রাত প্রায় দেড়টা বাজে; সার্থক ইন্টারনেটে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিদিনের খবর শুনছে খুবই মনোযোগের সাথে। প্রতিদিন খবর না শুনলে সার্থকের মনে হয় কি যেন বাকি থেকে গেলো। মাঝে মাঝে পরের দিন সংরক্ষণ করে রাখা আগের দিনের খবরগুলো তার শুনতেই হবে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য খবর সবাই শোনে। প্রতিদিনের খবরে শুধু কি উপস্থাপিত খবরটুকুই সবকিছু? পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কান পেতে খবর শুনলে সংশ্লিষ্ট খবরও পাওয়া যায়। সার্থকের মা’র হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। অল্প একটু পান খেয়ে সার্থকের কক্ষে এসে সার্থককে বললেন ঘুমাতে যেতে। হালকা রাগ করে বললেন, “যে বেশী রাত জাগে সে মারা যায় সবার আগে।“ সার্থক কোন উত্তর দেয় না। মনে মনে বলে, “কোন কাজ ছাড়া যে রাত জাগে মৃত্যু আসে তার কাছে ভীষণ বেগে।“ সার্থক ছয় ঘণ্টা ঘুমায়। সার্থকের মা কুলি করে আবার ঘুমাতে গেলেন। সার্থক খবর শোনা শেষ করে খুব সাম্প্রতিক মুক্তি পাওয়া ভারতের টি-সিরিজের আর হিমেশ রেশামিয়ার মিউজিক ভিডিও দেখেশুনে ঘুমাতে গেলো রাত পৌনে দু’টায়।
সার্থকের বাবা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে বাইরে যান। বাইরে গিয়ে স্টলে বসে এক কাপ চা খান; সাথে অন্য কিছু কিংবা নয়; আর পরে আয়েশ করে সিগারেট টানেন আর প্রয়োজনীয় আলাপ করেন মোবাইলে। ব্যক্তিগত আলাপগুলো তিনি বাইরেই করেন। পরে স্টলের পত্রিকায় কিছুক্ষণ বুঁদ হয়ে থেকে বাসায় ফিরে আসেন। সার্থকের মা বাসায় এলেই সার্থকের বাবাকে বলেন, “তুমি বললে তোমাকে কি কেউ চা বানিয়ে দেয় না!” সার্থকের বাবা মাঝে মাঝে অল্পবিস্তর উচ্চবাচ্য করে বাসায় দিয়ে যাওয়া পত্রিকা পড়ায় ব্যস্ত হয়ে যান। হাজার হাজার পত্রিকা দেশে। কাগজের পত্রিকা; অনলাইন পত্রিকা। কয়টা আর পড়া সম্ভব? সার্থকের বাবার ইচ্ছা করে একদিনের সব খবর পড়ে নিতে। পত্রিকায় কি যেন খুঁজেন তিনি। সার্থক ঠিকই বুঝে; কিন্তু কিছুই বলে না।
চা স্টলে অনেক মানুষ যায় মূলত পরিচিত কারও সাথে আড্ডা দেবার জন্য; সাথে এক কাপ চা আর সিগারেট খাওয়া হয় একটি কারণেই; আর সেটা হলো খালি হাতে কখনোই আড্ডা জমে না। সার্থকও সিগারেট খায়। একদিন সার্থকের ছোটবোন পারিজা সার্থককে জিজ্ঞেস করলো, “ভাইয়া, তোর আবার সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস কেন?” সার্থক উত্তরে বললো, “আমি উভয় সংকটে পড়ে সিগারেট খাই।“ পারিজা এই কথা শুনে একেবারে হতভম্ব হয়ে সার্থকের বীতশ্রদ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
সার্থকের বাবা ঢাকার বাইরে; আর তাই সকালে সার্থকের মা সার্থককে বাজার করে আনতে বললেন। সার্থক হিসেব করে দু’দিনের বাজার করলো। বাসায় ফিরে পনেরোটা টাকাও ফেরত দিলো। সার্থকের মা বাজার দেখেই বুঝতে পারলেন সার্থক বাজার করতে পারে খুব পরিপাটিভাবে হিসেব করে। এই বাজারে দু’দিনের বেশী যাবে এমনিতেই। সার্থক, “এখন থেকে তুই বাজার করবি। তোর বাবাকে আর বাজার করতে হবে না। উনার তো ইচ্ছা হয় টাকা হাতে থাকলে সব খরচ করে ফেলার। যেন ইচ্ছা হয় পুরো বাজারটাই কিনে নিয়ে বাসায় আসবে! এমন খসখসে হাত আর দেখিনি! সব পুরুষ চিন্তাশীল হিসাবী হয় না রে। অঢেল থাকলেও হিসেব করে চলাটা আল্লাহ্ খুব পছন্দ করেন। সার্থক, সুজি আর পরোটা ঢেকে রেখেছি। হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নিস। আমি একটু পাশের চাচির বাড়িতে গেলাম। ওখান থেকে ফিরে দুপুরের রান্না চড়াবো।“ নাস্তা করেই সার্থক তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ নিয়ে কম্পিউটারে বসে পড়লো।
সার্থকের মা খুব চিন্তাশীল মানুষ। আজ পর্যন্ত সার্থকের বাবা যতদূর এসেছেন তার মূল কারিগরই হলেন সার্থকের মা। একটা আশ্চর্যের বিষয় হলো সার্থকের মা যাই কল্পনা করেন তাই বাস্তবে করে ফেলতে পারেন। সবাই কল্পনা করে। অনেকের বাস্তবায়ন হয় আবার অনেকের হয় না। চেষ্টা করলে ভাগ্য তৈরি হয়; কিন্তু রাশির ভাগ বলে একটা কথা আছে। মানুষের সবকিছুই মহাজাগতিক বিষয়াদির সঙ্গে যুক্ত। যেটুকু পূর্বনির্ধারিত সেটুকু ঘুরেফিরে হবেই। তবে চেষ্টা থাকতে হবে অবশ্যই। আবার এই চেষ্টা করাটাও মহাজাগতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত।
সার্থকের বাবার সত্তর বছর বয়স। এই বয়সের একটা মানুষের ধ্যানধারণা কি থাকা উচিৎ তা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সার্থকের মা উচ্চবাচ্য করেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। রোজার মাস। সার্থকের বাবা একটা চেয়ার কিনে মসজিদে রাখলেন তারাবির নামাজ পড়ার জন্য। একটি দুর্ঘটনায় কোমরের হাড় ভাঙা আর তাই নিয়মমতো নামাজ পড়তে অসুবিধা হয়। সার্থকের মা সবসময় বলেন, “তুমি সুন্নত নামাজ পড়ার জন্য চেয়ার কিনে মসজিদে রেখেছ; কিন্তু এই বয়সে তোমার ওপর অবশ্য কর্তব্য ফরজ নামাজ তুমি ঘরে বসে পড় কেন? দশ কদম দূরে মসজিদ। তুমি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে মসজিদের ধুলো ঘরে আনো। সত্তর বছর বয়স হয়েছে। আজকাল তো মানুষ পচাত্তরেই শেষ। আর কবে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া হবে! আল্লাহ্ যুবকদের জন্য অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছেন। যুবকদের বাকি দিনের সব ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয় যদি অন্তত জুমার নামাজ আদায় করে। কারণ জুমার নামাজ দুই পবিত্র ঈদের নামাজের চেয়েও উত্তম। গরীবের হজের দিন হলো জুমার দিন। আর নামাজ কবুল হবে না যদি ঈমান না থাকে। পরিপূর্ণ ঈমানই ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু। দশ ভাগের মাঝে নয় ভাগ হলো হালাল উপার্জনের রিজিক খাওয়া আর মাত্র এক ভাগ হলো নামাজ। নামাজের সঠিকতা তাই হালাল রিজিকের সাথে সম্পর্কযুক্ত।“ সার্থকের মা প্রচুর ধর্মীয় বই পড়েন। এসব কথা শুনতে সার্থকের বাবার ভালো লাগে না। মানুষের যদি বয়স অনুপাতে কোন পরিবর্তন না আসে তবে আর কি বলা যায়। মাঝে মাঝে এমন বিভিন্ন অসম্পাদিত বিষয় নিয়ে দু’জনের কথা কাটাকাটি হয়। গ্রামে ভাইবোনের নামে যৌথ সম্পত্তি রাখা নিয়েও তিনি খুব বিরক্ত। কারণ সার্থকের বাবা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করেছেন; আর এর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে সবাইকে। একদিকে হলো মারাত্মক গাত্রদাহ আর জিঘাংসা; আর অন্যদিকে হলো লোভ। সার্বিক ঝামেলা নিয়ে ভীষণ বিরক্ত হয়ে একদিন সার্থকের মা খুব উচ্চবাচ্য করছিলেন। সেদিন হঠাৎ তেড়ে এসে সার্থকের বাবা হাত দিয়ে আঘাত করে সার্থকের মা’র হাত ভেঙে দেয়। নৌবাহিনীর সদস্যদের করা একটি প্রজেক্টে সার্থকরা থাকে। উচ্চবাচ্য হলে প্রায় সব কথাই আশপাশের এপার্টমেন্টের সবার কানে যায়। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন অসম্পূর্ণ মন্তব্যও তাঁরা করেন। সার্থকের মা অবশিষ্ট আঠারোটি রোজা আর রাখতে পারলেন না। অনেক কেঁদেছেন সার্থকের মা এই আঠারোটা দিন। হাত প্রায় তিন মাস প্লাস্টার করা ছিল। এখনও হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে পারেন না। কোনদিন পারবেনও না। সার্থকের মা হলো প্রতিবাদী মানুষ। অন্যায় তা যেমনই হোক তিনি সহ্য করতে পারেন না। অন্যায় সৃষ্টি করার চেয়ে অন্যায় লালন করা হলো সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। অবস্থাভেদে বিভিন্ন কারণের প্রেক্ষিতে মানুষ যখন ভীষণ অভিমানের অন্তর্ভেদীতে ভোগে তখন সে প্রতিবাদে তীব্রতর হয়।
সার্থক খুবই ভালো ছাত্র ছিল ছোটবেলা থেকেই। ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল সে। উচ্চমাধ্যমিকে সে ঢাকা কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় সাড়ে সাত হাজার স্টার মার্কস বা তদূর্ধ্ব রেজাল্ট করা ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ৫৩৯তম হয়ে। সার্থক বিজ্ঞানের সূত্র ছাড়া আর কোনকিছুই কোনদিন মুখস্থ করতে পারেনি। ঢাকা কলেজে ভর্তিটা সার্থকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ভীষণ অসুস্থ করে ফেলা হয় সার্থককে যখন সে ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে নিজ বাসায় যায়। সার্থকের মা অত্যন্ত নামকরা একজন আধ্যাত্মিক আলেম মানুষের শরণাপন্ন হন। তিনি ও তাঁর বড় ছেলে দু’জনই সার্থককে দেখার পর একটি গ্লাসে তার মুখের কুলির পানি পরীক্ষা করে সরাসরি বলে দেন, “আপনারা সবাই আমাদেরকে চিনেন; জানেন; আর জানেন ও বোঝেন দেখেই আমাদেরকে খবর দিয়েছেন। কি বলবো; উপরে আল্লাহ্; নিচে মাটি। সার্থককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার জন্য মারাত্মক কুফুরি করা হয়েছে। আপনারা যদি আমাদের কথা বিশ্বাস না করেন; আরও অনেক আলেম লোক আছেন; তাঁদেরকে দিয়ে পরীক্ষা করালেও একই ফল পাবেন। আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলছি। আপনার ছেলে আজ পনেরো দিন হয় কথা বলতে অক্ষম। এটা থেকেও কি বোঝা যায় না? আপনার ছেলের কোমরে লাল টকটকে টিউমারের মতো কিছু একটা হয়েছে। এটি হয়েছে খুব জটিল কুফুরি করার কারণেই। এটি আরও মারাত্মক হবে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়। নিন, ‘ইয়া জাব্বারু’, ‘ইয়া সালামু’ বলে অল্প তেল আক্রান্ত স্থানে লাগাবেন আর এই তাবিজগুলো খাওয়াবেন; আপনার ছেলে দশদিনের মাঝে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সার্থকের পরবর্তী যেকোনো সমস্যা আমাদেরকে বলবেন। আমার দেখবো। সার্থককে সবসময় ইন্দ্রজালের আয়না দিয়ে দেখে দেখে অবস্থা জানে শত্রুরা। আল্লাহ্ সার্থকের সহায় হোক।“ তাঁরা শত্রুর নাম বলে দেন। ঠিক দশদিন পরেই সার্থক সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। কোমরে টিউমারের মতো যা ছিল তা সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। হলে কি হবে, সার্থককে নিয়ে খেলাধুলা শুরু করা হয় তিন মাস পর। শেষপর্যন্ত সার্থককে তার বাবা নিজ জেলা শহরের সরকারি কলেজে ভর্তি করান কলেজ ট্রান্সফারের মাধ্যমে। মূলত ‘৯০২’ মার্কস পেয়ে সার্থক যখন সপ্তম শ্রেণীতে ওঠে তখন থেকেই অল্প অল্প করে কুফুরি করা শুরু করে সার্থকের বাবার রক্তের মানুষেরা। সমস্যা সৃষ্টি করে সার্থককে অষ্টম আর নবম শ্রেণীতে দু’বার রান আউট করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার ঠিক আগে মাত্র তিন মাস খুবই অধ্যবসায়ে পড়াশোনা করে সার্থক মাধ্যমিকে ছয়টি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ ‘৮৩৭’ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ছয় নাম্বারের জন্য দু’টি বিষয়ে লেটার মার্কস পায়নি সে। মারাত্মক দুর্যোগে এক হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এতিম বাচ্চাদের দ্বারা খতমে ইউনূস পড়িয়ে সার্থক ঢাকা কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। ঢাকা কলেজের লিখিত পরীক্ষায় সার্থকের কলম চলেছে অলৌকিকভাবে। আরও দু’টি নামকরা কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় টিকেছিল।
সার্থককে উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য করানো হয়। সার্থক কি লিখেছে পরীক্ষার হলে সে নিজেই জানে না; তখন এমনই অবস্থা ছিল তার। পরে আরও একটি বছর বিরতি দেয় সার্থক। হঠাৎ করে সার্থকের মা-বাবা সার্থককে নিয়ে চিহ্নিত চরম শত্রুর বাসায় যায়। সেদিন সেই ভ্রষ্টের বাসায় যে লোককে দিয়ে সার্থককে কুফুরি করা হয়েছিলো সেই লোককে দিয়েই কৌশলে সার্থককে পরীক্ষা করান সার্থকের মা। বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল একটি গ্লাসের পানিতে ডুবানো হয়। সার্থকের মা সন্দেহ পোষণ করছিলেন হয়তো এই লোককে দিয়েই সার্থককে ক্ষতি করা হয়েছে। কনিষ্ঠ আঙুল ডুবানোর পরেই বেরিয়ে আসে সবকিছু। এই লোক সাথে সাথে তার গাড়ি বের করে সেই যে গেলো সেখান থেকে তারপর আর কোনদিন সার্থকের বাবার রক্তের এই ধ্বজাধারীর সাথে যোগাযোগ করেনি বলে জানা যায়। পরে একদিন মোবাইলে ফোন করে এই ঐন্দ্রজালিক ঢাকায় তার এপার্টমেন্টে যেতে বলে সার্থকের পরিবারকে। সবাই যায় সেখানে। সার্থককে পবিত্র কোরআনের একটি শক্তিশালী আয়াত লিখে দেয়া হয় আর এটি যেন সে পরীক্ষার হলে বসে পড়ে তারপর লিখতে বসে তাই বলা হয়। ক’দিন পর লোকটি লন্ডন চলে যায়। আসলে মূল ঘটনা হলো সার্থকের জাতশত্রু সার্থকের সাথে নিজের সম্বন্ধ গোপন করে কুফুরি করেছিলো এই লোকের মাধ্যমে। টাকাও দিয়েছিলো মোটা অংকের। মারাত্মক কাজটা করা হয় ঢাকা কলেজে ভর্তির পরপরই। পরের বছর একটি কঠিন মানত করে পরীক্ষায় পাশ করে সার্থক ঢাকায় চলে আসে।
এর কিছুদিন পর কি বুঝে আবার সার্থকের বাবা-মা সার্থককে নিয়ে সেই চিহ্নিতের বাসায় যায়। সবকিছুই হচ্ছিলো কেমন যেন একটা ঘোর টানের মূলমন্ত্রে। সার্থকের বাবাকে হঠাৎ করে পরামর্শ দিলো ঘাতক সার্থককে মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন করতে। এক অদ্ভুত আতিশয্যে পড়ে সবকিছু জানার পরেও অবিবেচকের মতো সার্থককে ঢাকার ধানমণ্ডিতে এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার কোনকিছু প্রায় না শুনেই ব্যবস্থাপত্র হাতে ধরিয়ে দেয় এবং সার্থককে ইলেকট্রিক শক দিতে বলে। প্রায় এক মাস ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় সার্থককে। ইলেকট্রিক শক দেবার কারণে আর অকারণে ওষুধ খাওয়ানোর কারণে মুখ দিয়ে সমানে লালা পড়তে থাকে সার্থকের। প্রায় চার মাস একটানা লালা নিঃসরণ হতে থাকে তার। কথা বলতে গিয়ে সমস্যা হতো। পরে আর এই ডাক্তারের কাছে যায়নি সার্থক। চলে যায় নিজ জেলা শহরে। মোটামুটি ভালোভাবে কাটে বেশ কিছুদিন। কয়েক মাস পর আবার ঢাকায় চলে আসে। একটি ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করে। সেখানেও এসে উপস্থিত হয় একই শত্রু। সার্থকের মা না পারছিলেন বলতে তাদের কাছে না আসতে; আর না পারছিলেন অন্য কিছু করতে। কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন সার্থকের বাবা নিজ জেলায় কর্মরত। পারিজা থাকতো মাঝে মাঝে। অবস্থাভেদে পারিজা একটানা থাকতো। একই ভবনে থাকতো এক মানসিক রোগের ডাক্তার। এই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে বলে সার্থকের বাবাকে। সার্থকের বাবা মন্ত্রমুগ্ধের মতো হয়ে এই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। বললো সার্থককে নির্দিষ্ট দু’টি ওষুধ খেতে হবে ছয় মাস যা আগের খাওয়া ওষুধের কার্যকারিতা নাকি নষ্ট করবে। ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে সার্থক আর তার মা নিজ শহরে নিজের বাসায় চলে যায়। পারিজা বান্ধবীদের সাথে ঢাকায় অবস্থান করছিলো তখন।
সার্থককে কোন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়নি। পড়াশোনাই করতে পারেনি। কোন কোচিং না করেও অপেক্ষমান তালিকায় ছিল সে। ভর্তি হতে হয়েছে দেশসেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সার্থক তখন আইইএলটিএস কোর্স করেছিলো ইংল্যান্ড চলে যাওয়ার জন্য। তখন টায়ার-৪ সিস্টেমে উন্মুক্ত ছিল ইংল্যান্ড যাওয়া। কিন্তু যাওয়া আর হয়নি কারণ প্রায়ই অত্যাচার করা হয়েছে। সুযোগ অনুযায়ী পড়াশোনা করে খুব কঠিন লিখিত পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ‘দ্বিতীয়’ ও ‘তৃতীয়’ হয় সার্থক দু’টি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে সেরাটিতে ভর্তি হয়। ভর্তির পর কিছুদিন যাত্রাবাড়ী এক মামা’র বাসায় থেকে ক্লাস করা শুরু করে সে। সেখানেও এসে উপস্থিত হয় সেই জাতশত্রু। সার্থককে একটি ট্যাক্সিক্যাবে করে নিয়ে যায় তার নিজের বাসায় ঢাকার ঠিক পার্শ্ববর্তী জেলায়। সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় সার্থকের বাবা-মা আর সার্থককে সম্মোহিত করে। কোনকিছু বোঝার উপায় ছিল না কি হতে যাচ্ছে কিছুদিন পরে। এগারো দিন ঢাকায় এসে এসে ক্লাস করতে থাকে সার্থক। বারো দিনের দিন সার্থক সন্ধ্যার সময় চা খাচ্ছিল বাসা থেকে একটু দূরে এক চায়ের দোকানে। হঠাৎ কয়েকটি ছেলে এসে বলতে থাকে, “এই তুই কোথায় পড়িস? আমি পড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, আরেকজন বলে আমি পড়ি নর্থ সাউথে।“ বলতে বলতেই পেছন থেকে রড, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প আর হকিস্টিক দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে প্রায় মৃত বানিয়ে রাস্তার পাশে একটি ঝোপে ফেলে রেখে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। এটা ছিল চূড়ান্ত চেষ্টা মেরে ফেলার। উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসলে সার্থক দাঁত ভাঙা; পা ভাঙা রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে বসে থাকে তার কম্পিউটার টেবিলে হেলান দিয়ে। এই অবস্থায় সার্থকের বাবার রক্তের ধ্বজাধারী সার্থককে বলে, “তুই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে একটা পিয়নও হতে পারবি না। স্নাতক পাশ করা তো দূরের কথা।“ সার্থক ওর সামনেই ফরিয়াদ করে মহান আল্লাহ্র কাছে আল্লাহ্ যেন এই কথাগুলো সম্পূর্ণ উল্টে দেন। নিজ শহরে চলে এসে নিজ বাসায় চারটি মাস বিছানায় কাটিয়ে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে পরবর্তী সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করা শুরু করে। সার্থক যৌথভাবে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের সাথে ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। পরে প্রজেক্টে থাকা শুরু করে পুরো পরিবার। পারিজা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে থাকে। মাঝে মাঝে বাসায়ও থাকে; এই অবস্থা। এই ভালো এই সমস্যা এভাবে দু’টি বছর কাটিয়ে দেয় সার্থক। সবকিছুই চালানো হচ্ছিলো দূর থেকে। যাকে বলে পরোক্ষে থেকে প্রত্যক্ষ নির্যাতন। সার্থক কোন প্রকার ওষুধ চার বছর না খেলেও সেই যে মারাত্মক লালা নিঃসরণ হয়েছিলো তা থেকে ধীরে ধীরে লালা গ্রন্থিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। একটি সংক্রমণ থেকে শুরু। সার্থকের বাবার পদন্নোতির সাক্ষাৎকারের পরের দিন লালা গ্রন্থিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। উভয় লালা গ্রন্থি ফেলে দেয়া হয়। মাত্র একজন সার্জারির ডাক্তার দেখিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নবম দিনে সেলাই কেটে দশম দিন থেকেই সার্থক আবার ক্লাস করা শুরু করে। পনেরো দিনের ছুটি নিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকরা আর বন্ধুরা খুব দুঃখপ্রকাশ করে তখন। সার্থক যখন প্রথম সেমিস্টারে তখন ইংরেজি বলার গতি ও ধরণ দেখে অন্য বিভাগের এক সহপাঠী বলেছিল, “দেখিস, সার্থক একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে।“
সার্থককে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি। এর মাঝে ঘটেছে একটি প্রেমের ঘটনা। মাত্র তিন মাসের প্রেম ছিল এটি। সার্থক সব বুঝতে পেরে পরে সরে আসে; কারণ মিথ্যা কথা বলে সার্থককে জড়িয়েছিল মেয়েটি। অনেক ধনবান ছিল ওরা। সার্থককে একদিন কৌশলে বাসায় নিয়ে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে একেবারে কেমন যেন ম্রিয়মাণ করে ফেলে। সার্থক একদিন নিজের মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকার কারণে তার বাবার মোবাইল থেকে ফোন করেছিলো মেয়েটিকে। সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে মেয়েটি এটি কার নাম্বার। জেনে তৎক্ষণাৎ সংরক্ষণ করে নাম্বারটি। সার্থকের বাবাকে মোবাইলে ফোন করে একদিন বিভিন্ন কথা বলে। সার্থক যখন সরে আসে সম্পর্ক থেকে তখন মেয়েটি মেরে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়। সার্থক এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে অন্তরাত্মা কেমন যেন কেঁপে উঠত। হাড়গোড় ভেঙে ফেলবে এই ভয়ে নয়; সৃষ্ট অন্য সমস্যার কারণে। এসব বিষয় নিয়ে রাগ করে একদিন সার্থক একটি ছোট্ট টেবিলঘড়ি ছুঁড়ে ফেলে ভেঙে ফেলার কারণে সার্থকের বাবার আদেশে সার্থককে তার মা জোর করে মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় যে ডাক্তার পাঁচ বছর আগে ছয় মাসের ওষুধ দিয়েছিলো তার কাছে। মানুষের রাগ উঠতেই পারে। আবেগ থাকবেই। সময়ে আবেগ নিরাবেগ হয়। চিন্তাচেতনার পরিবর্তন হয়। তাই বলে যে বিষয় ঘরে বসে সমাধান করা যেতো সেই বিষয়টিকে ডাক্তার পর্যন্ত গড়িয়ে নেয়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় সার্থকের জীবনে। সাইকোথেরাপি দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু পেছনে লেগে থাকা একচ্ছত্র কুফুরির প্রভাবে তার ওপর যন্ত্রণাদায়ক সবকিছু মিলে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়ে সার্থক। সার্থককে অসহনীয় ওষুধ দেয়া হয়। নিজেকে বিভিন্নভাবে সচল রাখার প্রত্যয়ে নিজস্বতাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলতে থাকে সার্থক। সামাজিকভাবে কথা শুনতে হয়েছে অনেক। তবুও দমে যায়নি সার্থক। সার্থক শুধু সময়ের অপেক্ষা করছিলো। কারণ সময়ই জন্ম দেয় নতুনত্বের। যাহোক; পরে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয় অন্য আরেকটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিনে চাকরী করতো আর রাতে ক্লাস করতো। অনেক পড়াশোনা করেছে সার্থক স্নাতকোত্তরে। প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়েছে আর এই বিশ্ববিদ্যালয় গতবছর স্থায়ী ক্যাম্পাস ও অন্যান্য বিশেষত্বের কারণে বিদেশী শিক্ষা গবেষণা সংস্থার জরিপে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হয়। একটি জাতীয় পত্রিকায় পুরো এক পৃষ্ঠায় ফিচার প্রকাশ করা হয়।
স্নাতকোত্তর শেষ করেই সার্থক রাজনীতিতে জড়িয়ে যায়। সার্থকরা তখন ঢাকার অভিজাত একটি আবাসন প্রকল্পে থাকে। এর মাঝে হঠাৎ সার্থকের লালা গ্রন্থিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে নামকরা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করানোর পর। সার্থক খুব জোর করেই চেন্নাই যায়। ভেলোর তখন পর্যবেক্ষণে রাখে। পরের বছর আবার আসতে বলে। সার্থকের বাবা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে টাকা তেমন দিতে পারবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। তাই সার্থকের পক্ষ হয়ে সার্থকের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার দেয়া ফেসবুকের স্ট্যাটাস পড়ে অনেকেই সার্থককে সহযোগিতা করেছে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ইনসেপ্টা এমনকি ইংল্যান্ডের হ্যালিফ্যাক্স সহযোগিতা করেছে। সার্থকের মা সব বুঝে একটি কথাই বলেছেন ভারতে গিয়ে, “সার্থক; তোর জীবন কতো বিষময়। তার ওপর সব জেনেও তোর বাবার কথার বাইরে যেতে না পেরে আমি তোর অনেক বড় ক্ষতি করেছি। তোকে অনেক মানুষ অনেক কথা বলে শুধুমাত্র একটি কারণে। কিন্তু যারা সঠিকভাবে বুঝেছে তাঁরা তোকে আজ সহযোগিতা করেছে। আমাকে ক্ষমা করে দিস।“ এই বলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন সার্থকের মা। সার্থকের মা’র একটি বিষণ্ণ ছবি তখন তুলে রেখেছিল সার্থক যে ছবিটি ভেলোরের হাসপাতালের বারান্দায় তোলা। প্রথমবার ট্রেনে করে চেন্নাই যায় সার্থক আর তার মা; সাথে আরেকটি পরিচিত ছেলে ছিল। সার্থকের বাবা ইচ্ছা করলে যেতে পারতো; কিন্তু যায়নি।
চেন্নাই থেকে আসার পরপরই সার্থক ঢাকার গ্রেড-১ এর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যায়। রাজনৈতিক সহযোগিতা ছিল; কিন্তু দু’মাস তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় কেমন তার কর্মক্ষমতা সেটি মূল্যায়ন করার জন্য। চাকরী স্থায়ী হয়ে যায় খুব ভালো যোগ্যতার কারণে। এসময় হঠাৎ এমন ওষুধ দেয়া হয় যে সার্থকের দিনে ঘুমঘুম আর ঝিমঝিম লাগতো। সার্থক ঘুম দূর করতে দিনে কয়েক কাপ চা পান করতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব যথাসাধ্য পালন করছিলো সে।
চাকরি হবার কয়েক মাস পর বিয়ে করে সার্থক। বিয়ে করার দু’মাস পর আসল চেহারা প্রদর্শন করে তার স্ত্রী। ঢাকায় বসে তেমন কোন খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ে করানো হয় সার্থককে। সার্থক একদিন স্ত্রীকে নিয়ে নিজের ডাক্তারের কাছে যায়। ভীষণ সুযোগসন্ধানী সার্থকের স্ত্রী তার পরিবারকে ব্যবহার করে সার্থককে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নাচাতে থাকে। সার্থক এর মাঝে স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় গেলে এক বন্ধু যে সার্থকের একই রাজনৈতিক মতাদর্শের সে বলে, “তুমি ওকে বিয়ে করেছো! ওরা তো মারাত্মক মানুষ। ওর পুরো পরিবারটাই ঐন্দ্রজালিক। ওর মা-বাবা মারাত্মকভাবে এসব করে। তুমি একটু আমাদের জিজ্ঞেস করেই বিয়েটা করতে। আমরা আগে ওদের বাসায় যেতাম; কিন্তু ওদের অনাচারের খবর জানার পর এখন আর যাই না।“ সার্থক তার মাকে সবকিছু বলে ঢাকায় এসে। সার্থকের মা খুব চিন্তায় পড়ে যান। সার্থককে মূলত তার স্ত্রী নিজের শহরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সেখানে মোটামুটি একটা চাকরিবাকরি করিয়ে সংসার পাততে চেয়েছিল। বলা যায় সার্থকের স্ত্রী সার্থককে ঘরজামাই বানাতে চেয়েছিল প্রথম দিকে। ওদের আরও দু’টা বোনেরও একই অবস্থা। একদিন সার্থকের স্ত্রী জিজ্ঞেস করে, “সার্থক, বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কারা? তাদের নাম বল।“ এর কিছুদিন পরেই ক্যাম্পাসের ভেতর একটা বিভ্রাট সৃষ্টি হয় আর সার্থকের চাকরি চলে যায়। তার স্ত্রীও চাকরি চলে যাবার পর নিজ শহরে গিয়ে বসে থাকে। কি করে না করে সেখানে তার সব খোঁজই সার্থক নিয়েছে এক ঐন্দ্রজালিকের মাধ্যমে। দীর্ঘ নয় মাস আলাদা থাকার পর এবং সর্বমোট তেইশ মাস সংসার করার পর যখন শেষপর্যন্ত স্ত্রীর পরিবার সার্থককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার মারাত্মক ষড়যন্ত্র শুরু করে ও একদিনের জন্য অন্ধ বানায় এবং সার্থকদের জেলা শহরের বাড়ির দিকে চোখ দেয় যা স্ত্রীর নামে লিখে দিতে হবে বলে বসে তখন সার্থক তার পরিবারের সবার মতামত নিয়ে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়।
ডিভোর্সের পরপরই সার্থক লেখালেখির ভুবনে নিজের নাম লেখায়। অনলাইনের মাধ্যমে তার প্রথম ইলেক্ট্রনিক বই বের হয় আমেরিকার একটি নামীদামী প্রকাশনী থেকে। খুব প্রশংসা করেছে সবাই। সার্থকের রাজনৈতিক পদোন্নতি হয় এর মাঝে। কিছুদিন পরেই সার্থককে মারাত্মক অত্যাচার করা শুরু করে সাবেক স্ত্রীর পরিবার আর সেটি কুফুরির মাধ্যমে। এমন অবস্থা করা হয়েছে সার্থককে যে সার্থক একেবারে ঘোর উন্মাদের মতো হয়ে যায়। সার্থককে কুফুরি করে সাতবার মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সর্বমোট ‘১০৫’ দিন বন্দী ছিল। অথচ প্রত্যেকবার বন্দী করার কিছুক্ষণ পরেই সার্থকের চেতনাশক্তি ফিরে আসে। বাসায় থাকাকালীন বিভিন্ন নাম্বার থেকে সার্থককে বিরক্ত করা হতো। একদিন সার্থকের মাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে সাবেক স্ত্রী ভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করে। এরপর সার্থকের বাবার রক্তের ধ্বজাধারীরা যৌথভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অভিজাত আবাসিক প্রকল্পটি থেকে সার্থকদের চলে যেতে বাধ্য করে যা মূলত সম্ভবপর করে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক এক ধাক্কা দিয়ে। সতেরো লক্ষ টাকা কারসাজি করে হাত থেকে নিয়ে লুকিয়ে যেতে বলা হয় টাকা যে নিয়েছে তাকে। কোনকিছুর পরিবর্তেও টাকাটা দেয়া হয়নি। অবসরে এসে যা পাওয়া হয়েছে তা দিয়ে ঢাকায় দু’টি এক হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট করা হয়েছে।
সার্থককে ঘুমের মাঝেও নির্যাতন করা হয়েছে। হলিউড কিছুদিন আগে জিন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছে। সার্থকের এমনিতেই ক্যান্সার; তার ওপর আবার দূর থেকে বসে কলকাঠি নাড়িয়ে নাড়িয়ে ইন্দ্রজালের আয়নায় অবস্থা দেখে দেখে অত্যাচার করার কারণে ভীষণভাবে ধকল সামলাতে হয়েছে সার্থককে, পারিজাকে আর সার্থকের মাকে। বাবাকে নয়। সার্থকের মাকেও অত্যাচার করা হয়েছে একই প্রক্রিয়ায়।
এখানে জড়িত মূলত তিনটি পক্ষ। প্রথমত; সার্থকের বাবার রক্তের লোকজন, দ্বিতীয়ত; সাবেক স্ত্রীর পরিবার আর তৃতীয়ত; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। মূলত স্পষ্ট কোন কারণ ছাড়াই ওষুধ খাইয়ে অভ্যস্ত করানোর কারণে সার্থককে প্রতিদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হয়; কিন্তু সার্থকের সাংবাদিক বন্ধুরা বিভিন্ন চ্যানেলে খবরের ফাঁকেফাঁকে আড়ালে থেকে সার্থকের অনেক সম্পর্কিত খবর জানানো সহ বলে দিয়েছে মূলত এই ওষুধ কি থেকে তৈরি। সার্থক খবরের লিংক সংরক্ষণ করে রেখেছিল। সার্থক তিনবার চেন্নাই গিয়েছে ক্যান্সারের কারণে।
সার্থকের মা গত রমজানে কেঁদে কেঁদে বলেছেন, “সার্থক, তোর কোন মানসিক সমস্যা নেই। সঠিক অভিভাবকরাও তাই বলবে। তিনশো লোকের কাছে গিয়েছি। সবাই বলেছে কুফুরি।“
প্রতিকূল অবস্থাকে সঙ্গী করে সার্থক নিজ দলের জন্য কাজ করে। সময় বের করে অবস্থা অনুযায়ী তাকে লিখতে হয়। রাজনীতিতে একটি লেখা একটি দলিল হয়ে দাঁড়ায় যদি তা লেখার মতো লেখা হয়। সার্থক নয়টি চাকরি পেয়েছে আর ছয়টি চাকরি করেছে। সার্থকের বর্তমান অবস্থান ও পরিধি এখন সবাই জানে। সার্থক যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সবসময় সবদিকে সংযুক্ত। ঘরে বসে কাজ করে যোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সে নিজেকে সার্থক প্রমাণিত করতে কতোটুকু পেরেছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারবে যারা তাকে সবসময় অনুসরণ করে আর রাজনৈতিক অঙ্গনে সে কতোটুকু যোগ্য তার উত্তরও দিয়ে দেয়া হয়েছে তার জীবন সংগ্রামের জন্য ও যোগ্যতার দৃশ্যমানে। মানুষ খুব বেশী নির্যাতন সহ্য করলে অনেক সামর্থ্য লাভ করে। কি ঘটতে যাচ্ছে তা যদি বোঝানো যায় তখন আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে যাওয়া যায়। ভেতরের শক্তি যদি বড় শক্তি হয়ে থাকে আর যদি চারপাশের অঙ্গন প্রবলভাবে সহযোগিতা করে তখন জীবনের উদ্যম বেড়ে যায়। এগিয়ে আসতে থাকা বহুবিধ অর্জনের সৌরভ স্বনামধন্যে বিকশিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আড়ালে থেকে যে মানুষগুলো মনেপ্রাণে ভালোবাসে তাঁদের হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়াতে মোটেও সময় লাগে না। মানুষ সবসময় অর্জনকেই প্রাধান্য দেয় আর বিভিন্ন অবস্থানকে মূল্যায়ন করে। এখন সবকিছুই সবার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। যা সবার ক্ষেত্রেই এক তা নিয়ে কথা বলার কোন মানে নেই। মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ হিসেবে সার্টিফিকেট পেলেও সার্থক ঘটে যাওয়া এসব দুর্বিপাক থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
একজন ব্যক্তিত্বপূর্ণ আন্তরিক জীবনসঙ্গিনী বৃহৎ অবলম্বন। বিয়ের ব্যাপারটি এখন সার্থকের হাতে নেই। যা কিছু নির্ধারিত সবই সন্দেহাতীতভাবে সময় অনুযায়ী হবে। এটা বিশ্বাস। পারিজা সার্বিকভাবে তেমন সুখী নয় কারণ সেও অনেক যন্ত্রণার শিকার। পরিচিত অনুরাগ আর অনুরক্তিকে ঘোলাটে করতে একটি অংশ সবসময় তৎপর থাকবেই। চিরশত্রুকে কখনো বিশ্বাস করতে নেই। যার কোন কাণ্ডজ্ঞান বলতে নেই সে অমানুষ। দুঃসময়ের সাথে অভিমান করাটা অপঘাতী কারণ জীবন বদান্যতায় হাসে বৈশাখী নতুনত্বে।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অভিমান তখনই সৃষ্টি হয় যখন কোনকিছু মনের সাথে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করে। কোনকিছুর সত্যতা উন্মোচিত হলে নিজেকে অন্তত প্রবোধ হলেও দেয়া যায় যে এমন কারণে তেমন হয়েছে আর ভবিষ্যতে এর জন্য প্রতিকার নির্দিষ্ট থাকলে জীবনের পরবর্তী পুষ্পটি ফোটে নির্ভাবনায়। একসময় ঝরে যেতেই হবে এটা নিশ্চিত। তারপরও নির্ঝঞ্ঝাট বেঁচে থাকার উৎসবে সবটুকু অস্তিত্ব বেগবান হতে চায়। পুরনো সবকিছু ভুলে যাওয়া যায় যদি কেউ পাশে থাকার জন্য এবং পাশে রাখার জন্য অবিরত অভিমান করে। বিগত শোচনার সাথে অভিমান করা যায় না।
২৪ জুলাই - ২০১৮
গল্প/কবিতা:
২২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪