প্রতিদিনের মত আজও রাত বারটায় বিকট আওয়াজ করে ঝড়ের গতিতে "কামরূপ এক্সপ্রেস" ট্রেনটা পাশ করে গেলো। রেল লাইনের ধারে "বিদ্যাসাগর কলোনির" বেড়ার ঘরে বসে ঘুম চোখে সুদাম দত্ত স্ত্রীকে বললো- রমা, এত রাতে অনেকক্ষন ধরে রান্না ঘরে কি করছ ? রমা বললো- আমার হয়ে গেছে। আমাদের ছেলেটা এই প্রথম বাড়ির বাহিরে যাচ্ছে। শুনলাম, দিল্লিতে ও কলেজের হোস্টেলে থাকবে। বাড়িতে আসতে আসতে সেই দুর্গাপুজোর ছুটির সময়। এখনো অনেক দিন বাকি। ছেলেটা নাড়ু খেতে খুব ভালবাসে। তাই ওর জন্যে নাড়ু আর নারকেলের সন্দেশ তৈরী করলাম। যাবার সময় দিয়ে দেব।
সুদাম বললো- আমাদের দারিদ্রের সংসারে অয়নকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনাতে অত্যন্ত মেধাবী। অনেক কষ্ট করে আমরা ওকে স্কুল, কলেজে পড়িয়েছি। পড়াশুনার খরচ কি ভাবে যোগাড় করেছি সেটা তুমি আর আমি ভাল করেই জানি। কলেজে ভাল রেজাল্টের পর যখন অয়ন বললো- দিল্লিতে গিয়ে "বিজনেস ম্যানেজমেন্ট" পড়তে চায় তখন আমি ওর মুখের উপর না বলতে পারলাম না। পড়ার জন্য এতগুলি টাকা কোথা থেকে যোগাড় করব সেই চিন্তা আমাকে দিন রাত ভাবিয়ে তুললো। তুমিতো আমার জীবন কাহিনী সবই জানো। মাঝে মাঝে যখন আমার জীবনের পূর্বের কথাগুলি মনে পড়ে, খুবই কষ্ট পাই। পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ পাইনি। মাত্র ক্লাস ফাইভ আবধি পড়াশুনা করতে পেরেছিলাম। স্বপ্ন দেখতাম, আমি যেটা পারিনি সেটা আমাদের অয়ন করবে। দীর্ঘ বছর একটি প্রাইভেট অফিসে পিয়নের কাজ করে, অবসরের পর সব মিলিয়ে সামান্য যেকটা টাকা পেয়েছিলাম সেটা ব্যাংকএ রেখে দিয়েছিলাম আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। অনেক চিন্তা ভাবনা করে প্রায় পুরো টাকাটা তোলা হলো ছেলের দিল্লির পড়াশুনার জন্য। আমাদের প্রত্যাশা, অয়ন নিশ্চই ভালোভাবে পড়াশুনা শেষ করে ভাল চাকরি পেয়ে আমাদের এই দীর্ঘ দিনের কষ্টের, হতাশার জীবনে আনন্দের স্বাদ এনে দেবে।
সকালবেলা থেকে বাড়িতে ব্যস্ততা। একটু পরে অয়ন বাড়ি থেকে বেরোবে। অয়নের দুই বন্ধুও দিল্লি যাচ্ছে এই পড়াশুনার জন্য। আগের থেকে ঠিক করা আছে, তারা গাড়ি নিয়ে এসে অয়নকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে একসঙ্গে স্টেশনে যাবে দিল্লির ট্রেন ধরবার জন্যে।
অয়ন তার বাবা, মাকে প্রণাম করে বললো, এবার আমি বেরোবো। চোখের জল মুছে নিয়ে মা বললো, মন দিয়ে পড়াশুনা শেষ করে ভাল চাকরি পেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হও। তোমার উপর আমাদের অনেক আশা। তুমি ভাল করেই জান, তোমার বাবা এবং আমি উদয় অস্ত পরিশ্রম করে তোমাকে বড় করে তুলেছি। সংসারে তীব্র আর্থিক অনটনে থেকেও তোমাকে প্রকৃত মানুষ করবার জন্যে কোন কার্পন্য করিনি। তোমার দিল্লিতে গিয়ে পড়বার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল, তোমার বাবা অবসরের পর অফিস থেকে যে টাকাটা পেয়েছিল সেই শেষ সম্বলটুকু আমরা তোমার এই পড়াশুনার জন্য দিয়ে দিয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা একটাই, তুমি প্রতিষ্ঠিত হও যাতে আমরা আমাদের শেষ জীবনটা অন্তত সুখে থাকতে পারি। একটা কথা মনে রেখ, আমরা শুনেছি তুমি যেখানে পড়তে যাচ্ছ সেখানে অনেক ধনী লোকেদের ছেলে মেয়েরাও থাকবে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উশৃঙ্খল জীবন যাত্রায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ো না। সবসময় মনে রেখ, বাড়িতে তোমার দরিদ্র বাবা-মা তোমার সফলতার প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছে।
অয়ন দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। সুদামের মনে পড়ে গেল তার শৈশব কালের এক করুণ ছবি। সুদামের যখন মাত্র এক বছর বয়স তখন তার বাবা মারা যায়। শৈশব কাল থেকেই তার মার খুব ইচ্ছে ছিল, ছেলে ভালোভাবে পড়াশুনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু তার মার সেই আশা, প্রত্যাশা পূরণতো হলোই না, উল্টে শুরু হলো এক ভয়ঙ্কর কষ্টের জীবন। সেই দিনগুলির কথা মনে পড়লে এখনো চোখের থেকে জলের ধারা ঝরতে থাকে। স্মৃতির জোয়ারে পিছিয়ে গেল বহু বছর পূর্বের দিনগুলিতে।
-- হ্যাঁরে সুদাম, একবার আমার ঘরে আয়। এই দুপুরে গরমের দাপটে একেবারে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
-- সুদাম বারান্দা থেকে চিৎকার করে বললো, আমি এখুনি আসছি বড়মামা।
-- বলি, এই গরমে কি করছিলি ? তোর মা কোথায় ?
-- বড়মামা, আমি বারান্দায় বসে পড়াশুনা করছিলাম। মা পুকুর ঘাটে গেছে বাড়ির সব এঁটো বাসনগুলি মাজার জন্যে।
-- শোন সুদাম, তোর আর পড়াশুনা করতে হবে না। তোর এখন আট বছর বয়স। এবার তোকে আমি কোন কাজে লাগিয়ে দেব।
-- কেন বড়মামা, আমি কেন পড়াশুনা বন্ধ করে দেব ? তোমার ছেলে অজিত আর আমি একই বয়সি। অজিততো পড়াশুনা করে, স্কুলে যায়। জান বড়মামা, মা বলে, আমাকে ভাল ভাবে পড়াশুনা করে অনেক বড় হতে হবে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলে, আমার উপর তার অনেক আশা, প্রত্যাশা।
-- আমি তোর মার সঙ্গে কথা বলবো। তুই এখন একটা কাজ কর। বইপত্তর সব তুলে রাখ। বাড়ির পেছনে ডাবগাছে উঠে খান চারেক ডাব পেরে আন আমার জন্যে। এই গরমে ডাবের জল খাব।
নিরুপমা সংসারের একগাদা এঁটো বাসনগুলি পুকুর থেকে ধুয়ে এনে রাখতে রাখতে বললো- দাদা, আমি তোমার সব কথা শুনেছি। তুমি খুব ভালো করেই জান, সুদামের বাবা যখন মারা যায় তখন তার বয়স এক বছর। বাবার চেহারা কি রকম ছিল সেটা সে জানে না। আমাদের তখন অসহায় অবস্থা। আমি স্বীকার করি, সেই দুর্দিনে তোমরা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলে বলে আজও বেঁচে আছি। তুমি আমার বড়দা। আমরা একই মায়ের পেটের সন্তান। আজ আমি তোমাকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমি আমার বাপের বাড়িতে কার্যত ক্রীতদাসের মত থাকি। আচ্ছা দাদা, কোনদিন খোঁজ নিয়ে দেখেছো আমি আর আমার ছোট সন্তানকে নিয়ে এখানে কি ভাবে থাকি !! কি খাই ? আমাদের উপর বাড়ির সবাই মিলে মানসিক অত্যাচার করে। আমি একান্ত নিরুপায় হয়ে মুখ বুঝে সব সহ্য করি। নিরুপমা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে হাঁপাচ্ছিল। চোখের জল মুছে নিয়ে বললো- এই কাঠফাটা রোদে আমার নাবালক ছেলেটাকে পড়াশুনা বন্ধ করে নারকেল গাছে ধারাল দা নিয়ে উঠে ডাব পারতে বলছো !! সুদামের বয়সি তোমার নিজের ছেলেকে এই কাজ করতে তুমি বলতে পারতে ?
দাদা, তোমাকে আমি হাতজোড় করে বলছি- যা কাজ করার সেটা আমাকে বল। আমার ছেলেটার পড়াশুনাটা বন্ধ করে দিয়ো না। ওর বাবা মারা যাবার পর ওকে নিয়ে আমার অনেক আশা, অনেক প্রত্যাশা। ভালভাবে পড়াশুনা করে ও যাতে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। অন্তত আমার মত কষ্টের জীবন যেন ছেলেটার না হয়।
মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। নিরুপমা এই সংসারে অমানুষিক পরিশ্রম, মানষিক অত্যাচার এবং ঠিক মত খেতে না পাওয়া, এই সব কারনে এক কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়লো। কার্যত প্রায় বিনা চিকিৎসায় এক ঝড় জলের রাতে তার ছোট্ট সুদামকে এই পৃথিবীতে একলা রেখে পরকালে চলে গেল।
মামাদের এবং বিশেষ করে মামীদের প্ররোচনায় সুদামের পড়াশুনা, স্কুলে যাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেল। বড় রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর এক ভাতের হোটেলে এক প্রকার জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো কাজ করার জন্যে। ভোরবেলা থেকে শুরু করে রাত প্রায় বারোটা অবধি অমানুষিক পরিশ্রমের কাজ। সুদামের মার সমস্ত প্রত্যাশা চূর্ণ হয়ে গ্রাস করলো এক চরম হতাশার জীবন।
সুদাম জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত, উত্থান পতনের মধ্যে দিনগুলি অতিবাহিত করে অনেক কষ্টে একমাত্র ছেলে অয়নকে পড়াশুনা করিয়েছে। সুদাম, তার স্ত্রী রমা একরাশ প্রতীক্ষা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে তাদের ছেলে দিল্লির কলেজ থেকে ভাল ভাবে পড়াশুনা শেষ করে প্রতিষ্টিত হয়ে ফিরে আসবে। প্রথম প্রথম লোক মারফত কিংবা চিঠি পত্রের আদান প্রদানে অয়নের খবর পাওয়া যেত। পরের দিকে সেটা অনেক কমে গেল। সুদাম, রমা ভাবলো হয়তো পড়াশুনার চাপে সময় করে চিঠি লিখতে কিংবা যোগাযোগ করতে পারে না।
দেখতে দেখতে প্রায় তিন মাস অতিক্রান্ত। গত এক মাস ধরে অয়নের কোন খবর নেই। দুচিন্তায় রমা বললো- অনেকদিন অয়নের কোন খবর নেই। সুদাম বললো- ঠিকই বলেছো, আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। অবশ্য এটাওতো হতে পারে হয়ত সামনে পরীক্ষা তাই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। রমা বললো- আমাদের ছেলেটা খুব সরল, কোন দুষ্টু চক্রের ফাঁদে পরে যায়নিতো ? সুদাম বললো- এটা হতে পারেনা। অয়ন ছোটবেলা থেকে অতন্ত মেধাবী আর বুদ্ধিমান। কোন বাজে আড্ডায় যায়নি। বেশির ভাগ সময় নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আমাদের সংসারের অবস্থা সবই জানে। ও জানে আমাদের শেষ বয়সের জন্য রাখা টাকাগুলি ওর পড়াশুনার জন্য খরচ করে ফেলেছি। এটাও ভাল করে জানে, পড়াশুনা শেষ করে ওকে উপার্জন করতে হবে। হঠাৎ করে সদর দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ার আওয়াজ। দরজা খুলে চিনতে পেরে বেশ অবাক হয়ে বললো- তোমরা ? আমাদের বাড়িতে ? বাড়ি চিনতে অসুবিধা হয়নিতো ? একবারই তোমরা দুজনে আমাদের বাড়িতে এসেছিলে অয়নকে নিয়ে প্রথমবার দিল্লি যাবার সময়। তোমরা ভিতরে এসো।
আজ আপনাদের বাড়িতে আমরা এসেছি অয়ন সম্পর্কে কিছু দরকারি কথা জানাবার জন্য। অয়নের সঙ্গে পরিচয় হবার পর কথাবার্তায় বুঝতে পারি ও যথেষ্ট মেধাবী ছাত্র। জানতে পারি, আপনাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে। অনেক কষ্ট করে আপনারা ওকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এটাও জানতে পারি, আপনাদের জমানো শেষ সম্বলটুকু খরচ করে ওকে পড়াশুনার জন্য দিল্লিতে পাঠিয়েছেন। যাতে অয়ন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়।
দিল্লিতে আমাদের হোস্টেলের পাশে একটি গাড়ি সরাবার গ্যারেজ আছে। শুনেছি সেখানে অনেক বাজে লোকেদের আড্ডা হয়। গ্যারেজের সামনে একটা চায়ের দোকান আছে। আমরা কলেজের ছাত্ররা সেখানে চা খেতে যাই। সেখান থেকেই অয়নের সঙ্গে বাজে লোকেদের পরিচয় হয়। আমরা তাকে অনেকবার নিষেধ করেছিলাম কিন্তু সে আমাদের কোন কথা শোনেনি। ইদানিং পড়াশুনার ক্ষেত্রে আগের মত সেই রকম উৎসাহ ওর মধ্যে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে মুখের থেকে মদের গন্ধ পাই। দেখুন, আমরা ওকে ভালবাসি বলে অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু আমাদের কোন কথাই শুনছে না। আমাদের মনে হয়েছে কথাগুলি আপনাদেরকে জানাবার প্রয়োজন। আপনারা বোঝালে হয়ত ও শুনবে।
মাস খানেক অতিক্রান্ত। টেলিফোনে অয়নকে অনেক ভাবে তার বাবা মা বোঝালো। অয়ন চুপ করে থেকে সব শুনে কোন উত্তর দিল না। মনে হলো, সে তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত। অয়ন বললো, সামনের সপ্তাহে দিন সাতেকের জন্য সে বাড়িতে এসে ছুটি কাটাবে। এই কথা শুনে সুদাম আর রমার খুব আনন্দ। অনেকদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে সময় কাটাবে। রমা বললো, ছেলেটা যে কটা দিন বাড়িতে থাকবে আমার ইচ্ছে ওর পছন্দমত খাবার রান্না করে খাওয়াব। সুদাম হেসে বললো, বেশ তাই হবে।
আজ সকাল থেকেই বাড়িতে ব্যস্ততা। অয়ন আজ বাড়িতে আসছে। অয়নের পছন্দমত খাবারের রান্না হচ্ছে। রমা বললো- সকাল দশটা বাজে, অয়নতো এখনো এলো না। সুদাম বললো- কলকাতার রাস্তা ঘাটে জ্যাম থাকে, হয়তো এই কারনে দেরি হচ্ছে। প্রায় দুপুর বারোটা। এখনো অয়ন আসেনি। এবার তারা খুবই চিন্তায় পড়ে গেল। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। দুজনে মিলে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলতেই একেবারে ভূত দেখার মত চমকে উঠল।
দরজার ওপাশে দুজন পুলিশ। কোনো রকম ভনিতা না করে পুলিশ বললো- আমরা আপনাদের পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, বিশিষ্ট ভদ্রলোক হিসেবে আপনারা পরিচিত। অভাবের সংসারের মধ্যেও ধার দেনা করে, শেষ সম্বলটুকু উজাড় করে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য দিল্লিতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের দুর্ভাগ্য, আপনাদের ছেলে দুদিন আগে দিল্লিতে বড় এক স্মাগলিং দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিষিদ্ধ মাদক পাচার করবার সময় পুলিশের জালে ধরা পরেছে। আমরা তাকে কলকাতায় নিয়ে এসেছি জেরা করবার জন্য। বর্তমানে আপনাদের ছেলে আমাদের থানার লকাপে রয়েছে। যদি আপনারা তার সঙ্গে দেখা করতে চান তবে আমাদের সঙ্গে আসুন।
থানার লকাপের ভিতরে অয়ন মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। সুদাম, রমা আর্তনাদ করে বললো- এ তুই কি করলি অয়ন ? আমরা তোর উচ্চ পড়াশুনার জন্য আমাদের বৃদ্ধ বয়সের শেষ সম্বলটুকু পর্যন্ত খরচ করে ফেলেছি। আমরা গরীব কিন্তু কখনো চুরি কিংবা অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকিনি। এবার আমাদের কি হবে বলতে পারিস ? এবারতো আমাদের ভিক্ষের বাটি নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে।
অয়ন ধীরে ধীরে বললো- আমি ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু করেছিলাম শুধুমাত্র আমাদের সংসারের কথা চিন্তা করে। রাতারাতি আমাদের দারিদ্রের জীবনকে পাল্টে দিতে। আমি জানতাম, তোমাদের শেষ সম্বলটুকু আমার পড়াশুনার জন্য দিয়ে দিয়েছিলে। পড়াশুনা শেষ করে যাতে ভাল উপার্জন করতে পারি। আর সেই জন্যেই আমাদের পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে দ্রুত উপার্জনের জন্য আমি এই স্মাগলিং দলে ভিড়ে যাই। আমাকে বোঝানো হয় চাকরি করে আমি সারা জীবনে যা উপার্জন করবো, তার থেকে অনেক বেশি টাকা অতি অল্প সময়ে এই লাইনে থেকে রোজগার করা যায়। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারিনি এর শেষ পরিণতি কি ভয়ঙ্কর হতে পারে।
অয়ন, আমরাতো এই রকমটা কখনো চাইনি। আমরা আজ সত্যি সত্যি শেষ হয়ে গেলাম। চেয়েছিলাম, সৎ পথে থেকে ভালোভাবে পড়াশুনা শেষ করে নিজের দক্ষতায় উপার্জন করে আমাদের সুখে রাখবি। মা আর বাবা গরাদের লোহার রড ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো- আমাদের সমস্ত আশা, প্রত্যাশাকে একেবারে ধূলিসাৎ করে এক ভয়ঙ্কর হতাশার জীবনে ফেলে দিলি। বলতে পারিস, এবারে আমরা কি করবো ?
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রত্যাশা মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। কিন্তু প্রত্যাশা যদি বিফলে যায় তখন জন্ম হয় হতাশার। এই ভাবনায় কাহিনীটি লেখা।
১২ আগষ্ট - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৫০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫