অসহায় মা

অসহায়ত্ব (মে ২০২০)

Tasnia Lasker
  • ৬১

- আম্মা,পা‌য়ের শিকলটা খু‌লে দেন না । আর দরজার নিচ দি‌য়ে খাবার দেন কেন আম্মা?আম্মা অনেক দিন হল বা‌হি‌রে ঘুড়‌তে যাই না । নি‌য়ে যা‌বেন ?
- হুম বাবা,নি‌য়ে যাব ।
- আম্মা একটু কা‌ছে আসেন না,আপনা‌কে ছুঁয়ে দে‌খি । ভয় পাই‌য়েন না । আমি কিছু কর‌বো না ।
র‌হিমা বেগম,ছে‌লের কথায় প্রায় গ‌লেই যায় । কিন্তু বাসার কা‌জের লোক শিলা দৌ‌ড়ে এসে ব‌লে
- ঢুই‌কেন না । প‌রে আপনা‌রে মে‌ডি‌কে‌লে নিয়া যাই‌তে পার‌বো না কিন্তু । ঐ দরজার নিচ দিয়াই খাবার দেন । আর এতো গইলা যাই‌য়েন না । আপ‌নি মইরা গে‌লে আপনার পোলা‌রে দেখ‌নের কেউ নাই । ৬\৭ দি‌নে মইরা যাই‌বো ,না হই‌লে মানুষ পিটায়য়া মাইরা ফেল‌বো ।
- তু‌মি কা‌জে যাও । আমি ঢুক‌বো না ।
র‌হিমা দরজার নিচ দি‌য়ে খাবার দেয় ছে‌লে‌কে । তিনটা শক্ত আটার রু‌টি আর সব‌জি,ডাল । দরজার এপা‌রে ছে‌লে,ওপা‌রে মা । দুইজন‌ে মে‌ঝে‌তে ব‌সে দরজায় হেলান দি‌য়ে একে অপ‌রের সা‌থে কথা ব‌লে ।
- আম্মা ,তরকা‌রি কি তু‌মি রান্না ক‌রেছ? খুব taste হ‌য়ে‌ছে । কিন্তু গোশ‌তো হইলে আরও টেস্ট হইত‌ো, গুরুর গোশ‌তো । ঝাল ঝাল ক‌রে লাল ভূনা । উপ‌রে এক হাঁটু ঝোল । হি হি হি । ঐ রান্নাটা ক‌রেন না,আম্মা?
- না বাবা । এখন তো আর চো‌খে ভা‌লোম‌তো দে‌খি না । কি দি‌তে কি দিব । আমি রান্না ক‌রি নাই,শিলা কর‌ছে ।
- আম্মা তোমার চো‌খের অবস্থা আরও খারাপ হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে না ! সে‌দিন জানালা দি‌য়ে দেখলাম,তু‌মি বারান্দায় মাছ ধু‌চ্ছো ,খুব ক‌ষ্টে । চশমাটা তো ভাঙ্গা । বারবার প‌ড়ে যা‌চ্ছে । তু‌মি একটা চশমা কিন‌তে পা‌রো না ! কি সব ক‌স‌টেপ,সুতা প্যাচায় রাখ‌ছো !
- কিন‌বো বাবা ।
- কেম‌নে কিন‌বে আম্মা! আমার তো মাথায় সমস্যা,কত ওষুধ কেনা লা‌গে । ত‌বে আমার কি ম‌নে হয় জা‌নো, আমি এবার স‌ত্যি ভা‌লো হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছি । আর মাথা গরম হ‌বে না । দেখ না ,এখন আমি কাপড় চোপড় প‌ড়ি ,আর ন্যাংটা হ‌য়ে থা‌কি না । সব সময় ফিটফাট থা‌কি । আম্মা, আমি না এবার চাকরী কর‌বো । সরকা‌রি চাকরী নিব । আব্বার মত । তারপর দেখবা,তোমার আর কোন কষ্ট নাই ।কিন্তু আম্মা,আমার মাথা গরম হ‌লেও তু‌মি আমা‌কে দূ‌রে পাঠায় দিও না । হাসপাতা‌লে পাঠায় দিও না আম্মা । এইখা‌নে,এই ঘ‌রেই শিকল দি‌য়ে বা‌ধেঁ রা‌খিও ।
- তুই ছাড়া তো আমার কেউ নাই । তো‌কে কোথায় পাঠা‌বো ।
- আম্মা,তোমার আগে আমিই ম‌রে যাব । তু‌মি তো এইটা নি‌য়ে খুব চিন্তা ক‌রো,তু‌মি মারা গে‌লে আমার কি হ‌বে ! চিন্তা নাই আম্মা, আমিই আগে মারা যা‌বো তাহ‌লে তু‌মি নি‌শ্চি‌ন্তে মর‌তে পার‌বে । আচ্ছা আব্বাও তো হুট ক‌রে পাগল হ‌য়ে ম‌রে গি‌য়েছিল না আম্মা! সেই সময় য‌দি বুঝতা ছে‌লে দুইটাও এম‌নে পাগল হ‌বে, তাইলে তো আমা‌দেরও মে‌রে ফেল‌তে পারতা । এখন দেখ বড় হ‌য়ে,বড় পাগল হ‌য়ে গে‌ছি । কত বড় বিপদ! আগেই মর‌বো আম্মা । তু‌মি চিন্তা ক‌রো না ।
- হুম তাই যেন হয় । না হ‌লে আমার ম‌রেও শা‌ন্তি নাই । কে তো‌কে টান‌বে !
- ত‌বে আব্বা বেঁ‌চে থাক‌লে তোমার চিন্তা ছিল না । তু‌মি ভা‌লোমত বাঁচ‌তে পার‌তে । আম্মা আমা‌কে একটু বাহি‌রে নি‌য়ে যা‌বে । বে‌শিদূর না ,বারান্দায় না হয় ছা‌দে নি‌য়ে যা‌বে? অনেক দিন দে‌খি না আকাশ বাতাস গাছপালা । আচ্ছা আম্মা তোমার রু‌মের চি‌লে‌কোঠায় একটা পা‌খি বাসা দি‌য়ে‌ছিল না,এটার বাচ্চা হইছে ? কয়টা হইছে? কি কি নাম দিছ ? ছে‌লে পা‌খি হই‌লে আরমান নাম দিও । না থাক দিও না ,তাহ‌লে আবার আমার মত কাপড় ছাড়া ঘুড়‌বে,বিছানায় হাগু কর‌বে । হা…হা….হা…। ও, বড় ভাই কেমন আছে ? ওকেও কি দরজার নিচ দি‌য়ে খাবার দাও ?
র‌হিমা বেগ‌মের চোখ পা‌নি‌তে ভি‌জে আসে । এতো খেয়া‌লি ছে‌লে তার,সুস্থ থাক‌লে মা‌কে মাথায় তু‌লে রাখ‌তো । আর আজ ৬৫বছ‌রে এসেও ৩৪ বছর বয়‌সি ছে‌লে‌কে কাপড় প‌ড়ি‌য়ে দি‌তে হ‌চ্ছে । তার য‌দি অন্তত একটা ছে‌লে সুস্থ হত !
( সত্য ঘটনা অবলম্ব‌নে ।“ডেইলি স্টা‌রে” ছাপা হ‌য়ে‌ছিল এক দুঃখী মা‌য়ের কথা,যার দুই ছে‌লেই পাগল )

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম এমন অসহায় যেন আল্লাহপাক কোন মাকে না করেন। শুভ কামনা রইল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এখান‌ে একজন মায়‌ের অসহায়ত্ব দেখান‌ো হয়‌েছে । যে তার পর‌িবারের জ‌েনেট‌িক্যাল র‌োগের কাছে হার ম‌েনেছে।

২৩ জুলাই - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪