বাচ্চু মিয়া রেলস্টেশন এর সামনে দাড়িয়ে আছে । ট্রেনের জন্য অপেক্ষা । ট্রেন আসতে দেরি করতেছে । তার পড়নে লাল রঙের মাঝে সাদা নকশা করা নতুন শার্ট আর নীল রঙের লুঙ্গি । লুঙ্গিটাও নতুন হলে মনমতো হতো । প্রথমবার ঢাকা যাবে বলে কথা ! বাচ্চু মিয়া অবশ্য নতুন একটা লুঙ্গি কিনতে পারত । টাকার পরিমান যথেষ্ট ভালো । দুই হাজার সাতশ বিশ ।দেড়শ টাকায় খুব ভালো লুঙ্গি পাওয়া যায় । শেষ মুহূর্তে এসে লুঙ্গি কেনার সিদ্ধান্ত বাদ দিলো । এখন মনে হচ্ছে না কেনাটা বোকামি হয়েছে ।মনে খুতখুতে ভাব নিয়ে যাত্রা শুরু করাটা ঠিক না ।কিনে ফেলবে? সামনেই বাজার আছে ।সে তার স্ত্রী হামিদা বানুর দিকে তাকালো ।নববিবাহিতা স্ত্রীর মতো বিরাট ঘোমটা দিয়ে এসেছে ।তাদের বিয়ে হয়েছে ছ’মাসের বেশি ।কোনোদিন সে তার স্ত্রীকে ঠিকমতো ঘোমটা দিতে দেখে নাই ।আজ হঠাৎ কি হলো? ঢাকা যাবে বলে?এর সাথে ঘোমটার কি সম্পর্ক? ঢাকা তো সে যাচ্ছে না । যাচ্ছে বাচ্চু ।তাহলে? ঘোমটা দেওয়ার কারন বাচ্চু মিয়া ধরতে পারল না ।মেয়েছেলর অনেক কিছুই সে ধরতে পারে না । এই হাসতেছে তো এই কানতেছে! বাচ্চু মিয়া ডাকল, “বউ?” “জ্বে।” “চল বাজার থেইকা একটা চক্কর দিয়া আসি । “ট্রেন আইলে?” হামিদা বানু মাথা থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে জিজ্ঞেস করল। “ট্রেন আইলে আইব । তুমি আইও তো ।” বাচ্চু মিয়া আর হামিদা বানু একটা শাড়ির দোকানের সামনে গিয়ে দাড়াল। বাচ্চু মিয়া বলল, “বউ শাড়ি খরিদ করবা?কিনো একটা নয়া শাড়ি? কিনবা?” “আফনে ‘ঢাকাত’ যাইবেন কত টেকার ব্যাপার!এহন শাড়ি কিননা দিবেন?” বাচ্চু মিয়া বিরক্ত হলো । মেয়েছেলের এই স্বভাবটা বড় খারাপ ।মুখে এক কথা আর পেটে আরেক কথা । বাচ্চু মিয়া সিগারেট ধরিয়ে বিরক্তি ভাব চাপা দেওয়ার চেষ্টা করল ।যাত্রাকালে সে তার মন প্রফুল্ল রাখতে চায় । বাচ্চু মিয়া বলল, “ইচ্ছা হইলে কিনো ।” “আফনে যখন এতো কইরা কইতাছেন, তাইলে দেন একটা কিননা ।” লুঙ্গি কিনতে এসে বাচ্চু মিয়া নিজের জন্য একটি লুঙ্গি,চিরুনী আর টুথব্রাস কিনে ফেলল । আর হামিদা বানুরে কিনে দিলো একটি শাড়ি,আয়না আর লাল লিপস্টিক । মেয়েটার আবার সাজগোজের শখ আছে ।‘গরীবের আবার সাজ কি? গরীবের কাজ হইল বড়লোকগো বান্দী খাটা ।তুই হইলি বান্দী ।তোর অত শখ কিয়ের?’এসব কথা বাচ্চু মিয়া নিজের মনে বলে । হামিদা বানুরে মুখে কিছু বলে না । তবে মাঝে মাঝে সে যখন ঠোটে লাল লিপস্টিক, কপালে সবুজ টিপ আর মুখে পান চিবাতে চিবাতে এসে বলে, “পান খইবেন?” “আমারে কিমুন লাগতাছে? বিউটি ?” বাচ্চু মিয়ার তখন বড় ভালো লাগে । বাচ্চু মিয়া ডাকল, “বউ?” “বলেন।” “এক প্যাকেট টিপও কিনো । সবুজ রঙা ।” “আফনে বলতেছেন।” “হ বলতেছি । কিনো ।টিপের দাম আর কত!”
দূর থেকে ট্রেনের শব্দ ভেসে আসছে । কিছুক্ষন এর মধ্যে ট্রেন এসে পড়বে ।বাচ্চু মিয়া ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল । কেমন যেন মায়া এসে যাচ্ছে । গ্রাম ছেড়ে যেতে বুকের কোথাও সূহ্ম একধরনের যন্ত্রনা হচ্ছে । কিন্তু কি আর করা ? তাকে ঢাকা যেতে হবে । কাজের সন্ধান করতে হবে ।গ্রামে টাকা পাঠাতে হবে । কাজ পাওয়া বড় কথা না । ঢাকা শহরের গরীব মূর্খরা কাজের অভাবে মরে না । কাজের অভাব হয় লেখাপড়া জানা লোকদের । তাজ্জব শহর! তার সমস্যা থাকা নিয়ে । থাকার একটা বন্দোবস্ত করতে পারলে হামিদাকে নিয়ে যাবে । ঢাকা শহরে তাদের সুন্দর একটা সংসার হবে । বাচ্চু মিয়া সিগারেট ধরিয়েছে । ভীষন মায়া পড়ে যাচ্ছে । মায়া ভাবটা কাটানো দরকার । গরীবের মায়া-মুহব্বত ভালো জিনিস না । গরীবের হৃদয় হতে হয় কঠিন । বাচ্চু মিয়াকে কঠিন হতে হবে । সে বলল, “বউ, ব্যাগটা আমার কাছে দ্যাও দেহি ।” অনেক ঝাপাঝাপির পর বাচ্চু মিয়া ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ল । ট্রেনের ছাদ থেকে দেখল হামিদা বানু মুখে কাপড় দিয়ে কান্না করতেছে । সে যথেষ্ট বিরক্ত হলো । মনে মনে কয়েকবার বলল, “বেকুব মেয়েছেলে ।” তারপর ধরা গলায় নিজের মনে বলল, “গরীবরে কঠিন হইতে হয় বউ । তাগোরে কান্দন মানায় না । কানলে কি টেকা আইব? আইব না । তার জন্য কাম করন লাগব । কান্দন হইলো গরীবের শত্রু ।” ট্রেন তার গতিময়তা নিয়ে চলতে শুরু করেছে । ট্রেনের ছাদে মানুষ তুলনামূলক কম । বাচ্চু মিয়া কাপড়ের ব্যাগটা মাথার নিচে রেখে শুয়ে পড়েছে । তার থেকে একটু দূরে এক বাউল ফকির উঠেছে । গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বোধহয় । আসলেই তাই । সে দোতরায় সুর তুলে দিয়েছে ।আশেপাশের সমস্তকিছুতে কেমন যেন কিছুটা প্রশান্তি খেলে গেল । বাচ্চু মিয়া নিজের মনে কয়েকবার বলল, “আহারে আহা!” বাউল ফকির গান ধরেছে । বাচ্চু মিয়ার মনটা বড় উদাস হলো । একসময় হামিদা বানুর কথা মনে হলো । একবার ঢাকার চিত্র মনে মনে একে নিলো ।এরকমক ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল । বাউল ফকির গলায় আবার টান ধরেছে,
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কোমনে আসে যায় আমি ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায় ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ
দারুণ।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কোমনে আসে যায়
আমি ধরতে পারলে মন বেড়ি
দিতাম পাখির পায় ।... শেষ রাতে গল্পটি পড়তে বেশ ভালো লাগল। আপনার কলঙ্কিনী চাঁদ এর চেয়ে এ গল্পটি আরো ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা। আমার গল্পের পাতায় আমন্ত্রণ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।