লেখক প্রতিদিনই ভাবে একটা গল্প লেখা প্রয়োজন। ভারী গল্প। উপন্যাসের মতো; কিন্তু উপন্যাস না। কোনো এক অদ্ভুত কারণে শেষপর্যন্ত আর লিখতে বসা হয় না। অথচ গল্পের চরিত্রগুলো প্রতিদিনই আসে; লেখকের খোঁজখবর নিয়ে যায়। কাহিনী কতদূর এগোলো দেখতে আসে এবং হতাশ হয়ে ফিরে যায়। একদিন তো গল্পের প্রধান চরিত্র রাতুল বলেই বসলো, "গল্পটা লেখার ইচ্ছা না থাকলে বলেন। আমরা চলে যাই। সামনে বইমেলা, আর যাই হোক বেকার বসে থাকতে হবে না। কোনো এক কবির মাথায় চেপে বসবো...।" লেখক একটু বিরক্ত হয়। গল্পের ছোট কাদের রাতুলকে থামিয়ে বললো, "এমনিতেই স্যারের মাথা গরম। আর চাপ দিয়েন না তো রাতুল ভাই। এতো চাপ তো মনেহয় প্যাসকেল চাচাও নিতে পারবো না! তাছাড়া..." পাশের বাড়ির করিম সাহেব নতুন দালান তুলছেন। তাই গভীর রাতে ইটের ট্রাক আসে। ইট নামানোর শব্দে লেখকের ঘুম ভেঙে যায়। এতে রাতুল আর ছোট কাদেরের আলোচনায় ছেদ পড়ে। লেখক ওপাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর খোঁজ নিতে আসে গল্পের নায়িকা; কেন্দ্রীয় চরিত্র। সুন্দরী, চটপটে। নাম ঐন্দ্রিলা। এসেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো। সে গলায় ফাঁস দিয়ে মরতে চায় না। রাতুলের সাথে প্যারিস যেতে চায়। লেখক সাফ জানিয়ে দিল, সম্ভব না। তাকে মরতেই হবে। ঐন্দ্রিলা কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।
তারও দু'দিন পর।
কুয়াশায় আচ্ছন্ন পরিবেশ। রিকশার টুং টাং শব্দ ছাড়া যে পরিবেশে কোনো কিছু ঠিক খাপ খায় না।
ঘুম থেকে উঠেই লেখকের মনে হলো আজকেই গল্পটা লেখার উপযুক্ত দিন। আজকে এটা লেখা নাহলে এই জীবনে হয়তো আর লেখা হবে না। টানা দু'কাপ চা খেয়ে আন্দাজমত খাতাকলম বের লিখতে বসলেন। কাজের ছেলেকে বলে রাখলেন ঘন্টায় ঘন্টায় চা দিয়ে যেতে। সকাল দুপুরে গড়ালো। লেখক গভীর মনযোগে লিখেই চলছেন। তিনকাপ চা জমা পড়েছে। খাওয়া হয়নি; তারপরও রফিক চা দিয়ে যাচ্ছে। সাহেবের নির্দেশ সে কখনো অমান্য করে না। ষষ্ঠবারের মতো চা দিতে এসে রফিক সাহের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখতে পেল। গল্প লেখা শেষ। রফিকও তৃপ্তির হাসি হাসলো। কৌটার তলদেশের চিনিটুকু দিয়ে কোনমতে শেষ চা টা বানিয়েছিল, নতুন করে চিনির খোঁজে দৌড়োদৌড়ি করা লাগবে না। আলো-আধাঁর পত্রিকায় প্রায় নিয়মিত তাঁর গল্প ছাপানো হয়। লেখকের মনে হচ্ছে সবগুলোর মধ্যে এটাই হবে সেরা। সম্পাদক সাহেব তো লুফে নিবে। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠবে। পাঠক-পাঠিকার চিঠি আসতে থাকবে; ফাউন্টেনপেনে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা চিঠি। তার মাঝে কয়েকটি থাকবে সুগন্ধি মাখানো। আহা! ভাবতেই লেখকের চোখে আনন্দাশ্রু চলে আসে। বইমেলার জন্য কোন প্রকাশক ধরবেন কি না সিদ্বান্ত স্থির করতে পারছেন না। আলো-আঁধার পত্রিকার সম্পাদক সাইদুল হক তার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন। বিকেলে সাইদুল সাহেবকে বাড়িতেই পাওয়া যায়। প্রতিদিনই তার সাথে আড্ডা হয়। লেখক আজকে সাথে করে গল্পটা নিয়ে গেলেন। তাকে দেখেই সাইদুল সাহেব বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন, "কী খবর কবীর সাহেব? গল্প শেষ হয়েছে?" লেখক তার হাতে খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম ছিঁড়ে কাগজ বের করে সাইদুল সাহেব ভিমড়ি খেলেন। অস্পষ্ট অক্ষরে লেখা নামটা শুধু তিনি পড়তে পারলেন- "গল্প নং ১১৭"। পরের পৃষ্ঠাগুলো ফকফকে সাদা। কিছু জায়গায় ছিঁড়েও গিয়েছে। লেখক জিজ্ঞেস করলেন, "শুরুটা কেমন হয়েছে সাইদুল ভাই?" সাইদুল সাহেব বললেন, "কাগজে তো কিছুই দেখছি না।" লেখক বললেন, "মানে! আমি নাহয় অন্ধ, চোখে কিছু দেখি না। আপনি কেনো দেখবেন না? চোখে পোঁকা পড়েনি তো!" সম্পাদক কথাটা বলবে কিনা ভাবছিল। তার প্রচন্ড খারাপ লাগছিল বলতে । তারপরও বলে ফেললো, "ইয়ে মানে, কবীর ভাই, কিছু মনে করবেন না, আপনি বোধহয় নষ্ট কলম মানে কালি ছাড়া কলম দিয়ে গল্পটা লিখেছেন। তাই কিছুই পড়া যাচ্ছে না..." লেখকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। কোনোভাবেই বিষয়টা হজম করতে পারলো না। মাথা নিচু করে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে এলেন। সেদিনই মাঝরাতে প্রবল জ্বরে লেখক মারা গেলেন। তারপরের বেশ কিছুদিন লেখক সমিতির পক্ষ থেকে অনেকগুলো শোকসভার আয়োজন করা হলো। আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে কবীর খন্দকারের গুণের কথা তুলে ধরলেন- অন্ধ হওয়ার পরও যে তিনি লেখালেখি করেছেন, তা আমাদের জন্য যে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। ও হ্যাঁ, আলো-আঁধার পত্রিকার মার্চ সংখ্যায় একটি লেখা ছাপানো হয়েছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
সম্পাদকের নিকট থেকে লেখক যে কষ্টটা পেলেন তা মারাত্মক। এই কষ্টেই বোধহয় তিনি মারা গেলেন। চমৎকার লেখনী। শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। অনেক শুভকামনা রইলো। ভাল থাকবেন।
জেনে খুব ভালো লাগলো আপনার গল্পটি ভালো লেগেছে। বিষয়ের সাথে গল্পের আক্ষরিক অর্থেই কোন মিল নেই। আমি গল্পটি সাবমিট করার সময় বিষয় খেয়াল করিনি। আমি এই প্রথম লেখা সাবমিট করলাম; আমি জানতাম না যে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লিখতে হয়। পরবর্তী সময়ে মাথায় রাখবো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।