স্বপ্নযাত্রার এপার ওপার

স্বপ্নলোক (জুন ২০২৫)

Jamal Uddin Ahmed
  • 0
  • 0
  • ২৬
সুগন্ধি ফুল রাহাতের খুব পছন্দের। বনের হোক আর বাগানের হোক সুবাস ছড়ানো যেকোনো ফুলই রাহাতকে টানে। ফুলকে ভালবাসার জন্য কোনো কারণ লাগে না। তবে রাহাতের ভাল লাগার অনুস্মরণীয় কারণ আছে। অথচ মজার ব্যাপার হলো, অধিকাংশ ফুলের নাম সে সঠিকভাবে মনে রাখতে পারে না। যে নামগুলো জানে সেগুলো প্রায়ই গুলিয়ে ফেলে। বেলি, শিউলি, হাসনাহেনা সাধারণত অধিক চর্চিত বলে ওগুলো চিনতে তার খুব বেগ পেতে হয় না। তবে রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, কাঁঠালচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, দোলনচাঁপা এসব মেলাতে গেলে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

বিকেলে গুলশান থেকে ফেরার পথে ফুটপাথ থেকে রাহাত যে কটি সাদা ফুল কুড়িয়ে পকেটে ঢুকিয়েছিল বদ্ধকক্ষে সেগুলি নিজেদের অস্তিত্বকে আর হিজাবের ভেতর বন্দি করে রাখতে পারেনি। ছোট ছোট সাদা ফুলের মদির গন্ধ কিছুক্ষণের মধ্যে সারা ঘর নেশাতুর করে তোলে। রাহাত নিশ্চিত হতে পারেনি ওগুলো শিউলি নাকি অন্য কোনো ফুল। তার নীরিক্ষণপটুতা নৈরাশ্যজনক না হলে সে এখন মগ্নচৈতন্যে ডুবসাঁতার দিতে পারতো। মুনির কবি মানুষ; সবাই এক বাঁও গভীরে গেলেও সে যায় তার দ্বিগুণ। দিনের বেশির ভাগ সময় সে ঘোরের মধ্যে থাকে; রাতের বেলায় অন্যলোকে। মুনিরই রাহাতকে কোনো এক বিশেষ দিনে উদ্বেলিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘গন্ধে বিভোর হোসনি তুই?’ গন্ধে বিভোর হওয়া কী জিনিস একথা রাহাতের মাথায় প্রথম সে-ই ঢুকিয়েছিল।

কলিবু’র বাসায় ওঠার আগের দুবছর রাহাত শংকরে একটা মেসে থেকেছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আর ছাত্রাবাস নেই। হ্যাপী ভাইয়ের সাথে কলিবু’র বিয়ে হয়ে গেলে তারা কাঁঠালবাগানে একটি দুই বেডের বাসা ভাড়া নেয়। রাহাত তখন থেকেই তাদের সাথে আছে। বিয়ের তিন বছর হয়ে গেলেও কলিবু’র ঘরে এখনও নতুন মুখ আসেনি। এ বিরতির কারণ অবশ্য রাহাতের জানা নেই, তবে এতে তারই সুবিধা হয়েছে বেশি। সাময়িক অতিথির আবির্ভাব ব্যতীত প্রায় পুরো সময় সে একটি আলাদা কক্ষের অধিকর্তা হয়ে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছে। অবশ্য তাদের বাবা কখনও এলে দু’চারদিন থাকেন। এই সময়টা তাদের ভালই কাটে।

হ্যাপী ভাই রাহাতকে বলেছে, ‘সরকারি চাকরির মজাই আলাদা, তুই কোমর বাইন্ধা লাইগে পড়। বিসিএসটা দে।’ একথা শুধু হ্যাপী ভাই কেন, সব্বাই জানে, একটা সরকারি চাকরি বাগাতে পারলে আর পায় কে! রাহাতেরও অভীপ্সার কমতি নেই, কিন্তু আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তার খুব শখ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাল বিষয় নিয়ে পড়ার। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েনি বলে শেষপর্যন্ত সে বন্ধু মুনিরের সহগামী হয়ে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং পড়তে ঢুকে যায়। মুনিরের পছন্দ অবশ্য ছিল মার্কেটিং। সে বিবিএ শেষ করে একটি গ্রুপ অব কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে যায়। এদিকে রাহাত কী করবে না করবে ভাবতে ভাবতে এমবিএ শেষ করে ফেলে। এখন পারিবারিক চাপ এবং হ্যাপী ভাইয়ের উৎসাহ থাকলেও বিসিএসে উতরাতে পারবে বলে সে মনে করে না। তাই বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ইন্টার্ভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছে।

বিএল কলেজে পড়ার কালেই মুনিরের সাথে রাহাতের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। দুজনই বিজ্ঞান পড়লেও মুনিরের মাথায় বাড়তি উপদ্রব হিসেবে ছিল কবিতার ভূত। মুনির প্রায়ই ছন্দোবদ্ধ সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখতো এবং কলেজে এসে সহপাঠীদের আবৃত্তি করে শোনাতো। প্রথম বর্ষেই কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তার কবিতা অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছিল। শিক্ষকদের দুয়েকজনও তাকে বলেছিলেন, ‘তোমার তো লেখার হাত ভাল, কলা বিভাগে পড়লে না কেন? বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়লে ভাল করতে পারতে।’ মুনির শুধু হেসে বলেছিল, ‘এটা আমার শখ।’ এই শখের বশেই সে কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতো। স্থানীয় পত্রিকায়ও মাঝেমধ্যে তার কবিতা ছাপা হলে সে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে হুল্লোড় করতো। রাহাতের কিন্তু কবিতা-টবিতায় আগ্রহ ছিল না, এখনও তেমন নেই। তবুও অন্যদের সাথে সেও মুনিরের কবিতা শুনে হাততালি দিতো। শুধু একবার মুনিরের কবিতার কয়েকটি লাইন ধার নিয়ে সে নীতার কাছে টেক্সট করেছিল।

নীতার সাথে দূর পারিবারিক আত্মীয়তার সূত্রে জানাশোনা ছিল রাহাতের। দৌলতপুর যাওয়া পড়লে মিছে অজুহাতে নীতাদের বাড়িতে ঢু মেরে আসতো সে। আবার নীতা যখন সোনাডাঙ্গায় ময়না খালার বাসায় বেড়াতে আসতো তখনও কোনো না কোনো ছুতোয় রাহাতের সাথে তার যোগাযোগ হয়ে যেত। ময়না খালা নাকি রাহাতের মায়ের ছোটবেলার বান্ধবী – একই গ্রামের মেয়ে তারা।

রাহাতকে ঢাকা’র মোহ পেয়ে বসলে খুলনা বা রাজশাহীর বিদ্যাপীঠে পড়ার সম্ভাবনাকে পেছনে ফেলে সে মুনিরের সহযাত্রী হয়। তখন নীতা এসএসসি পরীক্ষার্থী। তবে তারও বছরখানেক আগেই নীতার মনের গহনে চাপা রঙের দোলনচাঁপার দল প্রজাপতির মতো পাখা মেলেছে। এই উন্মোচন পর্বে রাহাত ছিল ভ্রমরের মতো। ভ্রমরের পাখার সুরতরঙ্গ চাঁপাবনে কত্থক নৃত্যের ছন্দ তুলতো। বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকবার তারা রূপসা আর ভৈরব নদীর পাড় মাড়িয়েছে। অতি সন্তর্পণে পার্কেও গিয়েছে দুইবার।

ফুলের গন্ধ কলিবু'র নাক পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। সে রাহাতের কক্ষে উঁকি দিয়ে বলে, ‘মিষ্টি গন্ধ রে! ফুল নাকি পারফিউম নিয়ে এলি আজ?’

রাহাত পকেট থেকে কয়েকটি বাসি ফুল বের করে বলে, ‘দেখ তো কী ফুল এটি।’

কলিবু বলে, ‘আরে গাধা, এতদিনে শিউলি ফুলও চিনলি না? পেলি কোথায়? কোনো মেয়ে দিয়েছে?’

রাহাত দাঁত বের করে হেসে বলে, ‘বলবো না।’

হঠাৎ কলিবু’র মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, ‘অ্যাই, ওই নীতা মেয়েটার খোঁজটোজ পাওয়া গেল?’ কথাটা বলে কলিবু জিহ্বায় কামড় দেয়। নির্বোধের মতো এখন কি এধরনের কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা যায়?

আপন ভাইবোন হলেও কলি ও রাহাত বন্ধুর মতো। কলি যখন হ্যাপী ভাইয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছিল তখন রাহাত সবই জানতো। কলিবু তাকে নিয়ে কয়েকবার কুয়েটেও নিয়ে গিয়েছে হ্যাপী ভাইয়ের আমন্ত্রণে। তখন রাহাতও যে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে সেটা কলিবু কিছুটা আঁচ করতে পারতো। তারপর তো রূপসায় অনেক জল গড়িয়েছে। রাহাত মুনিরের লেজ ধরে ঢাকায় চলে গিয়েছে। সিএসইর ছাত্র হ্যাপী ভাই পড়া শেষ করতে না করতেই ঢাকার একটি আইটি ফার্মে চাকরি পেয়ে গেলে আর অপেক্ষা করেনি। পারিবারিক সম্মতিতেই কলিবু’র সাথে তার শুভ পরিণয় ঘটে যায়। কলিবু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স পরীক্ষা দিয়েছিল, কিন্তু প্রেম আর বিয়ের ধুন্ধুমারে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। তবে ঢাকায় এসে সে হ্যাণ্ডপেইন্টিং শিখে এখন টুকটাক অর্ডারি কাজ করে। আর নীতার খবর? সে অনেক কথা।

সুগন্ধি ফুল পছন্দ বলেই রাহাত কখনও তা কুড়িয়ে আনে, কখনও পেড়ে আনে, আবার মনে ধরলে কখনও কিনেও আনে। ফুলের গন্ধের সাথে মুনিরই যোগসূত্র ঘটিয়ে দিয়েছিল তার। একদিন অভিসার থেকে রিক্সা করে বাসায় ফিরছিল রাহাত ও নীতা। ওইদিনই রাহাত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নবিশের মতো কাঁপাহাতে জড়িয়ে ধরেছিল নীতাকে। শুধু তাই নয়, সাহস করে অর্বাচীনের মতো কামড়ে দিয়েছিল তার ওষ্ঠাধর। জীবনের প্রথম এই দুঃসাহসিক অভিযানের উত্তেজনাকে রাহাত নিজের ভেতর চেপে ধরে না রাখতে পেরে ছুটে গিয়েছিল মুনিরের কাছে। কবি মুনির অধিক উত্তেজনায় রাহাতকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘দেখি তো তোর গায়ের গন্ধটা পরখ করে।’

রাহাত এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বলেছিল, ‘ধুর, গন্ধ আবার কিসের?’

মুনির তখন তার কাব্যমেজাজ শানিত করে বলেছিল, ‘আরে গাধা, ফুলের গন্ধ! ফুলের বাগানে তো কখনও যাসনি; ফুলের সুবাস আর এক উন্মীলিত কিশোরীর গায়ের গন্ধ একই রকম হয়।’

সেদিনের পর থেকে রাহাতের ফুলের প্রতি অনুসন্ধিৎসা বেড়ে যায়। কোনো সুগন্ধি ফুল পেলেই সে পরম আগ্রহে শুঁকতে থাকে। শুধু তাই নয়, মুনিরের কথার সত্যতা নিরূপণ করতে গিয়ে নীতার গন্ধ শোঁকার জন্য সে তক্কেতক্কে থাকতো। নীতা অবশ্য জড়সড় হয়ে বলতো, ‘পাগল হলে নাকি রাহাত ভাই। ছুঁচোর মতো খালি নাক ঘষাঘষি করতে থাকো!’

রাহাত আর নীতাকে বলেনি যে মুনিরই তার আকর চেনার বোধ জাগ্রত করেছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, এ যুগে যা অকল্পনীয়, নেশার মতো তাদের পারস্পরিক আকর্ষণ থাকলেও কেউ কখনও মুখ ফুটে ‘ভালবাসি’ শব্দটি উচ্চারণ করেনি। এমনকি রাহাত ঢাকায় আসার পরও যখন তারা ঘনঘন চ্যাটিং করতো তখন অনেক কথা বললেও ওই শাশ্বত শব্দটি কেন জানি ব্যবহার করতো না। একদিন নীতা ফোনে অভিমান করে বলে, ‘শোনো রাহাত ভাই, আমি এখন কলেজছাত্রী। গন্ধ শোঁকার দিন শেষ।’

রাহাত নীতার কথার রহস্য বুঝতে না পেরে বলে, ‘কী আবোল-তাবোল কথা বলছো?’

নীতা বলে, ‘লুকোচুরির কতদিন হলো বলো তো। হাজার রঙের কথা বলেছ, কিন্তু একটি বারও কি বলেছ যে তুমি আমাকে ভালবাস?’

রাহাত কিছুটা বিব্রত হয়ে বলেছে, ‘বলবো, একদিন ঘটা করে বলবো!’ একথা বলার পর তার বোধোদয় হয়, কী গবেট সে! এই দীর্ঘ সময়ে এতকিছু ঘটার পরও সে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ কথাটা নীতাকে বলেনি। একবার ভেবেছিল সে নীতাকে বলবে, ‘তুমিও তো কখনও বলোনি।’ কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছে, ভালবাসার কথাটা ছেলেরাই আগে বলে।

সময় থেমে থাকে না। এ ঘটনার কয়েক মাস পর যে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটেছিল সেজন্য রাহাত প্রস্তুত ছিল না। কয়েকজন বান্ধবী নিয়ে নীতা নাকি রূপসা নদীতে একদিন বিকেলে নৌকা ভ্রমণে গিয়েছিল এবং অতি আকস্মিকভাবে নদীতে ঝড়ো হাওয়া উঠলে তাদের ছোট নৌকাটি উলটে যায়। তখন নাকি নীতা ও তার এক বান্ধবী নদীতে তলিয়ে যায়। একদিন পর তার বান্ধবীর লাশ পাওয়া গেলেও নীতাকে আর পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পাওয়ায় অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করেছে। কেউ বলেছে, ও মরেনি, জলদেবতা তাকে নিয়ে গেছে। কারুর ধারণা, ও হয়তো ভাসতে ভাসতে কোনো ঘাটে ভিড়েছে নয়তো কোনো খারাপ লোকের হাতে পড়েছে। ওরা হয়তো তাকে লুকিয়ে রেখেছে কিংবা অন্য কোথাও পাচার করে দিয়েছে।

ঘটনা যা-ই ঘটে থাকুক, খবরটা শোনার পর রাহাত কিছুদিন উন্মাদের মতো ছিল। কলিবু’র তখনও বিয়ে হয়নি। সে-ই তখন রাহাতের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে রাহাতকে অনেক প্রবোধ দিয়েছে। এও বলেছ, ‘নীতা মরেনি; দেখিস একদিন হঠাৎ করে সে ফিরে আসবে।’ কিন্তু না, বছর পাঁচেক হয়ে গেলেও নীতা আরে ফিরে আসেনি। তবুও কলিবু’র মিথ্যে আশ্বাসের ওপর রাহাতের ভরসা করতে ইচ্ছে হয়। তার মনে হয়, নীতা হয়তো অভিমান করে দূরে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে আছে। পৃথিবীতে এখনও অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে মানুষ যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে না। নিশ্চয় একদিন নীতাও সবাইকে অবাক করে দিয়ে পায়রার মতো উড়াল দিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, ‘তোমরা আমাকে ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি। এইতো আমি, ফিরে এসেছি।’

যেদিন সে বাসায় ফুল আনে সেদিন রাহাতের ঘুম হয় না। পুরো রাত ফুলের গন্ধে ‘বিভোর’ হয়ে থাকে। তন্দ্রার আবেশে সে এক ঐন্দ্রজালিক জগতে প্রবেশ করে বায়বীয় ডানার ওপর ভর দিয়ে অপার্থিব সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে উড়তে থাকে। মনমাতানো সুরভির পিছু পিছু ছুটতে গিয়ে সে দেখতে পায়, ওইতো অদূরে, নীল সমুদ্রের জলছোয়া দিগন্তে নীতা চোখধাঁধানো পরীর মতো ঢেউয়ের ছন্দে উড়তে উড়তে হারিয়ে যাচ্ছে। রাহাত দ্রুতবেগে ডানা ঝাপটিয়ে এগোতে চায়, কিন্তু পারে না।

আজও রাহাতের ঘুম আসছে না। কলিবু’রা ঘুমিয়ে পড়লে সে কিছুক্ষণ ঘরের ভেতর পায়চারি করে। একবার তার কক্ষের চিলতে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। এমনিতেই ঢাকার আকাশে তারা দেখা কঠিন ব্যাপার। তার ওপর হালকা মেঘের আবরণে আজ আকাশকে আরও ঘোলাটে মনে হচ্ছে। বারান্দা থেকে ফিরে এসে সে শার্টের পকেট থেকে সাদা শিউলি ফুলগুলো বের করে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখে। এসময় হঠাৎ তার খেয়াল হয় গত বইমেলায় স্ব-খর্চায় প্রকাশিত মুনিরের প্রথম কবিতার বইটি সে এখনও ভালভাবে পড়েনি। মুনির তাকে বইটি দিয়ে বলেছিল, ‘ফেলে রাখিস না; পড়িস। পড়ে জানাবি কেমন লাগলো।’ রাহাত টেবিলের ড্রয়ার থেকে বইটি বের করে নিয়ে বিছানার ওপর আধশোয়া অবস্থায় পাতা উল্টাতে থাকে।

রাত সাড়ে বারোটায় রাহাত আচমকা মুনিরকে ফোন দিয়ে বসে। রাহাত চাকরিজীবী মানুষ। অসময়ে তার ঘুম ভাঙ্গানো অনুচিত। সাধারণত রাহাত অমন কাজ করে না; কিন্তু আজ নির্বোধের মতো করে ফেলেছে।

মুনির ফোন ধরেই আতংকিত কণ্ঠে বলে, ‘কীরে, কোনো সমস্যা নাকি?’

রাহাত বলে, ‘স্যরি দোস্ত। কোনো সমস্যা না। প্লিজ, তুই বকাবকি না করে পারলে জাস্ট একটা ইনফরমেশন দেয়।’

মুনির বলে, ‘বল, কী জানতে চাস?’

রাহাত কুণ্ঠিত কণ্ঠে বলে, ‘তোর বইটা আজ ভালভাবে পড়লাম। আমি অতশত না বুঝলেও খুব ভাল লেগেছে। পড়তে গিয়ে মনে পড়লো তোর কবিতার দুটি চরণ একবার আমি নীতাকে পাঠিয়েছিলাম। তোর কি মনে আছে পঙ্‌ক্তি দুটি কী ছিল?’

রাহাতের এই পাগলামোর প্রত্যুত্তরে মুনির অনেক কথা বলতে পারতো, তার ঘুম নষ্ট করার জন্য গালাগালিও করতে পারতো। কিন্তু রাহাতের স্পর্শকাতর অনুভূতিকে আঘাত করতে মুনিরের মন সায় দিল না। সে শুধু বললো, ‘হ্যাঁ, আমার মনে আছে। আর আমার বইয়েও আছ। তুই পনর নম্বর কবিতার শেষ চারটা লাইন দেখে নেয়:

যেই না তোমার চোখের তারা ছায়া ফেলে আমার চোখে
তোমার চুলে ঝরে পড়ে গোটাকয় শেফালীকুসুম
সে কি ছিল ফুল নাকি অনাঘ্রাত কেয়ারিকুন্তল
তুমি আমি বুনেছিলাম স্বপ্নযাত্রার এপার ওপার।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

সুগন্ধি ফুল রাহাতের খুব পছন্দের।

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৭৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫