ভুল বোঝাবুঝি

দাম্ভিক (জুলাই ২০১৮)

মোঃ মইদুল ইসলাম
  • ১৪৬
লোকটাকে প্রায় দিন দেখি ইফতারের কিছুক্ষণ আগে বাজারের দিকে চলে যায়। সাধারণত অন্যান্য লোকেরা এসময় বিভিন্ন ব্যস্ততা সেরে বা তাদের কেনা-কাটা সেরে বরং বাজার থেকে বাড়ির দিকে যায়। কিন্তু এই লোকটাকে দেখি মুখে একটা কাঁচা দাঁতন গুঁজে বাজারের দিকে যায়। লোকটা আমাদের পাড়ার নয় বলে তাকে আমি চিনি না। বাড়ির সামনে দিয়ে ক’দিন থেকে রোজই তাকে বিকালের দিকে যেতে দেখছি । মুখে তার চারকে দাড়িও আছে-আন সাইজ। জামা-কাপড় গুলা ভীষণ ময়লা। কিন্তু ঘাড়ের গামছাটা নতুন।‘সবুজ সাথী’র সেই ঢনমনে একটা সাইকেলে চেপে সে ছুটান দেয়। পেছনের বস্তায় কী যে ভরা আছে বলতে পারব না। একেক দিন ঘাস আছে বলে মনে হয় আবার কোনো কোনো দিন অন্য কিছুও আছে বলে মনে হয়। এই বেচারা যে সত্যি কোনো হত-দরিদ্র লোক তাতে সন্দেহ করার কিছু নেই। হতে পারে সারাদিন কোথায় মজুরী খেটে দিনের শেষে সে এই পথে এ ভাবেই সে বাড়ি ফিরে। আর পড়ন্ত বেলার রোদের জাফরানী রং তার মুখে পড়ায় তার ক্ষুধার্থ চেহারায় এক অন্য রকম আবেগ ও অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে।
আজ বিকালের কথা বলি- আজ আমি যখন কাঁটাখালীর হাট থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তখন লোকটাকে দেখলাম আমাদের মালোপাড়ার মোড়ে। একটা ঝাকসু চুল ওয়ালা চাই মন্ডলের সাথে বিড়ি টানছিল। আর ফক্ ফক্ করে হাসছিল। কি যে গল্প করছিল কে জানে। আমার মেজাজ খাটা হয়ে গেল। সর্বনাশ করেছে এই লোকটাই তো রোজ বিকালে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ইফতারের একটু আগে চলে যায়। মুখে থাকে তার কাঁচা দাঁতন। দেখে মনে হয় বেচারার ইফতারের ব্যস্ততা আছে।
আমি একটু তাড়াতাড়ি করে কাঁটাখালীর হাট থেকে চলে এলাম। আমি খুব আশ্চর্য হলাম কেননা লোকটাকে আজও আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বাজারের দিকে যেতে দেখলাম। আজও ছিল তার সেই ব্যস্ততা , মুখে সেই কাঁচা দাঁতন।
আজকে আবার আমার বাজারের মসজিদে বিশেষ দাওয়াত থাকায় আমি বাজারের মসজিদেই ইফতারের জন্য গেলাম। গিয়ে দেখছি সেই লোকটিকে- দেখছি সে ইফতার সামগ্রী নিয়ে সবার সামনে ঠিক মত পৌঁছে দিচ্ছে। সরবৎ , খেজুর, ভেজা বাদাম , ছোলা সব কিছুই। ভাগ্য গুনে লোকটি ইফতারের থালা নিয়ে একদম আমার পাশেই বসল। ইফতারের আর মাত্র দু’মিনিটও নাই। লোকটি এই শেষ মুহূর্তেও একজনের সামনে শরবতের গ্লাস নেই বলে চট করে উঠে গিয়ে তাকে শরবৎ দিয়ে এল । আমি যে লোকটির সাথে দুটো কথা বলব সে সুযোগই পাচ্ছি না। সে এতটাই ব্যস্ত। তারপর ইফতারের সময় হয়ে যাওয়ায় ইমাম সাহেব দোয়া বলে ইফতার করতে বললেন। এবার লোকটি আমার পাশেই বসে তার থাল থেকে একটি খেজুর তুলে নিল। আমি তখন তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে চুপিসারে বললাম –“কি ব্যাপার ? আপনি তো বেশ মজা শুরু করেছেন? রোজা না থেকে এই ভাবে রোজ রোজ ইফতার করে চলেছেন। মুসলমানদের খাবার সাবাড় করে দিচ্ছেন। খাবার শুরু করার আগে মুসলমানরা শয়তান তাড়াবার দোয়া পড়ে –কিন্তু আপনি এমন এক শয়তান যে, আপনাকে তাড়াবার দোয়া তাদের জানা নেই? আপনি রোজ আসছেন আর ভাগ বসিয়ে দিচ্ছেন। আপনি এতটা নির্লজ্জ? আপনাকে আমি আজ বিকালে দেখলাম না মালোপাড়ার মোড়ে বিড়ি টানতে?”
লোকটি আমার কথা শোনার পর কোনো কথা না বলে ওখান থেকে সোজা উঠে চলে গেল। আমি ভাবলাম বেচারা ধরা পড়ার ভয়ে পালাল বোধ হয়। কিন্তু মসজিদের অনেক মুসল্লি বলে উঠল কি ব্যাপার আদলু ভাই আপনি উঠে পড়লেন কেন? আপনি যাচ্ছেন কোথায়? তাদের এই কথায় ছিল ভরপুর আন্তরিকতার টান। ইমাম সাহেব একটি ছেলেকে বললেনও-“দেখ তো বাবা আদলু কোথায় গেল? আজও আবার সেদিনকার মত কোনো সমস্যা হল নাকি?”
ইফতার রীতিমত শুরু হয়ে গেছে। সবাই তা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইমাম সাহেব জানালা দিয়ে ঘাড় বাড়িয়ে দেখলেন যে আদলু মসজিদের অজুখানায় ট্যাপের পানি খেয়ে চুপচাপ বসে আছেন। মন তার ভীষণ বিষন্ন।
আমি ইমাম সাহেবকে বললাম –“আরে ভাই ও লোকটি ভন্ড- তাকে আমি আজ মালোপাড়ার মোড়ে বিড়িটানতে দেখেছি। ও বাহানা করে রোজ ইফতার করতে আসে। রোজাই করে না! ধরা পড়ার ভয়ে হয়ত পালাল!”
-‘চুপ করেন ভাই , আস্তে- আর বলেন না।আমি বুঝতে পেরেছি।দেখুন ওর মত ভালো রোজাদার আমার চোখে খুব কম পড়েছে। যাকে আপনি বিড়ি টানতে দেখেছেন তাকে আমরাও বিড়ি কেন আরো বহু কিছু টানতেই দেখেছি। আসলে সেই লোক আর এই লোক এক লোক নয়। এরা আসলে যমজ ভাই।অনেকেই বেচারাকে এই ভাবে প্রায় ভুল বুঝে ফেলে। তখন কি আর করবে- বেচারা কথা বলতে পারে না- বোবা, কালা।
ইমাম সাহেবের কাছে এই কথা শুনে মনটা আমার ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের কারো বুঝতে বাকি থাকল না যে, আমার কথার কারণে বেচারা লজ্জায় পড়ে আপাতত মসজিদের বাইরে চলে গেছে।লোকেরা তখন আমার দিকেই পিট পিট করে তাকাল। কেউ কেউ বাজে মন্তব্যও করল। হতে পারে লোকটি তার ভাই এর দোষ উৎঘাটন না করার অভিপ্রায় নিয়ে এমনটা করে থাকবে- অর্থাৎ আমার কথার কোনো প্রতিবাদ না করে চুপচাপ বাইরে চলে যাওয়া। আমাকে খুব খারাপ লাগতে লাগল-আমি এতটাই অধম যে, এই দুই যমজ ভাইকে আলাদা করে চিনতেই পারি নি।ফলে তাকে এমন কথায় বললাম যে, সে তার ইঙ্গিত- ইশারা বুঝতে পেরে ওখান থেকে উঠে যেতে বাধ্য হল! আমার কথার দোষেই এটা হল। যদিও এটা আমি বুঝে সুঝে করিনি- তবুও নিজে নিজে খুব লজ্জা পেতে লাগলাম। একজন গরীব ক্ষুধার্ত অসহায় বোবা মানুষ আজ আমার জন্য ঠিক এমন সময় উঠে যেতে বাধ্য হল যখন ইফতারের সময় বাকি আর মাত্র বিশ সেকেন্ড। অথচ সেই বেচারাই আমার সহ আরো সবার জন্য ঘন্টা খানেক আগে থেকে শরবৎ , পেয়ারা , শশা , ভেজা বাদাম , মুড়ি , ছোলা ইত্যাদি সবার সামনে সামনে বেশ সুচারু ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ লোকটির জন্য মায়া হচ্ছে।সুন্দর গল্প।ভোট রইল।
মোঃ মোখলেছুর রহমান হাঁ এ রকম ভুল বোঝাবুঝি ঘটতেই পারে,অনেক ক্ষেত্রে বিড়ম্বনাও কম হয়না।ভোট ও শুভকামনা রইল সাথে পাতায় আমন্ত্রন।
নুরুন নাহার লিলিয়ান ভাল লিখেছেন । শুভ কামনা রইল । আমার গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একজন মানুষ হতেই পারে গরিব-অসহায়। সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই তাদেরকে সে ভাবে আমরা বোঝার চেষ্টা করিনা। তাদেরকে খুব সহজেই যেমন ভুল বুঝে থাকি-তেমনি তাদেরকে আমরা অযথায় অবমূল্যায়ণ করে থাকি। আমি মনে করি এটা এক প্রকারে দাম্ভিকতা। হতে পারে সেটা সে দম্ভকারীর নিজেরও অনুধাবনে আসেনা। এই গল্পে আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি কাউকে সন্দেহ করার আগে হাজার বার ভাবা দরকার। অযথায় খুব বেশি সন্দেহ করাও এক প্রকারে দাম্ভিকতার পরিচায়ক।

০৯ জানুয়ারী - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫