যমুনা নদীর তীরে এই ঘাট বালাসী বাংলাদেশের একমাত্র রেল ফেরি ঘাট । অামি অাছি এই বালাসী ঘাট থেকে একটু দূরে একটা পলাশ গাছের নীচে শুয়ে এখন । সকালের ঠান্ডা বাতাস অার নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য অামাকে ক্ষনিকের জন্য বিহ্বল করে তুলেছে যদি ও অামার এখন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার মত মানসিক অবস্হা না । অামরা বিনি পয়সায় অাল্লাহর অনেক নিয়ামত উপভোগ করি । মানুষের জীবন অনিশ্চিত , কখন তার জীবন কি হবে তা সে জানে না । সমুদ্রের যেমন জোয়ার ভাটা অাছে তেমনি মানুষের জীবনেও অাসে জোয়ার ভাটা , সমুদ্রের সঙ্গে মানুষের এখানেই মিল ।
দুটো মেয়ে , ছেলে ,স্ত্রীকে অামার সংসার । অামার বাড়ি ফুলপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামে। নদীর ভাঙনে এই ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে দোচালা বাড়ি করেছি , অামার ফুলপুর বাজারে একটা ফলের দোকান অাছে অার একটা কনফেকশনারীর দোকান করেছি কয়েক মাস অাগে ।
বাবা মা এর কাছে তাদের ছেলেমেয়েরাই সবকিছু । কিন্তু সন্তানের কাছে কি বাবা মা ই পৃথিবী !? হয়ত বা জীবনের কিছু সময়ের প্রয়োজনে সন্তানদের কাছে বাবা মা প্রিয়জন । সব বাবা মা এর মত অামি ও ভেবেছিলাম অামার ছেলে সোহেল অামাকে হাত ধরে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে । সংসারের হাল ধরবে সে । সেই হাত উঠেছে অামার দিকে তবে সাহায্য করতে নয় নির্যাতন করতে । টাকা দিতে না চাওয়ায় অামার ছেলে সোহেল ওর মাকে মারতে যায় অামি বাঁচাতে গেলে সে অামাকে অাঘাত করে । অামাকে
এখন অামার দোকানে থাকতে হচ্ছে প্রানের ভয়ে । সোহেল অামার গলায় ছুরি ধরেছে টাকার জন্য ।
অামার বড় মেয়ে রাহেলাকে পনের বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছি গাইবান্ধার তাহের মিয়ার ছেলে অাশরাফ মিয়ার সঙ্গে । সে ভালই অাছে । ছোট মেয়ে রুমানা অাক্তার পড়ে ফুলপুর ডিগ্রি কলেজে । সে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ফুলপুর ঘাট থেকে নৌকায় পারাপার করে অাসা যাওয়া করে ।এই ঘাটে যাত্রি ছাউনি নেই , বসার ভাল জায়গা নেই, নৌকায় এই ঘাট থেকে নৌকায় উঠতে যে কি কষ্ট সেটা যারা যাওয়া অাসা করে তারা জানে । রেল কর্তৃপক্ষ অার নৌ পরিবহন কর্মকর্তারা শুধু যেন ঘাটের ইজারার টাকাটা নিয়েই দায়িত্ব পালন করেন যাত্রি সেবা করা বা ঘাটের উন্নয়ন করার কাজ যেন তাদের কাজ নয় । মানুষের দূর্ভোগ নিয়ে তাদের ভাবনা নেই কোন ।
অামার ছেলে সোহেল সঙ্গদোষে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে । ক্লাস টেনের থেকেই হয়ত বা ও নেশায় অাসক্ত হয়ে যায় । ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারে নি । তারপর ওকে অার পড়াশুনা করাতে পারিনি । ভেবেছিলাম অামার ছেলে দোকানে সাহায্য করবে , পড়ল না যখন । কুসঙ্গে পড়ে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ল । কারা ওর বন্ধু বা ও কিভাবে ও ইয়াবা কিনে অানতো কার কাছ থেকে বুঝিনি অামরা ।কোথায় কিনতে পাওয়া যায় অামি জানি না । বর্তমান প্রজন্মের মেধা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাদকের নেশায় । অামার ধারণা অামার ছেলে সোহেল মাদক নিত মনে হয় খুচরো বিক্রেতাদের কাছে থেকে । খুচরো বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রন করে গডফাদাররা । এই গডফাদারদের কেউ কেউ অাবার থাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ,তাই তারা থাকে পুলিশের ধরাছোয়ার বাইরে । মাদকের সরবরাহ রোধ করা গেলে হয়ত বা মাদকাসক্তের সংখ্যা অনেক কমে অাসত ।
অামার দুটো মেয়ে রাহেলা অার রুমানা অাছে , কিন্তু না অামার মন চাইল একটা ছেলে । অামার স্ত্রী অার সন্তান নিতে চায় নি ,তবুও অামার জন্য সে মা হয় , সন্তানের জন্ম দিতে সে অনেক অসুস্হ হয়ে পড়ে , তখন অামার মেয়ে রাহেলা ওর মা এর সেবা করা , অামার দেখাশুনা করা ,রান্না করা , রুমানা কে খাওয়ান সবকিছু করেছে । ওর নিজেরই তো তখন ষোল সতের বছর বয়স । অামার ছেলে সোহেলকে খুশি রাখার জন্য অামার পক্ষে যা সম্ভব অামি করেছি । ছেলের জন্য ভাল কাপড় চোপড় , ভাল খাওয়া ,যখন যা চাইত তাই দিতাম । মেয়েদেরকেও বলতাম ভাইকে বেশি অাদর যত্ন করতে ।
সেদিন মসজিদের ইমাম সাহেব অামাদের বলেছেন " হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাদিসে বলেছেন ,' তোমাদের সন্তানদের মধ্যে মেয়েরাই উত্তম ।' ইমাম সাহেব অামাদের উদ্দেশ্য করে অারো বললেন " অাপনারা কি জানেন নবীজি বলেছেন ," যদি একটি পরিবারে একের পর এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে এবং পিতামাতা যদি মেয়েদের যত্ন ও স্নেহের সঙ্গে প্রতিপালন করে তবে মেয়েরা পিতামাতাকে দোজখের অাগুন থেকে রক্ষা করবে । " ইমাম সাহেব অামাদের জিজ্ঞাসা করেন , 'ভেবে দেখেন তো নবীজি কত সুন্দর কথা বলেছেন কন্যা সন্তানদের নিয়ে অার অামরা মা বাবারা মেয়েদের বোঝা মনে করি সেজন্য বিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচি , তা সে ছেলে যেমন ই হোক তাতে অসুবিধা হয় না । ছেলে না হলে বংশ রক্ষা করবে কে ? অামি মারা গেলে অামার অামার বংশ রক্ষা হল কি হল না তাতে কি কিছু অাসে যায় ? বলেন অাপনারা ?"
সেদিন মসজিদের ইমাম সাহেব এর কথা অামার হঠাৎ অাজকে অামার মনে পড়ল । ছেলেকে অামি মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত করার অনেক চেষ্টা করেছি ।কিন্তু কিছু লাভ হয় নি । মাদকের টাকার জন্য সে অামাদেরকে মারধোর করা শুরু করে । ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে মাদকের টাকা যোগার করত । অনেক সময় ঘরের অাসবাব পত্র ভেঙে ফেলত টাকা না দিলে । রাহেলা গতবছর ঈদে এসেছিল বাবার বাড়িতে , তখন অামার ছেলে সোহেল ওর বোনের অলংকার চুরি করে দেয় ,এতে রাহেলা মনে অনেক কষ্ট পায় । তারপর থেকে ও অার অাসে না অামাদের বাড়িতে ।
অামার ছেলে সোহেল বদলে গেছে ,এখন সে ইয়াবাসেবী ,নেশায় মত্ত । নেশার টাকার জন্য এখন পারে না এমন কোন কাজ নেই । অামি বাবা হয়ে অাজ নিজেই নিজের ছেলে সোহেলকে পুলিশের কাছে তুলে দিব । মানসিক অশান্তির চেয়ে বড় শাস্তি অার নাই ।মাদকাসক্ত ছেলের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে অামার জীবন অতিষ্ট হয়ে গেছে । অামি পলাশবাড়ি থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অামার ছেলে সোহেলের বিরুদ্ধে নালিশ করব যাতে তারা ওকে অাইনের মাধ্যমে শাস্তি দেন । বিপথগামী ছেলের এই পরিনতি দেখা একজন বাবার কাছে কতটা যন্ত্রনাদায়ক তা কেউ বুঝতে পারবে না । অামি অাস্তে অাস্তে উঠলাম । সন্ধ্যা হওয়ার অাগেই অামাকে থানায় যেতে হবে ।।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
সন্তানের কারণেই বাবা মা বাবা মা হয়ে উঠা । বাবারা ছেলেমেয়েদের স্নেহের সঙ্গে প্রতিপালন করেন । অতিরিক্ত শাসন যেমন ভাল নয় সন্তানের জন্য তেমনি অতিরিক্ত অাদরও সবসময় মঙ্গলজনক হয় না সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে। বাবা মা এর খেয়াল রাখতে হবে যে সন্তান কি করছে কাদের সঙ্গে মিশছে ।
১১ অক্টোবর - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
২৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪