সে কাজটি ঠিক করেনি। শতকরা নিরানব্বই ভাগ লোকে তাই বলবে। বাবা-মায়ের অনেক আশা একমাত্র মেয়ে লেখা-পড়া শিখে দেশের একজন বিখ্যাত ডাক্তার হবে, তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। স্বপ্নের সিঁড়ি পাড়ি দেওয়ার জন্য সেভাবে মেয়েকে ছোটবেলা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিবারের হাজারো টানাপোড়নের মধ্যেও মেয়ের লেখাপড়ায় যাতে কোন বিঘ্ন না ঘটে সেদিকেই তাদের লক্ষ্যের ঘাটতি ছিলোনা কখনো। সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারে সব বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এরকম অনেক ভাবনায় মত্ত থাকেন। একমাত্র মেয়েকে মানুষ করতে যা যা দরকার এরা সব করেছে। মেয়েটিও লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ও সবার প্রিয়ভাজন ছিলো। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও তাকে খুব ভালোবাসতো, তাকে নিয়ে গর্ব করতো। সমাপনী পরীক্ষায় সে প্রতিবছর প্রথম হয়ে আসছিলো।
জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে পারলেই মনে করা হয় প্রকৃত কাজটি বুঝি হয়েই গেলো। তবে এটাও ঠিক ভাবনা ও কাজের সমন্বয় ঘটাতে পারলে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো কোন ব্যাপারই না।
পার্থিব দুনিয়ায় নিজেকে মহৎকর্মে ব্রতী রাখা অতো সহজ বিষয় নয়। কথায় বলে- চাঁদেরও কলঙ্ক আছে কথাটি যেমন সত্য তেমনি কোন স্বর্গীয় সুখের চূড়ায় পৌঁছাতে হলে পার করতে হবে অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ। খুব সাবধানে অতিক্রম করতে হবে জীবনের প্রতিটি ধাপ। আসবে অনেক বাধাবিপত্তি ও স্বপ্ন নিধনের আকাশকুসুম কল্পনা- যেখানে নিজেকে ঠিক রাখা খুবই দুরূহ ব্যাপার।
মা-বাবার আদরের প্রত্যাশী মেয়েটির নাম মৃণালিনী (মিলি)। মিলি এখন এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্রী। আর কদিন পর স্বপ্নের সিঁড়ির শেষ সোপান পেরিয়ে বাস্তব জীবনে পা রাখতে চলেছে। মা-বাবার আহ্লাদিত মেয়ের যত্নের কোন কমতি নেই।
ভাগ্য বিধাতা সবার ভাগ্য লিখে থাকেন। কে জানে কার ভাগ্যে কি আছে! কেউ রাজা আবার কেউ বা ফকির এ সবই চলে নিয়ন্তার ভাগ্য লিখনের উপর। মানুষ যা ভাবে তার সবটুকু অনেক সময় পূরণ হয়ও না। তাই বলে ভাগ্যের উপর নিজেকে সপে দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে নিরলসভাবে।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো মিলির। তার ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি ছিলোনা কোন বিষয়ে বরং বেশ সুনামই ছিলো ভালো মেয়ে হিসেবে। পরিবারও তাকে নিয়ে খুব খুশি। কে না চায় নিজেদের সন্তানের সুনাম, প্রত্যেক মা-বাবাই চাই তার সন্তান ভালোভাবে মানুষ হোক।
কিন্তু বিধি বাম! একদিন মিলি হঠাৎ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে য়ায়। রাত ৮টার পরও যখন ঘরে ফিরেনি তখন তার মা-বাবা বিষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে,কোথাও খোঁজ মেলেনি।
নিধিরাম (মিলির বাবা) তার মেয়ের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে চিনত। অনেক আগে মিলি ঐ বান্ধবীর ব্যাপারে বলেছিলো যে তারা দুই বান্ধবী নিজ বোনের মতো সুখদুঃখ সবকিছু একে অপরকে ভাগাভাগি করে। রাত প্রায় ১০.৩০ টা বাজে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে জাহ্নবীদের (মিলির বান্ধবী) বাড়ীর দিকে রওনা দিলো।
- এইযে শুনুন, এখানে জাহ্নবীদের ঘর কোনটা? আমি উত্তর পাড়ার নিধিরাম, মিলির বাবা।
- ওহ নিধি! আমি গোপাল - কি মনে করে এত রাতে! কি কোন সমস্যা? অন্ধকারে খুব একটা ভালো দেখা যাচ্ছে না।
-হ্যাঁ, বন্ধু তোমার মেয়েইতো জাহ্নবী, তাইনা! ও কি ঘরে আছে? চলো তার সাথে কিছু কথা আছে।
-কাকু! আপনি! কেমন আছেন? কি হলো? খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে! তাছাড়া এত রাতে!
-জাহ্নবী মা-মনি,আমার জানা মতে তুমিতো মিলির ভালো বান্ধবী। মিলি আজকে বাড়িতে ফিরেনি। তুমি কি কিছু জানো।
-বাড়ী ফিরেনি মানে, কি বলেন কাকু! আমারতো মাথায় কিছু আসছেনা। তবে...
-তবে কি? বল বল কি জানো তুমি!
-আমার জানামতে মিলি অমল দাকে...
- কে সে অমল? আমাদের পাশে চিন্তাপুর গ্রামের ছেলে।
-ঐ গ্রামে আমার অনেক বন্ধু ও পরিচিত লোকজন আছে। তুমি কি ওর বাবার নাম জানো?
-জাহ্নবী বলল কাকু সম্ভবত ওর বাবার নাম অমৃত।
-অমৃত! সাথে সাথে নিধিরাম মোবাইলের কল লিস্ট চেক করে দেখে তার মোবাইলে অমৃতের নাম্বার সেভ করা আছে। ফোন দিল তাকে, রিসিভ করেনি। অবশ্য রাত অনেক হয়েছে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন তার রাতদিন হুঁশ থাকেনা। আবার ফোন দেওয়া হলো, এবার ফোন তুলল।
-হ্যালো! কে?
-আমি কি অমৃত (অমলের বাবা) বাবুর সাথে কথা বলছি?
-হ্যাঁ, বলছি।
-আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি ধলপুরের নিবারণ বলছি।
- নিবারণ! ও আচ্ছা, বন্ধু কেমন আছো? এতো রাতে...
-বড়ো বিপদে পড়ে.. আচ্ছা তোমার ছেলেটার নামটা জানি কি ছিলো?
-কেন? ওর কি কোন খোঁজ পেয়েছো? ওর নাম অমল।
-মানে!
-আমরা বাড়ীতে সবাই টেনশনে আছি। ও আজকে ঘরে ফিরেনি। ফোনও বন্ধ পাচ্ছি। কি জানি ছেলেটা আমার কোথায় আছে কেমন আছে ? সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া শেষ।
-হু! আমারও তো একই দশা। আমার মেয়েটাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অমৃত।
-তার মানে ওরা...
-সম্ভবত! সকালে একবার আমার বাড়ীতে আসবে?
- ঠিক আছে বন্ধু! রাখছি।
-জাহ্নবী তোমার কথাই হয়তো ঠিক! গোপাল (জাহ্নবীর বাবা) সকালে একবার বাড়ীতে আসবে?
-চলো নিধি, তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। শান্ত হও। তুমি চিন্তা করোনা। একটা ব্যবস্থাতো হবেই। ভগবানকে ডাকো। তিনি বিপদ দিয়েছেন তিনিই উদ্ধার করবেন। অধৈর্য্য হয়ো না, সাহস রাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।
বাড়ীতে এসে নিধিরাম আর পারছেনা, ক্লান্ত শরীর ঢলে পড়েছে বিছানায়। সারাদিন খাওয়াদাওয়াও হয়নি মেয়ের জন্য। জীবনের কিছু কিছু সময় মানুষকে খুব নাড়া দিয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মানুষ নিজের উপর। আজ নিধিরামের তাই হয়েছে।
-মিলির মা কিছু খেয়েছো। তার কোন সাড়াশব্দ নেই। বিছানায় শুয়ে আছে আর কাঁদছে। মেয়ের চিন্তায় ওরও সারাদিন খাওয়াদাওয়া হয়নি। একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে আর প্রলাপ বকছে এখন আমার কি হবে। আমার মেয়েটি এখন কোথায়,কেমন আছে কে জানে?
মা-বাবার আশায় নিরাশা করে কোন ছেলেমেয়ে সুখী হতে পারে বলে মনে হয় না। যার হাত ধরে জীবন চলার পথের পাথেয় তাকে ভুলে কি করে সদ্য জেগে উঠা আসক্তিতে কেউ অতি সহজে জড়িয়ে পরে তা হয়তো এই মুহূর্তে বোধগম্য না হলেও খুব শীঘ্রই অকালপক্কের ফল পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে। যে মা-বাবা এতদিন কতো কষ্ট করে লালনপালন করেছে সে কথা অন্য কেউ না বুঝলেও অন্তত গর্ভজাত সন্তানের বুঝা নেহায়েত কর্তব্য হওয়া উচিত। এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে নিধিরাম। আবার ভোর ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে।
মেয়ের শোকে নিধিরাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। জাগতিক নিয়মের হিসেব মেলাতে পারে না। তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননা, যে মেয়ে বাবাকে ছাড়া খাওয়ার টেবিলেই যেতো না সে কি করে আজ পাঁচ আঙুলে মুখে ভাত তুলছে। নাকি সেও নিরন্ন এবং শোকাবহ, কি জানি? যদিও জীবনের কোন এক সময় মানুষ ভুল করে কাঁচকে হীরে ভেবে তুলে নেয়। পার্থিব সুখের আশায় মানুষ তার ভালো-মন্দ ভুলে যেতে পারে, ভুলে যেতে পারে পরম পূজ্যমান মা-বাবাকে, আপেক্ষিক সে ভুল হতেই পারে অপরিপক্কতার কারণে। তবে মাথায় রাখতে হবে কিছু কিছু মারাত্মক ভুল আর হয়তো শোধরানো যাবে না একথা যেমন সত্য তেমনি এসব মারাত্মক ক্ষতিকর ভুলগুলো কোন এক দৈবক্রমে হয়ে থাকে একথাও আমাদের মানতে হবে।
সব ভালো কাজের পাশাপাশি অশুভ শক্তির ছায়া যেন স্পর্শ করতে চায় বিধির বিধানে। তবে জীবনের লক্ষ্য যদি সৎ, মহৎ ও দূরদর্শিতা সম্পন্ন হয় তবেই হয়তো অশুভ শক্তির ছায়া পালাতে বাধ্য হয়। জীবন আমার,তা সাজানোর দায়িত্বও আমার এটা যে বুঝতে পেরেছে সে অবশ্যই নিজেকে খুঁজে পেয়েছে চিরসত্যরূপে।
মিলির বাবা নিধিরাম ও কমলের বাবা অমৃতসহ সবার পরামর্শে থানায় জিডি করে। মনে মনে ভয়ও হচ্ছে থানাপুলিশ করে আবার কি জানি কোন ঝামেলা হয়! মানুষের জীবনে কতো কী যে ঘটে তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে, অন্য কারো জানার কথা নয়। দৈনন্দিন জীবনে লাখো মানুষের কোটি সমস্যা। তার হিসাব পরম প্রভু ছাড়া আর কারো গোচরীভূত হবার কথাও নয়।
অন্তহীন দুনিয়ায় অনন্ত ভাবনা, জগতের মঞ্চে কেউ সামাল দিতে পারে আবার কেউ বা হেরে যায়। পারতপক্ষে কেউ হারতে রাজী নয় এ সংসারে। কিন্তু কি করার কাছে- যা ঘটার তা ঘটবেই। মানুষ যখন পরিস্থিতির স্বীকার হয় তখন কতো ভাবনায় আত্মহনন করে মানুষকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না! পৃথিবী তার আপন নিয়মে চলে বলে এমনটি হয় কিনা জানি না। এটাও ঠিক যে জাগতিক নিয়মে বিপদআপদ যেমন আছে তেমনি এর সমাধানও আছে। বিধাতার রাজ্যে এক দরজা বন্ধ করেনতো পাঁচ দরজা খোলা রাখেন তাঁর প্রিয় সৃষ্টিকে রক্ষা করবে বলে!
এদিকে পুলিশের অসাধ্য বলে কিছুই নেই। তারা সম্ভাব্য তথ্য অনুযায়ী সব তল্লাশি অভিযান শেষ করে ফেলেছেন। মিলি ও কমলের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং এ রাখা আছে। মিলির সাথে যে মোবাইল ফোন ছিলো তাও বন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের যে ধারাবাহিক অভিযান কৌশল বিচক্ষণতা তাতে আজ পর্যন্ত কেউ রেহাই পায়নি এবং পাবেও না। অভিযানের সাতদিন পর যে মাত্র মিলির ফোনটি অন করা হলো পুলিশের ট্র্যাকিং এ ধরা পড়ে গেলো তার অবস্থান। সাথে সাথে শুরু হলো পুলিশের কাজ। তাদের তথ্যমতে মিলি এখন টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থান করছেন। একটু পরে কমলের মোবাইলও একই জায়গায় ট্র্যাকিং এ ধরা পরে। ধারণা নিশ্চিত হলো যে তারা একসাথে আছে। তাদের ধরে আনা হলো এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। স্বীকারোক্তিতে বলে যে তারা বিবাহ করেছে।
-পুলিশ মিলিকে জিজ্ঞাসা করলো তুমি কতোদিন ধরে ওকে চিনো?
-মিলি বলল সে আমাদের পাশের গ্রামে থাকে। আমরা একই স্কুলে পড়তাম। সে আমার থেকে দু'বছরের সিনিয়র। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কয়েকজন বখাটে ছেলে আমাকে উত্যক্ত করছিল। ও সেটা দূর থেকে দেখতে পায় এবং বখাটেদের উচিৎ শিক্ষা দিয়ে আমার উপকার করেছিলো। সেদিন থেকে আমি ওকে খুব পছন্দ করি।
-কমল কি তোমাকে পছন্দ করে?
-হ্যাঁ, সেও আমাকে পছন্দ করে।
-পরিবারকে জানাওনি কেন?
-ভয়ে! যদি মা-বাবা রাজি না হয়।
-কমল কি মা-বাবার সাথে থাকে? পরিবারে ওর আর কে কে আছে?
- হ্যাঁ, ওর পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই আছে।
-কমলের পরিবারে কেউ তোমাকে চিনে?
-না, কেউ চিনে না।
-ওরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে?
-জানিনা!
-কমল লেখাপড়া, কাজকর্ম করে কী?
-কমল গত দু'বছর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হয়েছে। একটি ভালো চাকরীও করে কোন এক স্বনামধন্য কোম্পানীতে। বেশ ভালো বেতন পায়।
পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের পর মিলির ও কমলের পরিবারকে খবর দেওয়া হলো থানায় আসতে। যেন তারা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে যায়। কিন্তু মিলির বাবা নিধিরাম থানায় এলোনা।
-পুলিশের কাছে মিলির বাবা ফোনে বলল আমার যা হবার হয়ে গেছে, আপনারা যা করার করুন!
-যা হবার হয়ে গেছে মানে, কি হয়েছে?
-কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলল, আমার সহধর্মিণী... ! মেয়ের শোকে শোকে আজ সকালে ইহজগৎ ত্যাগ করেছে। আমি এখন তাকে শেষ যাত্রা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার পক্ষে আজ থানায় আসা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। ফোনটা রেখে আপন মনে বলতে থাকলেন...
এই জীবনে যার জন্য এতোসব ত্যাগ করেও শেষ রক্ষা করতে পারিনি আমিও বেঁচে থেকে কি লাভ! মনে হচ্ছে আমিও অতিসত্বর এই কষ্টের যাঁতাকলে চিরতরে নিষ্পেষিত হয়ে মারা যাবো। ইহজগতের ভাবনা নিয়ে হয়তো আমাদের কারো খুব বেশি ভাবা উচিৎও নয়। নিয়ন্তা আমাদের এই ভবে পাঠিয়েছেন কর্তব্যাদি সম্পন্ন করার জন্য। তিনিই জানেন কাকে কিভাবে পরিচালিত করবেন।
কমলের বাবা অমৃত ও তার স্ত্রী থানায় এসে ছেলেকে দেখবে বলে অস্থির হয়ে আছে। থানায় সব কাগজপত্র রেডি আছে। বাদীপক্ষ সব তথ্যাদি দিয়ে ওদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাবে। কিন্তু নিধিরামকে না দেখে অমৃত (মিলির বাবা) ফোন দিতে গেলে থানা থেকে জানিয়ে দেন যে উনি আসতে পারবে না। উনার স্ত্রী মেয়ের শোকে শোকে বিগত হয়েছেন...। এমতাবস্থায় কি আর করা!
-আপনারাতো ছেলের মা-বাবা! আপনারা ইচ্ছে করলে উভয়ের বাদীপক্ষ হয়ে ওদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন। অবশ্য আমরা আরেক বাদী মিলির বাবা নিধিরাম বাবুর সাথে সে বিষয়ে ফোনে কথা বলে নিবো। যেহেতু ওরা দু'জনই সাবালকত্ব অর্জন করেছে এবং বিবাহ করেছে তাতে মনে হয় না কোন আপত্তি থাকার কথা।
-কমলের মা বলল হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। যা হবার হয়েছে, এখন কথা না বাড়িয়ে ওদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন। ওদের স্বশরীরে ভালোভাবে ফিরিয়ে এনেছেন এটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওনা। দেন তাড়াতাড়ি কাগজপত্রে সাইন করে ওদের বাড়ী নিয়ে যায়।
-নিধিরাম বাবুকে থানা থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো আপনার মেয়ে এখন বিবাহিতা। কমল ওর স্বামী। কমলের মা-বাবা আপনার মেয়েকে খুব আগ্রহে ওদের ঘরের বউ করে নিয়ে যাচ্ছে। আপনার কি কোন আপত্তি আছে?
-না, আপত্তি থাকবে কেন? এতো আমার পরম সৌভাগ্য। আমার একমাত্র মেয়ে আজ শ্বশুর বাড়ী যাচ্ছে। আমার কতো শখ ছিলো মেয়েকে লাল বেনারসি শাড়ীতে বিয়ের পীড়িতে দেখবো বলে! ওর মায়ের কতো আশা...!
-আচ্ছা রাখছি।
-ঠিক আছে!
নিয়তির কতো লীলাখেলা! আজ একজনকে পরপারে বিদায় দেওয়া হলো আর অন্যজন সুখের ঘর বাঁধতে চললো। পার্থিব দুনিয়ায় বিদায়-বরণ সব এখানেই। জাগতিক সুখের সন্ধানে আমরা অনেকসময় হারিয়ে যায়। হে ভগবান তুমি তাদের সুখী করো!
--------------সমাপ্ত-------------
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
পার্থিব সুখের সন্ধানে মানুষ ইহজগতে যা করে তারই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মানুষ ভুলে যায় তার করণীয়। সত্যের সন্ধান না করে সামান্য সুখের তরে একে একে সব অন্যায় কাজ করতে থাকে এবং পরজগতের কথা বেমালুম ভুলে যায়।
১৪ জুন - ২০১৮
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী