওর বর, মানে টিভি নাটকের ক্রেজ দীপন এই এলাকায় থাকে। এখন অবশ্য ক্রেজ একটু কমতির দিকে। ‘ভিউ’য়ের যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ছে। তবে জনপ্রিয় হলেই কি তার ঠিকানা মুখস্ত রাখতে হবে নাকি? হোক সে এক্স গার্লফ্রেন্ডের ‘হাবি’ (এই শব্দটা এনা ফেসবুকে খুব ব্যবহার করত), আমার কি এসে যায়? তবে কিছু ঘটনার পর শহরের অনেক লোকই এখন এই বিল্ডিঙটা চিনে গেছে।
‘বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন মিডিয়া সেলেব্রেটি এনা’। মাঝরাতে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে খবরটা চোখে পড়তেই আমি আঁতকে উঠেছিলাম। করোনা আক্রান্ত হয়ে আমি তখন বাড়িতে আইসোলেশনে। থানায় ডিউটিতে থাকলে আরও আগেই জানতে পারতাম। এরপর ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা নিউজ পোর্টালে খবরের বেসাতি। টিভি’তে ভাঁড়ামি পর্যায়ের রিপোর্টিং। হাইব্রিড খবরের ভিড়ে সত্যটা জানা হয়নি আর। শুধু জানি, দীপন এখন কারাগারে। এনা সুস্থ হয়ে উঠেছে।
এই নড়বড়ে দাম্পত্যের মাঝেই একদিন একটা টেক্সট।
‘হায়, সেলেব্রেটি কপ। খুব দেখছি তোমায় আজকাল টিভি’তে’?
আমার কি রিপ্লাই করা উচিত? আইনের যুক্তি বলছে, আপদ হতে সাবধান। মন বলছে অন্যকিছু। প্রাক্তন প্রেমিকার আহ্বান এড়ানো কঠিন নয়, অসম্ভব।
‘হ্যালো, সেলেব্রেটি হোস্ট। তোমাকে দেখছি না আজকাল, কী যেন চ্যানেলটা’?
‘আমাদের চ্যানেলের নাম মনে রাখা কিন্তু তোমার জেনারেল নলেজের মধ্যে পড়ে’।
‘রাখো। আর প্রেমিককে দেওয়া কথা ভুলে যাওয়া বুঝি স্মার্টনেসের অংশ’?
‘কে বলল, ভুলে গেছি? ভার্সিটির একেবারে প্রথমদিন, প্রথম বেঞ্চে কে ছিল মনে আছে। সাদা চেক শার্ট, নীল জিনস। সিনিয়র এক পাতি নেতা এসে আগডুম বাগডুম করছিল। এক ঘুষিতে নাকের হাড় কে ভেঙে দিয়েছিল এখনও ভুলিনি’।
‘সেটাই। আর বিয়ে করবে বলেছিলে? গুঞ্জন ছিল টাটকা। চ্যানেলে ডাক পাচ্ছিলে খুব। আর সেই ছেলেটাও একটু আধটু নাম করছে। তখন তুমি বেশি করতে সকালের অনুষ্ঠান। নতুন একটা ছেলের সাক্ষাৎকার নিবে, এটাই বলেছিলে না? তলে তলে প্রেমও ছিল? কই, আমাকে তো বলোনি’।
এরপর কথা চলতে থাকে রোজ। নিউজ পোর্টালে ওদের ডিভোর্সের গুঞ্জন ভাসতে থাকে। কি ভেবে যেন আমি ‘লাভ রিয়েক্ট’ করে ফেলি। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। ভেঙে যাওয়া সম্পর্কে জোড়া লাগাতে মন চায়। রাত একটায় ওর বিল্ডিঙের নিচে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়ে। উড়োজাহাজের গল্প ভাবি। এটাকে যেন উসকে দেয় আমার ‘টেলিপ্যাথি’।
‘কী, আমার কথা ভাবছ কেন? ডিউটি কর ঠিকমতো’।
‘মানে কি? কোথায় ডিউটি’?
‘এই যে, আমার বাড়ির সামনে। একটা মোটরসাইকেল গেল। কি জিগ্যেস করলে থামিয়ে’?
‘ওহ, ওটা তোমাদের গোত্রের। তা আমায় দেখছ বুঝি? তোমার ফ্ল্যাটের আলোতো নেভানো। আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছ। চৌদ্দ তলার উপর থেকে চিনলে কেমন করে’?
‘তোমার সারা মাসের রোস্টার আমার কাছে আছে। বুঝেছ আমার লিংক কতদূর’?
‘তো এতক্ষণ কেন নক করোনি? এই এক’টায় মনে পড়ল’?
‘ব্যস্ত ছিলাম’।
‘কীসের এত ব্যস্ততা’?
‘আচ্ছা, তুমি আমাকে একটা উড়োজাহাজের গল্প করতে মনে আছে’?
মেয়েটা প্রতি মুহূর্তে আমাকে অবাক করার তালে আছে দেখছি।  
‘আছে। কী হয়েছে উড়োজাহাজের’?
‘একটা পরীক্ষা নেব তোমার। আমি তোমাকে একটা চিঠি লিখেছি, কাগজে। হয়ত টেক্সট করতে পারতাম, সাহসে কুলায়নি। কাগজটা দিয়ে একটা উড়োজাহাজ বানিয়েছি। চৌদ্দ তলা থেকে ছুঁড়ব। ধরতে পারবে’?
নিস্তব্ধ রাত। আমরা আটজন মাত্র লোক এই সুনসান পথে। হাওয়া বইছে মৃদু মন্দ। হাওয়াতে ভাসছে একটা কাগজের উড়োজাহাজ, একটা চিঠি। ডানে, বামে, সামনে, পিছনে। রীতিমত দৌড়তে হচ্ছে আমাকে। আমার সহকর্মীরা অবাক তাকিয়ে আছে। মজা করে ভিডিও করছে একজন। ওরা জানেনা, এই চিঠিটা আমার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে এক টুকরো কাগজ। মাটিতে পড়ার আগেই ছোঁ করে ধরে ফেলি উড়োজাহাজ।
‘দীপন ছাড়া পেয়েছে সন্ধায়। এতক্ষণ ওর সাথে ছিলাম। এক বিছানায়। এখন শয়তানটার কাছে ম্যাসেজ এসেছে আরটি পিসিআর ফর কোভিড পজিটিভ। আমার ভিতরেও হয়ত ঢুকিয়ে দিয়েছে ভাইরাস। এই চিঠির কাগজেও হয়ত চলে গেল কয়েকটা কোভিড নাইনটিন ডেল্টা। এই শহরের বাতাস খুব বিষাক্ত। কাল থেকে তোমার নতুন পোস্টিং। আর ডিউটি করতে হবে না এই মিথ্যে কথার শহরে। ভালো থেকো। পারবে, ভালো থাকতে’? 
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহাবুব হাসান লেখাটা পড়ে মনে প্রশ্ন জাগল- পারব কখনো এমন মানের গল্প লিখতে? কত ছোট্ট পরিসরে কত গল্প বলে ফেললেন! আবার বিষয়ের সাথেও কত সংশ্লিষ্ট। ফিনিশিংটা কী দুর্দান্ত! লাইক, ভোট সবই দিলাম। লেখাটা পুরস্কারের দাবি রাখে।
অনেক বিশাল পাওয়া। অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং অজস্র শুভকামনা
ফয়জুল মহী চমৎকার প্রকাশ,শুভকামনা অবিরাম সুপ্রিয়জন।
আপনার জন্য ভালোবাসা এবং শুভকামনা

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ক্রমাগত অবহেলায় প্রবঞ্চিত হচ্ছে জেনেও কিছু মানুষ আবার পা দেয় মিথ্যে সম্পর্কের চোরাবালিতে। অবহেলায় অবিরাম বসবাস করতে হয় তাদের।

২৩ সেপ্টেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৪২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী