এত শীতেও মেয়েটা একটা নতুন সোয়েটার কেনেনি। তার স্বামী বেল্লাল বলেছে যে, কেরালা থেকে তাকে ভালো সোয়েটার এনে দিবে। বেল্লালের কেরালায় যাওয়া দু’মাস হয়ে গেল। ওখানে আর বেশিদিন নাকি থাকবে না- ক’দিন আগে ফোনে বলেছে। সখিনার কোলে চার মাসের কচি শিশু। বেল্লাল তার স্ত্রীর কোলে দু’মাসের কচি বাচ্চা রেখেই অভাবের তাড়নায় পড়ে বাড়ি ছাড়ে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস বেল্লাল কেরালার যে এলাকায় কাজ করে সেখানে এবার শীতে ঠান্ডা এতটাই বেশি পড়ছে যে ঠিক মত কাজ পাওয়া বা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কোনো কোনো দিন নাকি তুষারপাতের চোটে পথে-ঘাটে বেরোনোই যায় না। তাই গত সপ্তাহে বেল্লাল বলেছে আর পনের দিন পরই সে বাড়ি চলে আসবে। বাড়িতে এসেই বরং পাশের গ্রামের মদনের ইঁটভাটাতে কাজ করবে-তাও দিন দু’শ টাকা পাবে। যখন অল্প দিন পরে বেল্লাল চলেই আসতে চেয়েছে তাই সখিনা আর নিজে থেকে নিজের জন্য শীতের পোসাক কিছু কেনেনি। একেবারে অজ-পাড়া গাঁয়ে বাস করলেও কি জানি এই সখিনা মেয়েটির পর্দানশীনতার তুলনা মেলা ভার। শুধু পর্দায় নয় তার সুমধুর-অমায়িক ব্যবহারে প্রতিবেশী তথা পাড়া শুদ্ধ লোকেরা মুগ্ধ। তার গরীবী হালের সংসার। তাই সারাটা দিন এটা সেটা নানান রকমের কাজ-কর্ম করতে হয়। তার পরেও সে প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় তার বাড়িতে কুরআন শেখার আসর বসায়। এই করে করে পাড়ার বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা তার কাছ থেকে কুরআন শিখেছে। এই কাজ তার মত একজন দুগ্ধপৌষ্য নবজাতকের মা হয়ে করে যাওয়া যে কত কঠিন , কত কষ্টের ও ঈমানদারিত্বের পরিচয় তা আমার মনে হয় সেই সব মায়েরা জানবেন যারা ছোট্ট নবজাতককে কোলে পিঠে নিয়ে নানান ঝামেলার মধ্যেও মানুষ করে চলেছেন-খাস করে যাদের বয়স ছ’মাসের কম। এই বয়সের শিশুরা তো দিনে রাতে মিলে প্রায় ৫০ বার পেশাব পায়খানা করে থাকে। এত বারের পেশাব পায়খানা পরিষ্কার করা ও তা থেকে নিজেকে পাক সাফ রেখে ঠিক ঠিক সময়ে নামায-রোজা আদায় করা , কুরআন তেলাওয়াত করা আমি মনে করি অনেক বড় মাপের পরহেজগারীতার পরিচয়- যা রয়েছে এই সখিনার। এ বছর ঠান্ডা শুরু থেকে কম কমই ছিল। কিন্তু গত দু’দিন থেকে হঠাৎ করেই ঠান্ডা নেমে আসে একেবারে দশ ডিগ্রীতে। যা সাধারণত আমাদের এই এলাকায় সচারাচর দেখা যায় না। সখিনার কাছে তার মুরগী বেচা যা দু’পাঁচশ’ টাকা ছিল তাই দিয়ে সে তার চার মাসে ছোট্ট বাচ্চা মাহফুজের জন্য ভালো ভালো দু জোড়া সোয়েটার কিনেছে-ঐতেই তার সে টাকা শেষ। তাই নিজের জন্য আর কিনতে পারেনি। তবুও এতেই যে সে শান্তি পেয়েছে-একেই বলে মা। কেননা পৃথিবীর সমস্ত মায়েদেরই যাবতীয় সুখ-শান্তি লুকিয়ে থাকে তার সন্তানের মুখের এক ফোঁটা হাসিতে। যাই হোক এ ক’দিন সখিনা তার বাড়ির পেছনে তাল তলার গোড়ায় কুয়াশায় আর এই কনকনে শীতে আগুন জ্বেলে জ্বেলে আগুন পোহায়। এই জন্য সে আগের দিন বিকালেই বাগানের আম পাতা ও সেগুন পাতা কুড়িয়ে রাখে। আজকে আবার অন্য দিনের থেকে যেমনি কুয়াশা তেমনি একটু একটু পশ্চিম দিক থেকে হাওয়াও বয়ছে। এতে করে তার ঠান্ডার কষ্ট যেন আরো বেড়ে গেছে। আজকের ঘন কুয়াশায় দশ হাত দূরেরও কিছু জিনিস দেখা যাচ্ছে না। তাই আজও সখিনা তার বাড়ির পেছনে সেই তাল তলাতে আগুন জ্বেলেছে। সময়ের অভাবে গতকাল বিকালে গাছ-গাছালির শুকনো পাতা গুছিয়ে রাখা হয় নি। তাই সখিনা তার বাড়ির পেছনে থাকা তাদেরই রাই এর কাটির পালা থেকে কিছু রাই এর কাটি এনে ধরিয়ে দিল। এটা একটা এমন জিনিস যে, ঠিক মত পুড়তে চায় না- শুধু ধোঁয়া হয়। আবার যখন ধরে তখন এক দন্ডের মধ্যে একেবারে ভ’ভ’ করে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। সখিনার ফুয়ে ফুয়ে আগুন কিছুটা দমকে উঠলেও জ্বলে উঠল না। শুধু ধোঁয়া হচ্ছে। চোখে ধোঁয়া লাগায় সে বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। দাঁড়িয়ে আছে সখিনা আগুনের দিকে পাছা করে। মিনিট দুয়েক পরই সেই দমকানো আগুন একেবারে এক মানুষ উঁচু হয়ে একেবারে ভড়কে জ্বলে উঠল। সাথে সাথে সখিনার পরনের নাইটিতে পেছন থেকে ধরে গেল আগুন-এমনকি সে আগুন মুহূর্তের মধ্যেই তার সারা শরীরের চারিদিকে জ্বলে উঠল। বেচারা এইভাবে আগুনে পুড়ে যেতে যেতেই বাড়ির দিকে দৌড় দেয়-চেল্লাতে পারেনি লজ্জায়। কেননা এ যাবৎ তার গলার স্বর বাড়ির আশ পাশের লোকের কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি। নিশ্চয় সে জানত নারীর পর্দা শুধু পোষাকে নয় গলার স্বরেও আছে। তার এই ভাবে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে দৌড় দেওয়ার কারণ হল আগুনে তার সমস্ত পোষাক পুড়ে উলঙ্গ হয়ে পড়া। এ অবস্থায় তাকে যেন কেউ দেখে না ফেলে! যাই হোক এই ভাবে দৌড়ে যাওয়া আর এমনিতেই আজকে একটু বাতাস বয়ছিল , ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই সে পুড়ে শেষ হয়ে গেল! বাড়ির মধ্যে এসে বেচারা ডালিম গাছটার কাছে টিউবয়েলের গোড়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। সাথে সাথেই মারা যায় সখিনা। বলতে পারব না সে এই ভাবে মারা যাওয়ার পরেও টিউবয়েলের গোড়ায় কতক্ষণ পড়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর যখন তার চার মাসের শিশু ঘুম থেকে উঠে পড়ে কাঁদতে শুরু করে ,সে অনর্গল কেঁদেই যায় – তখন পাশের বাড়ির পাইসন বুড়ি মনে মনে বলে-‘এ্যাহারে বাড়ি কি হল –তখন থাক্যা ছুড়াডা কাঁদছে তো কেহু লেওয়ার নাই নাকি ?-বাড়িতে কি সখিনি নাই?’ । পাইসন মনে মনে এই কথা বলতে বলতে যেই সখিনার বাড়িতে ঢুকেছে আর অমনি দেখতে পেল সখিনার সেই বিভৎ্স পোড়া রুপ! তখনও তার মাথার কাছ থেকে ধোঁয়া উঠছিল। পাইসন বাচ্চাটাকে কোলে তুলতেই সে কান্না থামিয়ে দিয়েছে। এমন সময় ঐখানেই থাকা সখিনার মোবাইল বেজে উঠেছে। পাইসন মোবাইলটি তুলে কানে ধরল। ওপার থেকে সে যা শুনল তা হল-“আসসালামু আলাইকুম , সখিনা আমি এখন কলকাতায় আছি। ইনশায়াল্লাহ আজকে সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছে যাব। তোমার জন্য একটা হেবি দেখে সোয়েটার কিনেছি।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
চমৎকার একটি গল্প; তবে শেষের দিকে পাঠকের এক ধরনের উপলব্ধি থাকবে, সর্বশেষে তাকে ফোন করলো কে? গল্পতে তো একবারও বলেননি যে, কেউ কলকাতা থাকে। কিন্তু পুরো গল্প বেশ ভালো লেগেছে। কিছু বানান ভুল আছে, আশা করি দেখে নিবেন। আর সবার গল্প কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল, শুভকামনা
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া
এইতো জীবন যা আমার দাদী, নানী, মা যাপন করে গেছেন। শালীনতার মধ্যে যে মাধুর্য রয়েছে তা কেবলি স্বর্গীয়। তবে জীবন বাঁচাতে সব কিছু করাই জায়েজ। এক্ষেত্রে জীবন বাঁচাতে আত্ম চিৎকার দিলে কোন গুনাহ হতো না। ধর্মীয় অনুশাসনগুলো সতর্কতার সাথে পালন করলে জীবন বেঁচে যায়-হয়তো ইহকালে নতুবা পরকালে। ভালো লাগল। আসবেন আমার গল্পের পাতায়।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।