নিশি,আয়নায় সামনে দাড়িয়ে আছে।আর ভাবছে এই অদ্ভুত নামটা তার মা - বাবা কেন রেখেছেন!! নিশি মানে আঁধার। আর আঁধার তো কালো হয়। কিন্তু সে ফর্সা। কোন ভাবেই মিলাতে পারছে না সে। কিছুক্ষণ চুপচাপ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চিরুনি হাতে নিল সে। মাঝ বরাবর সিঁথি করে তার লম্বা চুলগুলো আঁচড়ালো।তারপর পড়ার টেবিল এর কলমদানি থেকে কেচি টা নিয়ে একবার একটা মুঠো করে দুপাশ থেকে কাধ বরাবর ধরে কেটে দিল।তারপর আয়নার সামনে কিছুক্ষণ আনমনে তাকিয়ে থেকে লাইট টা অফ করে দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।তার শখের বড় চুল গুলোর জন্য খুব মায়া হচ্ছে তার এখন।অভিমানে কাঁদতে -কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল সে। ঘুমিয়ে নিশি স্বপ্নের দেশে গেল।এক বিরাট মাঠ। সে মাঠের মাঝে দাড়িয়ে আছে।সাথে তার সব বয়সী কিছু ছেলে মেয়ে। সবাই চৌদ্দ -পনের বছর এর। সবার পেছনে একটি করে ডানা।নিশি একটু তাকিয়ে বুঝল সে পরীর দেশে।সবাই নিশি কে ইশারায় ডাকছে। সে এক পা দু'পা করে আগাল।এর পর সবার সাথে উড়তে শুরু করল। সে মহা আনন্দে উড়ছে। হঠাৎ কিসের শব্দে তার স্বপ্ন ভেঙে গেল।চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো সে কোথায়। সে অনুভব করল সে তার বিছানায়। কলিং বেলটা বেজে চলেছে।হুরমুর করে সে উঠে দৌড় দিল। আজ সে নিশ্চিত বকা খাবে মা এসেছে। দরজা খুলে দিতেই নিশির মা সালমা বেগম ঘরে ঢুকে চোখ বড় বড় করে নিশির দিকে তাকিয়ে আছেন। নিশি বুঝতে পারছে না মা এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?সালমা বেগম বললেন,পার্লারে গেলে কার সাথে তুমি?মার কথায় তার হুশ ফিরে আসল।সে যে চুল কেটেছে বিকেলে সে ভুলেই গিয়েছে। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।মাথা নিচু করে রুমে চলে গেল।সালমা বেগম আর কথা বাড়ালেন না।তিনি সোজা রুমে চলে গেলেন।মুখে পানির ছিটা দিচ্ছেন আর ভাবছেন মেয়ের সাথে কিবাবে গুছিয়ে কথা বলবেন। মেয়ে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। নিজের একটা জগৎ হচ্ছে।কার সাথে মিশছে কি করছে খোঁজ খবর রাখতে হবে।আজ অফিসে অনেক ধকল গেছে।শরীর টাও ভাল নেই তেমন।বয়স হচ্ছে তার একটা প্রভাব তো আছেই। আগের মত চাইলেই সব করা যায় না। এসব ভেবে তিনি বের হলেন।নিশিকে নাস্তা করতে আসতে বললেন। দুজন মুখোমুখি ডায়নিং টেবিল এ। নিশির বাটিতে নুডুলস দেয়া হয়েছে। এটা তার খুব পছন্দ। সে নুডুলস খাচ্ছে আনমনে। সালমা বেগম নিয়েছে চিনি ছাড়া টোস্ট বিস্কুট আর গ্রিন টি। তিনি স্বাস্থ্য সচেতন। বয়েসের কারণে এমনি - ই ওজন বেড়ে যাচ্ছে। একটু সচেতন না হলে কাজ করা যায় না। ওজন ধরে রাখা যায় না। ওজন বাড়লে হুহু করে রোগ সব শরীরে এসে ভর করে। সালমা বেগম মেয়ের দিকে তাকালেন। শান্ত প্রকৃতির মেয়ে নিশি। কিন্তুু আজ হঠাৎ তাকে কেমন জানি লাগছে? নিরবতা ভাঙ্গেল তিনি। নিশি, জ্বী মম। মম নয় মা। তোমাকে না কতবার বলেছি মম নয় মা বলবে। নিশি, আমার ওটাতে অভ্যেস হয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করব। স্কুলের সবাই তো তাই বলে। এবার সালমা বেগম মূল কথা তুলতে পারবেন বলে মনে খুশি হলেন। আজ কার সাথে পার্লারে গিয়েছিলে? আমি না বলেছি তোমাকে আমাকে না বলে কোথাও যাবে না। দরকার হলে আমাকে বলবে আমি নিয়ে যাব। আমি তো পার্লারে যাই নি, মম।পার্লারে যাওনি। হুম।মেয়ে মিথ্যে ও বলা শিখে গেছে দেখে তিনি বুঝতে পারছেন না কি করবেন।রাগ টাকে ঢোক করে গিলে, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেন।তাহলে চুল কেটে দিল কে?নিশি এবার চুপ করে আছে দেখে তার রাগ আরও বেড়ে যাচ্চিল।কিন্ত্তু কোন ভাবেই রাগারাগি করা যাবে না।এই জায়গায় যদি তিনি হতেন আর তার মা হত এতক্ষণে মার খেতেন নিশ্চিত।কিন্তু এখন কার বাচ্চাদের সাথে তা করা যাবে না।সে তো দূরের কথা রাগারাগি ও করা যাবে না। স্কুলের কড়া নিষেধ। তিনি নিজেকে সামলে নিলেন।অপেক্ষা করছেন নিশির উত্তর এর জন্য। নিশি খাওয়া শেষ করে মার আঙ্গুল ধরে নিয়ে আসলো। সালমা বেগম শিহরিত হলেন।সেই কবে সে তার মেয়ের আঙ্গুল এভাবে ধরেছে ভুলে গেছেন। তার খুব মায়া হল। অতীত এসে সামনে পড়ল।ততক্ষণে নিশি রুমে পৌঁছে গেছে। রুমে রাখা ছোট বিন টার দিকে ইশারা করলো নিশি। সালমা বেগম হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন।তিনি ফিরে এলেন নিশির ইশারায়। কি দেখাতে চাইছে মেয়ে। তিনি ভয় পেলেন। বিন এর ঢাকনা খুলে দিল নিশি। তিনি দেখতে পেলেন মেয়ের সুন্দর চুল গুলো এলোমেলো পড়ে আছে।মেয়ে নিজে নিজে চুল কেটে ফেলেছে। তিনি আর কিছু এই মুহূর্তে ভাবতে পারছেন না।ধপ করে বিছানায় বসে পড়লেন। তিনি ভাবতে লাগলেন তার মা প্রতি বৃহস্পতি বার তার চুলে তেল লাগিয়ে বেনী করে দিতেন। তিনি শেষ করে আদর করে মেয়েকে তেল দিয়ে দিয়েছেন? কবে চুল আচরিয়ে দিয়েছেন? নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্চে তার। এত ব্যস্ত এই নগর জীবন নিজেদের জন্য কি সময় মেলা ভার? তার মাথাটা দুলে দুলে উটছে। তিনি ভাবছেন আর নিজেকে প্রশ্ন করে চলেছেন.. এভাবেই কি হারিয়ে যাচ্ছে নগরের কৈশোর বেলা? স্কুলে বড় মাঠ নেই, বাবার সময় নেই,মার চাকরি - সংসার,ব্যস্ততা,পাড়ায় বন্ধু নেই,খেলার মাঠ নেই।তিনি কোন উত্তর খুজে পাচ্ছেন না শুধু নিজেকে প্রশ্ন করে চলেছেন.......
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
নগরের কৈশোর বেলা হারিয়ে যাচ্ছে কিনা এই যে প্রশ্নটা এটা আজ বলতে গেলে একটা কমন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুলে খেলে-বেড়ানোর জায়গা নেই, পিতা মাতার সময় নেই সন্তানকে দেওয়ার মতো। বন্ধু নেই, সব আজ আবদ্ধ হয়ে আছে একটা নর্দমার মধ্যে। সেখান থেকে সবকিছু মুক্ত করে আগের মত আবার সুন্দর জীবন ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। অনেক ভাল লেখা। শ্রদ্ধা জানবেন। শুভেচ্ছা।
মৌরি হক দোলা
বাহ্, গল্পটির বিষয় খুব সুন্দর! তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেমন এখানে দুইজনের বলা কথাগুলো যদি উদ্ধৃত চিহ্ন বা আলাদা প্যারা সহকারে দেওয়া হয় তবে সেটা পাঠকের জন্য সুবিধা হবে, দৃষ্টিনন্দনও হবে। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।