দিয়াশলাইয়ের কাঠি

ভয় (জুলাই ২০২০)

মুহম্মদ মাসুদ
  • ২৮৫
রওনক ও সজীব খুবই ভালো বন্ধু। তাদের মধ্যে কখনো মনোমালিন্য হয়নি। তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া, মারামারিও হয়নি। তারা বলে, যারা ঝগড়া করে তারা ভালো মানুষ নয়। আর যারা মারামারি করে তাদেরকে কেউ ভালোবাসে না।

প্রতিদিন একসাথে স্কুলে যায় রওনক ও সজীব। তাদের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব। একসাথে যাওয়া আসা করে। স্কুলের একই বেঞ্চে বসে। টিফিন পিরিয়ডে একইসাথে বসে খায়।

কিন্তু ওদের মধ্যে রওনক একটু ডানপিটে এবং দুষ্ট স্বভাবের। সে মারামারি না করলেও স্কুলে যাওয়ার পথে এগাছের পাতা ছেড়ে, অন্যের গাছের ফল ছেড়ে, ফুল তোলে, গাছে ঢিল মারে। পাখির বাসা ভেঙে ফেলে। আরও কতকিছু! তবে, রওনকের বন্ধু হওয়া সত্বেও সজীব এগুলোর কিছুই করে না। সে বলে অন্যের গাছের ফল ছিঁড়বো কেন? আমাদেরই তো গাছে ফল রয়েছে। পাখির বাসা ভেঙে ফেলবো কেন? আমরাও তো বাসায় থাকি। আর ফুল আমাদের সৌন্দর্য দেয়, ফুল থেকে আমরা ঘ্রাণ পাই ইত্যাদি।

রওনক আর সজীবদের বাড়ি একই পাড়ায়। একই মাঠে তারা খেলা করে, ঘুড়ি উড়ায়। কিন্তু খেলা শেষে সজীব যথাসময়ে বাড়ি ফিরলেও রওনক দেরি করে ফেরে। এজন্য রওনকের মা শেফালী বেগম মাঝেমধ্যেই রওনককে বকাঝকা করে, চিন্তা করে ছেলেটি বুঝি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সজীবের সাথে তুলনা করে বলে সজীবই ভালো ছেলে, মা-বাবার কথা শোনে। এজন্য মাঝেমাঝে সজীবের উপর রাগ করে রওনক।

শেফালী বেগম চায় রওনক যেন সজীবের সাথে মেশে। কারণ, সজীব হলো ভালো ছেলে। ওর আব্বু আম্মু যা বলে তাই করে। যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠে, বাবার সাথে নামাজ পড়ে, স্কুলের পড়াশোনা মুখস্থ করে। কারো সাথে ঝগড়া করে না। মারামারি করে না।

একদিন সকালে ফজরের নামাজ শেষে সজীব পড়ার টেবিলে বসে পড়েছিল। এদিকে সজীবের আব্বু মাহমুদ নোমান সাহেব জায়নামাজে বসে একটু উচ্চস্বরে হাদিসের বই পড়ছিলেন। জান্নাত আর জাহান্নাম নিয়ে। জান্নাত আর জাহান্নাম শব্দ দুটি শুনেই সজীব পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসে জানতে চায়, জান্নাত জাহান্নাম কি? তখন, মাহমুদ নোমান সাহেব বলেন, জান্নাত হলো চিরস্থায়ী সুখের স্থান। যেখানে মৃত্যুর পর ভালো মানুষেরা বসবাস করবে। যারা ভালো কাজ করবে, নামাজ পড়বে, পিতামাতার খেদমত করবে, বড়দের সন্মান করবে, ছোটদের স্নেহ করবে, সৎকাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলবে, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকবে, অসীম সওয়াবের মালিক হবে শুধুমাত্র তারাই জান্নাতে থাকবে। আর জাহান্নাম হলো কঠিন আজাবের স্থান। যেখানে শুধু কষ্ট আর কষ্ট। যেখানে শুধু পাপীদেরই বসবাস। যারা পাপ কাজ করবে, অন্যের ক্ষতি করবে, নামাজ পড়বে না, মা-বাবার খেদমত করবে না, আল্লাহকে ভয় করবে না, পরকালের শাস্তির কথা ভুলে গিয়ে পাপকর্মে লিপ্ত হবে এবং অসীম গুনাহের মালিক হবে। আর তারাই হবে জাহান্নামি। যেখানে মানুষদের আগুনে পুড়ানো হবে, শরীরে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হবে, সাপে কামড়াবে, আরও কঠিন কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।

সজীব আবার জিজ্ঞেস করে, আব্বু, জাহান্নামের আগুন কি আমাদের তৈরি আগুনের মতো?

মাহমুদ নোমান সাহেব বলেন, না। সে আগুন আমাদের তৈরি আগুনের মতো নয়। সে আগুন আরও বেশি তীব্র, আরও বেশি শক্তিশালী। আমাদের তৈরি আগুনের চেয়েও সত্তর গুণ বেশি।

রওনক আর সজীব স্কুলে যাচ্ছে। দুজনের হাতে দুটো টিফিনবাক্স। হঠাৎ রওনক সজীবকে জিজ্ঞেস করলো, আজকে টিফিনবাক্স ছাড়াও আর কি নিয়ে এসেছিস?

তুই কি নিয়ে এসেছিস?

আমি আসার সময় চুরি করে লিচু পেরে এনেছি। আর তুই?

আমি একটি ম্যাচবক্স (দিয়াশলাই কাঁঠির বক্স) এনেছি।

কেন? ফটকা ফুটাবি নাকি?

না।

তাহলে...
এইযে তুই প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে অন্যের ক্ষতি করিস, গাছে ঢিল ছুঁড়িস, পাখির বাসা ভেঙে ফেলিস। তাতে করে অনেক গোনাহ হয়। আর গোনাহ হলে মৃত্যুর পরে জাহান্নামে যেতে হবে। আর জাহান্নামে আছে আগুন আর আগুন।

ম্যাচবক্সের সাথে জাহান্নামের সম্পর্ক কি?

আজ সকালে আব্বু জান্নাত আর জাহান্নাম নিয়ে নিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। এজন্য যখন তোর মতো খারাপ কাজে লিপ্ত হতে চাইবো, অন্যের ক্ষতি করবো, গাছের ফল ছিঁড়বো, পাখির বাসা ভেঙে ফেলবো তখন আমি একটি করে কাঁঠি জ্বালাবো এবং আমার হাতের তালুর কাছে নিয়ে তাপ দেব আর নিজেকে জিজ্ঞেস করবো - সজীব, তুমি সামান্য এই আগুনের তাপ সহ্য করতে পারছো না তবে কিভাবে জাহান্নামের আগুনের তাপ সহ্য করবে?

রওনক সজীবের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো, সে নিজেও আর কোনদিন অন্যের ক্ষতি করবে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভয় নামক শব্দটি আসলেই ভয়ের। প্রত্যেকটি মানুষই কিছুনা কিছু বিষয়ে ভয় পেয়ে থাকে। তবে যারা পরকালকে ভয় করে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে তারাই কামিয়াব।

৩০ মে - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪