গতকাল রাতে ঘুমাতে অপ্রত্যাশিত ভাবেই একটু দেরি হয়ে গেল।বাড়ি ফেরার পথে মনে হলো! কে যেন আমার পিছু নিয়েছে,
হঠাৎ মনে হলো, আমার পায়ের কাছ দিয়ে ধবধবে একটি সাদা বিড়াল, মৃদু পায়ে আমার পিছনে–পিছনে এগিয়ে আসছে–আমার শরীরের ভিতর কেমন যেন একটা ঝাঁকিদিয়ে উঠলো, বিদঘুটে অন্ধকার রাত । আমি সূরা ফাতিহা সহ অনন্য দোয়া
পড়লাম – লা ইলা–হাইল্লাল্লা–হ! একটু সামনে এগিয়ে দেখলাম আমার পাশের সাদা ধবধবে বিড়ালটা নেই । মনের মধ্যে আতঙ্কের রেশ থেকে গেল আমার মনের গহিনে ।
পোদ্দার বাড়ির দুই পাশে বাঁশঝাড়, মাঝ খান দিয়ে সরু রাস্তা ।, আযান হবার পরেই চলে যেতাম; গাবগাছ থেকে গাব পারবার জন্য । গাব পেরে সোজা চলে আসতাম পোদ্দার বাড়ির ,কদবেল তলায় ।
সেখানে পূজা দিবার জন্য কুঁড়েঘর ছিল ।’ ধনীদের বাড়িতে কুঁড়েঘর !’ আমার মাঝে –মাঝে,খুব হাসি আসতো, একজন ষাটোর্ধ লোক সে বাড়ির পাহারাদার, বিশাল বাড়ি কেউ
থাকে না । গল্পশুনতাম ছেলে–
মেয়ে সবাই উচ্চশিক্ষিত ।, কেউ ভারত থাকে, কেউ ঢাকা ,বছরে একবার বাড়ি আসে সবাই । দু’এক দিনের জন্য । ছেলে–মেয়ে গুলো বেশির ভাগ ডাঃ সরকারি কর্মকর্তা ,গ্রামের মানুষকে ফ্রি দেখে দেয় ।টাকা পয়সা নেয়না ।সেই গল্পের মানুষ গুলোকে, এবার পূজায় স্ব–চক্ষে দেখেছিলাম ।পাহারাদারকে দেখতাম অযু করে মন্দিরের বারান্দায় নামাজ আদায় করতে।
মা’’ মাঝে মাঝে বলতো ,মায়ের মামাতো ভাইয়ের সৎ বোনের ছেলে, বটগাছের নিচে কলস ভর্তি কাঁচা টাকা পেয়েছে। আর তারা সেখান থেকেই ধনী । সম্পর্কের দূরত্বহলেও মনের কাছে ছিল অগাদ টান । তারা আমাদের বাড়ি আসত হাতে করে শর্বরীকলা, পুকুরের মাছ ,তরমুজ,বাঙ্গী, কাঁঠাল, কি দারুণ মায়াময় সেই স্মৃতি । আমারমনে আছে আমি তখন ক্লাস ফাইভ এ পড়ি ।বৃষ্টিতে ভিজে একদিন মিনুর সঙ্গে কৈই মাছ ধরে ছিলাম । পোদ্দার বাড়ির পুকুর পাড় থেকে । পোদ্দার বাড়ির পাহারাদারআমাদের তাড়া করেছিল ,আমরা দৌড়ে পালিয়ে ছিলাম ।
কলমিশাক তুলে এনেছিলাম সেদিন ।মা’ রাতে কলমিশাক, আর কৈই মাছ ভাজি করে খেতে দিয়েছিল সে কী মজা । আহা রে এখনো মনে হয় ঠোঁটের কিনারে সাধ লেগেআছে । আগের মত আর জঙ্গল নেই। নেই পাখি ডাকা সকাল। মুরগীর বাচ্চা নিয়ে যাবার ভয়ে চিলের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য কদ্দুস মামার সেই পলো তৈরীরস্মৃতি আজ ও আমার দারুণ ভাবে বশীভূত করে ।
রাত একটু গভীর হলেই পোদ্দার বাড়ির পুকুর থেকে স্বর্নের সিন্দুক উঠে আসে কদবেলগাছের গোড়ায় । একটা ধবধবে সাদা পরীর মত মেয়ে পায়ে নূপুর পড়ে নাচে ।ঝুম–ঝুম শব্দে । আমি কান পেতে শুনি তার নূপুরের ধ্বনি । পোদ্দার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ির দুরত্ব দু’চোখ দিয়ে সুস্পষ্ট সবকিছু দেখা যায় । তবে, বাড়ির পিছনদিক দিয়ে কালো টিনের বেরা দেওয়া,সামনের দিকে কিছুই দেখা যায়না ইদানিং । পুকুরে ভয়ে কেউ গোসল করতে নামতে চাইতো না । সেই পুকুর এখন চৈত্রমাসেশুকিয়ে যায়,বোর ধানের আবাদ হয় ।
মিনু, আমার কাছে অনেক আবদার করতো, আমি কখনো মিনুর আবদার রাখতে পারি নিই ।একবার কলমিশাক দিয়ে চিংড়িমাছ ভাজি করে খেতে চেয়েছিল বেচারী ! সন্ধ্যায় পতি ডাঃ এর ঘর থেকে এক পোয়া কিরোসিন তৈল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম । তখন দূর্গাপূজা চলছে পাটক্ষেতের আইল দিয়ে দু’জন মানুষ একটা মেয়েকে মুখবেধে নিয়ে যাচ্ছে
অন্ধকারের কারণে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিনা ।কিছুক্ষণ পড়েই কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল ।আমাকে কেউ কিছুই বলছে না । জানতে চাইলে বলে! তুমি ছোট মানুষ এ সব জানতে নেই ।,
এখন আমার মনে হয় গভীর রাতে,আমি যখন একাকী হেঁটে চলি তখন মনে হয়, মিনু বিড়াল হয়ে আমার সঙ্গ নেয় । গভীর রাতে আমি একা ঘুমিয়ে থাকি বলে, ও এসে আমার কানের কাছে নূপুর পরে নাচে । আমাকে পোদ্দার বাড়ির শান বাধানো ঘাটে নিয়ে গিয়ে গোসল করিয়ে দেয় । ‘‘মিনু মানুষ মরে গেলে কি ? তার পুরনো খেলারসাথীকে কে মনে রাখে?’’ কড়ইগাছে না কি ভূত থাকে ? ভূত বলে কিছু নেই । ও সব আমার মিনূর স্মৃতি মানুষ ভয়ে ভূত বলে !
০৩ মে - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪