লটারি

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০২১)

বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত
  • ১০৪
দাদা , দয়া করে বলবেন - " ৩৭/২ মদন দাস লেন " কোন দিকে হবে ? দোকানদার বেশ ব্যস্ততার মধ্যে চাল মাপতে মাপতে বললেন -- " ২৩ .... " । দাদা , অনেক দূর থেকে আসছি যদি অনুগ্রহ করে বলে দেন কি ভাবে ওই ঠিকানায় যাব , তবে খুব উপকার হয় । দোকানদার এবার বেশ রাগতো স্বরে বললেন -- বললামতো " ২৩ " , মানে আপনাকে নিয়ে সকাল থেকে ২৩ জনের একই প্রশ্ন । বলি , আমি কি দোকানদারি করব নাকি ঠিকানা বলবার জন্য দোকানে বসেছি ? বাস স্টপেজের লাগোয়া আমার দোকান আর সকাল থেকে লোকজনের একটাই প্রশ্ন -- ৩৭/২ মদন দাস লেনে কি ভাবে যাব ? দোকানদার এবার বেশ রেগে গিয়ে বললেন -- আপনাদের সবার এই বিরক্তিকর প্রশ্নের থেকে রেহাই পেতে আপনার পাশে দেয়ালে সাটানো কাগজটায় বড় বড় করে সব লেখা আছে । দয়া করে সেটা পড়ে নিন । কারন আমি জানি এর পরে আর লোক আসবে আর একই প্রশ্নে করে আমাকে অতিষ্ট করে তুলবে । দেয়ালে সাটানো কাগজে লেখা রয়েছে --
" এখান থেকে রিকশায় ঢালীপাড়া । উল্টো দিকে রসরাজ মিষ্টির দোকানের পাশের রাস্তা । রাস্তা ধরে দশ মিনিট এগোলে - ৩৭/২ মদন দাস লেন । প্রশ্ন কর্তা একটা হাসি দিয়ে দোকানদারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিকশায় উঠলেন ।

বাড়ির সামনের মাঠটায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সব গাড়ি এসে ভিড় করেছে । ছোট বেড়ার বাড়িটার সামনে প্রচুর লোকের ভিড় । এর মধ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতারা বেশ কয়েকবার কানাই এর সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দিয়ে গেছে , কোন অসুবিধা হলে কানাই যেন তাদের খবর দেয় । সবাই সেই মানুষটির সঙ্গে একটিবার দেখা করে কথা বলতে চায় । এত মানুষের ভিড় হওয়াতে আবার একটা ছোটখাটো মেলাও বসে গেছে সেখানে । অতি উৎসাহী পাড়ার ছেলেরা বাড়ির সামনে একটা চেয়ার টেবিল নিয়ে অফিসের মত কাজ শুরু করেছে । মানুষটির সঙ্গে দেখা করবার জন্য একটি করে স্লিপ ধরেই দেয়া হচ্ছে আর সেই স্লিপে দেখা করবার সময় লিখে দেওয়া হচ্ছে । বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসেছে তার সঙ্গে দেখা করবার জন্য । ব্যাংকের প্রতিনিধি , ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধি , টিভির তরফে লোকজন , শেয়ারে টাকা খাটানোর লোকজন আর সাধারণ মানুষজনতো রয়েছেই ।

আসলে সকালবেলায় খবরের কাগজে লটারির রেজাল্টটা বেরোতেই , পাড়ার যে দোকান থেকে লটারির টিকিটটা কাটা হয়েছিল তার থেকেই খবরটা একেবারে দাবানলের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । লটারির দোকানটি খুব সুন্দর ভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে আর মাইকে ক্রমাগত জানানো হচ্ছে এই দোকান থেকে লটারির প্রথম পুরস্কার উঠেছে । অতি উৎসাহী কিছু লোক টিভি চ্যানেলগুলিতে , বিভিন্ন সংবাদপত্রে আর ফেসবুকের মাধ্যমে খবরটা ছড়িয়ে দিয়েছে । একেবারে ১০ কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার আর পুরস্কার পেয়েছে ৩৭/২ মদন দাস লেনের বাসিন্দা অতি দরিদ্র রিকশা চালক - কানাই সামন্ত ।

একটা সময় পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা কানাইকে নিয়ে এসে বারান্দায় একটা চেয়ারে বসালো । ক্লাবের সভাপতি একটা ছোটখাটো ভাষণও দিয়ে দিলেন কানাই এর গুণগান সম্পর্কে আর কানাই এর উদ্দেশ্যে জানালেন সে যেন ক্লাবের বাড়িটিকে দোতলা করে একটু সাজিয়ে দেয় । আরো জানালেন এবারের দুর্গাপূজার কমিটির প্রেসিডেন্ট করা হবে কানাইকে । এক এক করে সবাই কানাই এর সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন । টিভি চ্যানেলগুলির প্রশ্ন -- আজকের এই আনন্দের দিনে আপনার কেমন লাগছে আর লটারিতে ১০ কোটি টাকা পেয়ে আপনার কি করার ইচ্ছা ? বিভিন্ন ব্যাংক , ইন্সুরেন্স প্রতিনিধিরা তাকে বারে বারে এই বলে বোঝাচ্ছে টাকাগুলো যেন তাদের প্রতিষ্ঠানে রাখে আর এর জন্য সে সবরকম সুবিধা পেয়ে থাকবে । আবার কিছু লোকের অনুরোধ , আব্দার তাদের মেয়ের বিয়ের জন্য কিচ্ছু টাকা সাহায্য কিংবা কারুর অসুখের জন্য টাকার সাহায্য ইত্যাদি নানা ধরনের কথা বলে তার থেকে টাকা পাবার আশায় । ক্লাবের ছেলেরা বললো -- দেখুন , আপনারা যদি কানাইদাকে এভাবে বিরক্ত করেন তবেতো খুব মুশকিল আসলে কানাই বাবু এত লোকের সঙ্গে কথা বলে পরিশ্রান্ত আর এই সব বিষয়ে অতটা ভাল বোঝেন না । আপনাদের যা কিছু বক্তব্য আপনারা লিখিতভাবে ক্লাবের সভাপতির কাছে জমা দিন , ক্লাবের তরফ থেকেই সবকিছু ঠিক করা হবে আর আজ দুপুর ৩টের সময় আপনারা আমাদের ক্লাবে আসুন সেখানেই আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে ।

সবার অনুরোধে কানাই সামন্ত বললো -- আমি একজন রিকশা চালক । দিন আনি , দিন খাই । লটারির ১০ কোটি টাকা পেয়ে আমার খুব ভাল লাগছে । আমার মতো যারা দিন আনে , দিন খায় - তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে , অনাথ শিশুদের নিয়েও ভাবনা-চিন্তা আছে । এছাড়াও আর অনেক পরিকল্পনার কথা আমার চিন্তা ভাবনায় রয়েছে । আজ আপনাদের সবার সামনে একটা সত্যি কথা বলি , এটাও জানি আমার কথা হয়ত অনেকের পছন্দ হবে না । রিকশা চালিয়ে যেটা আমার আয় হয় তা দিয়ে আমার এই এত বড় সংসার ঠিক মত চালাতে পারি না । চতুর্দিকে আমার অনেক দেনা । অসুখ হলে ওষুধ কেনার টাকা থাকতো না , মাঝে মাঝে আমাদের না খেয়েও থাকতে হয় । আমাদের বিপদের কথা সবাইকে জানিয়েছি , আমাদের পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের এমনকি পাড়ার রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও জানিয়েছি । কোন সুরাহা হয়নি উল্টে আমাকে দেখলে লোকে উল্টো দিকে হাটা মারতো । আর আজ আমি এতগুলো টাকার লটারি পেয়েছি বলে কত চেনা , অচেনা লোক আমার পাশে ঘুর ঘুর করছে আমার এই টাকার থেকে কিছু পাবার আশায় । আগে লোকে আমাকে " কানাই বলে ডাকতো আর তুই বলে " সম্বোধন করতো আর আজ তারাই আমাকে " কানাই বাবু আর আপনি বলে " সম্বোধন করছে । এই কথা শুনে ক্লাবের ছেলেরা বললো -- এ আপনি কি বলছেন কানাই দা ? আমরাইতো আপনার পাশে সুখে দুঃখে সবসময় এসে থেকেছি !!! কানাই চিৎকার করে বললো -- আপনারা সবাই মিথ্যে কথা বলছেন । আমার দূঃখের সময় আপনারা কেউ আমার পাশে থাকেন নি । আমি কাউকে বিশ্বাস করি না । আমার টাকা কোথায় রাখব আর কি ভাবে খরচা করব কিংবা কাকে কি দেব , সেটা আমি ঠিক করব । দয়া করে আপনারা কেউ এই ব্যপারে নাক গলাবেন না । ক্লাবের সভাপতি নিজের রাগটাকে চেপে রেখে হাসিমুখে বললো -- কানাইবাবু আসলে আপনি ১০ কোটি টাকা পেয়ে সাময়িক ভাবে দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন । টাকার ব্যপারে আমরাই সব ঠিক করে দেবো । আপনি আমাদের পাড়ায় অনেককাল যাবত আছেন , আমাদেরও আপনার প্রতি একটা দায়িত্ব আছে । কানাই আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বললো - আপনারা দয়া করে আমার বাড়ি থেকে চলে যান । আমার দায়িত্ব আপনাদের কাউকে নিতে হবে না ।

সকালবেলায় ঘুমের ঘোরে কি বকবক করছো ? তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে রিকশাটা নিয়ে বেরোয় । গতকাল ঝরজলের জন্য ভাড়া তেমন পাও নি । দেখ , আজ যদি ভাড়াটা একটু বেশি পাও তবে সংসারের সুবিধা হয় .......। স্ত্রী মিনতির ডাকাডাকিতে কানাই ঘুম থেকে উঠে দেখলো ঘড়িতে সকাল ৮টা । আবার নতুন করে একটা দিন শুরু হলো জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকবার জন্যে এক কঠিন লড়াইয়ে সামনে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipok Kumar Bhadra খুব সুন্দর লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০২১
Lutful Bari Panna আহা দশ কোটি টাকা। সব স্বপ্ন! :(
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০২১
ফয়জুল মহী অসাধারন উপস্থাপন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

স্বপ্ন কখনো মধুর আবার কখনো বিস্বাদের । আজকের এই গল্প একটি স্বপ্নকে ঘিরে ।

১২ আগষ্ট - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪