ছাই

প্রশ্ন (ডিসেম্বর ২০১৭)

মেহেদী সম্রাট
  • ১১
‘লইবো..ও.. ছা..আ..ই?
ছাই লইবোনি?
তিনতলার শোবার ঘরেও পৌঁছলো ছাই বিক্রেতার নারী কণ্ঠ। ফরহাদ সাহেবও শুনলেন। আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলেন তিনি। বালিশের পাশ থেকে স্মার্টফোনটা হাতে নিলেন। লক ওপেন করে সময় দেখলেন। ৭:০০ টা বাজে। সিদ্ধান্ত নিলেন আজ আর হাঁটতে বের হবেন না। অবশ্য আজ উঠতেও খানিকটা দেরি হয়ে গেছে! প্রতিদিন ছয়টায়ই বেরিয়ে পরেন। বিছানা থেকে নেমে রিডিং টেবিলের ওপর রাখা বেন্সন এন্ড হেজেস’র প্যাকেটটা নিলেন। বারান্দায় গিয়ে নিজের বেতের সোফাটায় বসলেন। ফরহাদ সাহেবের বারান্দাকে একটা মিনি বাগান বলা চলে। নার্সারি থেকে খুঁজে খুঁজে এনে পাতাবাহার, মানিপ্ল্যান্ট, বনসাই, ছোট পামগাছ, ফরচুন ট্রি, চায়নিজ কামিনী, রঙ্গন, গোলাপ, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপার গাছ তিনি নিজেই লাগিয়েছেন। বারান্দা জুড়ে ছোট-বড় নানান বাহারি টব। সিগারেট জ্বাললেন। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে দেখলেন দূরে হেঁটে যাচ্ছে ছাই বিক্রেতা মহিলা। মাথায় বড়সড় একটা বস্তায় ভরা ছাই। একই সুরে ডেকে চলেছে..

সাদা-কালো চুলের ফরহাদ সাহেব ভাবলেন, মহিলার বস্তার মধ্যে কিসের ছাই? ছাইতো কত কিছুরই হতে পারে! তার মনে পড়ে একাত্তর সালের কথা। কত ছাই তখন তিনি দেখেছেন! স্কুলের উপরের ক্লাসের ছাত্র তখন তিনি। তখন শুধু বাতাসে ছাই উড়তো আর ভেসে বেড়াতো পোড়া গন্ধ। পঁচা গন্ধ। লাশ পঁচা গন্ধ। শুকিয়ে যাওয়া রক্তের গন্ধ। তার স্পষ্ট মনে আছে, একাত্তর সালের এক সন্ধ্যায় ভূবেন বোসদের বাড়িটার সামনে অনেক লোক জমেছিলো ছাই দেখতে! হ্যাঁ ছাই। বোস বাড়ির দগ্ধ খুঁটিগুলো শুধু দাঁড়িয়ে ছিলো। আগরবাতির মত ধোঁয়া বেরোচ্ছিলো সেগুলো থেকে। বাকি সব ছাই! কত ছাই সেদিন সেখানে জমেছিলো! ঘর পোড়া ছাই, বোসদের মন্দির পোড়া ছাই, ভুবেনের দেঢ় বছরের বাচ্চাটার দেহের ছাই, ধানের গোলার ছাই, খুকির স্কুলের বইয়ের ছাই! ফরহাদ সাহেবের চোখদুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে। আরো কত রকমের ছাইয়ের কথা যে মনে পড়ে তার!

একাত্তরের অনেক পরেও এইতো সেদিন, ঐ বস্তিতে যেদিন আগুন দেয়া হলো। কত ছাই সেখানে ছিলো! রিকশা চালক কবিরের দু’কেজি মোটা চালের ছাই, যা সে ঐদিনই কিনেছিলো! সেলাই দিদিমণির মাটির ব্যাংকের ছাই , ছোট বোনের চিকিৎসার জন্য যেখানে তিল তিল সঞ্চয় ছিলো! শিশুশ্রমিক কাজলের স্বপ্নের ছাই, যে স্বপ্ন সে বটতলার ভাসমান স্কুল থেকে দেখতে শিখেছিলো! ফরহাদ সাহেব আরো অনেক রকমের ছাইয়ের কথা ভাবেন। লংদৌ’র ছাইয়ের কথা কে না জানে! পাহাড়িদের দেহ পোড়া ছাই, স¤প্রীতির আশ্বাস পোড়া ছাই, সেটেলারদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের আগুনে আরো কত কিছুর ছাই যে সেখানে ছিলো!

হঠাৎ সিগারেটের আগুন ঝরে পড়ায় সম্বিত ফিরে পান ফরহাদ সাহেব। তা¤্রকু- শলাকায় ফের টান দিলেন জোরে। তারপর একবুক ধোঁয়া ছাড়লেন। ধোঁয়ার সাথেই বেরিয়ে গেলো একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস। ‘ছাইওয়ালি আজকের সকালটাই এলোমেলো করে দিয়ে গেলো’ -বিড়বিড় করে বললেন তিনি। ততক্ষণে আঙ্গুলের মাঝে সিগারেটটাও ছাই হয়ে গেল! ফরহাদ সাহেব ভাবেন, এই যে এত রকমের ছাই -এর সবই তো দৃশ্যমান। অদৃশ্য কোন ছাই কি আছে? যেমন অন্তরদহনের ছাই! বুকের ভিতর যে ছাই অথবা ছাই চাপা আগুন জমে আছে, সেটাও কি কেউ দেখে? কোন মানুষ? প্রিয়তমা? সমাজপতি? কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু অদৃশ্য কোনো ছাই আছে কিনা এটা সত্যিই খুব কঠিন একটা প্রশ্ন। আমরা বাস্তবে আগুন জ্বলতে দেখি, অবশিষ্ট যা পড়ে থাকে তাই ছাই। কিন্তু হৃদয়ের মধ্যেও তো আগুন জ্বলে, সেই আগুনের ছাই নেই? এটা সত্যিই একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন। অনেক ভাল গল্প। শ্রদ্ধা জানবেন। শুভেচ্ছা জানবেন।
Farhana Shormin মুটামুটি ভাল হয়েছে
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্প আরও পরিষ্কার করা যেত এবং আরও কিছু ভাবনা যোগানো যেত.... শুভকামনা রইল
সাদিক ইসলাম সুন্দর গল্প। সময় পেলে আমার গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ।
মৌরি হক দোলা সুন্দর গল্প...ভালো লাগা রইল..
মুশফিক রুবেল ভাল লাগলো , অল্প কথায় অনেক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন , শুভ কামনা রইলো , সময় পেলে আমার গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইলো
%3C%21-- %3C%21-- Bhalo laglo. Vote rekhe gelam. Shomoy pele amar golpoti pore dekhben.
সাইয়িদ রফিকুল হক গল্পটির বিষয়বস্তু ভালো লেগেছে। তবে গল্পটি আরেকটু বড় হলে ভালো হতো। শুভকামনা আপনার জন্য।
Dhonnobad.. eti boro howar golpo noy :)

১৪ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী