অলিক নেশা

অলিক (অক্টোবর ২০১৮)

আবু আরিছ
  • ৪৪
জানিনা কোন ভূত চাপল আমার মাথায়। আমি সোজা চলে গেলাম নিউ মার্কেটের অপজিটে রাফিন প্লাজায়। মাইনের পুরো টাকাটা দিয়ে কিনে ফেললাম একটি ডিজিটাল ক্যামেরা।

সন্ধ্যার অন্ধকারে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছিলাম আমি। বাস ধরতে হবে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। তবু কেন জানি তাড়াহুড়া করছি। কি এক মরণনেশা যেন আমাকে এই রাতে উম্মাত করে তুলেছে। যেদিন বাস একসিডেন্ট হয়, সেদিন নাকি ড্রাইভার আনন্দতালে অস্থির হয়ে থাকেন। আমাকে কি সেই অস্থিরতা পেয়ে বসেছে? তাই হবে হয়তো। নয়তো টানাটানির সংসারে মাইনের পুরো টাকা দিয়ে এমন একটা অপ্রয়োজনীয় বস্তু কিনে ফেলা পাগলের কাণ্ড ছাড়া আর কি হতে পারে।সে যাই হোক নীতুকেতো সারপ্রাইজড দেওয়া যাবে। বাসের জানালা দিয়ে উজ্জ্বল ঢাকা দেখতে দেখতে সান্তনার সম্ভবনার নানা কথা ভাবতে লাগলাম আমি।

ক্যামেরা দেখে নীতু বিষ্মিত হওয়ার বদলে বিমর্ষ হলো। সেই বিমর্ষতা রাগে রুপ নিতেও সময় লাগলো না।
--কি এনেছো এটা? মোবাইলে ক্যামেরা নেই নাকি, আরেকটা ক্যামেরা কিনতে হবে? কত নিল শুনি?
--তেমন কিছু না। সস্তায় পেয়ে গেলাম। জলের দামে...
--কত সেটা বলতে সমস্যা আছে?
--সাড়ে তেরো।

আমার কথা শোনামাত্র নীতুর অবস্থা কেমন হলো তা লিখিত ভাবে বণর্না করা খুবই দুরূহ। এসকল ক্ষেত্রে সাধারণত "যারপর নাই অবাক হলো ", "আকাশ থেকে পড়ল "এসব লেখা হয়। আমি কিছুই লিখব না। এই অপারগতা থেকেই বুঝে নিতে হবে তার অবস্থা কেমন হয়েছিল।

রাগে চুড়ান্ত রকম অস্থির হয়ে নীতু বলল, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? বাসা ভাড়া, মাসের খরচ, কারেন্ট বিল এসব কোথায় থেকে দেবে। যাও এখনি ওটা ফেরত দিয়ে আসো, রাত বেশি হয়নি, এখনও দোকান খোলা আছে, বেরোও, এখনি বেরোও।
--আরে মাথা ঠাণ্ডা করো,আমার কথা শোনো আগে, টাকার ব্যবস্থা হয়েছেতো।
--ব্যবস্থা হয়েছে মানে?

আমি ম্যাজিশিয়ানের মত নীতুর হাতে ষোলোটা চকচকে এক হাজার নোট ধরিয়ে দিলাম। নীতু বিষ্মত। খুশি ভাব লুকোবার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল, কোথায় পেলে এত টাকা?
--পেলাম।
--পেলাম মানে, কোথায় পেলে? ধার করেছো নাকি সেটা বলো।
--না, না, ধার না।
--তাহলে কি?
--একটা ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিলামতো, সেই খুশি...
--ঘুষ খেয়েছ।
--আরে না, আমি নিতে চাইছিলাম না, সম্মানী দিল।
--হু সম্মানী দিল, আর তুমি লুফে নিল। খুব লোভ হয়েছে দেখি। শ্রাবণী মেয়েটা এখনও আছে তোমাদের অফিসে। সেও যদি কিছু দিতে চায় সাথে সাথে লুফে নিবে নাকি আবার।

নীতুর কথায় শব্দ করে হেসে উঠলাম আমি।
--হাসছো কেন, হাসির কি বললাম?
--না, এমনি হাসছি।
--শ্রাবণী আছে এখনো?
--আছে।
--ও তো তোমাকে একটা পাঞ্জাবি দিল, তুমি কিছু দেবে না?
--বাদ দাওতো ওসব কথা।
--বাদ দেবো কি, তোমার যা লোভ হয়েছে আজকাল।

সত্যি কথাই বলেছে নীতু, আজকাল আমার মাথার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। কখন যে কি করি কিছুই বুঝি না। অস্থিরমতি ড্রাইভারের মত। আর কিছুক্ষণ পরেই যার জীবনে ঘটতে পারে ভয়াবহ কোন দূর্ঘটনা। নীতু ঘুমিয়ে পরার পর একটা অসাধারণ ভিডিও ধারন করে ফেললাম আমি। শরীরের ক্লোজ সট, সেনাপ সট। উষ্ণতা অনুভব করলাম নিজে নিজেই। তবে নীতুকে সব থেকে ভালো লাগে আমার ভেজা শরীরে। কোথায় যেন পড়েছিলাম জল কামনাময়। কথাটা আসলেই সত্যি, জলের সাথে নারীকেই শতভাগ যায়।আমাদের দেশে সব থেকে বেশী যায় দীঘির জলের সাথে। গাঁয়ের কোন বধূ গোসল সেরে ভেজা কাপড়ে কসলি কাখে ঘরে ফিরছে এমন ছবিতো গ্রাম বাংলার প্রতিটি ছেলের চোখেই ভাসে।এখন অবশ্যি কলসি দেখা যায় না, তবে ভেজা শরীরে ঘরে ফেরার ব্যাপারটা এখনও মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করা যায়।

পরদিন নীতুর সাথে সাথে আমিও বাথরুমে ঢুকলাম।
নীতু হাসি মুখে বলল, ব্যাপারখানা কি মশাই?
--না, এমনি। বলতে গিয়ে আমারি লজ্জা করতে লাগলো। এই প্রথম আমরা দুজন এমন অন্তরঙ্গভাবে একসঙ্গে বাথরুমে ঢুকেছি। নীতুর কোনো অঙ্গই অবশ্যি আমার অচেনা নয়। তবু কেন জানি আজ খুব অচেনাই লাগছে রুপবতী এই মেয়েটিকে।

--ও আমি গোসল করবো আর তুমি ভিডিও করবে, না তা হবে না, বউকে এখন সারা বিশ্বের কাছে প্রচার করবে। নির্লজ্জ। লজ্জা করে না তোমার এই বয়সে এসব ন্যাকামি করতে।ছি ছি।
--কি যে আবোল-তাবোল বলছো এই ভিডিও শুধু তুমি আর আমি দেখব। তুমি আমি ছাড়া আর কোন কাকপক্ষীও জানবে না।
--হু কোন কাকপক্ষীও জানবে না, এই কথাটা তোমার বলা শোভা পায় না। তোমার মত অস্থির আর দায়িত্বহীন মানুষ জগতে দ্বিতীয়টি আছে কিনা আমার জানা নেই। কখন যে কি করো তাইতো তুমি জানো না। এক্ষুনি এখান থেকে বেড়োও, নয়তে ভালো হবে না। হু বেরোও। না হলে কিন্তু আমি গোসল করা বাদ দিয়ে বের হয় যাব। বের হবে কিনা বলো?
--আমার কথাটাতো শুনবে।
--না, না, আমি তোমার কোন কথা শুনবো না।তুমি বেরোও।
--তোমার কসম খেয়ে বলছি এই ভিডিও তুমি আমি ছাড়া আর কেউ দেখবে না।
--আমার প্রশ্ন ভিডিও করার দরকারটা কি? আমি কি তোমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাচ্ছি। না, আমরা পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি?
--না, কি যে বলো।
--তাহলে দরকারটা কি, আমাকে বুঝিয়ে বলো। এই তুমি দেখ না,ন্যাকা, ভারচুয়াল জগতে স্ক্যান্ডালের কেমন ছড়াছড়ি। কত ভালো ভালো সংসার ভেঙ্গ গেল এক নিমিষেই। তারপরেও তুমি এসব করতে চাও। ছি ছি। এমন কিছু একটা ঘটলে মরণ ছাড়া পথ থাকবে না।

নীতু যত কথাই বলুক আমি নাছোড়বান্দা। শেষমেষ ভিডিওটা ধারন করলামতো ছাড়লাম।আর নীতুও শেষটাতে বেশ সহজ আর সচ্ছন্দ্য হয়ে উঠল। তবে ও শর্ত আরোপ করল, ভুলেও যেন ক্যামেরা কিংবা এর মেমরিটা কারে হাতে না পরে। টপ সিক্রেট।

কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে কনফিডেনসিয়াল থাকলো না। ১৮+ একটা ওয়েবসাইটে আমি ভিডিওটা আপলোড করে ফেললাম। এবং তা রাতারাতি ভাইরাল হয় গেল।

যখন আপলোড করলাম তখন বাজে পৌনে বারোটার মত। এখন ভোর চারটা বিশ। এর মধ্যে এক ফোটা ঘুমাতে পারিনি আমি। কেন ঘুমাতে পারিনি? নীতু যদি জানে তার শরীর এখন হাজারো মানুষের বিনোদনের উৎস তাহলে সে এ জীবন রাখবে না। নাকি অজানা এক আনন্দবার্তা আমাকে আমোদিত করে রেখেছিল। একটা পশুত্বের আদিম আনন্দ আমার ভিতর হা হা করছিল। আমার স্ত্রীর এই ঢেউ খেলানো শরীর, নয়ন জুড়ানো রুপ দর্শকের বাহবা পাবে প্রশংসা লুটবে। আর আমি হবো সার্থক পুরুষ। এই নারীটি আমার করকমলে, বাহু বন্ধনে, শারীরিক সকল ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। অথচ সেই নারী কিনা অন্য কত শত পুরুষের ঘুম নষ্ট করছে, দীর্ঘশ্বাসে ভরপুর করে তুলছে সহস্র হৃদয়। কত তরুন তরুনী ঈর্ষায় জর্জরিত হয়ে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ রজনী।

কিছুক্ষণ আগে ভিডিওটা ডিলিট করে দিয়েছি আমি। আশা পোষণ করছি ভিডিওটা খুব বেশি জনের কাছে নেই।বারো তেরো ঘন্টার ব্যাপারতো। আর এখন সবাই অনলাইন ভিত্তিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত। ডাউনলোডের ঝামেলায় খুব কম মানুষইতো যায়। এই যা আশা ভরসা রেখেছি মনে মনে।

নীতু নিরুদ্দেশ। কোথাও নেই। ভাবছি আমিও কোথাও চলে যাব। পরিচিত কারো সামনেইতো বের হওয়া সম্ভব নয়। অথচ দু'দিন আগেই জীবনটা ছিল কত সহজ আর স্বাচ্ছন্দ্য। কেন কিনলাম ক্যামেরাটা? কে চায় সবার কাছে হাস্যাম্পদ হতে? হায় প্রভু, দুদিন আগে কি এক ঘোর আমাকে খ্যাপাটে ষাঁড়ের মত পাগল বানিয়েছিল। কোনো ধৈর্যই আমার ছিল না, ভিডিও আমাকে করতেই হবে, নেটে আমাকে ছারতেই হবে এমন খ্যাপাটে হয়ে উঠেছিলাম কোন নেশায়। তা না হলে এক বিন্দু সুস্থির থাকতে পারছিলাম না। কেন আমি নিজেকে গানে ভাসিয়ে দিলাম না। কেন দুরে কোথাও ঘুরতে গেলাম না। কেন ভালো কোনো মুভিতে নিজেকে ডুবালাম না। কেন..কেন..?

Life would be a mistake without music. সংগীতই মানুষকে মুক্তি দিবে। ঢোল তবলা শুধু নয়। দুরে কোথাও চলে যাওয়ার মধ্যেও আছে এক ধরনের সংগীত । গতিই সেই সংগীতকে মধুর করে তোলে।এ জন্য যে কোন জার্নিই আমাদের মনকে উদাস করে। এই উদাসীনতার মাধ্যমেই জীবনকে করে তুলতে হবে শুদ্ধ ও সফল। কোনো নেশাই যেন জীবনকে একেবারে লতাপাতার মত আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে না ফেলে।

শামুকের খোলোস থেকে বের হয়ে এসেছি আমি। "একটা বৃক্ষ যতই উপরের দিকে উঠবে, ততই তার শিকড় যাবে নিচের দিকে, মন্দের দিকে, অন্ধকারের দিকে। "এই দর্শন দ্বারা আমি এখন চালিত নই। আমি মনকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখবো। আজ রাতেই আমি চিটাগাং চলে যাব। আর এই ঢাকায় নয়। নীতু হয়তো চিটাগাং-এ ওর রেবা আন্টির ওখানেই গেছে। খুজেঁ বের করতে হবে ওকে। মাত্র ক'দিনের এই জীবন। কিছুতেই এই জীবনটা নষ্ট হতে দেওয়া চলে না।



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আবু আরিছ এবারই প্রথম একটা গল্প এখানে প্রকাশ করলাম, তাই কিছু ভূল ত্রুটি রয়ে গেছে, পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ
আহসানুল হক শোভন ভাল। তবে সামান্য প্লটহোল রয়েছে। মোবাইলের ক্যামেরাতেও ভিডিও করার অপশন রয়েছে। শুধু ভিডিও করে ইন্টারনেটে আপলোড দেয়ার জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার প্রয়োজন পড়ে না।
নাজমুল হুসাইন নর পিচাশ এক পুরুষকে তুলে এনেছেন।শুভ কামনা।আমার পাতায় আমন্ত্রন রইলো,আসবেন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মানুষের মনে যেমন অশররী আত্মা, ভূত প্রেতের ভয় আছে, অদ্ভূত কামনা বাসনা আছে। তেমনি ফ্রয়েডীয় কামনাও মাঝে মাঝে রহস্য সৃষ্টি করে থাকে। গল্পটা তাই কিছুটা হলেও অলিক।

২০ আগষ্ট - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪