অফিসে যাওয়ার পথে কুয়াশা ঘেরা এলাকা দেখে মনে মনে রিদিমা ভাবছে কেন যে শীত বার বার আসছে আবার যাচ্ছে। মনে মনে খুশি যে সামনে ফাল্গুন মাস
ফাল্গুনের হাওয়া প্রকৃতিতে বয়ে না গেলে ও হৃদয়ে কিন্তু সে অনেক দিন থেকেই তার আভাস দিয়ে যাচ্ছে আর দিন দিন অপেক্ষা বেড়েই যাচ্ছে রিদিমার
কুয়াশা ভেদ করে হঠাৎ কল্পনার মানুষকে দেখে চমকে গেলো রিদিমা। মনে লুকানো খুশি নিয়ে তাকে বলেই ফেললো
“ চলো আমরা দুজনে কুয়াশা ঘেরা পৃথিবীর কোন এক দিকে হারিয়ে যাই ”
সে বলল “ সবাই দূর দিগন্ত, নীল সাগর, অপরূপ প্রকৃতি আর অনেক সুন্দর মুহূর্তে হারাতে চায় আর তুমি কিনা কুয়াশা...? আর তুমি তো বল শীত তোমার মোটেও ভালো লাগে না, তাহলে? ”
রিদিমা বলল “ সবার চাওয়ার সাথে আমারটা মিলে যাবে এমন তো বাধ্যতা নেই, তাই না? তাহলে তো সবার সাথে আমার পার্থক্য করতে পারবে না, আর তুমি জানো আমি তো এমনি ”
সে বলল “ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে চলো ”
চলো বলেই রিদিমা তার হাত ধরে ঠিকানা বিহীন অদূর দর্শনে হেঁটে চললো আর বলল “ তোমার দিকে না তাকিয়ে কিছু কথা বলবো তুমি কিন্তু শুধুই শুনবে ”
সে বলল “ কেনো তাকাবে না বলোতো? ”
“ তাকালে আমি যে কিছুই বলতে পারবো না ” রিদিমা বলল
সে কিছু না বলে একটু হেঁসে মাথা নাড়িয়ে রিদিমাকে সাঁয় দিলো আর রিদিমা তার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাথা নিচু করে বলতে লাগলো.....
“ আমি কখনো আমার হৃদয় কে দেখিনি জানো। শুধু এর প্রতিটি স্পন্দন অনুভব করতে পেরেছি। আমি কখনো আমার হৃদয়ের চাহিদা বুঝতে পারিনি। কিন্তু যখন আমি তোমাকে দেখি তখন তোমার মুখ অবয়বে আমি আমার হৃদয়কে স্পষ্ট দেখতে পাই আর সেই সাথে যখন যতবার আমার হৃদয়ের কম্পন সৃষ্টি হয়েছে ঠিক ততবার আমার হৃদয় যেন জীবন্ত মানুষের মত আমার সাথে কথা বলেছে। আর যখন তুমি আমার পাশে পাশে চলেছো তখন মনে হয়েছে আমার হৃদয় ও আমার সাথে হেঁটে চলেছে। যখনি তোমার সুখের কথা ভেবেছি ঠিক তখনি আমার হৃদয় যেন আমার চাহিদা পূরণ করে নিয়েছে। এর নাম কি সত্যি ভালোবাসা কিনা জানি না আমি। তবে সত্যি ভালোবাসা ওতো সোজা ব্যাপার নয় জানি। এর বিস্তৃতির কোন সীমারেখা নেই। সত্যি ভালোবাসার কোন পরিপূর্ন ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি কখনো আর একে কোন গন্ডির মাঝে বেঁধে রাখা যায়নি কোন কালের প্রবর্তনে। তাই শুধু এটুকুই বলব “”” তোমায় ভালোবাসি ””” কিন্তু কতটা কখনও জিজ্ঞেস করোনা। কারন আমি নিজেই এর পরিমাপে আর অর্থ খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছি আর ভালোবাসার অনেক রুপ রঙ দেখেছি আর নিজেকে উত্তর বিহীন প্রশ্ন করে গেছি বার বার ”
রিদিমার বলা শেষে চোখ খুলে দেখলো সে অফিসের গাড়িতে সিটে হেলান দিয়ে হাতে মোবাইল, কানে হেডফোন দিয়ে বসে আছে। টের পেলো কল্পনার ঘোরে ডুবে ছিলো এতক্ষণ।
তখন তার নিজের লেখা কবিতা “””” হঠাৎ দেখা ”””” এর কিছু লাইন মনে হলো.............
কল্পনার প্রেমের খেলায়
ভালোবাসার অগাধ প্রণয়
কিছুটা আকুতি জানায়
কিছুটা অনুভব ছড়ায়
সযতনে আত্ন ভোলায়
হৃদয়ে তৃপ্তিরা আভাস পায়
দুজন দুজনাতে হারায়
সুখফুলের গাঁথা মালায়
তুমি আমি নয়নে সাঁজায়
উৎসুক হয়ে মগ্ন দুজনায়
গভীরে মিশে গল্পের খাতায়
লিখে চলেছি পাতায় পাতায়
দৃষ্টি বিহীন সীমারেখায়
পাড়ি মোদের অজানায়
রিদিমা ভাবছে নিজের এরকম বোকা হয়ে যাওয়ার মাঝে ও কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করে। এরকম বোকা হতে বার বার ইচ্ছা হয়। আর মনে মনে বলল ""আমার মনের মধ্যে উড়ে যাওয়া সব স্বপ্ন-কল্পনা একদিন হয়তো সত্যি হয়ে বাস্তবে উড়ে বেড়াবে শুধুই আমার সাথে
বাস্তবের দর্শন হোক বা না হোক স্বপ্ন-কল্পনার অপূর্ব মুহূর্ত আর মিষ্টি স্মৃতি চির জীবনের সঞ্চয় হয়ে রইলো সেটাই বা কম কিসের। স্বপ্ন-কল্পনাতে ভালোবাসা এরকম ভাগ্যই বা ক-জনের আছে? তবুও মনে হলো কাউকে না জানিয়ে অপেক্ষা, কাউকে না বুঝতে দিয়ে তাকে খুব বেশি অনুভব করা, কারো কোন ক্ষতি না করে তার ভালোবাসায় নিজেকে সঁপে দেয়া, কারো জীবনে জোর করে দখল না দিয়ে আল্লাহ্র কাছে শুধুমাত্র একজন কেই আজীবন ভালোবাসার প্রার্থনা করা সেটা তো দোষের নয়। তাই সে দিনের অপেক্ষা, হোক সে অপেক্ষা অনন্তকালের তবুও অপেক্ষায় আমি।"" রিদিমা আবারো মোবাইলে গান শুনতে লাগলো আর ঠিক তখনি কাকতালীয় ভাবে তাওসিফের গানটি শুরু হল... “ সখি তোরে গোপনে ভালোবেসে যাই আমি ”
রিদিমা মুচকি হাসলো আর দেখলো সে দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসছে
রিদিমা এক হাত একটু তুলে যেই তাকে ডাকবে ঠিক তখনি স্যার বললেন
“ ম্যাডাম কোন সমস্যা ? ”
রিদিমা-“ না স্যার এমনি, কিছু না ”
রিদিমা আবারো মুচকি হেঁসে ভাবতে লাগলো
আমার সব ভাবনা, স্বপ্ন, কল্পনা, পুরো জীবনের সাথে যে তোমার অদৃশ্য উপস্থিতি অনুভব করি, আর আমার চলার পথে প্রতিটা মুহূর্ত তোমায় সাথে নিয়ে চলি আর অধীর আগ্রহে এক একটা মুহূর্ত তিল তিল করে কাটাচ্ছি তোমার দৃশ্যমান উপস্থিতির জন্য
প্রতিটি মুহূর্ত তোমার ভাবনায় মেতে থাকা আমি তোমার সঙ্গে অদৃশ্যে কথা বলি, আমার দুঃখ, কষ্ট, সুখ বা মিশ্র অনুভূতিগুলো তোমার অংশীদার করি। তোমার অপেক্ষাকে ঘিরে আমার আবেগ অনুভূতি, জীবন চলা, চাওয়া, পাওয়া এতোটাই গভীর, মিষ্টি, এতোটাই পবিত্র যা তোমাকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি থেকে অনেক উপরে
স্বপ্ন-কল্পনায় অনেক বার তুমি আবছা ভাবে কাছে আসো, কখনো তোমার শারিরিক গঠনটাও যেনো দেখি কিন্তু তোমার মুখটাই স্পষ্ট হয়না। স্পষ্ট হলে তো কবেই তোমাকে খুঁজে বের করতাম। অন্তরের চেনা তো অনেক আগে থেকে এখন শুধু দু চোখে দেখে চেনা বাকী
যেদিন কাছে আসবো বলবো তোমায় সব, তখন এসব কথায় আমার উপর রাগ, অভিমান, কষ্ট বা নেতিবাচকতা খুঁজে নিওনা অনুরোধ। আমার অনুভূতি গুলোকে অন্তরে উপলব্ধি করে প্রকৃত ভালোবেসো আমায়। আর আমার সে অধীর অপেক্ষার আশাকে ম্লান করে দিওনা
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যেদিন কাছে আসবে আমাকে আরো বেশী ভালোবাসা দিয়ে আমায় ভূল প্রমান করে দিও, আর বুঝিয়ে দিও যে তোমার অপেক্ষার অনুভূতির চেয়ে তোমাকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি সর্বশ্রেষ্ঠ
তুমি হয়তো ভাবনার ওপারে তোমার কাজ, পড়াশোনা বা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকছো, হয়তো অন্য কাউকে তোমার হৃদয়ে রেখে তাকে ঘিরেই তোমার জীবন সাঁজাতে চাইছো, হয়তো কাউকে হৃদয়ের গভীর থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসছো, হয়তোবা আমার মত করেই একজনের অপেক্ষায় আছো
তুমি হয়তো কোনদিন কল্পনাও করতে পারছো না পৃথিবীর কোন একপ্রান্তে কেউ একজন বেঁচে থাকছে আজন্ম তোমাকে ভালোবাসতে। তোমার হৃদয়ের স্থান চেয়ে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে, যে তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসতে বাসতে একমুহূর্তের জন্য ক্ষ্যান্ত হয়নি
তোমার উপর পুরো অধিকার নিয়ে সে তোমাকে পেতে চায় কারণ ভালোবাসায় যে হারানোর ভয় বেশী হয়। সে তোমার কাছ থেকে অসীম ভালোবাসা, নিশ্চিন্ত নির্ভরতা ছাড়া কিছুই চায়না আর তোমাকেও তার অসীম ভালোবাসা আর নিশ্চিন্ত নির্ভরতায় আগলে রাখতে চায়
কে বলে ভালোবাসার গল্পে দুজনই দৃশ্যমান থাকতে হয়। অদৃশ্যে কারো অপেক্ষার ভালোবাসায়ও কারো কারো জীবনের গল্প এগিয়ে যায়।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
কোন একজন মানুষ তার প্রিয় মানুষটার অপেক্ষায় তার মনের ভিতর স্বপ্ন, কল্পনা, জীবনের আসন্ন মুহূর্তগুলোকে ভালোবাসা দিয়ে সাজানো কিছু কথা লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছে। এই গল্পে যদিও একটি চরিত্রের কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। বিপরীত চরিত্রটি এখানে কাল্পনিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই পুরো গল্পটি বা কথোপকথন গুলো অলিক। সুতরাং গল্প-কবিতার এবারের বিষয়ের সাথে লেখাটির সামঞ্জস্যতা রয়েছে।
০৫ সেপ্টেম্বর - ২০১৮
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪