‘অবরিগাদো’

প্রশ্ন (ডিসেম্বর ২০১৭)

Shimul F Rahman
  • ২০
অনার্স ৪র্থ বর্ষে এসেও যখন আমি ‘একা’ রয়ে গেলাম, তখন বন্ধুমহলে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতা শুরু হলো। নিয়মিত আড্ডাতে যখন এক এক জনের ভালোবাসার মেয়েটির সম্পর্কে ও ওদের সম্পর্ক সম্পর্কে বিভিন্ন “রসের আলাপ” শুনতাম, তখন কেউ একজন পাশ থেকে খোঁচা দিয়ে বলতো, “এ শালাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না”। আমি কিছু বলতাম না, শুধু হাসতাম। কিন্তু মনে মনে একটা জেদ তৈরি করে ফেলেছিলাম-এ অপবাদ ঘুচাতেই হবে। আমি কখনই অনলাইনে সম্পর্কে জড়ানোর পক্ষে ছিলাম না। পাছে ফেক আইডির কবলে পড়ি এই ভেবে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে অনলাইন-ই হলো আমার ‘পার্টনার’ খোঁজার একমাত্র মাধ্যম। আমি লম্বায় পাঁচ বাই দশ, ফর্সা, ফ্যাশন সচেতন একটা ছেলে। নিজস্ব একটা স্টাইলও আছে আমার আর আছে মুখচোরা স্বভাব। কেউ আমাকে ‘নক’ না করলে আমিও কারও সাথে চ্যাট করিনা। কিন্তু আর পারলাম না ‘নক’ না করে। ফেবু-তে অনেকদিন থেকেই নিজের বিভাগের জুনিয়র একটা মেয়ের আপলোড করা পিক গুলোতে লাইক দিয়ে আসছিলাম। কি জানি কি ভেবে ঐ মেয়েকেই একদিন একটা ম্যাসেজ পাটিয়ে দিলাম। লিখলাম-
: প্রধানমন্ত্রী বা ফার্স্টলেডি হতে হলে কি বিশ্বসুন্দরী হতে হয়? হয়না। তাহলে বায়োকেমিষ্ট্রি পড়তে হলে এত সুন্দরী হওয়া লাগবে কেন?
রূপের প্রশংসা করতে গিয়ে কি না কি লিখেছি, ভেবেছিলাম ‘ব্লক’ খাবো, কোনো রিপ্লাই আসবে না। রিপ্লাই আসলো না দুই দিন। এর মধ্যে অবশ্য আমি নিজেই ভুলে গেছি। তৃতীয় দিন রাত এগারোটায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ফেবু-তে ঢোকার সাথে সাথে ম্যাসেঞ্জারে রিংটোন বেজে উঠলো। সেই মেয়েটিই লিখে পাঠিয়েছে-
: বায়োকেমিষ্ট্রি পড়তে হলে কি এত হ্যান্ডসাম হওয়া লাগে? আপনাকে তো এখানে খুবই বেমানান লাগে! (শেষে একটা ‘উইংকি ফেস্’ ইমোজি দেওয়া)।
প্রত্যুত্তরে লিখলাম-
: আমাকে দেখে কি আপনার হ্যান্ডসাম মনে হয়?
উত্তর এলো-
: আমাকে কি আপনার বিশ্বসুন্দরী মনে হয়?
বলালম-
: না, মানে, আসলে তুমি সুন্দরী! তবে আমার চোখের লেন্স খুবই শক্তিশালী তো তাই তোমাকে বিশ্ব সুন্দরী-ই মনে হলো!
: তাই, না? দেখেন, আমি সুন্দরী হতে পারি কিন্তু বিশ্বসুন্দরী না!
কথা বলতে বলতে কখন যে ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ বলে ফেলেছি খেয়ালই ছিল না। আমি ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র বলে হয়তো সেটা উভয়ের কারো গায়ে লাগেনি। রিপ্লাই দিলাম-
: না, তুমি বিশ্বসুন্দরী!
: আচ্ছা, আপনার যা ইচ্ছে।
: হুম। আচ্ছা তোমার প্রিয় রং কি?
: নীল। আপনার?
: আমারও নীল। আমার সবগুলো টি-শার্টই নীল রঙের। তোমার প্রিয় নায়ক?
: শাহ্রুখ খাঁন। আপনার?
: আমির খাঁন। তুমি বই পড়ো?
: হুম।
: প্রিয় লেখক?
: হুমায়ূন আহমেদ। আপনার কার লেখা বেশি ভালো লাগে?
: শরৎচন্দ্র।
ইতিমধ্যে খেয়াল করলাম রাত বারোটা এক বেজে গেছে। মানে ১৪-ই ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালাবাসা দিবস। মনে মনে একটু পুলকিত হলাম। মেয়েটির কোন রিলেশন্ আছে কিনা সেটা জানার কৌতুহল এতক্ষণ দমিয়ে রেখেছিলাম। এবার সুযোগ এল। আর দেরি করা ঠিক হবে না। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম-
: আচ্ছা, যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
: কি? বলেন।
: তোমার কি কোন রিলেশন্ আছে?
: উঁহু, নেই।
: কি বল! এত সুন্দরী একটা মেয়ে অথচ এখনো বিএফ নেই! (আমি কিন্তু মনে মনে চরম খুশি। এটাই তো চাইছিলাম)।
: কেন? এরকম মেয়ে থাকতে পারে না বুঝি? আপনার কি জিএফ আছে?
: আলবৎ পারে! না, মানে এখন তো প্রায় সব মেয়েই বুকড্ থাকে, তাই একটু আশ্চর্য হলাম তোমার উত্তর শুনে। সত্যি কথা বলতে আমারও কোন জিএফ নেই। আচ্ছা আগামী কাল ক্যাম্পাসে আসছো তো?
: কেন?
: কাল তো ভালবাসা দিবস। ক্যাম্পাসের সব কাপল-ই বিকালে ঘুরতে বের হবে।
: আমার তো আর বিএফ নেই, আমি কেন যাবো?
: সেটাই তো! তবে আমার জিএফ না থাকা সত্ত্বেও আমি যাবো। দেখব কোন কাপল-কে সবচেয়ে ভালো মানাইছে।
: আচ্ছা।
এরপর অনেকক্ষণ কোন কথা নাই। ফেবুতে শুনশান নীরবতা। রাত ২.৩০ মিনিট। দেখলাম ওর নামের পাশে তখনও সবুজ বাতি জ্বলছে। এড়িয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু কি মনে করে আবার একটা ম্যাসেজ দিলাম।
: আচ্ছা, তোমাকে যদি কাল সিলসিলা-র বিখ্যাত কফি খাওয়ার দাওয়াত দিই তাহলে তুমি আসবে না?
কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো-
: হ্যাঁ, যেতে পারি। কিন্তু একা আসতে হবে, কোন ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে আসতে পারবেন না।
আমার আনন্দ দেখে কে! মনে হল সারা শরীরের প্রতিটি কোষে এই আনন্দের বার্তা পৌঁছেছে। খুশিতে দেহে বিদ্যুৎ খেলে গেল বলে মনে হল। সেরোটোনিন হরমোনের সিক্রেশনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। বললাম-
: নো প্রবলেম। কেউ আসবে না। কেউ জানবেও না। হ্যাঁ বলার জন্য ‘অবরিগাদো’।
পর্তুগিজ ভাষায় ধন্যবাদ জানালাম। কি জানি ‘অবরিগাদো’ মানে ও বুঝেছে কিনা। ও বলল-
: ওকে, ফাইন।
: আচ্ছা, কাল তাহলে বিকাল ৪ টায়। সিলসিলাতে।
: ওকে, এখন তাহলে বাই। কাল দেখা হবে। গুড নাইট।
আমি আরও কিছু বলতে চাইছিলাম কিন্তু ও গুড নাইট বলাতে আর বলার স্কোপ পেলাম না। আমিও ‘গুড নাইট’ বলে ফেবু থেকে বের হলাম।
প্রিয় পাঠক। এরপরে কি হল বুঝতেই পারছেন। দু’জনের দেখা হল। ওকে একগুচ্ছ লাল ‘জারবারা’ দিয়ে শুভেচ্ছা জানালাম (প্রথম দিন তো, তাই ‘লাল গোলাপ’ দিতে একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিন লাল গোলাপ-ই দিতে হয়েছে। থাক্ সে কথা।) কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছিলাম (মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছিলামও)। সন্ধ্যায় ওকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে আসলাম। চলে আসার সময় অনিন্দিতা (মেয়েটির নাম) বলল, “শোনেন, অবরিগাদো”। আমি হাসলাম। ও রুমে চলে গেল। ‘ভালোবাসি’ কথাটা তখনও কিন্তু বলা হয়নি। বলেছিলাম রাতে। আশানুরূপ রিপ্লাইও পেয়েছিলাম। তখন যে কি স্বর্গীয় সুখের অনুভূতি বোধ করছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আর শুধু আমার ওই বন্ধুদের কথাই মনে হচ্ছিল। আমিও আজ ওদের দলভূক্ত হলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু প্রেমবিহীন থাকার অপবাদ ঘুচাতে ফেসবুকের আশ্রয় নিল নায়ক। অনিন্দিতাকে পেয়েও গেল সে। তারপর স্বর্গীয় সুখের অনুভুতি বোধ করলো। নায়কের সুখে আমিও সুখ বোধ করলাম। গল্পে বাস্তবতা আছে। বাস্তবে তো এমনটিই ঘটে। মানসম্পন্ন গল্প। চমৎকার। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। অনেক শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
নূরনবী সোহাগ অবরিগাদো ! বাহহ
Farhana Shormin শিরোনমটি ভাল লেগেছে
সাইয়িদ রফিকুল হক সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল! আরেকটু ধীরস্থির হলে ভালো হতো। শুভকামনা রইলো।

০১ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪