ঘুঁটিরাম

বন্ধুত্ব (অক্টোবর ২০২১)

Ahad Adnan
  • 0
  • ২৯
মানিক আমাকে নয় ঘুটি খেলা শিখিয়েছিল। এরপর ষোল ঘুটি, বত্রিশ ঘুটি।
গ্রামের ছেলেরা কলোনির ছেলেদের সাথে মিশত না। আমাদের বাবারা কাজ করত বিদ্যুৎ বিভাগে। মানিকদের বাবাদের কেও ম্যাট্রিকও পাশ করে নি। ক্লাস সিক্সে যখন শার্ট ইন করে স্কুলে আসি, ছেলেদের সে কি হাসি! বিকেলে আমরা যখন ‘সোনার কেল্লা’ পড়ি, ওরা তখন মাঠের কাদায় ফুটবল, হাডুডু খেলায় ব্যস্ত। তবু মানিকের সাথে কি করে বন্ধুত্ব হয়ে গেল, ভাবতেই অবাক লাগে।
মানিক আমাকে স্কুল পালানো শিখিয়েছিল। মধ্য দুপুরে ডিঙি নৌকা বেয়ে চরে যেয়ে আমরা বসে বসে আখ চিবোতাম। আর কয়দিন পরে একদুইটা সিগারেটে টান দিতেও শিখলাম। ওর হাত ধরে সাঁতার কাটা, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, তাস পেটানো, কাবাডি’র ল্যাং মারা সবই শিখলাম। তবে সবচেয়ে প্রিয় ছিল ষোল ঘুটি। মাথার খেলাটাতে কোনদিনও জিততে পারেনি মানিক।
বাসায় বাবার হাতে চড় খেয়ে খেয়ে গালটা লাল হয়ে গিয়েছিল। বেতের বাড়িতে বাড়িতে স্যাররা হাতটা করে ফেলেছিল শক্ত। ভালোই হয়েছিল। ক্লাস টেনে উঠতে উঠতে আমি তখন পাকা খেলোয়াড়। শেষ নব্বইয়ের দিনগুলোতে আমি হয়ে উঠি শ্রীকান্ত, আর মানিক ইন্দ্র।
ফাইনাল পরীক্ষার বাকি মাস ছয়েক। সব দুষ্টামি ছেড়ে আমরা তখন পড়ালেখায় ঝাঁপিয়ে পড়েছি। বিকেলের কোচিং করে ফিরছি। মানিক কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে, ‘রিমি কে চিনিস? তোদের কলোনিতে থাকে’।
‘চিনব না কেন? কি হয়েছে’?
‘মেয়েটা খুব মিষ্টি, না’?
আমি চমকে উঠি। রিমি আমার দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন। ওর বাবার সাথে আমার বাবার খুব ভালো সম্পর্ক। মেয়েটা আরও ভালো। নিজের ছোট বোনের মত ওকে আদর করি। মানিকের কথায় আমার বুক ধড়ফড় করতে থাকে।
‘সেটিং করে দিবি? ভালো লাগে। ভাব করব। আরও পাস টাস করে চাকুরি করব। তারপর বিয়ে’।
‘ওর বাবাতো ইঞ্জিনিয়ার। আর তোর বাবা জেলে। রাজি হবে’?
‘বলবি আমি পড়ালেখা করে শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। চাকুরি করব সরকারি অফিসে। বাবা জেলে হলে ছেলে জেলে হবে কে বলেছে? বন্ধুর জন্য এইটুকু করতে পারবি না’?
এরকম ভয়ংকর অবাস্তব কথা শুনে হঠাৎ করে আমি চিন্তাশীল অভিভাবক হয়ে যাই। রাজ্যের বিচক্ষণতা ভর করে ছোট্ট মাথাটায়। বন্ধুত্ব তো শুধুই ছেলেমানুষি, তাই না?
‘দেখি, কি করা যায়’, আশ্বস্ত করি।
কুড়ি বছর চলে গেছে। আমার মাথা খাটানো বেড়ে গেছে হাজার গুণ। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী হয়ে আমি এখন শহরের অভিজাত পাড়ায় থাকি। শীতাতপের হাওয়ায় বেড টি চুমুক দেই। বিজ্ঞের মত দৈনিকের পাতা উলটাই। অপরাধ, জঙ্গি, চুরি, খুন, মাদকের খবরে নাক সিটকাই। একদিন আবিষ্কার করি ভিতরের পাতায় ছবি সহ খবর। ইয়াবা সহ মাদক সম্রাট মানিক আটক। নামটা চেনা চেনা লাগে। ছবিটা আরও বেশি। মানিক নেশায় জড়িয়ে পড়েছিল জানতাম। পরিণতিতো এমনই হওয়ার কথা। বেশ হয়েছে। উপযুক্ত বিচার হোক শয়তানটার। তবু কেন জানি আমার চোখটা ঝাপসা হতে থাকে। সব বয়সের দোষ।
সেদিন কোচিং থেকে ফিরতেই বয়সটা আমার বাড়তে শুরু করেছিল। আমি গিয়েছিলাম রিমি’র বাবার কাছে। ‘চাচা, মানিক নামের গ্রামের একটা বখাটে ছেলে রিমিকে জোর করে বিয়ে করতে চায়। তুলেও নিতে পারে। আপনি তাড়াতাড়ি বদলি’র চেষ্টা করুন। সাবধান কাওকে কিছু বলবেন না, বুঝতে দিবেন না। গ্রামের ছেলে খুব ভয়ংকর’।
পরের দিন মানিক কে বলি, ‘রিমিকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি। বলেছে আগে পরীক্ষাটা শেষ করতে। এর আগে তাকানোও যাবে না। ঠিক তো’?
মানিক আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। কান্নায় ভেঙে পরে। দিনরাত শুধু পড়া আর পড়া। আজ কেন যেন মনে হয়, আহ যদি রিমিরা যদি আর চারটা মাস থাকত, যদি দুই মাসেই বদলি হয়ে না পালাতো, যদি ছয়টা মাস গ্রামের বোকা ছেলেটাকে আমি হাওয়াই মিঠাই দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে পারতাম, কত ভালো রেজাল্টই না করত মানিকটা। আর রিমি’র বাবাকে যদি কিছুই না বলতাম, আর ছেলেটা একটার পর একটা পরীক্ষা নামের সার্কাস পার হয়ে একটা ডিগ্রি, কিংবা একটা চাকুরিই জুটিয়ে ফেলত! তবে কি আমরা ম্যাট্রিক না দেওয়া, পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া ইয়াবা সম্রাট মানিককে পেতাম?
আজ পত্রিকায় ছবি ছেপেছে মানিকের। ইয়াবা সম্রাট মানিক। খবরটা পড়তেই হাত থেকে পড়ে যায় কাগজ। চোখটা বাধ্য হয়ে মুছতে হয়। মানিক, দোস্ত আমার, তুই কত ভালোবেসে আমাকে ষোল ঘুটি শিখিয়েছিলি।
আর আমি, তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, তোর জীবনটাকেই একটা ষোল ঘুটির দান করে ফেললাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী বাহ্ ভীষণ ভীষণ ভালোলাগলো খুবই সুন্দর রচিলেন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটি দুই বন্ধুর। কিন্তু শেষটা একজনের নীরব ধোঁকা আর প্রতারণার। আরেক বন্ধুর বন্ধুত্বে হয়ত কোন খাদ ছিল না।

২৩ সেপ্টেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৪২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪