ললিত কন্যা

কোমল (এপ্রিল ২০১৮)

এস জামান হুসাইন
জিসরিনের সমস্ত বাতাস বিষাক্ত হয়েছে। সিরিয়ার অন্যতম ব্যস্ত নগরী জিসরিন। চারিদিকে কালো ধোয়ায় ছেয়ে গেছে আকাশ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ, ছুপ ছুপ রক্ত। দেখে বুঝার উপায় নেই, একটু আগেও এখানে ছিল ইট পাথরে গড়া শত শত দালান কোঠা। আগুনের ফুলকি ছুটত সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে। “নাবিলা হোটেলটা কোন দিকে” স্ট্রেন্জারের এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত সময় কারো হাতে নেই। এমন সুন্দর সাজানো গোছানো জিসরিন শহর বিমান হামলায় নিমিষেই পরিনত হয় ধ্বংসস্তূপে। সাথে গ্যাস হামলা। বিষাক্ত গ্যাসের আক্রমনে বাঁচা মরার সন্ধিক্ষণে রুমের মধ্যে কাতরাতে থাকে ছোট ছোট দুটি শিশু।

ফারিহা ও ফারিয়া দুই বোন। ফারিহা বড়, ফারিয়া ছোট। আহা! কি মায়াবী চেহারার ললিত দুটি শিশু। মা - বাবার সাথে শহরের ছোট্ট একটি ফ্লাটে তাদের বসবাস। ফারিহা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে মাত্র। ফারিয়া এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করে নাই। চার এ পা রেখেছে সে। সারাদিন ছুটাছুটি আর দৌড়াদৌড়িতে তাদের দিন কেটে যায়। এক বোন যদি জুতার তাক গুছিয়ে রাখে আর এক বোনের দায়িত্ব হয়ে পরে সমস্ত জুতা স্যান্ডেল তাক থেকে নামিয়ে সারা রুমে ছড়ানো। কোন স্থিরতা নেই তাদের মাঝে। তবু তারা মায়াবী। তাদের দেখলে চক্ষু শীতল হয়ে যায়। তাদের নিয়ে মা - বাবার স্বপ্নের অন্ত নেই।

বাবা ফারহান একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন। বেতন খুব বেশী না হলেও সংসারের খরচ এবং মেয়ের পড়াশুনার খরচ বহনে কোন সমস্যা হয় না। অর্থ সম্পদ সঞ্চয় না হলেও তাদের মেয়ে দুটিই সম্পদ হিসেবে সঞ্চিত হচ্ছে। দুটিই মেয়ে, মাঝে মাঝে মা জাহারা টেনশন করলে ফারহান শান্তনা দিয়ে বলতেন, “টেনশন কর না আমাদের মেয়েই বড় হয়ে ছেলের কাজ করবে।”

দুই বোনের মুখে সদা খই ফোটে যেন আকাশ থেকে নেমে আসা এক যুগল মায়াবী পরী। সারাদিন ফারিয়ার “এটা কি? ওটা কি? এটা কেন? ওটা কেন? ” এমন শত প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত থাকে পরিবারের বাকি তিন সদস্য। ফারিয়ার চাহিদাটা যেন একটু বেশিই। সবকিছুতেই তার একটু বাড়াবাড়ি। ফারিহা ও সব সময় ছাড় দেয়। তবুও মাঝে মধ্যে ঝগড়া লাগতে ধরলে মা ফারিহাকে ধমকের সুরে বলেন “ ওতো তোমারই বোন, তোমার সাথে ওমন করবে নাতো কার ওমন করবে ” চুপ হয়ে যায় দুজনেই। তবুও তারা সুখী।

রাত প্রায় বার টা। ঘুম নেই কারো চোখে। ফারিহা ও ফারিয়া খুবই টেনশিত। অফিসের একটু ঝামেলায় বাবা ঘরে ফিরে নি এখনো। জিসরিন শহরে রাত দশটার পরে বাইরে থাকা নিরাপদ নয়। সাত আট বছর থেকে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। কেউ যুদ্ধ করছে ক্ষমতায় থাকার জন্য, কেউ যুদ্ধ করছে গনতন্ত্রের জন্য। কিন্তু কেউ শান্তির জন্য যুদ্ধ করছে না। এ যুদ্ধ মানুষ মারার যুদ্ধ, এ যুদ্ধ শিশু মারার যুদ্ধ। কবে শেষ হবে এ যুদ্ধের?

ক্রিংক্রিং কলিং বেল বাজছে। ফারিহা এবং ফারিয়ার অন্তরে যেন প্রশান্তি চলে আসল। দুজনে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে বাবা এসেছে। জড়িয়ে ধরে দুজনে বাবাকে। আনন্দে কেঁদে ফেলে। অভিযোগের সুরে বলে, “বাবা, কেন তুমি এত রাত করলে? ”
বাবা ফারিহা এবং ফারিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আর কোন দিন দেড়ি করব না মা। ” শান্ত হয় দুজনেই।

ভোর রাত। জিসরিন শহরে চলছে দফায় দফায় বিমান হামলা। সাথে রাসায়নিক গ্যাস হামলা। ঘুর্ণিপাকের মত দিক্বিদিক ছুটছে লোকজন। ফারিহা ও ফারিয়ার বাসার কাছে বিকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরিত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে সবার মাঝে। ফারিহা ও ফারিয়া ভয়ে কেঁদে উঠে। জড়িয়ে ধরে মা বাবাকে। “ভয় পেও না মা, আমরা তোমাদের সাথেই আছি। কিচ্ছু হবে না আমাদের।” তবুও তারা কান্না ধামায় না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কালো ধোয়ায় ছেয়ে যায় সারা রুম। ঘরে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া হয় ফারিহা ও ফারিয়াকে। শেষ রক্ষা হয় না মা বাবার। দুজনেই ঢলে পরেন মৃত্যুর কোলে। আদের ললিত কন্যা বাঁচাতে প্রাণ বিসর্জন দিলেন তারা।

বৃষ্টির মত বোমা বর্ষিত হচ্ছে চতুর্দিকে। দালান কোঠা গুড়িয়ে যাচ্ছে মাটির সাথে। চতুর্দিকে শুধু আগুন আর আগুন। ধোয়ায় ছেয়ে গেছে সমস্ত আকাশ। বাইরে বের হওয়ার কোন উপায় নেই। রুমের মধ্যে চার বছরের ছোট বোনের অভিভাবক এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া বড় বোন। বাবা মা একটু আগেই শান্তির যুদ্ধে মারা পরেছেন!

ফারিহা ফারিয়ার মুখে অক্সিজেন সিলিন্ডার ধরে আছে আর চিৎকার করে ডাকছে বাবা মাকে। কিন্তু বাবা মা কোন জবাব দিচ্ছে না। ফারিহার শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। ফারিয়ার মুখে অক্সিজেন সিলিন্ডার ধরা অবস্থায় ঘুমিয়ে পরে ফারিহা জীবনের তরে। আকাশের ললিত কন্যা আকাশেই ফিরে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মনজুরুল ইসলাম mugdho hoe porlam.faria o farihar jonno baba mayer amon attotag sotti bedonadayok.apni je akjon chintasil manush ta golpo pore bujhte parlam. bartoman bissher sorboccho songkotti nie likhechen e jonno abossoi apni dhonnobad pabar joggo.golpti shuru theke shes porjonto onek sabolil chilo. du ekti sobdo babohare aktu somosso thakleo ta golper soundorje bighner sristi kore ni.vote abong shuvo kamona roilo.amar golpe amontron.
এস জামান হুসাইন ধন্যবাদ রইল অাপুর জন্য।
সালসাবিলা নকি এরকম একটা ফটো দেখেছি পত্রিকায়। বড় বোন ছোট বোনের মুখে মাস্ক ধরে রাখে, নিজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অক্সিজেন মাস্ক একটাই ছিল। সেই ফটোগ্রাফটার পুরো গল্প আমরা জানি না। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে এমনই হবে হয়তো... আপনার বর্ণনাভঙ্গী ভালো ছিল। ভালো লিখেছেন।
এস জামান হুসাইন ধন্যবাদ কবি ও লেখক সাদিক ইসলাম ভাঈয়া।
সাদিক ইসলাম বেদনাদায়ক। সভ্যতার বীভৎস রূপ। শিশুদের কষ্ট সবচেয়ে বেশি ব্যথিতা করে। শুভ কামনা গল্পে আমন্ত্রণ।
ফড়িং . গল্পটি অর্থবহ হয়েছে।
এস জামান হুসাইন শুভকামনা চিরন্তন, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
মৌরি হক দোলা সুন্দর থিমের গল্প... আরো গল্প চাই আপনার থেকে.... শুভকামনা চিরন্তন...

০৭ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৭৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪