অভয়া ক্লিনিক

কোমল (এপ্রিল ২০১৮)

মোহন মিত্র
  • ১২
  • ৪৪
বাস থেকে তনয়া নামল। তখন সন্ধ্যা। অজানা শহর। কোনদিকে যেতে হবে ভাবছে। একটা রিক্সাওয়ালা এগিয়ে এলো।
‘রিক্সা লাগবে, দিদি?’
‘অভয়া ক্লিনিক চেনো?’
রিক্সাওয়ালা জানালো চেনে।
তনয়া রিক্সায় চেপে জিজ্ঞেস করলো, ‘কতদূর?’
‘আধ মাইল হবে’
তনয়ার মনে ভয় হল। সন্ধ্যা বেলা অচেনা শহরে। রিক্সায় ওঠার আগে একটা দোকানে জিজ্ঞেস করে নিলে ভালো হত। রিক্সা হর্ন বাজিয়ে চলছে।
‘ভাই, আর কতদূর? আধ মাইল তো পার হয়ে গেছে’।
‘দিদিমনি, ভয় পাবেন নি। আপনি অনিডাক্তারের রোগী। রোজ কত রোগী আসে তিনার কাছে। আমরাই তো নিয়ে যাই। ডাক্তারবাবু এখানকার লোকেদের ভগবান’।
‘তুমি চেন ডাক্তারবাবুকে’? তনয়া জানতে চায়।
‘চিনব নি? তাঁর কৃপায় তো বেঁচে আছি’, রিক্সাওয়ালা কৃতজ্ঞতায় গদগদ।
‘মানে’? তনয়া বিস্মিত হয়। এই অল্প সময়ে একজন ডাক্তার এত খ্যাতি অর্জন করতে পারে কি করে?
‘রোজ কম হলেও এক’শ থেকে দেড়’শ রোগী আসে। রোগীরা তো আর হেঁটে যেতে পারেনি। তাঁরা রিক্সায় চাপে। আমাদের দু’পয়সা হয়, আমরা খেয়ে বাঁচি। অসুখ বিসুখে আমরা তাঁর কাছেই যাই। বড় দরদী ডাক্তার। গরীবদের কাছে টাকা নেয়নি। আপনি নিজের চোখেই দেখবেন’, রিক্সাওয়ালা অনিডাক্তারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অভয়া ক্লিনিকের সামনে এসে রিক্সাওয়ালা বলল, ‘এই দ্যাখেন, এখনও কত ভীর এইখানে’।

ভাড়া মিটিয়ে তনয়া দেখল লম্বা বারান্দা। কাঠের বেঞ্চএ বসে আছে অপেক্ষারত রোগীরা। মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ। সব মিলিয়ে জনা পনেরো হবে। ঘরে ডাক্তারবাবু। এক যুবতী ভেতর থেকে বেরিয়ে একজন রোগীর নাম ধরে নির্দেশ দিল, ‘তেত্রিশ নম্বর পেশেন্ট - বিষ্ণু দাস, ভেতরের রোগী বেরিয়ে এলে আপনি যাবেন’। এবারে তাঁর নজর তনয়ার দিকে গেল। জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কি ডাক্তার দেখাবেন? অনেক দেরী করে এসেছেন। সময়ে আসতে চেষ্টা করবেন। আপনার নাম?’।
‘তনয়া মুখারজী’। তনয়া নাম বলল।
মহিলা বললেন, ‘আপনার নাম চুয়াল্লিশ নম্বরে। এখন চলছে তেত্রিশ। একটু অপেক্ষা করতে হবে’।

তনয়া বেঞ্চের এক কোণে বসলো। অভয়া ক্লিনিকের কাজ চলছে। ডাক্তারবাবু ভেতরে যে কথা বলছেন তার অনেকটাই শোনা যাচ্ছে। প্রতিটি পেশেন্ট ভালো ভাবেই দেখছেন বোঝাই যাচ্ছে। ওষুধ কি ভাবে খেতে হবে, খাবার কী খেতে হবে, কী খেতে হবে না, তাও বলে দিচ্ছেন। কাউকে তিন দিন পরে, আবার কাউকে পাঁচ দিন পরে খবর দিতে বলছেন। কেউ ফীস দিতে না পারার জন্য লজ্জিত ও কুন্ঠিত হয়ে কিছু বললে, তিনি বলছেন, ‘যখন হবে তখন দিয়ে দেবেন। সুস্থ হয়ে উঠুন আগে’। খুব শান্ত ও মার্জিত কথা বলার ধরণ।

তনয়া ভাবছে, ‘এ আমি কী দেখছি! কোলকাতায় তো কত কেলেঙ্কারী ঘটনার খবর পাই। রোগী মারা যাবার পরও ভেন্টিলেটারে রেখে বিল বাড়ানো হয়। টাকা না দিলে মরদেহ ছাড়া হয় না। আর এখানে দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছেন নাকি অনিকদা?

তনয়ার পর আর কোন রোগী আসেনি। রাত ন’টা প্রায়। মহিলা কন্ঠ শোনা গেল, ‘তনয়া মুখারজী, ভেতরে আসুন’।

নাম শুনেই অনিক সেই যুবতীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। যুবতী বললেন, ‘একজন নতুন পেশেন্ট এসেছেন’। তাঁর কথা শেষ হবার আগেই তনয়া ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, ‘আসতে পারি?’

বিস্ময়ে অবাক অনিক চেয়ার ছেড়ে উঠে এসেছে। তনয়ার হাত ধরে বললেন, ‘আরে তনু, তুমি? কখন এলে? এস, এস। হঠাৎ একা এইভাবে এলে? সবাই ভালো আছেন তো? আগে জানাতে পারতে’।
‘আগে জানালে তোমার আসল পরিচয়টা আমার কাছে হয়তো অজানা থেকে যেত। লোক মুখে যেটা শুনেছিলাম সেটা আজ নিজ চোখে দেখলাম। আমার ভালো লাগছে’। তনয়া শান্ত গলায় উত্তর দিল।

‘ওসব কথা পরে হবে। এসো পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি পারুল, আমার সহকর্মী। ইনি হচ্ছেন তনয়া যাদের বদান্যতায় আমার ডাক্তারী পড়া সম্ভব হয়েছে। অনেকক্ষন তাঁকে বাইরে বসিয়ে রেখেছ। চল, ভেতরে নিয়ে চল। আমি ক্লিনিক বন্ধ করে আসছি’। অনিক পারুলকে অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার ঈঙ্গিত দিলেন।
পারুল ভীষণ লজ্জা পেল, ‘না জিজ্ঞেস করে আমি আপনাকে পেশেন্ট ভেবে কতক্ষন বসিয়ে রাখলাম বাইরে। ছি ছি, আপনি বলবেন তো যে আপনি পেশেন্ট নন। চলুন তো, ভেতরে চলুন’, ওর ব্যাগটা পারুল নিজের হাতে নিল।
তনয়া হাসছে, ‘কিচ্ছু ভাববেন না। আমি ইচ্ছে করেই বলিনি। তাহলে আমাকে তো ওখানে বসতে দিতেন না। আর আমার ডাক্তারবাবুর কর্মকান্ড জানা বা নিজের চোখে দেখা হত না’।


অনিকের বাড়ী। দেখে মনে হচ্ছে নতুন। এখনও কিছু কাজ বাকী আছে। দু’টো বেড রুম, একটা গেস্ট রুম, আটাচড বাথ, একটা হলঘর, কিচেন। বাইরের বড় ঘরটা অনিকের ক্লিনিক। বারান্দায় রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকেদের বসার জায়গা। ক্লিনিক থেকে ওরা বাড়ির ভেতরে এলো। একটা রুমে তনয়াকে নিয়ে গিয়ে পারুল সব দেখিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই ঘরে আপনি থাকতে পারবেন। পাশেরটায় পিসিমা আছেন। তিনি কার্ডিয়াক পেশেন্ট। এতক্ষনে উনি শুয়ে পড়েছেন। টাওয়েল, সাবান, ক্রীম ইত্যাদি দেখিয়ে বলল, ‘আপনি অনেক দূর থেকে এসেছেন, ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি একটু কফি করছি’।

অনিক ক্লিনিক বন্ধ করে এসেছে। তনয়া ফ্রেশ হয়ে হল ঘরে বসেছে। পারুল কফির ট্রে নামিয়ে বলল, ‘রাইস কুকারে ভাত চাপিয়ে দিলাম। ভাত হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে। দিনের মাছ, ডাল, আর তরকারি আছে। এগুলো একটু গরম করে নিতে হবে। এতেই হবে, না আর কিছু করব’?
‘না, না, ডাল ভাত হলেই চলবে। আর কিছুর দরকার নেই’। তনয়া আস্বস্থ করলো।
‘পারুল, এগুলো আমরা দেখে নেব। তোর আবার দেরী হয়ে যাবে। তোকে যেতে হবে তো’। অনিক একটু ব্যস্ত হয়।
‘ও কোথায় যাবে এত রাতে’? তনয়া প্রশ্ন করে।
‘ওর বাড়ি। বেশী দূরে নয় কাছেই’। অনিক বলে।
‘আমার মা আসবেন নিতে। আমরা এক সাথে যাব’। পারুলের কথা শেষ হয় নি কলিং বেল বাজল। ‘ঐ তো মা এসে গেছে’। পারুলের মা এলে আবার পরিচয় করানো হল সামান্য সৌজন্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। পারুলকে নিয়ে পারুলের মা চলে গেল।

অনিক আর তনয়া হলঘরে বসেছে। কফি আর বিস্কুট খেতে খেতে কথা হচ্ছিল। অনিক সবার খবর নিল। তনয়া অভিমান ভরা সুরে বলল, ‘আপনি সেই যে চলে এলেন, তারপর আমাদের ভুলেই গেলেন’।
‘কিচ্ছু ভুলিনি তনু, তবে এই দু’বছর আমার যা অবস্থা গেছে, কাউকে বোঝাতে পারব না। এসে দেখলাম, পিসিমা বিছানায় শয্যাশায়ী। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে ছ’মাস লাগলো। এখন হাঁটা চলা করতে পারেন, কাজ কর্ম কিছু করতে পারেন না। আমি আসার আগে ঐ পারুল থাকতো পিসিমার কাছে’।

তনয়া খুব ক্লান্ত ছিল। সেটা বুঝতে পেরে অনিক বলল, “চল, খেয়ে নিই। আজ তুমি বিশ্রাম নাও। কাল সকালে গল্প হবে’।

তনয়াকে শোবার ঘরে এগিয়ে দেবার আগে পিসিমা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘অনি কার সাথে কথা কইছিস? তোর খাওয়া হয়েছে’? অনি তনয়াকে সাথে নিয়ে গিয়ে পিসিমার সাথে পরিচয় করে দিল। তনয়ার নাম শুনে বলল, ‘তোমাদের কথা অনি খুব বলে। ভালোই হল, তোমার সাথে দেখা হল। ভালো করে খাওয়া দাওয়া করেছো তো মা? আমি এখন অথর্ব হয়ে গেছি। কিছু করতে পারি না’।
‘আপনি ওসব ভাববেন না। আমি খেয়ে নিয়েছি। আপনি শুয়ে পড়ুন। কাল সকালে কথা হবে’। তনয়া পিসিমাকে প্রণাম করল
‘সুখে থাক মা, সুখে থাক’। পিসিমা পাশ ফিরে শুলেন।

পরদিন রবিবার। অনিকের ক্লিনিক নেই। অনেক দেরীতে ঘুম ভাঙল সবার। পিসিমা সকালেই উঠেছেন। রান্নার মাসী এসেছে। অনিক বাজার থেকে শাক সব্জী পাঁঠার মাংস নিয়ে এলো। পিসিমা রান্নার মাসীকে বলছেন ‘একটু ভালমন্দ রান্না করে দিও বাছা। বাড়িতে কুটুম এসেছে’।

প্রতিদিনের মত ন’টায় পারুল এল। ক্লিনিক খোলার আগে ও পিসিমার পরিচর্যা করে। বিশেষ কিছু লাগবে কিনা দ্যাখে। কাজের মেয়েটা ঘর ঝাড়াপোছা করার পর ঘর দোর গুছিয়ে রাখে। বাসন পত্র ধোয়া হলে ঠিক জায়গা মত রেখে দ্যায়। দশটা বাজলে ও ক্লিনিক খুলে সেখানে অনিককে সাহায্য করে। রবিবার ক্লিনিক থাকে না কিন্তু অন্য কাজগুলো করে দ্যায়। যেগুলো অনিক করতে পারে না, সময়ও থাকে না। পারুল পিসিমার সাথেও একটু সময় কাটায়। অনিক ওদের সংসারের অনেকটাই এখন দেখছে। যদিও পারুলের মা অঙ্গনবাড়ির কাজ করে। তাতে তো আর সব হয় না। অনিককে নিয়ে পারুল ও পারুলের মা’ও হয়তো স্বপ্ন দ্যাখে।

দুপুরে খাবার খেয়ে পারুল বাড়ি গেল। অনিক আর তনয়া হল ঘরে বসেছে। এতবছর কোলকাতায় ছিল অনিক। তনয়াকে পড়াতে অনেক দিন ওরা শুধু দু’জনই থাকতো। কিন্তু কখনও এমন নিরালার কথা মনে আসেনি।। অথবা দুজনের কেউ সেইভাবে এমন নিরালা চায়নি। আজ যেন নতুন করে ভাবার সময় ও সুযোগ এসেছে।

অনিক বলল, ‘এবারে বল। বলা নেই কওয়া নেই, তুমি এতদূরে একা চলে এলে? তোমার বাড়ি থেকে কেউ কিছু বলল না?
‘বলেছে বৈকি। বাবা বলেছেন, কেন যাচ্ছিস? মা বলেছেন, যাস না। তবু আমি এসেছি। আমাকে কি তোমার বেহায়া মনে হচ্ছে’? তনয়ার স্বরে ক্ষোভ।
‘কি বলছো তনু? তোমার বাবার আশীর্বাদ এবং তোমাদের সবার ভালোবাসা না থাকলে আমি কোথায় থাকতাম, জানি না। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ’।
‘তা’হলে তুমি বাবাকে পরিষ্কার করে কিছু জানালে না কেন? তিনি তোমার কথার অপেক্ষায় রয়েছেন’।
‘কী জানাতাম, তনু? আমার যখন চার বছর বয়স তখন আমি বাবা-মা হারিয়েছি। অনাথ শিশুর মত মানুষ হয়েছি আমার নিঃস্ব অসহায় বিধবা পিসির কাছে। আমাদের ঘর নেই, দোর নেই। সেটা শুনলে কি তোমার বাবা খুশী হতেন’?
‘সেটা তিনি বুঝতেন’।
‘তারপর তোমরা ব্রাহ্মণ, আমরা কায়স্থ। এখনও আমাদের সমাজ ভালচোখে দ্যাখে না’।
‘আর আমি? বাবা-মা খুশী হোতেন কি না, সমাজ কী চোখে দেখত, তোমার ঐ কঠোর বাস্তবের অনাথ শৈশব, তোমার পিসিমার দীনতা, এত কথা ভাবতে পারলে, অথচ আমার কথা একবারও ভাবলে না। আমাকে বোঝার চেষ্টা করলে না। তুমি কত কঠোর, নিষ্ঠুর অনিকদা। কত কঠোর তোমার হৃদয়... বলতে বলতে তনুর গলা ধরে এসেছিল। চোখের কোণে জল চিক চিক করছিল। সেটা লুকোনর ব্যর্থ চেষ্টা করল তনয়া।
অনিক এমন একটা ভাবুক মুহূর্তের জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। সে এত বিহ্বল হয়ে পড়ল যে আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। ‘তনু বিশ্বাস কর, আমি ভাবতেই পারি নি যে আমাকে নিয়ে তুমি এত স্বপ্ন দেখেছ’।
‘সেটাই তো বলতে এলাম। নির্লজ্জের মত। তুমি মানুষ নও, তুমি পাথর। পাথরের মত শক্ত তোমার মন। কখনও কাউকে বোঝবার চেষ্টাই করনি’।
‘কিন্তু, তুমি......কখন...কী ভাবে...আমায় তো বল নি কিছু’।
‘আমি নিজেই জানি না, অনিকদা। তোমার মনে আছে? আমার হায়ার সেকেন্ডারী রেজাল্ট নিয়ে স্কুল থেকে বন্ধুদের চোখে ধুলো দিয়ে আমি সোজা তোমার কলেজে গেছিলাম দেখা করতে। প্রথম প্রণামটা আমি তোমাকেই করেছিলাম। সবার সামনে প্রণাম করছি বলে তুমি টেনে আমাকে আড়ালে নিয়ে গেছিলে। আমার সাফল্যে তোমার খুব আনন্দ হয়েছিল। আমাকে নিয়ে তুমি মিষ্টির দোকানে ঢুকেছিলে। বলেছিলে , ‘কী খাবে বল’?
‘আমার চোখ ভরে জল। তোমাকে আমি বোঝাতে পারিনি, বলতেও পারিনি মনের কথা। তুমি বোকার মত আমার দিকে চেয়ে থাকলে... বুঝেও না বোঝার ভাণ করলে। আমিও এক বুক দুঃখ নিয়ে ফিরে এসেছিলাম’।
‘হ্যাঁ, আমি বুঝেও না বোঝার ভাণ করেছিলাম। কারণ আমাকে তোমরা আশ্রয় দিয়েছিলে। সে সুযোগের অপব্যবহার করা আমার অনৈতিক মনে হয়েছে। তাই বুকে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলাম’। অনিক তনয়ার পাশে এসে নিজেকে মেলে ধরল। তনয়া ওর হাতটা বাড়িয়ে দিল অনিকের দিকে। অনিক টেনে নিল তনয়াকে নিজের কাছে।


অনিকের স্কুলের হেডমাস্টার, অজিত সেন চিঠি দিয়ে অনিককে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু বিশ্বনাথ মুখারজীর কাছে। জয়েন্ট এন্ট্র্যান্স দিয়ে মেডিক্যালএ চান্স পেয়েছে। একটু সাহায্যের হাত পেলে ছেলেটা মানুষ হয়ে যায়। অজিত ও বিশ্বনাথ একসাথে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। অজিত চলে গেল গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতে। বিশ্বনাথ থেকে গেল কোলকাতায়। স্কুলের শিক্ষক থেকে কলেজের অধ্যাপক এবং পড়ে অধ্যক্ষ হয়েছে। অনিক যখন বিশ্বনাথের বাড়িতে এসেছিল তনয়া তখন অষ্টম শ্রেণীতে। তাঁর ছোট ভাই তাপস সপ্তমে। বিশ্বনাথের কলেজে অধ্যাপনার সাথে গবেষণার কাজ থাকত। ছেলে মেয়ের পড়াশুনা দেখার সময় হত না। তাই অনিকের মত একজন মেধাবী ছাত্র পেয়ে বিশ্বনাথ খুশী হয়েছিলেন। বিশ্বনাথ অনিককে বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে অনিক তনয়া আর তাপসকে পড়াবে। স্কলারশিপ তো পেয়েই গেছিল ওর মেধার জোরে।

কঠোর বাস্তব ডিঙ্গিয়ে বাঁচতে হয়েছে বলে অনিক জানে কোমল স্বভাবের মূল্য। তাঁর পিসিমা শিখিয়েছে। কোন কিছু অবহেলা করেনি। তাঁর নিজের পড়াও চালিয়েছে, তাদেরকেও পড়িয়েছে। অনিক নিজের সামাজিক অবস্থান সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল। সে নিজেকে ঐ বাড়ির একজন সদস্য হিসাবে সবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল নিজের কোমল স্বভাব ও অসূয়াবিহীন ব্যবহারে। বিশ্বনাথ ও স্বর্ণলতা এই দীর্ঘ পাঁচ বছরে কোন অশালীন ব্যবহার, বা আচরন দেখেনি। তাপসের উচ্চমাধ্যমিক হয়ে গেলে অনিক চলে গেছিল হোষ্টেলে। এম ডি ও ইন্টার্নশিপ হোস্টেল থেকে করেছিল। অনিকের ইন্টার্নশিপ চলাকালে স্বর্ণলতা বিশ্বনাথকে তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিল, ‘অনিক ভালো ছেলে, ওর সাথে যদি তনুর বিয়ে হয়, তা’হলে কেমন হয়?’ বিশ্বনাথ কোন মন্তব্য করেনি কিন্তু কথাটা মনে ধরেছিল। অনিকের মত সচ্চরিত্র সুকোমল স্বভাবের পাত্র পাওয়া খুব সহজ নয়।
অনেক ভেবে শেষটায় অনিক যখন এমডি করে নিজের শহরে ফিরে যাচ্ছে তখন বিশ্বনাথ একদিন অনিকের কাছে তনয়ার সাথে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিল ভেবে দেখার জন্য।

অনিক বিনয়ের সাথে বলেছিল, ‘স্যর, আমি এখনও বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু সময় চাই। পিসিমার কাছে মানুষ হয়েছি। তাঁর অনুমতিও চাই’। বিশ্বনাথ বলেছিল, ‘বেশ তো, তোমার পিসিমার সাথে কথা বলেই জানাবে। তনু তো এখন এমএ পড়ছে’।

তনয়া তাঁর বাবা মায়ের এই দুর্বলতা জানতে পারলে একটু বেশী ভাবতে শুরু করেছিল অনিককে নিয়ে। যা হয়ে থাকে প্রেমের গন্ধ ছাড়াতে বসন্ত লাগে না। তনয়াও আশায় বুক বাঁধছিল হয়তো অনিকের উত্তর আসবে। তারপর দু’বছর কেটে গেছে।

অজিত কোলকাতায় এসে বিশ্বনাথের বাড়িতে উঠেছে। পুরনো বন্ধু, বহুদিন বাদে দেখা। অনেক গল্প। স্মৃতিচারন দিয়ে অতীতের আনন্দ উপভোগ করা। এরই মাঝে স্বর্ণলতা জিজ্ঞেস করে উঠল, ‘অজিতদা, আপনার ছাত্র অনিকের খবর কী?
‘তোমরা জান না? সে ঐ অঞ্চলে খুব নামী ডাক্তার। দূর দূর থেকে রোগী আসে। গরীবদের বিনা মুল্যে চিকিৎসা করে। খুব সুনাম অর্জন করেছে। নার্সিং হোম খোলার চেষ্টা করছে। এখন ওর বাড়িতেই ক্লিনিক। ‘অভয়া ক্লিনিক’। অভয়া ওর পিসি, ওর মা’।
এসব শুনে তনয়া অনিকের কাছে এসেছে। পিসিমার সাথে তনয়ার আলাপ হয়েছে। পিসিমার তনয়াকে ভালো লেগেছে। পরদিন ক্যাব নিয়ে সকালেই অনিক তনয়াকে ট্রেনে তুলে দিতে গেছিল। ট্রেনে ওঠার আগে তনয়ার হাত ধরে অনিক বলেছিল, ‘তনু, স্যরকে বোল তিনি পিসিমার সাথে কথা বলতে পারেন’।

দুটি কোমল হৃদয় মিলনের আভাসে রাঙা হয়ে উঠেছিল সেদিন বিদায়ের বেলায় রেলওয়ে স্টেশনে।



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজল গল্পটির বর্ণনা সাবলিল এবং গোছালো। ভোট রইল। আমার কবিতাটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
মোহন মিত্র গল্পের শেষ পর্যায়ে দেখুন। অজিত কোলকাতায় বিশ্বনাথের বাড়িতে উঠলে কী ঘটল? যুক্তিটা গ্রহনযোগ্য কি না জানাবেন। ধন্যবাদ গল্পের খুঁটিনাটি লক্ষ্য করার জন্য।
আমার চোখে তো অগ্রহণযোগ্য কিছু পড়েনি...
তনয়া কি করে জানলো অনিক এখনও একা, এই প্রশ্ন করেছেন সাদিক ভাই। তাঁকে দেখতে বলেছি...।
সালসাবিলা নকি ভালো লেগেছে। বর্ণনাভঙ্গী এবং কাহিনী বেশ ভালো লেগেছে। আমার গল্প কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
সাদিক ইসলাম বর্ণনা অনেক সাবলীল। তাই পড়ায় আকর্ষণ লেগেছিলো। সুন্দর কাহিনী। কিন্তু তনয়া এতদিন যোগাযোগ নেই কিভাবে জানলো অনিক এখনো একা। তনয়ার অপেক্ষার প্রহর বড় বেশি ছিলো; তা না হলে তো গল্প হয়না। তৃপ্তিময় পাঠ। লেখককে ধন্যবাদ আর ভোট রইলো। গল্পে আমন্ত্রণ।
সাদিক ভাই, সব কথা কি লেখকই বলে দিবে? কিশোর উপন্যাসে কিশোরদের বোঝার জন্য খুঁটিনাটি সব ভেঙে ভেঙে লিখতে হয়। অজিত যেহেতু কলকাতায় তনয়াদের বাড়িতেই উঠেছিল তার কাছ থেকেই তনয়া জানতে পারে অনিক এখনো বিয়ে করেনি। এটা তো সহজেই বোঝা যায়
ঠিক আছে এ ব্যাপারে একটু উল্লেখ থাকলে যুতসই হতো।
ইমরানুল হক বেলাল একটা ভিন্ন স্বাদের গল্প। প্রথমে বিরহ, অবশেষে মিল বন্ধন। সব মিলিয়ে সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। দাদার লেখার হাত যে অনেক শক্তিশালী এতে বিন্দু মাত্র ও ভুল নেই। গল্পে ভোট এবং মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ভাললাগার মতো একটি গল্প। ভোট ও শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
মনজুরুল ইসলাম kritoggotabodh abong sommoner opurbo melbondhon dr. aniker charittrotite phute utheche. tonoa abong oniker shes drissopotti onek sundor.vote o shuvo kamona. amar patai amontron.
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া আপনার রমণীর রমণীয়তা গল্পটির চেয়ে এবারের গল্পটি আরো পরিণত। আশা করি এবারের গল্পটি সেরাদের তালিকায় স্থান পাবে। ভালো লেগেছে। পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা রইল। আসবেন আমার কবিতার পাতায়। মন্তব্য জানিয়ে গেলে অনুপ্রাণিত হবো।
ধন্যবাদ রশীদ ভাই। আপনার নামে আমার দাদার এক বন্ধু ছিলেন। আমাদের বাড়িতে এসে তিনি প্রায়ই থাকতেন। আমি তাঁর খুব প্রিয় ছিলাম। আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করেছে। একটা দিশা পাচ্ছি। ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ দাদা। আপনি সত্যিই ভালো লিখেন। আপনার এ পর্বের গল্পটি নিয়ে আমি আশাবাদী। একবার আসবেন আমার কবিতার পাতায়। মন্তব্য জানালে আমিও যে গুরুজনদের আশীর্বাদ পাই।
Amir Islam দারুন গল্প। ভাল লাগছে।
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
আনোয়ার উদ্দিন বাহ্ চমৎকার একটা গল্প। খুব ভাল লিখছেন আপনি ভাই। ভোট রইল। আসবেন আমার কবিতায়।
আপনাদের ভালো লাগার কথা শুনলে লিখতে ইচ্ছে করে। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

২৪ জানুয়ারী - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪