সকালের কুসুমজ্বলা সূর্যের আলোটা জানালার পর্দা ভেদ করে ঠিক আরাফের মুখে এসে পড়ছে। আরাফ পর্দাটা একটু টেনে দিলো। মাথাটা ঘুরিয়ে অন্য একপাশে নিলো। সকাল আটটা বাজে। মোবাইলে ঘুম ভাঙ্গানিয়া সংকেত আসছে একটু পরপর। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানায় উঠে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে আরাফ। ওর মা রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। মা ডিম দিয়ে লটপটি বানিয়ো বলে ও ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। পরোটা দিয়ে লটপটি খেতে আরাফের খুব ভালো লাগে। ঘুম থেকে উঠেই ভালোভাবে কুলি করে আরাফ দুই গ্লাস পানি খায়। এটা তার পুরনো অভ্যাস। এই অভ্যাস খুবই ভালো। সারারাত ধরে ঘুমের মাঝে থাকা শরীরটা সকালে জাগার পর পানি পেলে সবদিক দিয়েই কাজ করে। সবাই মিলে নাস্তা শেষ করলো। আরাফের ছোটভাই টেক্সটাইল প্রকৌশলের ছাত্র। আরাফ ওর ভাইটিকে বেশ তদারকি করে।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে। আরাফের এইবুঝি দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হলো। বনানীতে ওর প্রদর্শনীর কাছেই একটা ছিমছাম খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। মানুষ হিসেবে গোছালো স্বভাবের। কোন কাজ হাতে আসলে তা শেষ না করা পর্যন্ত ওর নিস্তার নেই। যেন সবকিছু বাদ দিয়ে কাজটা করতেই হবে। রাতে ওর ঘুমোতে একটু দেরীই হয়ে যায়। বাসায় দু’টি কম্পিউটার। একটা হলো বেশ বড় মনিটরের ডেস্কটপ যেটা ও চালায় আর আরেকটা ল্যাপটপ ওর ছোটভাই ব্যবহার করে। বাসা থেকেই দুপুরের খাবার দিয়ে দিতে চায় ওর মা। কিন্তু ও নিতে চায় না। নিলেও খাবার যে নষ্ট হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরাফ প্রকৃতি খুব পছন্দ করে। প্রকৃতির কাছে গেলেই ওর ইচ্ছে করে যেন একেবারেই মিশে যায়। সাথে থাকা দামী হুয়াওয়ে মোবাইলটার সাথে দিনের বেশীরভাগ সময়ের সখ্যতা ওর। ফাঁক পেলেই মোবাইলে ঢুঁ মারবেই। চোখে ধরে এমন কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলেই সাথে সাথে মোবাইলে ধারণ করে ফেলে। বেশ পুরুষালি গড়ন ওর। মুখে সবসময় একটা চাপা হাসি। কারও সাথে কথা বললেই হাসিটা ফুটে উঠে। বেশ চনমনে ও। ওর দার্শনিক তত্ত্বগুলো বেশ চিন্তার রেখাপাত করে অনেকের মাঝে। লেখালেখির হাত ভালো কিন্তু লেখালেখি করে না। তবে টুকটাক যা লিখে ফেসবুকে শেয়ার করে তা বেশ চমকপ্রদ। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথের ছাত্র ছিল আরাফ। বিবিএ আর এমবিএ শেষ করে যোগ দিয়েছিলো একটি বেশ ভালো আইটি কোম্পানিতে। পরে কিছুদিন একটি নামকরা টেলিকমিউনিকেশান কোম্পানিতে চাকরি করেছে ও। ওখানে ভালো পোস্টে চাকরি করতো সে। কিন্তু পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
আজকাল চাকরির বাজার কাদের জন্য এ নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন। মামা চাচার জোর না থাকলে চাকরি হয় না এমন একটা রেওয়াজ আছে। পড়ালেখা শেষ করে কেউ চাকরি করে। কেউ ব্যবসা করে। ছোটখাটো উদ্যোক্তা থেকে অনেকে একসময় বড় ব্যবসায়ী হয়। লক্ষপতি-কোটিপতিও বনে যায়। এই যে সব বাবা-মা’র একটি ধ্যান-ধারণা কিংবা গতানুগতিক আশাভরসা মনে কাজ করে ছেলে বা মেয়ে ডাক্তার হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক, অনেক বাবা-মা তো এটাও বুঝতে চায় না ছেলেমেয়ে বিজ্ঞানে ভালো নাকি মানবিকে, নাকি বাণিজ্য বিভাগে ভালো। জোর করে চাপিয়ে দেয়ার নাম পড়ালেখা হতে পারে না। যার যেটাতে মেধা তাকে সেটাতেই পড়তে দেয়া উচিৎ। মুখস্তবিদ্যা দিয়ে অনেকসময় কাজ হয় না, কিছুক্ষেত্রে কেউ কেউ বিপাকে পড়ে। আবার এই বিদ্যা সবার থাকেও না। বুঝে পড়ে যদি সৃষ্টিশীলতার পরিচয় রাখা যায় সেটাই সবচেয়ে ভালো। আবার সব বিষয়ে সৃষ্টিশীলতাও দেখানো যায় না। আরাফের মুখস্তবিদ্যাও ছিল আবার নিজ থেকে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখার প্রবণতাও বেশ।
মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আরাফের পরিবারের অনেকেই থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। আরাফের বাবাও থাকেন ওখানে। মাঝে মাঝে দেশে আসেন। আরাফদের দেশের বাড়ি হলো কুমিল্লা। আরাফের মা বলা যায় সন্তানদের বড় করতে একাই সংগ্রাম করেছেন। নরম স্বভাবের মানুষ। স্বামী বিদেশে থাকেন কিন্তু সন্তানদের দেখাশুনার কাজটি মা হিসেবে বেশ পরিপাটি করে দায়িত্বের সঙ্গেই করেছেন আর করে যাচ্ছেনও। তবে আরাফের মা যে ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন এর তুলনা হয় না। তাঁর মনে একটা গভীর কষ্ট লুকিয়ে আছে। একা সবকিছু সামাল দিচ্ছেন এইবা কম কীসে।
মাইলস্টোন কলেজ থেকে আরাফ এইচএসসি পাশ করে। মাইলস্টোনের ছেলেমেয়েরা বেশ মেধাবী। স্কুল আর কলেজের নিয়মকানুনও বেশ কড়া। ভালো পড়াশুনা করানো হয় এই প্রতিষ্ঠানে। পাশ করে বেশ ভালো ভালো জায়গায় উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পায় এখানকার ছাত্রছাত্রীরা। আরাফ একটু স্বাধীনতাপ্রিয়। সে চায় নিজের মতো সবকিছু করে নিতে। নিজের চিন্তাধারাকে প্রয়োগ করে কাজ করে সফল হতে চায় বাস্তববাদী এই ছেলেটা।
আরাফের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটা প্রেম ছিল। চার বছরের এই প্রেম-ভালোবাসা শেষ পরিণতির দিকে আগায়নি। মেয়েটা ছিল নেত্রকোনা জেলার। দেখতে ছিল ভারী মিষ্টি। মেয়েটার চোখদু’টি ছিল সবচেয়ে সুন্দর। যাকে বলে হরিণচোখা। আরাফ এই মেয়ের চোখ দেখেই প্রেমে পড়েছিল। নেত্রকোনার মানুষেরা বেশ অতিথিপরায়ন। নেত্রকোনায় কারও বাসায় গেলে কেউ কাউকে না খাইয়ে ছাড়ে না। অন্তত এক কাপ চা আর সাথে ভিন্ন কিছু তো অবশ্যই। নেত্রকোনা সিলেট বিভাগের পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় আপ্যায়নের এই রীতিটা বেশ চালু আছে।
কিছু প্রেম কিছু ভালোবাসা অপরিপূর্ণই থেকে যায়। আরাফ এই মেয়েকে কখনো ভুলতে পারবে না। এতদিনের সম্পর্কটা ভেস্তে গেলো এটাও আরাফের কাছে কষ্টের ব্যাপার। বাস্তববাদী হওয়ার কারণে আরাফ একটু বেশীই সতর্ক। সতর্ক বলতে আরাফ চায় তা সে যেই হোক তার ভেতরটা পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে। এই সতর্কতা একদিক দিয়ে ভালো আবার অন্যদিক থেকে ভালো না। কেউ যদি কাউকে বেশী ঘাঁটে, কাউকে বেশী জানতে চায় তখন আপাত-সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটে। এই কিছু থেকে অনেকসময় সম্পর্কের পুরোটাও নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাউকে খুব বেশী ঘাঁটতে নেই। সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কিছুটা দূরত্ব রাখতেই হয়।
আরাফ কিছুক্ষেত্রে একটু আধটু স্পর্শকাতর। স্পর্শকাতর না হয়েও আরাফের উপায় ছিল না। আরাফ এমনিতে কখনো রাগে না। কিন্তু একবার-দু’বার-তিনবার সহ্য করার পর যখন দেখে সে খুবই বিরক্ত তখন সে প্রচণ্ড ক্ষেপে উঠে। ক্ষেপে উঠাটাই স্বাভাবিক। খুব বেশী ধৈর্যধারণ কেউই করতে পারে না। খুব বেশী জিনিসটা আসলেই খারাপ। সৃষ্টিকর্তাও খুব বেশীর পক্ষে নন। তার মানে সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট সীমানা আছে, আছে পরিধিও। আর আমরা মানুষ, তাই আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকবেই। আরাফের স্পর্শকাতরতা বলতে যে বিষয়টাতে ছিল তার পেছনে একটা ছোটখাটো গল্প আছে। আরাফ তখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেছে, চাকরি খুঁজছে। জীবনের প্রথম সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েও একটুও ভয় পায়নি। আইটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ওকে কিছু জটিল প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। আরাফ তাও ধীরে ধীরে ইংরেজিতে গুছিয়ে প্রায় বেশীরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পেরেছিল। কিন্তু সামনে বসা শীর্ষ বিপণন কর্মকর্তার কাছে আরাফকে ভালো ঠেকলো না। ভালো ঠেকলো না বলতে আরাফ প্রায় সব উত্তর দিতে পারা সত্ত্বেও ব্যাক্তিগতভাবে ওকে তাঁর ভালো লাগলো না। কিছু কিছু না ভালোলাগা বিনাকারণেও হয়। হতে পারে আরাফের মেধা তাঁকে ঈর্ষান্বিত করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের জন্য আরাফ ছিল যুতসই। ওর চাকরি হয়ে গেলো। কিছুদিন যাবার পরই বিপণন কর্মকর্তার সাথে তার মতামতের পার্থক্য তৈরি হলো, সেই সাথে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলো। কর্মকর্তাটি তার বিরুদ্ধে মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে উপরস্থ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিতে লাগলো। আরাফ সিদ্ধান্ত নিলো এহেন পরিবেশে তার আর কাজ করার পরিস্থিতি নেই। এমন অবস্থায় আরাফ চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো।
আরাফ এরপর একটি নামকরা টেলিকমিউনিকেশান কোম্পানিতে যোগ দিলো প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে। আরাফ এখানেও অস্বস্তিতে পড়লো। কয়েকজন সহকর্মীর মাঝে সহযোগিতার অভাব খুঁজে পেলো সে। চাকরি করতে গেলে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় তা হলো মানিয়ে নিতে পারা। চাকরিতে চাপ থাকবে, থাকবে কিছু কিছু সহকর্মী যারা হবে বিরক্তির কারণ। কিন্তু আপন পরিসরে থেকে সবার সাথে সব পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে সহনশীল থেকে কাজ যে করতে পারে সেই পারে চাকরি জীবনের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। আরাফের ক্ষেত্রে তা ব্যাতিক্রম। স্বাধীনচেতা আর স্পর্শকাতর হবার কারণে ওর মাঝে বৃত্তবন্দী এই চাকরির ক্ষেত্র যেন ওকে বিরুদ্ধাচরণ করছে। আর আরেকটি বিষয় হলো কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের যদি সহযোগিতার মনোভাবই না থাকে, যদি থাকে হিংসাবৃত্তি তবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করা যে কারও পক্ষেই দুরূহ হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। তাই যেকোনো কর্মক্ষেত্রে সবারই থাকা উচিৎ বন্ধুসুলভ আচরণ যা কর্মপরিধিকে অবশ্যই ত্বরান্বিত করে। যাই হোক, আরাফ ভাবছে ওকে দিয়ে আর চাকরি হবে না। ওকে এমন কিছু করতে হবে যেখানে কেউ ওকে শাসাতে আসবে না।
বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। আরাফ বারান্দায় বসে তা দেখছে। আরাফের মা বারান্দায় আসলেন। আরাফের মাথায় হাত রাখলেন। আরাফ চমকে উঠলো। মা দেখ কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজবি? ইচ্ছে হলে যা ছাদে গিয়ে ভিজে আয়। মা’র কথামতো আরাফ একাই ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। বৃষ্টি এলে মানুষের মনে ফেলে আসা জীবনের প্রেম-ভালোবাসার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে অনেক কষ্টের অভিজ্ঞতাও। এটা একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। আরাফের অনেক কিছুই মনে পড়ছে। আরাফ ভাবতে লাগলো কি করতে পারে সে।
ভাবতে ভাবতে আরাফ সিদ্ধান্ত নিলো বাসায় বারান্দা, বসার ঘর, বাথরুম, শোবার ঘর সাজাবার জন্য বনসাই সহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির রুচিসম্পন্ন দেশি বিদেশি ছোট-বড় গাছের প্রদর্শনী দেবে। চকবাজারে সিরামিক্সের বিভিন্ন সাইজের দারুণ দারুণ ফুলগাছের টব পাওয়া যায়। আরাফ যেখানে থাকে তার পাশের কিছু এলাকায় বেশ বড় বড় নার্সারি আছে। আগারগাঁওয়ে জানামতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নার্সারি রয়েছে। আর সেখানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছের সংগ্রহ। ইচ্ছেমত কেনা যায় ও অর্ডার করা যায়। নির্দিষ্ট অংকের টাকা হাতে নিয়ে আরাফ ব্যবসা শুরু করে দিলো। বনানীতে তার প্রদর্শনী-স্থান। সকাল দশটা নাগাদ গিয়ে উপস্থিত হয় আর ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা। শুরুতেই বেশ সাড়া জাগায় ব্যবসায়। আরাফের এক খালাতো ভাই বিক্রির যাবতীয় কাজ করে আর ও হিসেব-নিকেশসহ অন্যকাজগুলো যা ওর খালাতো ভাই পারে না সেগুলো করে। দৃষ্টিনন্দন ছোট-বড়-মাঝারি আকারের টবের মাঝে বিদেশি যেসব গাছ ক্রেতারা চিনতে পারে না আরাফ সেগুলোকে তাদের কাছে নাম ও ধরণসহ সবকিছু তুলে ধরে। এমনও হয় দিনে ছয়-সাত হাজার টাকার পণ্যও সে বিক্রি করে ফেলতে পারে। সব মিলিয়ে দেখা গেলো মাসে তার বেশ লাভ হয়। আরাফের ইচ্ছে লোকবল বাড়িয়ে চেইনস্পেস তৈরি করা। হয়তো তাও সে পারবে একসময়। ছোট উদ্যোক্তা থেকে হয়ে যাবে বড় ব্যবসায়ী।
আরাফ এখন অনেক কষ্ট করে। এই কষ্ট আরাফকে পরিশ্রান্ত করে না। বরং মনে মনে ওর মাঝে একটা জেদ কাজ করে যে ওকে অনেক বড় হতে হবে। জেদ না থাকলে জীবনে বড় হওয়া যায় না। কল্পনা করতে হবে দৃঢ়ভাবে, লক্ষ্য স্থির করতে হবে সুদূরপ্রসারী আর নিজেকে বুঝতে হবে তাহলেই সম্ভব জীবনে সফল হওয়া। নিজেকে বুঝতে পারলে মানুষকেও বুঝা সহজ হয়।
আরাফের একটাই মনঃকষ্ট। চাকরি করতে গেলো অথচ ওর অত্যন্ত ভালো প্রোফাইল থাকা সত্ত্বেও হিংসা-বিদ্বেষ-অসহযোগিতার কারণে তাকে তা ছাড়তে হয়েছে। বেসরকারি চাকরি তো অনেকসময় বিনা নোটিশেও চলে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক ইচ্ছে অনুযায়ী যখনতখন কর্মী ছাঁটাই করে ফেলা হয় অবস্থা সাপেক্ষে। আরাফের সাথে যারা এমন করেছে ওরা নিজেরাও তো জানে কিনা যে বৃত্তের মাঝে বন্দী হয়ে ওরা সবাই চলে, ঘূর্ণিপাক খায়, ঘুরেফিরে বারবার একই জায়গায় অবস্থান করে, একই কাজ করে। হয়তো সময়ে অনেকের মাঝে পরিবর্তন আসে। অনেকের আনাগোনায় মুখরিত কর্মযোগে অনেকসময় দ্বিধা আর সংকোচে হয়তো মুখফুটে বলাও হয়ে উঠে না ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত’।
বৃত্তের বাইরে এসে আরাফের পৃথিবীটা মুক্ত আলো-বাতাস খুঁজে পেয়েছে। যেখানে সে নিজেই নিজের অধীন। কষ্ট আর যন্ত্রণা যদি হয় পৃথিবীটার আরেক মানে তাহলে সে সেই মূর্ত ছবিগুলো ভালো করে দেখে এসে নতুন উদ্যমে আর উৎসাহে দৈহিক শত কষ্টের পরেও সব মেনে নিয়ে শেষপর্যন্ত কষ্ট শব্দের মানে বুঝেছে। মনঃকষ্ট অনেক বড় কষ্ট।
এই গল্পে আমি তুলে ধরেছি কষ্টের বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি। চলার পথে অনেকেই সঙ্গী হয়। কেউ পাশে থাকে আর কেউবা হারিয়ে যায়। হারিয়ে যেতে পারে অনেক কারণে। কারও মনে কখনো সূচালো কষ্ট ছুঁড়ে দিতে নেই। কিছু কথা কিছু আচরণ কখনো কখনো মন ভাঙ্গার বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টাকা উপার্জনের জন্য মানুষ কাজ করে, পরিশ্রম করে। অন্ন সংস্থানের জায়গা কর্মপরিবেশে তাই এমন কিছু করা উচিৎ নয় যাতে কিনা একজন মানুষকে মনঃপীড়ায় ভুগে শেষমেশ কাজ ছেড়ে চলে আসতে হয়। যারা এমন অপযোগে লিপ্ত তাদেরকেও একই অবস্থায় পড়তে হতে পারে।