অভাবে অনটনে কাটত দিন , হাল বেহালে অবস্থা খুব কঠিন । অল্পতা স্বল্পতার ক্ষরা ভরা মুখ অমলিন । ঘাত বেঘাতে সংসার অমূল্যহীন । ঝর বৃষ্টিতে ঘর বাড়ি আশাহীন। জয় পরাজয়ে জীবন পরাধীন । ব্রাক গ্রামীণ আশা থেকে ছিল অনেক ঋন । শঙ্কা শোষণের হাতে জীবন অর্থহীন । আর কতকাল !আর কত বছর । এভাবে হবে পার । এভাবে বারে বারে শত যন্ত্রণায় শত আর্তনাদে জীবন হবে পারাপার ।
৬৪ বছর ! এভাবে অনাহারে কাটলো এবলা ওবেলা । সুখের মুখে বালি ছুরেছে অবহেলা । জীর্ণ শীর্ন পরিবেশে জীবন ঘাঁটির মেলা । কারন অকারণে অপদস্থ জীবন ভবলীলা । একূল ওকূল ভাসমান যন্ত্রণার ভেলা । শীত গরমে নিবারণে আপোস সকল জ্বালা । বর্ষন বর্ষায় ডুবে ডুবে নিরাপত্তাহীনতায় সারা বেলা । অসুখ অসুস্থতায় রোগ পচনের এ যেন মস্তবড় হাটখোলা । অসহায় অসহায়ত্বের নতুন রুপের রঙ্গশালা ।
রৌদ্রে পুড়ে দেহখানি জর্জরিত । হাল ধরে চাষ করে সুঠাম দেহ ক্ষত বিক্ষত। সময় অসময়ের শ্রমে মজুরিতে নির্যাতিত। বকাঝকা আর বিরক্তের সমাধিতে দণ্ডপ্রাপ্ত । জীবন যুদ্ধের সেই অজানা গল্প সাজাপ্রাপ্ত । নির্বিছিন্ন কষ্টগুলো আজও অপ্রকাশিত । চাওয়া পাওয়ার চাহিদা গুলো এখনও অভিশপ্ত । মুখ ভর্তি দাড়ির মুচকি হাসি আজও লুকায়িত । হাড় ভাঙা বুক পাঁজরে দোয়া তবু এখনও জীবিত ।
৬৪ বছর , বৃদ্ধ আর সেই বৃদ্ধা ! তোর মা ,তোদের মা আর আমার মাতৃত্ব । তোর বাবা ,তোদের আব্বা আর আমার পিতৃত্ব । ঠুং করে অশ্রু ভিজিয়ে গেল গলা পর্যন্ত । থমকে গেল শরীরের প্রতিটি লোম হয়ে গেল স্তব্ধ । নিমেষেই মুহূর্তগুলো আতঙ্কিত । ঝাপসার ঝড়ে সব কিছু উড়ে ক্ষান্ত । দেহের অলিগলি পরাধীনতায় রক্তাক্ত ।
আজ তুমি অট্টালিকায় অকুতোভয়ে আগ্রাসনের হাত থেকে মুক্ত । আজ তুমি উপত্যকায় উপর তালার উপর সারির মানবতায় যুক্ত । আজ তুমি সম্পদশালী সম্পদের সম্ভাবনায় সুখ ভোগ করছো মাত্রাতিরিক্ত । আজ তুমি বিলাশী ভোগ ভালবাসায় ডুবে ডুবে নিজেকে করছো শান্ত । আজ তুমি উচ্চপদস্থ উচ্চ পদমর্যাদায় উচ্চ স্বরে কথা বলে বলে ক্ষান্ত । আজ তুমি মস্ত বড় বিত্তশালী ব্যস্ততায় খাম খেয়ালির ঘরে নিমজ্জিত । আজ তুমি ক্ষীপ্ত হয়ে ধ্বংসলীলায় ব্যস্ত থেকে জীবন রোগে আক্রান্ত । আজ তুমি বিত্তবান বড় বড় কারবারে চিন্তা ভাবনায় ভারাক্রান্ত ।
আর হয়তো কয়েক বছর । অচল হয়ে নিস্তেজ সূরে কর্কট হবে প্রহর । ঘুমন্ত হয়ে ডুবন্ত শহর জ্বালাময়ী বেশে গুজবে ভাসবে নিথর । সুখ গুলো পরিস্থিতির অসমাপ্তির প্রাপ্তির পাথর । এত শত সম্পদের যথাযথ কলহের সব প্রাপ্তির আহ্লাদ পাবে নির্বিকার ।
যখন তুমিও হবে বৃদ্ধ । কথাগুলো হবে বাকরুদ্ধ । শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দগুলো হবে জব্দ । মনে পরে কি ? যখন ১৪ বছর বয়স তোমার । উচ্চ আকাঙ্ক্ষায় অতিরিক্ত চাহিদার আবদার । যখন ১৮ বছর বয়স তোমার । জ্ঞান সাগরে ডুবছো এপার ওপার । দাবি গুলি তখন খুব জোড়ালো কঠিন সব আবদার । তখনও তৎকালে তোমারই চোখ প্রানে চেয়ে মিঠিয়েছ শতবার । শত অভাব অনটনে দূভাগ্যের অবস্থায় চোখ তোলেননি একবার । বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা বাবা মা তোমার ।
তুমি থাকো কি করে এত সূখে এত মূর্ছনায় । যেথায় বৃদ্ধ তোমার বাবা বৃদ্ধা তোমার মা-য়। যেথায় ঘুমিয়ে আছে তাঁরা খড়কুটোর ঘরে । পরে আছে তাঁরা অবহেলা অনাহারে । চেয়ে আছে তোমার মুখপ্রাণে । ডেকে রেখে তোমার মান সন্মান অন্ধকার গোপনে । এটাই তাঁদের তিরস্কার ! সকল প্রাপ্তির উপহার ।
আজ ৬৪ বছর হলো পার । এখনও অবস্থা ফিরলনা তাঁর । এখনও সে হাত পাতে দুয়ারে দুয়ারে । বৃদ্ধ মা খুশ খুশ করে কাসে আর এবেলা ওবেলা মরে । বৃদ্ধ পিতা এখনও রাস্তার মোড়ে । কাটে সন্ধেক্ষণ তোমার অপেক্ষার প্রহরে ।
এত তোমার বিদ্যা শত সার্টিফিকেট ! ধূলায় মিশে যাবে ,ধ্বংস হবে ভূবণলীলা মরণ রবে সন্নিকটে । বৃদ্ধারা !হাহ !আর তো গুটি কয়েক দিন । বড়জোর দুই এক বছর নয়তো কিছু সন্ধিক্ষণ। দেশ জাতি আজও এখনও বিবেকহীন । যেখানে বৃদ্ধ পিতা মাতা পরাজিত সময় আপোসহীন । দেশ যেখানে কলঙ্কিত জাতি যেখানে পরাস্ত । কি হবে এত শত অট্টালিকার ,বিপন্ন হোক সবকিছু সমস্ত । সরকার যেখানে নির্দয় বিত্তশালীরা অন্ধকারে । সমাজ যেখানে হাত পা গুটিয়ে জ্ঞানিরা বসে আছে ঘরে ।
এতো শত শত যন্ত্রণার আক্ষেপ আর ধিক্কার । যখন বৃদ্ধ পিতার পা রিকশার প্যাডেলে । মাথায় ইঁটের টুপরি আর চোখ অশ্রুজলে । যখন বৃদ্ধ পিতার হাতে চায়ের কেতলি,বিড়ি সিগারেটের ঝুড়ি । বৃদ্ধা মাতার মুখ ডাকা হাতে পান আর সুপারি । যখন বৃদ্ধ পিতা নৌকার মাঝি প্রবল রোদ্দুরে । বৃদ্ধা মাতার কুড়িয়ে আনা শাক সবজির ভীরে । যখন বৃদ্ধ পিতা খরা রৌদ্রে লাঙ্গল আর চোয়ালে । বৃদ্ধা মাতার রান্না খড়কুটো আর গাছের ডালে ।
আমি অপমানিত, আমি চক্ষু লজ্জায় ভীত । যখন ,বৃদ্ধা মাতার পরনে এখনও ছেঁড়া শাড়ির আঁচল । বৃদ্ধ পিতার পরনে পুরনো ময়লায় মাখামাখি গেন্জি আর তাঁতের লুঙ্গি । কবরের পাশে দাড়িয়ে আজ তুমি । চোখ ভরা নোনা জলে । খুব গোপনে আজ কেন অশ্রু এমন ছলনার ছলে । কত কাল কত সময় কত প্রহর কেটেছে তোকে ভেবে । ডুবে ছিলি তখন মতিভ্রমে জ্ঞান ফিরল সবে । মজে ছিলে স্ত্রী ছেলে মেয়ের ফরমায়েশে । সবাই তো আজ ফাঁকি দিয়েছে পরেছো সর্বনাশে। পাড়া প্রতিবেশী আজ মজায় মজেছে সকলে শুধু হাসে ।
এখন তোমার ,আজ তোমার ৬১ ছুঁই ছুঁই । বৃদ্ধ তো তুমি আজ চোখ তোমার ছেলে মেয়ের মুখেই । অপেক্ষায় থাকো তুমি প্রভাত থেকে রাত । কখন পরে তোমার হাতে ছেলের আদরের হাত । সবাই আজ গুছিয়ে নিয়েছে তোমার থেকে । জীবন তরী তোমার চলে আজ এঁকেবেঁকে । মনে পরে ,মনে পরল সেই অবহেলা বৃদ্ধ পিতা মাতাকে । কাঁদছো তুমি অজরে আজ ভেবে অবহেলাতে পরা নিয়ে তোমাকে । সময় ফুরিয়ে শেষ হয়,নতুন রূপের আগমনে । ভুল করেও ভুল করো না বৃদ্ধ পিতা মাতাকে নতুন সুখের জয় গানে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বাবা-মাকে নিয়েই আমাদের জগত।মা যেমন ভাবে আমাদের লালন পালন করেছে।ঠিক বাবাও তেমনি শত কষ্টে আমাদের ভরন পোষন করেছেন।
পিতার জন্য আমরা আজ মাথা তুলে দাড়িয়েছি।সেই পিতাই আজ দি অসহায়ে বাস করে তাহলে আমাদের জীবটাই বৃথা।
৩০ মে - ২০১৮
গল্প/কবিতা:
৪৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।