সুপ্রিয় ইরু
পত্রের প্রারম্ভে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে তোর জন্য রইল নতুন প্রভাতের রক্তিম রাঙ্গা অকৃত্রিম শুভেচ্ছা। থাকনা আজ আমার কথা। ভালোবাসার কথাও আজ নাইবা তুল্লাম। আমার ভালো থাকার খবর শুনার তোর আগ্রহ নাইবা থাকলো। তোর খবর বল। তুই কেমন আছিস? ভালো আছিস তো? অবশ্যই তোর ভালো থাকা এবং সুস্থ থাকা আমার একান্ত সর্বদা কাম্য।
পরসমাচার বহুদিন যাবত তোকে একটি চিঠি লিখব ভাবতেছি। তাই আজ লিখতে বসলাম। হয়তো তোকে লেখা আমার এই চিঠিটা প্রথম এবং শেষ চিঠি। আজকের পর থেকে তোকে আর কখনো বিরক্ত করবো না। জানিস আজকে আমার মনে একটা প্রশ্ন এবং কৌতুহল দেখা দিল। তুই আমায় সত্যি কখনো আধো ভালোবেসেছিস কিনা? জানি আমি চাল চুলোহীন এক নিরাশার মানুষ। তোকে আশার এবং স্বপ্ন দেখানোর সামর্থ এবং সাধ্য কোনটাই হয়তো আমার ছিলনা। কিন্তু মানুষ বলে ভালোবাসার অধিকার টুকু ছিলো।
আজ আমার এই পত্রটা যখন তোর হাতে পৌছবে। তখন আমি তোরে কাছ থেকে অনেক দূরে থাকবো। হয়তো তোর খুব মন খারাপ হবে। হয়তো তুই একটু সস্তি পাবি। হয়তো আমায় তুই অনেক ঘৃনা করবি। নয়তো অনেক ভালোবাসবি। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের দুজনারই। তুই যখন সত্যিটা জানতে পারবি তখন আর আমারা কেউই কারো থাকবো না। বিদায়...তোকে মুক্তি দিয়ে গেলাম। আমি চলে যাচ্ছি নিরুদ্দেশে। হয়তো ফিরবো, হয়তো ফিরবো না, ভালো থাকিস।
ইতি
তোর সুখের কাঁটা
মনি।
এতক্ষন ধরে ইরা মনির লেখা চিঠিটা পড়ছে। আর তার দুচোখ থেকে গাল বেয়ে অশ্র“ গড়িয়ে পড়ছে। ইরা কাঁদছে আর মনে মনে ভাবছে। আল্লাহর বিচার নিরপেক্ষ। কেউ কাউকে কাঁদালে নিজে কাঁদতে হয়। সে মনিকে বিনাদোষে তার জীবন থেকে সরিয়ে অন্য কাউকে পেতে চাইল। কিন্তু আজ কেউই তার জীবনে রইল না। মনির জন্য আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে আজ তার নিজের কাছে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। ভাবছে মনির কি দোষ, মনি তো এমনি এমনি তার জীবনে আসেনি। ওইতো নিজেই মনিকে ভালোবেসে তার জীবনের মায়াজালে জড়াইছে। এক পর্যায়ে ইরা খবর নিয়ে জানতে পারল মনি নিখোজ।
বছর দুয়েক আগের কথা। বিকম পড়–য়া মনি গ্রাম থেকে শহরে তার এক দুশসম্পর্কের মামার বাড়ীতে আসে। উদ্দেশ্য পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করা। মামার স্ত্রী সায়মা বেগম আর দুই কণ্যা সন্তান ইরা আর ইতু কে নিয়ে তার সংক্ষিপ্ত পরিবার। এক কথায় মনি নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাবে আর ইরা ইতুকে পড়াবে। ইরা আর ইতু মনিকে হোম টিচার হিসেবে পেয়ে যতটানা আনন্দিত হয়েছে তার ছেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছে সময় কাটানোর মত একজন সহপাঠি পেয়ে।
ইতু ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে, আর ইরা সদ্য এস এস সি পাশ করা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী। তার ফর্সা তুল তুলে শরীর, আকর্ষনীয় ফিগার। চন্দ্রাভা মুখ, হাস্যউজ্জল চেহারা। ধব ধবে সাদা মুক্তার মত দাত, টানা হরিনী চোঁখ, বাঁশির মত নাক, দীঘল লম্বা কেশ। বাতাশে যেন ঘন আঁধার মেঘে দোল খেলে। তার চলনে পায় যেন রিম ঝিম বৃষ্টিতে নূপুরের সুর তোলে। তার চোখে মুখে যৌবনের উদ্যত প্রেম প্রেম খেলা। চঞ্চল উতলা মনে সারাদিন এটা সেটা প্রশ্ন করে মনিকে হয়রান করে তোলে।
এভাবে চলতে চলতে কেটে যায় কয়েক মাস। দিন যত যায় মনি মামার পরিবারের সাথে খাঁপ খাইয়ে হয়ে উঠে পরিচিত এক আপনজন। ইরা ইতুকে পড়ানো ছাড়াও নিজের পড়ার ব্যস্ততায় চলে যাচ্ছে তার দিন। মামা-মামীর আতিথ্যতায় এবং ইরা ইতুর রহস্যময় গোপন ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মনি মনে মনে তাদের ভূয়সি প্রসংশা করে।
বেশ কিছুদিন পরের কথা। একদিন সন্ধায় পড়ার টেবিলে ইরা মনিকে প্রশ্ন করে।
ইরা: আচ্ছা ভাইয়া কিছু মনে করবেন না, একটা প্রশ্ন করব?
মনি: কর, আমার কাজইতো প্রশ্ন শোনা আর তার উত্তর দেওয়া।
ইরা: আপনি কি কখনো কাউতে ভালোবেসেছেন বা এখনো বাসেন?
মনি: (আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকিয়ে) তুমি এসব অবাক করা প্রশ্ন করতেছ কেন?
ইরা: (ইতস্তবোধ করে) না মানে এমনিই।
মনি: এসব ভালো না, এসব খারাপ।
ইরা: বলবেন, কেন?
মনি: ভালোবাসা ভালোনা। এটা একটা খারাপ ব্যাধি
ইরা: জানেন, আমাদের একটা ক্লাস টিচার বলেছেন- খারাপ এবং নিষেধাজ্ঞার প্রতি মানুষের আকর্ষন এবং আগ্রহটা একটু বেশী। ভালোবাসা ভালো না, তবুও মানুষ ভালোবাসে। কেন জানেন? মানুষকে বাঁচতে হলে কাউকে না কাউকে ভালোবাসতে হয়।
মনি: ও তাই বুঝি। তোমার সাথে পারা যাবে না। এ বেলায় দেখছি তুমি অনেক এগিয়ে।
ইরা: আমার একটা উপকার করবেন?
মনি: কি উপকার বলো?
ইরা: (ঠন ঠন ভাষায়) ধরুন আমি কাউকে ভালোবাসি এখন তাকে কিভাবে জানাবো বা প্রপোজ করবো??
মনি: (ক্ষানিকটা হতবম্ভ হয়ে) তাকে সময় এবং সুযোগ বুঝে সরাসরি বলে দিবে। এটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে একটা চিঠি লিখে জানিয়ে দিবে। সাথে অবশ্যই একটি গোলাপ থাকতে হবে।
ইরা: ঠিক আছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এ বলে ইরা চলে গেল।
রাতের বেলায় সবাই খেতে বসেছে। মনি তখনো খেতে আসেনি। সায়মা বেগম তাকে দেখতে না পেয়ে ইরাকে পাঠায় তাকে ডেকে আনতে। ইরা এসে চুপি চুপি পায়ে মনির ঘরে প্রবেশ করে। ইরা দেখতে পায় মনির ঘরে আলো নেই। অন্ধকারে মনি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ইরা আলো জ্বালিয়ে দেয়।
আর আস্তে আস্তে মনিকে ডাকতে থাকে। ভাইয়া!! ভাইয়া!! কি ব্যপার? শুয়ে আছেন যে, খেতে চলেন। আম্মু ডাকছে। কি হলো কথা বলছেন না যে? শরীর খারাপ নাকি? মনি নড়ে চড়ে শুইল আর হাতের ইশারায় বুঝালো তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। ইরা বুঝতে পারল এবং তার মাথার কাছে এসে বসল আর বল্লো...চুল গুলা একটু টেনে দেই? আপনার ভালো লাগবে। মনি কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইল। ইরা কোন সংকোচ না করে মনির কপালে হাত রাখলো। মনি এই প্রথম কোন মেয়ের স্পর্শ অনুভব করল। মনি বাধা দিল না। শান্ত ছেলের মতো শুয়ে রইল। মনি ইরার নরম হাতের ছোঁয়া ভালোই উপভোগ করতে লাগল। এক সময় ধীরে ধীরে কখন যে মনি ঘুমিয়ে পড়ছে নিজেও টের পায়নি।
ইদানিং ইরার যত্নেআত্তি আর আদিখ্যেতায় মুগ্ধ মনি। ভালোই লাগছে মনির। সে মনে মনে ইরাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু ভয়ে প্রকাশ করতে পারছেনা। না জানি সে কি ভাবে। এদিকে মামা-মামীর কথা ভেবেও সে নিজেকে ঘুটিয়ে রাখে। এভাবে আরো কিছুদিন গড়াতে থাকে। এদিকে ইরাও কোন ভয়ের তোয়াক্কা না করে ভিতরে ভিতরে মনিকে ভালোবাসে ফেলে। এখন শুধু প্রকাশের পালা। আজ ১৪ই ফেব্র“য়ারী। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই মনিকে তার মনের কথা জানাতে আজকের দিনটাকে ইরা মোক্ষন সুযোগ হিসেবে বেচে নিয়েছে। এজন্য ইরা আগে থেকেই প্লান করে রেখেছে। ইরা একটি লাল গোলাফ নিল, আর একটা চিরকুট লিখল। তাতে লিখা ছিল:
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি
তোমার কাছ থেকে পজিটিভ কিছু আশা করি।
ইতি,
ইরা।
অবশেষ গোলাপ আর চিরকুটটি ইরা গোপনে মনির পড়ার টেবিলের এক পাশে রেখে দিল।
এদিকে ইরার দেওয়া চিরকুট এবং গোলাপটি হাতে পেয়ে মনি কোন আপত্তি না করে মনে মনে হ্যাঁ বলে দিল। রাতে যখন সবাই খেতে বসে, ইরা তার আম্মু আর ইতুর আড়ালে মনিকে প্রশ্ন চুড়ে-
ইরা: আমার উত্তরটা কি পেলাম?
মনি: (মাথা নিচু করে) কি আর করা। ধরা যখন পড়েছি মোড়লের হাতে খানাতো খাইতেই হবে একসাথে। তাছাড়া আমারতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। কেউকি এমন সুযোগ হাত ছাড়া করবে?
ইরা: (একটু মুচকি হেসে) তাহলে বুঝতে পেরেছেন।
মনি: না বুঝে কি আর পারা যায়?
ইরা: মহাশয়কে বুঝার জন্য ধন্যবাদ।
এরি মধ্যে কথা আর খাওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার ঘরে চলে যায়। মনি ইরার চলে যাওয়ার দৃশ্যে পিছন থেকে কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
এভাবে সময়ের হাত ধরে কেটে যায় মাস দুয়েক। ইরা আর মনির মধ্যে গোপনে তাদের মনের আদান-প্রদান চলতে থাকে। তারা দুজনেই ভালোবাসার গভীর জলে হাবুডুবু খায়। তারা মারাত্মক প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দুজন এখন দুজনের মনের শূণ্যস্থান। নিজেরা নিজেদের মধ্যে গল্প করে। ছাদে ঘুরতে যায়। নিরিবিলি একা একা জোসনা দেখে। দুজন দুজনাকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারে না। তারা নিজেদেরকে ইতিহাসে নতুন প্রেমের জুটি হিসেবে গণ্য করে। তারা মনে করে তাদের প্রেম হয়তো লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ আর রোমিও জুলিয়েট কেও হার মানাবে। ধীরে ধীরে তারা আপনে থেকে তুই বা তুমি সম্বোধনে নেমে আসে।
দিন যত যায়, ইরা চরিত্রটি হয়ে ওঠে ভালোবাসার এক এক পাগলীর নাম। দুষ্ট প্রকৃতির বদ মেজাজি। ভালোবাসে অনেক দুষ্টমি করে। কখনো বা চুপ চাপ কথায় কথায় রাগ করে, মেজাজ দেখায়। মনির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আবার রাগ ভাঙ্গলে নিজে নিজে এসে কথা বলে। ভালোবাসার মানুষের মত ভালো আচরন করে। ইচ্ছেমত মনিকে ভালোবাসে। তার সাথে বাইরে ঘুরতে যায়। ফুসকা খেতে চায়। হাতে হাত রেখে ইচ্ছের কথা জানায়। মনির সাথে তার আগামী দিনের পথ চলার স্বপ্ন দেখে।
বিকেল বেলা। সময় ৫.৩০ মি:। মনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। কান সজাগ কিন্তু চোখ বন্ধ। হঠাৎ তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিতেই কন্ট্রাকনেমে ইরা নামটি বেসে ওঠে। মনি ভাবল ইরা ফোন দিচ্ছে। তার মানি কোচিং থেকে তাকে আনার সময় হয়ে গেল। মনি ফোন রিসিভ করতেই অন্য প্রান্ত থেকে ইরার কন্ঠ ভেসে আসলো।
ইরা: কি ব্যপার মিস্টার, আমায় নিতে আসবেন না?
মনি: (দুষ্টমির ছলে) না আমি যেতে পারবো না। তুমি একা একা চলে এসো।
ইরা: ঠিক আছে। আপনি শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এদিকে কেউ নিয়ে গেলে চোখে হাত দিয়ে কাঁদতে হবে। বলে দিলাম পরে আফসোস করবেন।
মনি: না না আমি কখনো কাঁদবো না। আফসোসও করবোনা।
ইরা: ঠিক আছে। দেখি তুমি কি করে না আস। আমি আম্মুকে ফোন দিতেছি।
বলতে না বলতে ইরার আম্মু আয়সা বেগম এসে মনিকে ডাকতে লাগলো। মনি, এই মনি, ইরাকে আনতে যাবি না বাবা? ওতো একা আসতে পারবে না। দেরী হয়ে যাচ্ছে তো। ও কখন থেকে তোর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। মামানী এইতো যাচ্ছি আমি, মনি সায়মা বেগমের কথায় সায় দিল।
এদিকে ইরা কোচিং শেষে তার দুই বান্ধবীকে নিয়ে ফুচকা খাচ্ছে। মনিকে দেখা মাত্র ইরা এক গাল হেসে দিল। মনিও একটু মুচকি হেসে তার উত্তর দিলো। এতক্ষতে মনির দিকে ইরার বান্ধবিদের চোখ পড়লো। রুপু ইরার কানে কানে ফিস ফিস করে বল্লো, তোর ভাইয়াটাতো দারুন। খুবই হ্যান্ডস্যাম। আমায় দিয়ে দেনা, আমি বিয়ে করে ফেলি। আরে ছাড়তো পাগল। আমি দিলেতো তুই পাবি। ইরা ক্ষেপে তার বান্ধবী রুপুকো উত্তর দিলো।
ইরা: আমি ওকে ভালোবাসি।
রুপু: সত্যি বলছিস?
ইরা: হ্যা সত্যি বলছি।
রুপু: এতদিন বলিসনিতো!!
ইরা: বল্লে কি করতি? তুই ভাগিয়ে নিতি?
রুপু: (দুষ্টমি করে) পারলেতো তাই করতাম।
এতক্ষনে মনি এসে ইরার পাশাপাশি দাঁড়ালো, আর বল্লো, চলো। এরই মধ্যে ইরার আরেক বান্ধবী রিনু বলে উঠলো, একটু অপেক্ষা করুন। দেরি করে আসছেন তাই আপনাকে জরিমানা গুনতে হবে। মনি বলে, বলুন কি জরিমানা? মনি বলে, আমরা তিন বান্ধবী মিলে ফুসকা খেয়েছি তার বিল দিতে হবে। ঠিক আছে বলে মনি পকেট থেকে একটা একশত টাকার নোট বের করে বিল পরিশোধ করে দেয়। এরই ফাকে রুপু আর রিনু বিদায় নিয়ে চলে যায়। ইরা মনিকে উদ্দেশ্য করে বলে, একটা রিক্সা নিন না। পা ব্যথা করছে, হাটতে পারছি না। মনি ইরার মুখের দিকে অবাক চোখে তাকায় আর বলেন, আমরা দুজন একসাথে। হ্যাঁ তো কি হয়েছে? আমার সাথে রিক্সায় চড়তে আপনার ইচ্ছে করে না? বলতে বলতে ইরা একটা রিক্সা ইশারা করে। ইরা নিজে রিক্সায় উঠে মনিকে উঠতে বলে। রিক্স চালক প্যাডেল চাপ দিতেই রিক্সা চলতে শুরু করে। ইরা রিক্সার ফুট তুলে দিল এবং তার একটা হাত মনির কাঁধের উপর রাখল। মনি কিছুটা ইতস্তবোধ করে নড়ে চড়ে বসে। ইরা মনির মাথাটা তার মুখের কাছে টেনে আনে আর তার গোলাপী দুটি ঠোঁট দিয়ে মনির গালে একটা আদর বসিয়ে দেয়।
আজ ছুটির দিন শুক্রবার। বিকেল বেলা। ইরার মা-বাবা বাসায় নেই। শুধু ইরা, ইতু আর মনি বাসায়। ইরা আর ইতু তাদের ঘরে। মনিও তার ঘরে শুয়ে শুয়ে কোন একটা গল্পের বই পড়তেছে। হঠাৎ ইরা মনির ঘরে হাজির। মনি ইরার উপস্থিতি লক্ষ করে বল্লো, কি ব্যপার তুমি এখানে, খুমাইতেছোনা? না ইতু ঘুমায়, আমার ঘুম আসছেনা। চলেনতো একটু ছাদে যাই। মনি অসম্মতি জানালো। ইরা মনির হাত ধরে টানাটানি করে। দুজনেই অনেক জোরাজোরি করে। মনি ইরার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে সজোরে টান মারে। ফলে মনির বাহুর জোরে ইরা এসে তার বুকের উপর পড়ে। ইরা উৎফুল্ল মনে মনিকে জড়িয়ে ধরে। মনি অসস্তিতে পড়ে। এক পর্যায়ে ইরা উত্তেজিত হয়ে মনির উপর ছড়িয়ে পড়ে এলোপাতারি ভাবে ইরা মনির মুখে, গালে, ঠোঁটে, কপালে চুমু খেতে শুরু করে। ইরা মনির সাথে পাগলের মত আচরন করতে থাকে। আর মনির কানে কানে কিছু একটা বলতে থাকে। ইরা মনির কাছে কিছু একটার আবদার করে। কিন্তু মনি সায় দিচ্ছে না। মনি কঠিন এক বিপদের আবাস পায়। ইরার এমন আচরন লক্ষ করে রাগে জিদে মনির শরীর প্রায় ফেটে যায়। মনি নিজের অত্ম সম্মান বাঁচাতে ইরাকে ধাক্কা দিয়ে তার উপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। ইরা বেবাচেঁকা খেয়ে অসহায়ের মত মনির দিকে তাকিয়ে থাকে।
সে দিনের পর থেকে বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ করা যায়। ইরা মনির সাথে খুব একটা কথা বলেনা। খুব একটা মিশেওনা। আজকাল কোচিং থেকেও তাকে নিয়ে আসতে বলে না। ফোনও করেনা। একা একা বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে অধিকাংশ সময় মন খারাপ করে থাকতে দেখা যায়। না পারতে পড়তেও বসে না। মনিকে এড়িয়ে চলতে দেখা যায়। এদিকে মনিরও খুব মন খারাপ। দিন দিন মনি আর ইরার মাঝে দূরত্ব বেড়েই চলছে। ইরার এমন পরিবর্তন দেখে মনিকে ভাবিয়ে তুলে। তাই আজ মনে পড়ে স্থির করে না বল্লেও সে ইরা কে কোচিং থেকে আনতে যাবে। মনির যেমন ভাবনা তেমন কাজ। যথাসময়ে চলে গেল কোচিং সেন্টারে, গিয়ে যা দেখেন মনি তা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারে না। মনি দেখতে পায়, ইরা অপরিচিত একটা ছেলের সাথে রিক্সায় করে বাসায় ফিরছে।
এক সাপ্তাহ পরের কথা। সন্ধায় ইরা দরজায় নক না করে, কোন কথা না বলে চুপচাপ সোজা মনির ঘরে ঢুকে পড়ে। মনি তখন ঘুমের ভান করে চোখ ভুজে অজানা চিন্তায় শুয়ে আছে। ইরা হঠাৎ চেচামেচি করে বলে ওঠে। কি ব্যপার, আপনি অসময়ে, অবেলায় শুয়ে আছেন যে?? আমাদের কে পড়াবেন না? না পারলে বলেন, বাবাকে নতুন টিসার দেখতে বলি। মনি ইরার এমন আচরনে হতবম্ভ হয়ে পড়ে। মনি ইরার কাছ থেকে এমন কিছু আশাতো দূরের কথা কখনো কল্পনাও করেনি। মনি অজানা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে।
সময়ের সাথে সাথে মানুষগুলো বদলে যায়। বদলে যায় সম্পর্ক। বদলে যায় ভালোবাসা। এমনি নিয়তি নেমে আসে ইরা আর মনির জীবনে। তাদের দুজানের মনের টানাপোড়নে সম্পর্কে ঘুন ধরে। জোয়ার ভাটার খেলায় ভাটারই জয় হয়। বিজ্ঞানিদের এক গবেষনায় দেখা যায়, নারীদের মন প্রতি সেকেন্ডে তিন বার পরিবর্তন হয়। আজ কাল ইরাও অনেক বদলে গেছে। অগের মত এখন আর তাদের বনিবনা হয়না। ইরা মনিকে একদম সহ্য করতে পারেনা। সব সময় এ্যাবোইড করে চলে। তবে কি হয়েছে ইরার? সে এমন কেন করে? অজানা সংকায় মনির মনে প্রশ্ন ধীরে ধীরে সম্পর্ক ভাঙ্গার বেদনা বাসা বাঁধে। মনি আর ইরার সম্পর্ক ভাঙ্গার পিছনে প্রশ্নের দাগ রেখে যায়। মনি হাল ছেড়ে দেয়। লুকিয়ে লুকিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাদে। তার চোখে-মুখে অন্ধকার নেমে আসে। মনে মনে মনি স্থির করে সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক এর একটা বিহিত করা দরকার। প্রয়োজনে এ বাসায় সে আর থাকবে না। কিন্তু সময় হয়ে উঠে না। মনি তাই ইরাকে একটা চিঠি লিখে যায়।
সমাপ্ত