সেদিনের স্বপ্নপিপাসু ছেলে

লাজ (জুন ২০১৮)

ajoy das
  • ১৫
জীবনের পথ কোন এক রকম হয়ে চলছে। ঔযে তখনকার পুরােনাে মডেলের বেবি টেক্সির মত। সবে মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।কী করবে কী করবে ভেবেও কিছু করতে পারলনা। পারলনা স্নাতক/ডিগ্রি তে ভর্তি হতে। তাই এক বছর নিজেকে নিজের মত করে ভাবল।একটা বছর এদিক ওদিক করতে করতে কেটে গেল। কিন্তু কে সে যার সম্পর্কে লিখতে লাগলাম সে আর কেউ নয় আমাদের গল্পের নায়ক নাম রাজু।
রাজুর মাথায় এবার পরিকল্পনা আসল একটা বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করবে। তাই বাবার সাথে কথা বলে একটি প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হল।তাও ক্লাস শুরুর কয়েকদিন আগে। পরদিন প্রথম ক্লাস তাই রাজু একটু চিন্তিত।সকাল ৮.৩০ তাড়াহুড়া হয়ে ঘুম থেকে উঠল আর নিজের স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে নতুন ক্লাস করার উদ্দ্যেশে বাসা হতে বেরিয়ে পড়ল। কলেজের গেইটের সামনে আসতে আসতে নিজেকে প্রস্তুত করে ক্লাসে প্রবেশ করল।মাত্র । কয়েকজন ক্লাসে বসে আছে তার মধ্যে মাত্র একটা মেয়ে।রাজু অত কিছু চিন্তা না করে ক্লাসের কোণায় পড়ে থাকা বেঞ্চে বসল। ক্লাসে যে যার মত বসে আছে তার মধ্যে রাজু অন্যান্য ছেলেদের সাথে পরিচিত হতে লাগল। হঠাৎ আমাদের গল্পের নায়িকার প্রবেশ ঘঠল।রাজু দেখেও অত কিছু না ভেবে বাকিদের সাথে কথা বলতে লাগল। প্রথমদিনের ক্লাস বলে কথা তাই শিক্ষক ও নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিতিতে কেটে গেল। পরদিনের ক্লাসেও কোনাে মেয়ের সাথে কোনাে ছেলের কথা হলনা। ক্লাসের তৃতীয় দিন মেয়েদের মধ্যে একজন ছেলেদের সাথে কথা বলে পরিচয় হয়ে উঠল আর এভাবে রাজুদের ক্লাস ছাত্র-ছাত্রীতে পরিপূর্ণ।সারাদিন ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে সবাই সােসাল নেটওয়ার্কে আড্ডা দেওয়া পরদিন কলেজ যাওয়া এভাবেই কাটছিল রাজুর নতুন কলেজ জীবন।কিন্তু আমাদের গল্পের রাজুর তাে একটা মন আছে সেই মনটাতে আস্তে আস্তে একজনের জন্য অনুভব শুরু হল। সে আর কেউ নয় আমাদের গল্পের নায়িকা জয়া জিয়া স্বভাবতই খুব ছােট ছােট করে কথা বলে। আর সে কণ্ঠস্বর আমাদের রাজুর খুব ভাল লাগে। আর এভাবেই রাজুর মনের মধ্যে আমাদের জয়ার জন্য ভালাে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল কিন্তু সে কথা আর কে জয়াকে বলবে। তাই রাজু নিজের কথা নিজের মনের মধ্যেই রাখে। প্রতিদিনের মত আজও সবাই একসাথে টিফিন ব্রেকে ক্যানটিনে গেল টিফিন করতে। আজ রাজুর মন খারাপ সে কেমন জানি চুপচাপ। এই চুপচাপটা জয়া বুঝতে পারে। তাই জয়া রাজুর পাশে গিয়ে বসল রাজুর কাধে হাত রেখে বলল কিরে কি হল তুই চুপচাপ কেননা কোনাে সমস্যা। কিন্তু রাজু বলেনা, চুপচাপ থাকে। এটাই রাজুর স্বভাব। যখন মন খারাপ থাকে তখন সে নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে রাখে।অনেক অনুরাধের পর রাজু অবশেষে জয়াকে বলল তার ফ্যামিলি সমস্যার কথা। জয়া খুব জ্ঞানী খুব বুঝুক প্রকৃতির মেয়ে তাই রাজুকে অনেক বুঝাল আর রাজুর মুখে হাসি ফুঠাল।এভাবে ভালই কাটছিল তাদের কলেজ জীবন। আর এভাবে প্রথম সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। পনের দিনের জন্য কলেজ বন্ধ হয়ে গেল।কিন্তু যেদিন শেষ পরীক্ষা ছিল সেদিন জয়া বাসায় যাওয়ার সময় রাজুকে রাস্তাই তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখে। যাদের মধ্যে অনেকে ধূমপান করত।জয়া রাত দশটাই রাজুকে মেসেজ দেই ফেইসবুকে। তখন জয়া মেসেজে রাজুকে একটা সত্যি কথা বলতে বলে

জয়া : রাজু আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?
রাজু : কী কথা। হুমম বলব।
জয়া : পরীক্ষা শেষে বাসায় না গিয়ে রাস্তাই কি করছিস?
রাজু : এমনে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
জয়া : আচ্ছা তুই ধূমপান করিস না তাে?সত্যি করে বল।
রাজু : আরে না না। আচ্ছা খেলে কি সমস্যা হবে?
জয়া : রেগে বলল হুমম। কখনাে এইসব খাবি না।আমার এইসব ভালাে লাগেনা। তাই কখনাে খাবিনা।
রাজু : আরে বাবা ঠিক আছে ঠিক আছে । তােকে কথা দিচ্ছি কখনাে এইসব খাবনা। প্রতিজ্ঞা করলাম।

এইভাবে রাজু বুঝতে পারল জয়া হয়ত আমাকে তার বেস্টফ্রেন্ড ভাবে। রাজু আজ অনেক খুশি। কারণ তার চাওয়াটা জয়া নিজেই বুঝতে পেরেছে।


[২]
আজ রাজুদের রেজাল্ট দিবে।রাজুর কোনাে চিন্তা নেই। রাজু পরে পরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ জয়ার ফোন। রাজু ঘুমের চোখে ফোন রিসিভ করল। জয়া বলে উঠল রাজু কনগ্রেচুলেশন।তুই তৃতীয় হয়েছিস রাজু খুব একটা খুশি হলনা।রাজু বলল জয়া তুই কত হয়েছিস?জয়া যেই বলে উঠল ২য় হয়েছি তখনি রাজু হুররে বলে লাফাই উঠল।জয়া বলল কিরে রাজু এমন করলি কেনাে? রাজু বলল তুই আমার থেকে ভাল করেছিস তাই।জয়া বলল এ কেমন ছেলে নিজের রেজাল্টের জন্য খুশি না হয়ে অন্যের রেজাল্টের জন্য খুশি।রাজু হাহাহাহাহা করে উড়াই দিল।জয়া বলল কালকে কলেজ আসবি। কাল কলেজ যাব। আবার আরেকটি সেমিষ্টার শুরু হল।কিন্তু এখন আর আগের মত সবাই কলেজে আসেনা ।কয়েকজন মাত্র আসে। রাজু এইবার ভাবল যে জয়া কে তার মনের কথা বলবে। তাই একদিন রাজু জয়াকে বলল যে জয়া আমি তােকে একটা কথা বলতে চাই রাখবি? জয়া বলল বল কি বলবি। রাজু বলল জয়া না মানে ইয়ে আমি তােকে বেস্টফ্রেন্ড ভাবি।আমি চাই আমাদের বন্ধুত্বটা কখনাে না হারাই।আমি চাই তুই আমাকে কেয়ার কর,আমার জন্য তুই চিন্তা কর ।আমাকে শাসন করবি আর অনেক ভালবাসবি একজন তাের জীবনের বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে। আর তখনিই জয়া চুপ কর বলে উঠল।রাজু হা করে আছে। তখনিই জয়া কোনাে কথা না বলে চলে গেল। রাজু কলেজ থেকে যেতে যেতে চিন্তা করল কোন ভুল করলাম না তাে বাসায় গিয়ে জয়াকে ফোন দিলেও জয়া কোনাে সাড়া দেই না। রাজু অনেক মেসেজ দেই কিন্তু জয়ার কোনাে উত্তর পাইনা।পরদিন রাজু কলেজে গিয়ে দেখে জয়া আসেনি।রাত ৮ টা। জয়ার ফোন। রাজু রিসিভ করতে না করতেই জয়া বলে কোনাে প্রশ্ন করবিনা যা বলছি মনােযােগ দিয়ে শােন। জয়া বলতে লাগল---
আমি যখন ৩য় শ্রেণীতে পড়ি তখন স্কুল বন্ধে মামার বাড়ি যেতাম।কিন্তু সারাদিন বাসায় চুপচাপ বসে থাকতাম কারণ আমার বয়সী কেউ নেই বাসায় তাই।একদিন হঠাৎ মামির সাথে পাশের বাসায় গেলাম। গিয়েই দেখি তাদের বাসায় একটি ছেলে আছে আমার থেকে এক বছরের বড়। তার মা বলে মামুণি (সবাই আদর করে ডাকে) তুমি সারাদিন একা বাসায় বসে না থেকে আমার ছেলের সাথে খেলতে পার ।তখন থেকে যখন আমরা মামার বাসায় যেতাম তখনিই তার সাথে আড্ডা দিতাম। যখন বুঝতে শিখলাম তখন আমাদের পরিচয়ের নাম দিলাম বেস্টফ্রেন্ড।তখন থেকে আমরা একে অপরের বেস্টফ্রেন্ড।আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে তখন সে আমাই প্রপােজ করে আমি না বুঝে হেসে উড়াই দিতাম।পরে যখন বুঝতে পারলাম তখন আমি তাকে বলি দেখ অভি আমরা । বেস্টফ্রেন্ড আমি এই সম্পর্ককে কখনাে হারাতে চাইনা তাই তাের প্রপােজ আমি গ্রহণ করতে পারবনা।এই কথা শুনে অভি আমার সাথে কথা বলাটা আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলে। কয়েক মাস আর ওর সাথে আমার যােগাযােগ হয়না। হঠাৎ অভির বড় বােন আমায় ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে। আমি দেখা করতে যাই। তখন অভির বােন বলল অভির কথা।অভি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে।ধূমপান করা শুরু করেছে ।এইসব শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। বাসায় গিয়ে ভাবতেই ছিলাম ।তারপর একদিন অভির সাথে দেখা করলাম সেদিন অভির কথা গুলাে শুনেই মনে হয়েছিল সে মন থেকে বলছে এইসব।সে চায়না আমার আর ওর আর কোনাে যােগাযােগ থাকুক।সেদিন থেকে আমাদের আর যােগাযােগ হয়নি।কিন্তু আমি আজো তাকে বেস্টফ্রেন্ড ভাবি আর সারাজীবন ভেবেই যাব।এইসব বলে জয়া ফোন কেটে দেয়।রাজুকে কিছু বলতেই দেয়না।

[৩]
পরদিন ক্লাসে আসার পর রাজু অনেক আকুতি মিনুতি করে তাদের মধ্যে বেস্টফ্রেন্ড থাকার জন্য। কিন্তু জয়ার মুখে থেকে যায়। এভাবে নিজের চাওয়াটাকে পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে রাজু। কিন্তু সেকথা কি বুঝে। জয়া।এভাবে যত দিন যায় তাদের মধ্যে না পাওয়া টাকে নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন পর বেস্টফ্রেন্ড না পেলেও একজন বন্ধু হিসেবে জয়া চাই রাজু তার পাশে থাকুক। তাই রাজু ভেবেছিল এইবার হয়ত আসতে। আসতে জয়ার মন জয় করে নিবে ।তাই শুধু একজন বন্ধুত্বেই থেকে গেল। কিন্তু একটি বন্ধু সম্পর্কে কিছু কর্তব্য থাকে জয়া সেই কর্তব্য পালন করতেনিই না। যখন রাজু বলত তখন জয়া শুধু বলত আমি তােকে পাশে চাই। কিন্তু পাশে থাকা মানে তাে একে অপরকে কেয়ার করা।কিন্তু জয়া মুখেই বলে দিত এইসব মন ভােলানাে কথা। এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন।হঠাৎ একদিন রাজু জয়াকে কিছু চুরি উপহার দেয়। জয়ার খুব পছন্দ হয়েছিল সেই চুরি গুলাে।এভাবে কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন রাজু জয়ার আদুরে নাম টা ধরে ডাকে। আর সেদিন থেকে কোনাে ঝগড়া ছাড়া জয়া রাজুর সাথে সেই বন্ধুত্বটাও ভেঙ্গে দিল।আজো রাজু তার কারণ জানতে পারলনা।এভাবেই জয়া তার জীবন থেকে রাজু নাম টা মুছে ফেলে। যদিও একে অপরের মধ্যে কলেজে দেখা হয়। কিন্তু কোনাে কথা হয় না। হয়ত জয়া এখন ভালই সুখে আছে। কিন্তু রাজু সে কেমন আছে? সে এখন অর্থহীন,ভাষাহীন হয়ে পরে আছে।এখন রাজু আর আগের মত কারাে সাথে কথা বলেনা। আশায় থাকে সেই মুহুর্তের জন্য যে মুহুর্তটাতে হয়ত জয়া এসে সব কিছু ঠিক করে দিবে।কিন্তু হয়ত সেটা মাত্র একটা স্বপ্ন রাজুর যেটি কখনাে বাস্তব হবেনা। জয়া যখন অন্য ছেলেদের সাথে হেসে মেতে কথা বলে তখন রাজু এক পলকে চেয়ে থাকে আর ভাবতে থাকে এমনই তাে চেয়েছিলাম জয়া আমার সাথে হেসে মেতে তুই থাকবি। কিন্তু তুই। বুঝলিনা।এইসব ভেবে ভেবে দিন যায়। রাজু যে স্বপ্ন নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিল।এখন রাজুর আর সেই স্বপ্নের কথা মনে ধরে না।নিশ্ৰুপ রাজু এখন আর কথা বলেনা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ সুন্দর গল্প।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার গল্প আর কবিতার পাতায়।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী হয় তো এরই নাম জীবন। অনেক ভালো লাগলো গল্প। শুভকামনা ও ভোট রইল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এটি একটি বাস্তব জীবনকে নিয়ে লেখা। দুটি মনের মধ্যে না পাওয়া বন্ধুত্বের গল্প।

০৩ জানুয়ারী - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪