টুকিপুকি

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

A R Shipon
  • ৪১
তখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা নিষেধ ছিলো। বিকেলে মাঠে খেলা শেষে মাগরিবের আজানের পর মসজিদে গিয়ে নামাজ পরি। নামাজ শেষে বের হবার সময় মসিজিদে তাবলিগে আসা লোকদের অনুরোধে তাদের সাথে বসি। কথায় কথায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে। যখন মনে পরলো ঠিক উঠে দৌড় দিলাম। মসজিদ থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার রাস্তায় আসলাম। চারিদিকে অন্ধকার। একা আমি এখানে। ভয় লাগছে। আমি ছোট থেকেই খুব ভীতু। ভূত, কুকুর, সাপ এই তিনের ভয় মাথায় চেপেছে একসাথে। সেই সাথে আব্বুর গুতানির ভয়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, নিশ্চিত আজ বাসায় আব্বুর গুতানি আর আম্মু বকুনি। ভূত, কুকুর আর সাপের ভয়কে তুচ্ছ করে এগিয়ে চললাম। ছোট ছোট পায়ে হাটছি আর কালেমা পরছি। কিছুদুর আগানোর পর হটাত একজোড়া চোখের দিকে আমার চোখ পরলো। অন্ধকারে চোখ ছাড়া আর কিছু দেখতে পেলাম না। সামনে এগিয়ে আসছে চোখ জোড়া। ...............
চোখ জোড়া এগিয়ে আসছে আমার দিকে, আমি পেছন দিকে দৌড় শুরু করি। দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি। মাঠ দিয়ে, রাস্তা দিয়ে, গাছের পর গাছে পেরিয়ে, এমনকি পুকুর নদীও সাতরে পার হই। দৌড়াচ্ছি হটাত কিছু একটা সাথে আমার পা আটকে পরে যাই। চোখ খুলে নিজেকে আবিস্কার করি নিজের রুমে। আমার চারপাশে আমার বাড়ি সহ গ্রামের অনেকেই। বুঝতে পারলাম সেখানেই জ্ঞ্যান হাড়িয়ে পরে গিয়েছিলাম। জ্ঞ্যান হারালে আমি সব সময় কল্পনায় দৌড়ের উপর থাকি। ছোট সময়ে বেশ কয়েকবার জ্ঞ্যান হারিয়েছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। যাই হোক, চোখ দুটো হয়তো কোন কুকুর বা বিড়াল বা শেয়ালের হবে। সেটিকেই ভূত ভেবে ভয়ে জ্ঞ্যান হারিয়েছিলাম।
আরেকবার পারিবারিক বনভোজনে বর্ষাকালে ট্রলার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আড়িয়াল বিলে। ফেরার জন্য রওনা দিতে দিতে রাত হয়ে যায়। ট্রলা্রের ইঞ্জিন মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায়। শুরু হয় আমার ভয় পাওয়া। সেই ভয়ে আরো ছাই দিয়ে দেয় আমার ফুপা। এই বিলে নাকি কুমীর। আমি ভয়ে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থা। এখানে আরো কিছু কথোপকথন আছে যেগুলা বলা যাবে না, স্কিপ করে গেলাম। বেশি লজ্জা পেতে চাই না।
আরেকটা জিনিষ ভয় পেতাম। সরি, আরেকটা হবে না হবে একজন। তাকে দেখলে ভয়ে আমার হাত পা কাপতো। যখন প্রাইমারি স্কুলে ছিলাম তখন প্রায় প্রতিদিনই তাকে দেখতাম। স্কুলে যাওয়ার সময়, আসার সময়, ক্লাসের ফাকে। তার সামনাসামনি পরলেই আমার বুক ধরফর ধরফর করতো, হাত পাও কাপতো। তবুও বারবার এবং বারবার তাকে দেখতে ইচ্ছে করতো। আর তাইতো স্কুলের পরেও বিকেলে তার কোচিং এ যাওয়ার রাস্তার পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম।
ক্লাস নাইনের সময়ের ঘটনা। সেই ভয় আর বারবার দেখতে চাবার ইচ্ছেটা ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়। কিন্তু ঐযে ভয়, সেই ভয়ে কখনো সামনে গিয়ে ভালোবাসার কথা বলার সুজোগ হয়ে উঠেনি।
একদিন স্কুল থেকে আসছি। বন্ধুরা আমার পেছনে। তারা বারবার আমাকে সাহস দিচ্ছে আমার ভালোবাসার কথা রোদেলাকে বলার জন্য। ওহ ভালোমত পরিচয় দেওয়া হয়নি। আমি দুপুর, আর যাকে নিয়ে আমার আজকের গল্প তার নাম রোদেলা।
পিছু পিছু হাটছি। হটাত সিনেমেটিক কায়দায় বৃষ্টি শুরু। সবাই সবার ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে মাথায় দেয়। বন্ধুদের কাছেও ছাতা আছে সুধু নেই আমার হাতে। আসলেই আজ আমি ব্যাগ নিয়েই আসিনি। ভিজে যাচ্ছি আমি, সামনে রোদেলার আর তার বান্ধুবী দুজনের হাতেই ছাতা। আমার ভিজতে ভালোই লাগছিলো। হাটতে হাটতে রোদেলা হটাত দাঁড়িয়ে পরে। পেছন ফিরে আমার দিকে আসতে থাকে। আমার তো ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। কোন রকম নিজেকে কন্ট্রোল করে দাঁড়িয়ে ছিলাম আরকি।
রোদেলা আমার সামনে এসে তার ছাতাটি এগিয়ে দেয় আমার দিকে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। সে আমার উপর ছাতাটা ছুড়ে দিয়েদৌড়ে তার বান্ধবীর ছাতার নিচে আশ্রয় নেয়। একটুপর পর পেছনে তাকায়, আর আমার বুক ধরফর ধরফর করে। সেই দিন অন্যরকম একটা সুখ অনুভব করেছিলাম। সারারাত ঘুম হয়নি। সেই ছাতাটি আজ ১০ বছর পর এখনো আমার কাছে আছে। স্বযত্নে রেখে দিয়েছি।
রোদেলার সাথে আমার সমুক্ষে কথা আমার খুব কমই হয়েছে। তবুও যতটুকু হয়েছে তার প্রতিটি সেকেন্ড আমার কল্পনায় এখনো স্পষ্ট। প্রায় ১০ বছর হয় তাকে দেখিনা। সেই বুকের মধ্যে ধড়ফড়ানি সুখটা এখন আর পাই না। কোন এক অনাকাংক্ষিত দূর্ঘটনা, বন্ধুদের ষড়যন্ত্র বা বেঈমানী ১০ বছর আগেই আমাদের দুজনকে আলাদা করে দিয়েছে। ভালোবাসা ছিলো কিন্তু সম্পর্কের পুষ্পটি পুস্ফটিত হওয়ার অংকুরে বিনষ্ট হয়েছে।
১০ বছর। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আমার জীবন অনেক চরাই উৎরায় পার করে কোন এক দিগন্তের খোজে এক নব দরজার সামনে। তার জীবন কেমন চলছে সেই খোজ আমার জানা নেই। জানতে চাইনি এমনটি না, সুজোগ পাইনি।

ধানমন্ডি লেক দিয়ে হেটে চলছে দুপুর। আর নিজের মনে মনে এই গল্পটি আওরাচ্ছে। নতুন একটি গল্প লিখছে সে। গল্পের নাম ঠিক আগেই করা হয়েছে। গল্পের নাম টুকিপুকি। কিন্তু গল্পের প্রেক্ষাপট বা রস এখনো ঠিক হয়নি। তাই রবিন্দ্র সরবরের দিকে যাচ্ছে সে। জায়গাটা খুব পছন্দের দুপুরের। রাইটিং ব্লকে পরলে এখানে সে আসে, দুই একটা সিগারেট খায়, চা খায়, পকেটে টাকা থাকলে গরুর চাপ আর লুচি খায়। এই সব করতে করতে কিছু একটা পেয়ে যায়।
“টুকিপুকি” কি এক অদ্ভুদ নাম। এই নামে কি গল্প লিখবে সেটা নিয়েই ভাবছিলো। কিছুটা লিখেছেও যেটা উপরে আপনারা পরেছেন।
দুপুর হাটছে, হটাত খেয়াল করলো তার বুকের মধ্যে কেমন জেনো লাগছে। ধরফর ধরফর করছে। হাত পাও কাপছে। কিন্তু এমন হচ্ছে কেনো?
দুপুর এক পাশে বসে পরে। সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া হকারের কাছ থেকে এক বোতল পানি কিনে খায়, হয়তো শারীরিক কোন অসুস্থতা। কিন্তু কাজ হয়নি। ধিরে ধিরে কম্পনটা বেড়ে যাচ্ছে।
হচ্ছেটা কি আমার? হাত পা এমন করে কাপছে কেনো? ভয় লাগছে খুব।
পেছন থেকে কেউ একজন এসে,
কোন একজনঃ কেমন আছো তুমি?
দুপুর সামনে পেছন ফিরে তাকায়,
দুপুরঃ ভালো, আপনি কে?
কোন একজনঃ আমাকে চিনতে পারো নি? অবশ্য অনেকদিন পর দেখা।
দুপুরঃ হ্যা চিনতে পারিনি।
কোন একজনঃ তুমি কাপছো কেনো? ঘেমেও গেছো
দুপুরঃ জানিনা কেনো হটাত করে এমন হচ্ছে। কিন্তু তুমি কে? আমি তো চিনতে পারছি না। আর তুমি আমাকে তুমি করেও বলছো।
সে এক মন ভোলানা হাসি দেয়। হাসিটা দুপুরের মনে গেথে যায়।
দুপুরঃ (নিচু কন্ঠে) কে তুমি?
কোন একজনঃ আমি রোদেলা।
দুপুরঃ ধুর। তুমি নিশ্চয় আমার গল্প পরো। আর তাই
কোন একজনঃ তুমি গল্পও লেখো নাকি? আচ্ছা মনে আছে যখন মাদ্রাসায় পরতাম তখন তুমি একবার একটা কবিতা লিখেছিলে। আমাকে দিয়েছিলে। মনে আছে?
দুপুরঃ অহ তুমি? আমি তো ভূলেই গিয়েছিলাম তোমার কথা। কেমন আছো তুমি?
রোদেলাঃ যাক এখন মনে পরেছে তাহলে। আমি ভালো আছি। তবে কষ্ট পেয়েছি যে তুমি আমাকে ভূলে গিয়েছো।
দুপুরঃ আসলে অনেক ঝামেলায় ছিলাম তো। আর অনেক দিন দেখা হয়না, কথা হয় না।
রোদেলাঃ হুম। সেই ঘটনার পর আজই প্রথম দেখলাম তোমাকে। অনেক বদলে গেছো।
দুপুরঃ এখন বুঝতে পারছি যে বুকের ভিতর ধড়ফড়ানি আর হাতপা কাপাকাপির রশস্যটা।
রোদেলাঃ এখনো কাপছে। তুমি ছোট সময়েও আমাকে দেখে এভাবে কাপতে। কথা বলতে পারতে না। এখন তাও কথা বলছো।
দুপুরঃ যাক, কেমন আছো তুমি?
রোদেলাঃ খুব ভালো। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এখন একটা ফার্মে জব করছি। তুমি?
দুপুরঃ বেকার সাথে সখের ফটোগ্রাফার। পড়ালেখা করিনি।
রোদেলাঃ খুবই বাজে একটা কাজ করছো। আচ্ছা শুনো,
দুপুরঃ কি?
রোদেলাঃ তোমাকে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এক্সেপ্ট কইরো।
দুপুরঃ আচ্ছা। কি নাম আইডির?
রোদেলাঃ TukiPuki.
দুপুরঃ বাহ! সুন্দর নামতো। টুকিপুকি।
রোদেলাঃ হুম। তুমি আমাকে একবার এই নামে ডেকেছিলে।
দুপুরঃ আমি? কবে মনে নেই।
রোদেলাঃ মনে না থাকারই কথা। আচ্ছা আসি এখন তাহলে। ভালো থেকো।
দুপুরঃ আল্লাহ হাফেজ।
রোদেলা চলে যায়। কিছুদুর সামনে গিয়ে পেছনে দুপুরের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।
দুপুরের খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো রোদেলাকে যে তাকে খুব সুন্দরী লাগছে। কিছুক্ষন তার রুপের প্রশংসা করতে পারলে ভালো লাগতো কিন্তু ভয়। ভয়, যদি রোদেলা মাইন্ড করে। বলা হলো না।
দুপুর খেয়াল করলো ঘটনার কিছুটা তার কাল্পনিক গল্পের সাথে মিলে যাচ্ছে। আসলে গল্প তার এই ঘটনার সাথে মিলছে নাকি অনেক আগের সেই ঘটনা গল্প লিখতে গিয়ে কল্পনায় এসেছে যেটা দুপুর ধরতে পারেনি।
দুপুর দুই শলকা সিগারেট পুরিয়ে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে বাসায় ফিরে। ফ্রেস হয়ে রেস্ট নিয়ে পিসি ওপেন করে ফেসবুকে বসে। রোদেলার আইডি টুকিপুকি খুজে বের করে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। কিছুখন ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে সুয়ে পরে। কেনো জানি রাজ্যের সব ঘুম তার চোখে এসে জমেছে। ঘুমিয়ে পরেছে। স্বপ্নে সে চলে গেছে কোন এক সমুদ্র সৈকতে। বিচে দাঁড়িয়ে আছে, গৌধুলী সন্ধ্যা, সমুদ্রের ঢেউ এর গর্জন, মৃদ বাতাস। পেছন থেকে রোদেলা এসে দুপুরের হাত ধরে।
রোদেলাঃ চলো আমরা পানিতে হাটি, ঢেউ এর গর্জন আরো কাছ থেকে শুনি।
দুপুর রোদেলার হাতটা শক্ত করে ধরে পাশাপাশি হেটে সমুদ্রে নামে। কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। হাটু পর্যন্ত পানিতে নেমে সুম্রদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। রোদেলা দুপুরের কাধে মাথা রাখে। ছোট ছোট করে ডেউ এসে তাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর, রোমান্টিক একটা মুহুর্ত। হটাত বড় একটা ঢেউ এসে উপচে পড়ে তাদের উপর। ঘুম ভেংগে যায় দুপুরে। হৃদয়, দুপুরের ভাগিনা। সে এক বালতি পানি দুপুরের উপর ঢেলে দিয়ে দুপুরের ঘুম ভাংগায়।
হৃদয়ঃ মামা তুমি খাবান? না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলা যে।
দুপুরঃ গাধা কোথাকার। ডাক দিলেই তো হতো, এভাবে ভিজিয়ে দিতে হয়।
হৃদয়ঃ ডাকছি তো, তুমিতো উঠো না। তাই সালাউদ্দিন মামা বললো ভিজিয়ে দিতে। আর কে জেনো তোমাকে ম্যাসেঞ্জারে কল দিচ্ছে সেই কখন থেকে।
দুপুর মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে টুকিপুকি আইডি থেকে ম্যাসেজ আর কল। কিছুখন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর মোবাইল রেখে ফ্রেস হয়ে ডিনার শেষ করে আসে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে টুকিপুকি আইডি থেকে আবার ম্যাসেজ।
Tukipuki: kiholo, seen kore reply dicchona je.
দুপুর রিপ্লে দেয় যে সে ঘুমিয়ে পরেছিলো। কিছুখন পর রোদেলার রিপ্লে দেয়।
রোদেলাঃ আমিও ঘুমিয়ে পরেছিলাম। আর জানো কি হইছে?
দুপুরঃ নাহ। কি হইছে?
রোদেলাঃ আমি তোমাকে স্বপে দেখেছি।
দুপুরঃ আমাকে স্বপ্নে দেখেছো? বাহ! তা কি দেখলে আমাকে?
রোদেলাঃ আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হটাত চোখ পরলো একটা মোবাইল রিচার্জের দোকানে। সেখানে তুমি বসে ছিলে। আমার রিচার্জের প্রয়োজন না থাকা স্বত্তেও আমি দোকানে গেলাম। তোমাকে বললাম যে বাংলালিংক কার্ড আছে। তুমি বললে, হ্যা। আমি এমন ভাব করেছিলাম যে আমি তোমাকে না দেখেই দোকানে আসছি। আর তুমি যখন আমার দিকে তাকালে আমি লজ্জায় একদম আধমরা। পেছন ফিরে দৌড় দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসলাম। আর পিছু পিছু তুমি আসলে যেমন করে স্কুলে থাকা সময় আসতে। কিছুদুর যাওয়ার পর দেখলাম আমার বড় ভাই সামনে। আমি হাত দিয়ে ইশারা বুঝাতে চাচ্ছিলাম যে প্লিজ তুমি আর সামনে এসো না। কিন্তু তুমি দুষ্ট টুকিপুকিটা একদম কাছে চলে আসলে আর ভয়ে আমার ঘুম ভেংগে গেলো। হাহাহাহাহাহহাহাহাহা।
দুপুরেরও ইচ্ছে করছিলো তার স্বপ্নের কথা রোদেলাকে শোনানর, কিন্তু হয়তো রোদেলা ভাববে দুপুর তার স্বপ্নের কথা শুনে নকল করে এখন নিজের স্বপ্নের গল্প বানাচ্ছে, সেই ভয়ে আর দুপুরের স্বপ্নের কথা বলে উঠা হয়নি।
দুপুরঃ স্বপ্নটা সুন্দর ছিলো। আচ্ছা তুমি আমাকে টুকিপুকি বললে?
রোদেলাঃ (নিচু মিষ্টি কন্ঠে ধিরে) তুমি তো আমাকে বলো না। (দ্রুত করে) তাই আমিই তোমাকে বলি।
দুপুরঃ আচ্ছা এখন থেকে টুকিপুকি বলে ডাকবো।
রোদেলাঃ চুপ করো।
দুপুরঃ চুপ থাকবো?
রোদেলাঃ (নিচু মিষ্টি কন্ঠে ধিরে) নাহ। কথা বলো।
দুপুরঃ খাইছো?
রোদেলাঃ নাহ, ভুলেই গিয়েছিলাম খাওয়ার কথা। তুমি খাইছো।
দুপুরঃ হ্যা। যাও তুমি খেয়ে আসো।
রোদেলাঃ আচ্ছা। আর তুমি ঘুমিয়ে পরো। অনেক রাত হয়েছে।
দুপুরঃ আচ্ছা। তুমিও খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
রোদেলাঃ শুভ রাত্রী।
সেদিনের মত দুপুর আর রোদেলার কথা এখানেই শেষ হয়। সে রাত্রে দুপুরের আর ঘুম হয়নি। সারারাত রোদেলার সাথে তার ছোট সময়ের স্মৃতি গুলো কল্পনা করেছে। কতটাই না পাগল ছিলো দুপুর এই মিষ্টি মেয়েটির জন্য। কত কিছু করেছে সে, বকাঝকা খেয়েছে, মার খেয়েছে। কিন্তু
এরপর থেকে দুপুর আর রোদেলার অনেক কথা হয়। ম্যাসেঞ্জারে, ফোন কলে এমনকি তারা দেখাও করে।
একদিন রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কথা বলে। ভোরে দিকে এসে রোদেলা বলে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। দুপুর মজা করে বলে আমি এখন লেকে হাটতে যাবো তুমি চলে আসো তাহলে। রোদেলা আচ্ছা বলে ফোন কেটে দেয়। দুপুর এর পর কয়েকবার ফোন দিয়েও রোদেলাকে পায় না। প্রতিদিনের মত হাটতে বের হয়। ধানমন্ডি লেক থেকে রবিন্দ্র সরবরে পৌছতে না পৌছতে পেছন থেকে এসে রোদেলা হাজির। লাল রঙের একটা শাড়ি পরে এসেছে।
দুপুরঃ তুমি সত্যি সত্যি চলে এসেছ?
রোদেলাঃ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
দুপুরঃ হাতে কি?
রোদেলাঃ তোমার জন্য চকলেট আর পায়েশ।
এরপর দুজনে একসাথে অনেকখন হাটে। দুপুরের ইচ্ছে করছিলো পুরো দুনিয়াটাকে কিছুক্ষনের জন্য ফ্রিজ করে রাখি। তারপর রোদেলার সামনে গিয়ে ওর দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে ওকে মন ভরে দেখি। কিন্তু সেটি তো আর সম্ভব না। কিন্তু ওর দিকে তাকিয়ে থাকাও দুপুরের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বেশি সুন্দরী লাগছে টুকিপুকিটাকে। চোখে কাজলও দিয়েছে। ছোট সময়ে মাদ্রাসায় পড়ার সময় যেভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে রোদেলাকে দেখতো এখনো ভয়ে ভয়ে সেইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে রোদেলাকে দুপুর।
দুজনে একসাথে নাস্তা করে যে যার মত চলে যায়। বাসায় গিয়ে ফ্রি হয়ে আবার কথা শুরু করে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে তাদের বন্ধুত্ব। কথা হয় দেখা হয় অনেক অনেক প্ল্যান করা হয় কিন্তু সম্পর্কটা অন্যকোন দিকে মোর নেয় না যদিও দুজন দুজনকে ভালোবাসে। এক পবিত্র ভালোবাসা দুজনের মধ্যেই আছে।
একদিন হটাত রোদেলা দুপুরকে ফোনে কল দেয়। রোদেলা জানায় তার বাসা থেকে তার বিয়ে ঠিক করেছে। কথাটি বলার সাথে সাথেই রোদেলা কেদে দেয়। কিছুক্ষণ কান্না করে ফোন কেটে দেয়। দুপুর কল ব্যাক করলেও রোদেলা রিসিভ করেনা। অনেক বার কল দেয় দুপুর আর প্রতিবারই রোদেলা কল কেটে দেয়। একসময় রোদেলা ফোন বন্ধ করে রাখে।
দুপুর মূলত কল দিচ্ছিলো রোদেলাকে বলার জন্য যে সে তাকে ভালোবাসে, বিয়ে করে নিজের করে পেতে চায় রোদেলাকে। ভয় কাটিয়ে এইটুকু সাহস সে জোগাড় করেছিলো। কিন্তু রোদেলার বার বার ফোন কেটে দেওয়া আর পরে ফোন বন্ধ করে দেওয়া দুপুরের মধ্যে আবার ভয় সৃষ্টি করে। রোদেলা তাকে হয়তো ভালোবাসে না। ভালোবাসলে অবশ্যই শুনতে চাইতো যে দুপুর কেনো ফোন দিচ্ছে।
এরপর আর সাহশ করে দুপুর কখনো বলতে পারেনি যে সে রোদেলাকে ভালোবাসে, অনেক বেশি ভালোবাসে। রোদেলা যদিও পরে ফোন করে বলেছিলো সেদিন কেনো সে বারবার ফোন দিয়েছিলো। তবে দুপুর এবার আর তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বলতে পারেনি তোমায় ভালোবাসি টুকিপুকি।
রোদেলা দুপুরকে বিয়েতে দাওয়াত করে। দুপুর বিয়েতে যায় না তবে একটা গিফটবক্স ঠিকই পাঠায়, যেখানে ছিলো এই ১১ বছরের সব স্মৃতি আর ভালোবাসা।
লাল বেনারশী শাড়ি, লাল চুড়ি, কাজল কালো চোখ, অলংকারে অলংকিত রোদেলা নিজের সামনে অন্যের হয়ে যাবে সেই দৃশ্য দেখতে হবে এই ভয়ে আর বিয়েতে যাওয়া হয় না। তবে অপেক্ষায় ছিলো দুপুর সে ভয় কাটিয়ে ভালোবাসার কথা রোদেলাকে বলতে পারেনি হয়তো রোদেলা পারবে ভয়কাটাতে। ভয় কাটিয়ে সাহস নিয়ে হয়তো রোদেলা চলে আসবে দুপুরের কাছে। কিন্তু রোদেলাও পারেনি ভয় কাটিয়ে উঠতে। মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা ভয়ে দুজনে আলাদা হয়ে যায় সারা জীবনের জন্য। হয়তো আর কোনদিন দেখাও হবে না, কথাও হবে না। কেউ কাউকে হয়তো টুকিপুকি বলে ডাকাও হবে না।

সমাপ্ত
( পুরো গল্পটাই আমার কল্পনা । এর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই )
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোশফিকুর রহমান অসাধারণ লিখেছেন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভয় থেকে ভালোবাসার কথা ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো বলতে না পারা। পুরো গল্পটিতে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয় নিয়ে কথা বলা হয়েছে। আর এবারের সংখ্যার বিষয় ভয়। তাই আমি মনে করি আমার লেখা গল্পটি পুরোপুরি বিষয়ের সাথে সমঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও এই ভয়টা ভিন্নধর্মি ।

১৬ সেপ্টেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪