অরণিকা

পার্থিব (আগষ্ট ২০১৮)

মেহেদী সম্রাট
  • ৫৪
প্রাতভ্রমণ শেষে বাসায় ঢোকার সময় গেইটের বাইরের লেটার বক্সটা প্রতিদিনই চেক করেন শিশির চৌধুরী। তারপর শূন্য লেটার বক্সে ফের তালা ঝুলিয়ে দো'তলার বারান্দায় গিয়ে বসেন। এক কাপ কফি হাতে খুলে বসেন খবরের কাগজ। বারান্দার টবে সদ্য ফোটা হাসনাহেনা আর ধূমায়িত কফির গন্ধ একাকার হয়! খবরের কাগজের পাতায় মুখ ঢাকেন শিশির চৌধুরী। তার চেহারার কাঠিন্যের মাঝেও যে খানিক্ষণের জন্য একরাশ হতাশা-শূন্যতা-হাহাকার ফুটে ওঠে, তা তিনি চাইলেও লুকোতে পারেন না। টানা দশ টা বছর!! হ্যাঁ দশ বছর ধরেই শিশির চৌধুরীর এরকম সকাল কাটে। কিন্তু আজকের দিনটা এক বিশেষ দিন তার কাছে। গত দশ বছর ধরেই এইদিনে তিনি অফিসে যান না। এই দিনটা তিনি ঘুরে বেড়ান। একা একা। রমনায়, সোহরাওয়ার্দীতে, চন্দ্রিমায়, টিএসসি'তে, রবীন্দ্র সরোবরে। তারপর ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরেন রাতে। এরপর প্রচণ্ড রকম ড্রিংক করেন। বছরে এই একটা রাতেই তিনি ড্রিংক করেন।
তবে আজকের এই বিশেষ দিনটা শিশির চৌধুরীর কাছে আরো বেশি স্পেশাল। গত দশ বছরে যেটা ঘটেনি আজ সেটাই হয়েছে। আজ লেটার বক্সে একটা ইনভেলাপ তিনি পেয়েছেন। সাদা ইনভেলাপ। আজো তিনি বারান্দায় বসলেন ঠিকই, কিন্তু কফির কাপ হাতে খবরের কাগজে মুখ লুকালেন না। বরং ইনভেলাপ খুলে বের করে আনলেন তিন ভাজ করা একটা কাগজ। ভাজগুলো খুললেন। হাতে লেখা চিঠি। এই হ্যান্ড রাইটিং তার খুব পরিচিত। খুবই। শিশির চৌধুরী চিঠিতে হারিয়ে ফিরে যায় দশ বছর আগের দিনগুলোতে। তখন ঢাবি'র ক্যাম্পাসে কি উদ্দাম ছোটাছুটিই না করতেন তারা। আড্ডা দিয়ে বেড়াতেন রমনায়, সোহরাওয়ার্দীতে, চন্দ্রিমায়, টিএসসি'তে, রবীন্দ্র সরোবরে। সাথে থাকতো অরণিকা। একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলো তারা। অরণিকার সুন্দর চেহারার থেকে ঝিরঝিরে লম্বা চুলগুলোই বেশি আকর্ষণ করেছিলো শিশির কে। ক্যাম্পাস জুড়ে কে না জানত এই জুটির কথা! চুটিয়ে প্রেম করতো তারা। অরণিকার পছন্দের জায়গা ছিলো রবীন্দ্র সরোবর। সেখানে বসে থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা কখন যে পার হয়ে যেত দু'জনে টেরই পেতো না! তারপর একদিন বলা নেই কওয়া নেই অরণিকার বাবা হুট করেই তাকে বিদেশে নিয়ে গেলো। যেদিন অরণিকা চলে গেছিলো, সেটা ছিলো দশ বছর আগের আজকের এই দিনই!
কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলেন শিশির চৌধুরী। হাতের চিঠিটার দিকে নজর দিলেন। দশ বছর পর অরণিকা তাকে চিঠি লিখেছে। আজ বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে যেতে বলছে। দশ বছর আগে তারা যেখানটায় বসতো, আজো সেখানেই থাকবে লিখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোবার বছর দুয়েক পরে শিশিরের বাবা মারা যায়। তারপর থেকে বাবার ব্যবসার দায়িত্ব আর বুকের ভিতর অরণিকাকে নিয়েই বেঁচে আছে শিশির। বিয়েটা পর্যন্ত করেনি। আজ এতগুলো বছর পরে অরণিকার সাথে দেখা হবে, এজন্য তাকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বিকেলের আগ মুহূর্তে বেরিয়ে পরে শিশির। পড়নে রয়েল ব্লু কালারের একটা পাঞ্জাবী। এই রংয়ের পাঞ্জাবী অরণিকার বেশ পছন্দ। যাই হোক, যথা সময়ে রবীন্দ্র সরোবরে পৌঁছায় শিশির। দশ বছর আগের সেই বসার জায়গা খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হয় না। অরণিকা আগেই এসেছে। শিশিরের পছন্দের রংয়ের শাড়ী পড়েছে সে। কিন্তু শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে যেন! চোখের নিচে কালো দাগ পরেছে। চুলগুলো ছোট হয়ে গেছে। ঠিক কেমন যেন বুড়িয়ে গেছে অরণিকা!
পাশে গিয়ে বসলো শিশির। নরম গলায় অরণিকা জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো?। শিশিরও উত্তর দিলো, ভালো আছি। খুবই স্বাভাবিক দু'জনই। যেন দশ বছর দীর্ঘ গ্যাপ তাদের মধ্যে ছিলো না! মনেই হয় না দীর্ঘদিন পরে তারা আবার একত্রিত হয়েছে। এরপর অনেক্ষণ চুপচাপ থাকলো দু'জনই। নিরবতা ভেঙে অরণিকা বললো, 'ডাক্তার বললো আমার ক্যান্সার টা নাকি গ্রেড থ্রীতে পৌঁছে গেছে'। বলে একটু থামলো। বিস্ফোরিত চোখে অরণিকার দিকে তাকিয়ে আছে শিশির। অস্ফুটে শুধু একটা শব্দ বেরিয়ে এলো তার মুখ থেকে, 'তোমার ক্যান্সার!!'। বলতে শুরু করলো অরণিকা, 'সেতো দশ বছর আগেই ধরা পড়েছে। এই দশটা বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করেছি। আর পারলাম না শিশির। এখন গ্রেড থ্রী। আর হয়তো অনলি ওয়ান মানথ্ স্টে করবো পৃথিবীতে। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এলাম। আগামীকালের ফ্লাইটেই আবার ফিরে যেতে হবে। তুমি ভালোথেকো। অরণিকা তোমাকে আজো ভালোবাসে। আমি চলি। ' পাথর হয়ে বসে আছে শিশির। চলে যাচ্ছে অরণিকা। হয়তো চলে যাচ্ছে পার্থিব জীবন থেকেই। তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে শিশির। একটা কথাও সে আর উচ্চারণ করতে পারেনি!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ সুন্দর গল্প.....................।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার গল্প আর কবিতায়।
মোঃ মোখলেছুর রহমান শিশির ও অরণিকা দুজনের জন্যই মায়া হচ্ছে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

পার্থিব জীবনের সকল মায়া কাটিয়ে ক্যন্সারাক্রান্ত এক মানবীর ধীরে ধীরে বিদায় প্রস্তুতি গ্রহণ করার এক মর্মকাহিনী ফুটে উঠেছে গল্পে।

১৪ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী