গেল ক'টাদিন বলা নেই কওয়া নেই,অবিরত বৃষ্টি পরেই যাচ্ছে! কিন্তু থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। অথচ বৃষ্টিবাদলের দিনগুলো বিত্তের একটুও ভালো লাগেনা,মনে হয় এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তার শরীরের প্রতিটি রক্ত কনিকায় মৌমাছির হুল ফুটিয়ে দিচ্ছে।
অথচ একটা সময় বৃষ্টিধারা কতনা মধুর ছিলো তার কাছে! ছোট্ট বেলায় বৃষ্টি শুরু হলেই পাড়াময় দাপিয়ে বেড়াতো। ধাইজান নদীর ব্রীজের উপর উঠে ভরা নদীতে লাফিয়ে পরত,কখনো নীল সাগরের বুকে বন্ধুদের নিয়ে সাতার কাটত। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিধারায় ভেজার ফলে শরীরে হালকা জ্বর হতো তবুও পরের বৃষ্টিতে তাকে আটকে রাখা দায়,তাকে বৃষ্টিধারায় ভিজতেই হবে। বৃষ্টিধারা আর বিত্ত যেনো হরিহর আত্মা। অথচ গেল তিন তিনটি বছর এক মূহুর্তের জন্যেও সে শরীরে বৃষ্টির একটা ফোঁটাও লাগাতে দেয়নি।
বৃষ্টি এলেই শরীরের ভিতরে কি যেনো একটা কাটার মতো বিদ্ধ করে। সে এক মূহুর্তের জন্যেও স্থির থাকতে পারেনা,মনে হয় দোযখের অগ্নিকুণ্ডলি হতে স্রষ্টা তাকে অচেনা বিষবাষ্পে জর্জরিত করছে। অথচ একটা সময় বর্ষার মোহনীয়তা সে হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করত! গ্রামের রাস্তার কৃষ্ণচূড়ার গাছটা আজও শির উঁচু করে দাড়িয়ে আছে,সে দিনগুলোর স্বাক্ষী হয়ে।
বর্ষা বিত্তের ছোট বোনের বান্ধবী,পাশের গ্রামে বাড়ি। বর্ষা প্রায়ই বিত্তদের বাসায় বেড়াতে আসতো,এভাবেই একসময় দুজন দুজনার অনেক কাছে চলে আসে! তারপর দুজন রচনা করে চলে হাজারো প্রেমাপখ্যান! কখনও হাজারো চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হাতে হাত রেখে মেঠোপথ,জমির আল ধরে এগিয়ে যায় অবারিত ফসলের মাঠ পেরিয়ে ধাইজান নদীর মোহনায়! নদীর পারে বসে বর্ষা পায়ের পাতা পানিতে রেখে দোল দেয় আর বিত্তের কিনে দেয়া নূপুর জোড়াতে জাদুকরী এক সুর ওঠে। বিত্ত একনিষ্ঠভাবে সে দৃশ্য হৃদয়ে ধারণ করে। বর্ষার মুখ থেকে ফুঁটে ওঠে এক চিলতে হাসি,সে হাসি যেনো জগৎ বিখ্যাত মোনালিসাকেও হার মানায়।
হঠাৎই কোনো গোধূলি বেলায় দুজন এগিয়ে চলে পশ্চিমের পথ ধরে চাড়ালকাটার বুকে! এখানে দুজনে ধুলোর রাজ্যে গড়াগড়ি খেয়ে হারিয়ে যায়,যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে;দুজনে একাকার হয়ে ফিরে আসে নিজ ঘরে। এ যেনো স্বর্গীয় সুধা,স্রষ্টার দান। এভাবেই জীবনের বাকি দিনগুলো দুজনেই একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন বড়ই মায়াবী,তাইতো স্বপ্নের মায়াজাল তাদের স্বপ্নচারী করে তুলছে।
বিত্ত রংপুর কারমাইকেলে পড়ার কারণে রংপুরে থাকে,কিন্তু তার মনটা পরে থাকে গ্রামের দিকে! বর্ষার সাথে দেখা করতে নানা অজুহাতেই তাকে গ্রামে আসতে হয়! এভাবে আর কতটা লুকোচুরি করা যায়,তাইতো উচ্চমাধ্যমিক শেষে সে বর্ষাকে পরামর্শ দিলো রংপুরে পড়ার জন্য,তাহলে দুজনই আরও কাছাকাছি থাকতে পারবে। বর্ষার পরিবারের কেউই চাইতো না সে রংপুরে যাক! তবুও তার জেদের কাছে পরিবারের সবাই হার মেনে রংপুরে পাঠাতে বাধ্য হলো! সে রংপুর বেগম রোকেয়া সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হয়ে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েগেলো! প্রতিদিন সকাল বিকেল বিত্তর ক্যাম্পাসে গিয়ে চুটিয়ে আড্ডা দেয়! কখনও আকাশে মেঘ করলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘাঘটে গিয়ে নদীর অপর দিকের কাশবনে বসে পরে! কখনও কখনও ভিন্নজগৎ,স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কে গিয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে আসে।
রংপুর হতে বাড়ি ফেরার দিন দুজনে মেডিকেল মোরে এসে একই সিটে বসে। কখনও পরিচিত কারও সাক্ষাৎ হলে,সম্পর্কের ব্যপারটা এড়িয়ে যায়। রংপুরে যাওয়ার দিনও দুজনে লোকচক্ষুর আড়ালে একসাথে যায়। হয়তো বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক তাদের চলার পথটা এক করে দিয়েছেন।
রংপুরের দিনগুলো দুজনের ভালোই কাটছিল,কিন্তু হঠাৎই যেনো বর্ষার বুকে স্রোতের শ্যাওলার মতো অন্যকেউ এসে হাজির হয়েছে। বিত্ত ইদানিং লক্ষ্য করছে বর্ষা যেনো একটু অন্যরকম হয়ে পরেছে। ফোন দিলেও ফোন ধরেনা,আগের মতো দেখাও করেনা। বাড়ি ফেরার সময়ও নানা অজুহাতে সে এড়িয়ে যায়,বিত্তের সাথে যায়না। বিত্ত অনেক ভেবেও তার পরিবর্তনের কারণটা স্থির করতে পারছেনা। যে মেয়ে তাকে ছাড়া এক মূহুর্তের জন্যেও থাকতে পারেনা,সে কিভাবে এতটা বদলে যেতে পারে। তবে কী বর্ষা অন্য কারো প্রেমে পরেছে?
বিত্ত অনেক খোঁজ করার পরে জানতে পারল,বর্ষা কোনো এক ব্যবসায়ির প্রেমে পরে বিত্তের সাথে এমন করছে! সে এখন বিত্তের ফুসকা,চকবার,ঝালমুড়িতে আগ্রহী নয়! সে এখন স্বপ্ন দেখছে লক্ষটাকার হিরের গহনার। যে মেয়ে বিত্তের সাথে শ্রাবণের প্রতিটি দিন ভেজার জন্য বায়না ধরত,সে দিব্যি অন্য কাউকে নিয়ে বৃষ্টিতে জলকেলি করছে।
বিত্ত ছেলেটা একটু অন্য স্বভাবের,বুকের ভিতরে হাজারো কষ্টের বীজ বপন করে চাপা কষ্টে ধুকরে মরবে তবুও কাউকেই তার চোখের পানির উপস্থিতি বুঝতে দেবেনা! ওয়াশ রুমে গিয়ে নিরবে চোখের অশ্রুগুলো বিসর্জন দিয়ে আসবে। বর্ষার কথাটা জানার পরে,বিত্ত সেদিন ওয়াশরুমে প্রায় তিন ঘন্টা কেঁদে বুক ভাসিয়েছে,তবুও একবারের জন্যেও বর্ষাকে ফোনটা করেও কারণ জিজ্ঞেস করেনি! কী তার অপরাধ,কেনইবা সে তার সাথে এমনটা করল।
এরপর কেটে গেছে তিন তিনটি বছর,বর্ষার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই! শুনেছি বর্ষা এখন গ্রামে ফিরে এসেছে,টাকার অভাবে তার পড়াশোনাটা পরিবার চালিয়ে নিতে পারেনি! সেই ব্যবসায়ি পুরুষটাও তার সাথে প্রতারণা করে দূরে সরে গেছে! তবে এরপর বর্ষা নানাভাবেই বিত্তের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। সে বৃত্তের ছোটবোনের সাথে দেখা করার অজুহাতে বাসায় এসে বিত্তের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে;কিন্তু বিত্তের সাথে তার আর দেখা হয়নি!
বিত্ত তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে,তবুও বৃষ্টিস্নাত দিনগুলোতে তাকে অনেক বেশি মনে পরে। হয়তো বিত্ত এখনো বর্ষাকেই ভালোবাসে,তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে কিন্তু তিন বছর আগে তার দেয়া বিরহব্যথা এখনো তাকে পোড়ায়!আজ অনেক দিন পরে বৃষ্টিধারায় আবারও বিত্তের ভিজতে মন চাইছে,বনানী পাড়া হাইওয়ে রোড হয়ে উত্তরে সে এগিয়ে চলছে। পথঘাট অন্ধকার হয়ে আসছে,ভরা বর্ষার বৃষ্টির দিনে রাস্তাঘাটে কেউ নেই! আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা,একটু পরপর বিজলি চমকাচ্ছে আর দূর থেকে একটা রমনীর ছায়া বোঝা যাচ্ছে! ধীরে ধীরে সে বৃত্তের দিকে এগিয়ে আসছে! মুখে তার মোহনীয় হাসির ঝলক দূর হতেও বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটি যতই এগিয়ে আসছে,বৃত্তের বুকের ভিতরে অচেনা একটা হাওয়া দোল খাচ্ছে। মনে হচ্ছে এ হাসি,এই নূপুরের ধ্বনি তার পরিচিত। এক সময় রমনী মুখটি স্পষ্ট হলো,সামনে দাড়িয়ে নিচু মুখ করে দাড়িয়ে আছে বর্ষা। অগত্যাই সে বিত্তের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল ' আমি কি তোমার সাথে বৃষ্টিধারায় ভিজতে পারি! '
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বৃষ্টিধারার সাথে বিত্তের আর বর্ষার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে,অথচ এখন এই বৃষ্টিধারা বিত্তের কাছে বিষের মতো মনে হয়! এখন বৃষ্টির দিনগুলোতে বিত্তের বর্ষার কথা মনেপরে আর বিরহব্যথা প্রকট আকার ধারণ করে।
২২ ডিসেম্বর - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪