"যদি আগে জানা থাকতো এতোটা লজ্জা কপালে আছে তাও আবার নিজের ছেলের জন্য তাহলে হয়তো দেশ ফেরার নাম ভুল করেও মাথায় আনতাম না। নিজ ছেলেকে যদি জাতীয় সংগীতের রচয়িতাকেই চেনাতে না পারি আর কেমন বাবা হলাম আমি! এতো এতো বিদেশী ডিগ্রী, সবইতো বৃথা মনে হচ্ছে। "এসব ভাবতে ভাবতে এক অজানা হতাশার সাগরের ডুবে যান রতন সাহেব। প্রায় ২০ বছর পর দেশে ফিরেছেন নিজ স্ত্রী -পুত্র কে নিয়ে। উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে পড়তে যাবার আগ্রহ ছিল তার প্রবল। সুযোগও চলে আসে। তারপর আর দ্বিতীয়বার ভাবেননি। পড়াশোনা শেষে সেই দেশেরি এক কলেজে পেয়ে যান শিক্ষকতা। তারপর আর দেশের পানে পা বাড়াননি তিনি। আসার সুযোগ পাননি সেটি কিন্তু নয়। দেশের প্রতি তার অনিহা প্রবল এই দেশের মানুষ, পথ-ঘাট, পরিবেশ সবটাই তার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে। তার স্ত্রী অদিতি প্রবাসী বাঙ্গালী। খুব ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথে পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকায়। দেশের প্রতি তার আক্র্ষণ প্রবল। রতন সাহেবের সাথে কলেজে তার পরিচয়। মন দেওয়া-নেওয়ার পর্বটাও সেরে নিয়েছেন সেখানে।আদি জন্মানোর পর তিনি বহুবার তার স্বামীকে বলেছেন, ছেলেটাকে নিয়ে একবার দেশ থেকে ঘুরে আসা দরকার। হাজার হলেও পিতৃভূমি। দেশের কথা বললেই রতন সাহেবে তার অজুহাতের ডায়েরি খুলে বসতেন। এই বছর রিসার্চ আছে পরের বছর। হঠাৎ একটা প্রজেক্টের ভার নিতে হলো, আসছে বছর অবশ্যই যাব। আছে। এমন হাজারটা বাহানা যেন তার আগে থেকেই খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখা থাকে। আর সে বাহানার তলে চাপা পড়ে যায় অদিতির এতদিনের আবদার। কিন্তু হঠাৎ বিপত্তিটা বাঁধালো তাদের একমাত্র ছেলে রোহান। স্কুলে তার প্রবাসী বন্ধুদের অনেকেই নাকি এই শীতের অবকাশ তাদের নিজ দেশে কাটাবে। ছুটি শেষে ফিরে এসে তাদের ভ্রমণ স্মৃতি নিয়ে তৈরি করবে ডকুমেন্টারি। নাছোড়বান্দা রোহান ঠিক করে নিয়েছে সেও তার বন্ধুদের দেখানো পথ ধরেই হাঁটবে। অদিতি বেশ ভালই জানে যে তার ছেলের বাংলা-ইংরেজী মেশানো শক্ত বুলির কাছে রতন সাহেবের কোন যুক্তিই ঠিকঠাক ভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা। জেদ পূরণ না হওয়া অব্দি একটানা কানের কাছে পুরনো রেডিওর মতো প্যানপ্যান করার ক্ষেত্রে তাদের ছেলের জুড়ি মেলা ভার। অদিতির ভাবনার সাথে বাস্তবটা যেন আগে থেকেই চুক্তি করে রেখেছে। ১৩ বছরের ছেলের জেদের বশীভূত হয়ে রতন সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ভিসার অনুমতি প্রার্থনাতে। বহুবছর বাদে নিজ দেশে ফেরার আনন্দের চেয়ে রতন সাহেবের কাছে বেশি উপভোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে তার ছেলেকে নিয়ে সকলের মাতামাতি। ছেলে বাংলা পরিষ্কার বলতে পারেনা, কিন্তু কি দ্রুত ইংরেজী বলে! আর সেই দ্রুততা গ্রামের সকলের কাছে এক বিষ্ময়। রতন সাহেব মনে মনে ইতোমধ্যে নিজেকে বহুবার বাহবা দিয়ে ফেলেছেন। প্রবাসের জীবন, সেখানে তার কৃতিত্ব, ছেলেকে তিনি কিভাবে তৈরি করছেন এসব গল্প শুনিয়ে বেশ ভালই কাটছিল তার দেশ কাটানো ছুটি। বিপত্তি ঘটলো সেদিন, যেদিন তিনি ছেলেকে নিয়ে গেলেন নিজের পড়ে যাওয়া স্কুল দেখাতে। ছোট ছোট বাচ্চা গুলো যখন জাতীয় সংগীতের সুরে গলা ভেজাতে মগ্ন, তখন রোহান ব্যস্ত তার মোবাইল। রতন সাহেবের চোখের ইশারা বারবার ব্যার্থ হচ্ছে রোহানের দৃষ্টিপাত ঘটাতে। রতন সাহেব তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষকদের বিদ্রূপের হাসির মানেটা ঠিক বুঝতে পারছেন। জাতীয় সংগীত শেষে স্কুলে বয়োজ্যাষ্ঠ শিক্ষক সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, - " আমার পাশে যাকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ, সে একসময় তোমাদের মতো এই স্কুলের ছাত্র ছিল। বিদেশে তার এখন অনেক নামডাক। তোমাদের একদিন ওর মতো হতে হবে। তারজন্য চাই মন দিয়ে পড়াশোনা। রোহান তার বাবার সাথে প্রথমবার দেশে এসেছে। রোহান, জাতীয় সংগীত কেমন লেগেছে তোমার?" -" নট বেড। " -"কে লিখেছেন জানো তো?" -" কে?" -" রবি ঠাকুর। " -"পাপা, রবি ঠাকুর মানে আমাদের পাশের বাড়ির ড্রাইভার রবি দাদু? "। উত্তরের সাথে সাথে সকলের একযোগে অট্টহাসি। হাসির শব্দদূষণ যেন ধিক্কার জানিয়ে বলতে চাইছে, "কেমন বাবা তুমি? এখনো কি নিজেকে সফল পিতা হিসেবে গর্ব করতে ইচ্ছে হচ্ছে "?। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও রোহান ভাবলেশহীন। -" পাপা, সবসময় তোমার কাছ থেকে আমি আমার পিতৃভূমি সম্পর্কে জানতে চাইতাম কিন্তু তুমি আমায় এড়িয়ে যেতে। আর বলতে, এসব জানতে হবেনা। শুধু পরীক্ষায় ভাল মার্কস পেলেই চলবে। পাপা, সত্যি কি কাগজ কলমের পরীক্ষার জ্ঞানটাই সব? " রোহানের প্রশের উত্তর রতন সাহেবে দিতে না পারলেও ছেলের একটি প্রশ্ন তাকে মেলে দিয়েছে হাজারো উত্তরের দ্বার। "
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
বিদেশি ডিগ্রী যদি বৃথা মনে হয় তবে তা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। বেশ ভাল লেখা। শ্রদ্ধা জানবেন। শুভেচ্ছা।
সাইয়িদ রফিকুল হক
গল্পটির বিষয়বস্তু খুব সুন্দর। কিন্তু ছোটগল্পের প্লট আরও ভালোভাবে তৈরি করতে হবে বন্ধু। আর লেখার সময় প্যারা বা অনুচ্ছেদ রাখবেন। সবমিলিয়ে শুভকামনা আপনার জন্য।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।