আঁধারে ঘেরা বসন্ত

আঁধার (অক্টোবর ২০১৭)

মৌরি হক দোলা
  • ১৮
প্রতি রাতের মত মানিক আজও রাহিমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে দিয়ে এল। কিছুটা দূরে সামনের ঘরে বসে রাহিমার চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে।সে ক্রমাগত কেঁদে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে “ ‘আল্লাগো’, ‘আল্লাগো’ ”।

আসমা মশারির ভেতরে বসে চারপাশ ঠিকঠাক করছে। খোকন আরও অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আসমা তাকে টেনে তার বালিশে শুইয়ে দিল। মানিক ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শুতে গেল। খোকনের পাশে শুইয়ে আসমা তার পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল
-মায় কী আইজ বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে ?
-হ। কী যে করমু আসমা! মায় যে ক্যান অ্যামন করে! ভাল্লাগে না আর। একটা জ্যাতা মাইনষেরে ক্যামনে অ্যামন তালা দিয়া রাহন যায় ? না রাইখ্যাও তো আর উপায় নাই।
-কী করবা কও ? আমাগো তো আর কিছু করন নাই। মায়রে তো কত জিগাইলাম। মা আপনে অ্যামনে কান্দেন ক্যা ? মায় তো কিচ্ছু কয় না। খালি চুপ কইরা থাহে। আর রাইত অইলে আবার কান্দন শুরু করে।
- সবই আমার কপাল!
-রাইত অনেক অইছে। এহন ঘুমাইয়া পড়ো।

মানিক পাশ ফিরে বাতিটা বন্ধ করে দিল।ঘরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার।ও ঘর থেকে মায়ের কান্নার আওয়াজ এখনও শোনা যাচ্ছে।

০০০

রাহিমা ভাত রান্না করছে। কাঠের চামচে কয়েকটি ভাত তুলে নিয়ে সে দেখে নিল ভাতের চাল ফুটেছে কিনা। পাশেই আসমা তরকারির জন্য পিঁয়াজ কাটছে।

-মা, একটা কতা কমু ?
- কী? কও।
-আমি তো আপনার পোলার বউ, মাইয়ার মতনই।
-তুমি আমার কাছে হের থাইক্যাও অনেক বেশি কিছু।
-তাইলে মা আমারে কন না আপনে অমনে কান্দেন ক্যা ? কী কষ্ট আপনের ?মা আমাগো কোনো কিছুতে কী আপনে কষ্ট পান বা অাপনার পোলার...

রাহিমা হঠাৎ থমকে গেল। হাত থেকে ভাতের চামচটা নামিয়ে বলল,
-কতবার কইছি না, তোমরা কেউ আমারে এই ব্যাপারডা নিয়া কোনোসুম কিছু জিগাইবা না। আমি তোমাগো কিছু কইতে পারুম না।আমার মনে লয় আমি কান্দি। তোমাগো কি অ্যা ?
-মাফ করেন মা। আর জিগামু না। ভুল হইয়া গ্যাছে।
-ন্যাও, এহন বেশি কতা না কইয়া হাতের কাম তাড়াতাড়ি সারো।খোকন স্কুল তোন আইয়া পড়ব, মানিকরেও তো ভাত পাডাইতে হইব না কি ?

০০০

দূর আকাশের চাঁদ তার জোছনার আলো চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। চাঁদের আলোয় দক্ষিণের জানালায় দাঁড়িয়ে সমস্তটাই দেখা যাচ্ছে। শফিকদের পুরনো পুকুরটা আগের মতই আছে। পুকুরের ওপারের সেই নারকেল গাছগুলোও এই সুন্দর চাঁদের আলোয় স্পষ্ট।
এই পুকুরের কাছে শফিকের কতদিনই না কেটেছে। হ্যাঁ, সে অবশ্য অনেক রাতও এই পুকুরের ধারে বসেই পার করেছে।বাড়ির সবাই খেয়ে শুয়ে পড়লেই সে ঘরের বাতি বন্ধ করে নিঃশব্দে এসে পুকুরের পাড়ে বসেছে।চুপিচুপি তার প্রিয়ার দেয়া চিঠিগুলো বের করেছে।শতবার, হাজারবার সে সেই সুন্দর চিঠিগুলো পড়েছে। হয়তোবা কখনও কখনও রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গিয়েছে। পুব আকাশে ক্ষীণ আলোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অদূরের মসজিদ হতে ভেসে আসছে ফজরের আজানের সুর, ঘুম থেকে জেগে উঠবার আহ্বান। কিন্তু সে ছিল ....।সে ছিল তার একান্ত নিজস্ব কল্পনার জগতে বিভোর।

আজ অনেক দিন পর দক্ষিণের জানালায় দাঁড়িয়ে তার সেই পুরোনো স্মৃতিজড়ানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ল। তার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসির ঝলক।এই অজানা কারণের হাসিটা ঘরে ঢুকেই লিপির চোখে পড়ল।বিছানায় বসে বেণী করা চুলগুলো খুলে এলিয়ে দিতে দিতে সে বলল
-কী ব্যাপার ? এত মুচকি মুচকি হাসি কেন ?

লিপির ঘরে ঢুকবার বিষয়টা শফিক এতক্ষণ লক্ষ্যই করে নি। লিপির কথা শুনে সে ফিরে তাকালো।
-তুমি কখন এলে ?
-বাব্বা! কী এত ভাবছিলে যে ঘরে কে এল না এল তা দেখতে পাওনা ? তোমার সেই প্রিয়ার কথা ?
-জানো, অনেকদিন পরে পুকুরটার দিকে তাকাতেই ওর কথা মনে পড়ল। ইশ্! কতদিন পরে গ্রামে এলাম।কত স্মৃতি!
-থাক, আর স্মৃতিচারণ করতে হবে না।

শফিক তার টেবিলের কাছে গিয়ে রবিঠাকুরের ‘নৌকাডুবি’ বইটা হাতে নিয়ে এর পাতা উল্টোতে লাগলো।
-জানো, আমি না ভাবতেই পারি নি বাবা মা আমাকে এত সহজে মেনে নিবেন।
-কেনো ? মেনে না নেবার কী আছে ? তুমি সুন্দরী, শিক্ষিতা, স্মার্ট।
-না, মানে..। হাজার হোক আমরা কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলাম।তাদেরও তো একটা মতামত আছে, তাই না ?
-তা অবশ্য ঠিক। তবে যাই বল সবাই কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ করেছে।যাক গে, ওসব কথা এখন ছাড়ো। আগে বল তোমার কাছে আমাদের গ্রামটা কেমন লাগছে ?
-ধ্যাৎ! এখনও তো ভালো করে ঘুরেই দেখতে পারলাম না।
-আচ্ছা, কাল তবে তোমাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বেরোব।
- ঠিক আছে, কাল যা হবার হবে, এখন আমি ঘুমোবো। বাতিটা বন্ধ করে দাও তো।

লিপি বালিশে শুতেই একটা চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেল।কে যেন ‘আল্লাগো’ ‘আল্লাগো’ বলে চিৎকার করছে। সে উঠে বসল।
- ওভাবে কে চিৎকার করছে ?

শফিক অবাক সুরে বলল,
-কাকিম্মার বাতিকটা তবে এখনও সারে নি ?
-কী হল ?
-আরে, পাশের বাড়ির কাকিম্মা।ছোট থেকেই দেখে আসছি, উনি রোজ রাতে এভাবে কাঁদেন আর ‘আল্লাগো’ ‘আল্লাগো’ বলে চিৎকার করেন।সারাদিনই সমস্ত কিছু স্বাভাবিক কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথেই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। মাঝে মাঝে এমনও অবস্থা হয় যে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখতে হয়।
-উনি রোজ এমন করেন ?
-হু। রোজই করেন।
-কী বলছ! আচ্ছা, উনার কোনো চিকিৎসা করানো হয় নি?
-চিকিৎসা! বললাম না সারাদিনই সবকিছু ঠিকঠাক। সবাই অনেক চেষ্টা করেছে।কিন্তু উনার সামনে এ কথা বললেই তো উনি রেগে অস্থির হয়ে উঠেন। মানিক খুব চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো লাভই হয় নি। উনি এ ব্যাপারে একটু টের পেলেই রেগে বাড়ি মাথায় তুলেন।
-মানিক কে ?
-উনার ছেলে।
-উনার স্বামী...?
-বেঁচে নেই।
-ও...।
-নাও, এখন ঘুমিয়ে পড়। অার ইতিহাস ঘাটতে হবে না।আমার তো মনে হয়, কাকিম্মা এভাবেই পাগলের মত কাঁদতে কাঁদতে একদিন চলে যাবেন !
-কিন্তু আমার মনে হয় উনার ভালো চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
-তাতো অবশ্যই। কিন্তু সে উপায়ও তো নেই।যাকগে,এখন ঘুমাও। আমি কিছুক্ষণ বইটা পড়েই শুয়ে পড়ছি।
-ওকে, গুড নাইট।
-গুড নাইট!

০০০

শফিক লিপিকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বেরিয়েছে। অসম্ভব সুন্দর একটি গ্রাম। শহরের যান্ত্রিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ের সবুজে ঘেরা গ্রামের স্নিগ্ধতা ভালো লাগবে, এটাই স্বাভাবিক।লিপির ক্ষেত্রেও তাই হল।কি সুন্দর শান্ত, নিরিবিলি। কোথাও কোনো গাড়ির শব্দ নেই, অতিরিক্ত মানুষের ঢল নেই। দূরে কোথাও হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে দেখা যায় নীল আকাশ আর সবুজ ফসলের ক্ষেত একে অপরের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। অসম্ভব সুন্দর, মনোহর সেই দৃশ্য!

হাঁটতে হাঁটতে মানিকদের বাড়ির কাছে এসেই শফিক বলল,
-এই হল মানিকদের বাড়ি, কাল রাতে যার মায়ের কান্না শুনেছিলে।
-ও...।

মানিকদের বাড়ি অতিক্রম করে কিছুটা পথ এগোতেই লিপি বলল,
-চল না একবার মানিকদের বাড়িতে যাই।
-কেনো ?
-এমনি। আমার কাকিম্মাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে।
-চল। আমার সাথেও উনাদের অনেকদিন দেখা হয় না। দেখা করে আসি।

শফিক আর শফিকের নতুন বউকে দেখে রাহিমা ভীষণ খুশি হয়েছে।সে তাদের জন্য নাস্তা তৈরি করছে আর কথা বলছে। ওরা কবে এল, বিয়ে কবে করল, কাউকে জানাল না কেন, তাদের আসবার খবর জানলে সে কালই গিয়ে একবার দেখা করে আসত- এইসব আরকি।

লিপি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে রান্নাঘরে একটা পিঁড়িতে বসল।
-কাকিম্মা, ওটা কী রাঁধছেন ?
-নাইরকেল জ্বালাইতাছি, মা। ওই যে বউমা চাউল গুঁড়ি করতাছে, তা দিয়া তোমাগো লাইগ্যা কয়ডা পাকান পিডা বানামু।
-পাকান পিঠা ?
-হ। খাইছো কোনো সুম ?
-না, কাকিম্মা। আমি তো ছোট থেকেই শহরে বড় হয়েছি, তাই গ্রামের অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস মিস্ করেছি। নিশ্চয়ই খুব মজা ?
-খাইয়া দেইখও, একবার খাইলে বারবার খালি খাইতেই মনে চাইব।

মাগরিবের আযানের সময় হয়ে এসেছে। রাহিমা আর আসমা লিপিকে নিয়ে ঘরের বারান্দায় বসে কথা বলতে বলতে পিঠা খাচ্ছে। শফিক কয়েকটা পিঠা মুখে দিয়েই চলে গিয়েছে। লিপিকে বাড়ি যাবার কথা বলতেই লিপি মানা করেছে, সে জানিয়েছে সে আজ অনেকক্ষণ এদের সাথে গল্প করে রাতে বাড়ি ফিরবে, শফিক যেন তাকে পরে নিতে আসে।

-সত্যি, কাকিম্মা! আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ খাবার। বড় বড় রেস্টুরেন্টেও এত ভালো খাবার পাওয়া যায় না।
-খাও মা। তুমি মন ভইরা খাও।

আকাশটা ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে। পূবের সূয্যিমামা পশ্চিমে ঢলেছে অনেকক্ষণ। তারই ছাপ পড়েছে রাহিমার চোখেমুখে। হঠাৎ সে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। তার বিকেলের সেই চান্ঞ্চল্য এখন আর নেই। তখনকার মত আর হাসছে না, কথা বলছে না।

লিপি আর আসমা জমিয়ে গল্প করছে।শহুরে জীবন, সেখানকার মানুষ, তাদের চলাফেরা, কথাবার্তা, পড়াশোনা- আসমা খুব মনোযোগসহকারে শুনছে। কিছু জানতে ইচ্ছে হলে সেটা সে আবার জিজ্ঞেসও করছে। গল্প করতে করতে সে হঠাৎ লক্ষ্য করল তার শাশুড়ি চুপচাপ, ক্লান্ত চোখে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মনের মাঝে হঠাৎ নাড়া দিয়ে উঠল, ‘রাইত অইয়া আইছে। এহনই মায় কান্দন শুরু করব।নতুন মেজবানের সামনে....।’
-ভাবি, কী হল তোমার ?
-না, কিছু না।

আসমা বিষয়টা আড়াল করতে চেষ্টা করল। তখনই লিপির চোখ পড়ল রাহিমার দিকে। মানুষটা কেমন চুপচাপ হয়ে আছে। একটু সরে বসে সে রাহিমার কাঁধে হাত রাখল।
-কী হয়েছে, কাকিম্মা ?

রাহিমার দু’চোখের জল গড়িয়ে পড়ল।
-কাঁদছেন কেন ?
-আইতাছে! আইতাছে!

রাহিমা চিৎকার করে উঠল।
-কী আসছে কাকিম্মা ?
-জানোয়ারের দল আইতাছে।ওই যে, ওই যে ওগো পার আলাপ পাওয়া যায়।
-কাদের পায়ের আওয়াজ ?
-আল্লাগো!
রাহিমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

০০০

লিপি আর আসমা সারারাত রাহিমার পাশে বসে ছিল। লিপি বাড়িতে যায় নি। শফিক একবার এসে ঘুরে গিয়েছে। লিপিকে জোর করে নি।
সারারাতে রাহিমার ঘুম একবারের জন্যও ভাঙে নি। কাল রাতে সারা গ্রাম নিস্তব্ধ ছিল, কেউ চিৎকার করে কাঁদে নি।

-কাকিম্মা, এখন কেমন লাগছে ?
-ভালো। তুমি বাড়ি যাও নাই ?

রাহিমা আস্তে আস্তে কথা বলছে।
-না, আপনার সাথে ঘুমালাম।
রাহিমা চুপচাপ।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করব ?
-কর।
-কাল রাতে আপনি কাদের কথা বলছিলেন ?

রাহিমার দু’চোখে পানি টলটল করছে।
-সোনার সংসার! মা রে, আমার আছিল একটা সোনার সংসার। স্বামী, বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ি। কোনো অভাব আছিল না। তয় আল্লায় খালি আমারে একটা অভাব দিছিলেন। আমার কোলডা আছিল খালি। আল্লায় আমারে কোনো পোলাহান দেয় নাই। কত কি করছি! পানি পড়া খাইছি, মাজারে গেছি, ফকির দেহাইছি, পাঁচ ওক্ত নামাজের বিছনায় বইয়া কানছি। কিছুতেই আর আল্লায়ও খুশি অয় না আমার আন্দার ঘরেও আলো আহে না। কিন্তু হের লাইগ্যা আমার স্বামী কোনোদিন আমারে কম ভালোবাসেন নাই। শ্বশুর, শাশুড়িও অবহেলা করেন নাই। সব সুম আদরে রাখছেন। কোনোদিনও একটা খোঁডা দেন নাই। তয় আমার শাশুড়িও অনেক কানছেন, খালি একডা নাতির মুখ দেহনের লাইগ্যা। কিন্তু দিন যায়, মাস যায়, আমার ঘরে আর পোলাপান কান্দে না।

হঠাৎ...। হঠাৎ দ্যাশে গন্ডগোল লাগল। চাইরধারে বাড়িঘর পুইরা ফালায়, গেরামের পর গেরাম শ্যাষ হইয়া গেল। কত মানুষ পলাইয়া গ্যালো! খালি আমরা চাইরডা মানুষ এই
ভিডায় পইড়া থাহি।কোতাও যাওনের নাম লই না। আমার শ্বশুরে কইল, ‘কোতায় যামু ? বাপ-দাদার ভিডা হালাইয়া কোতায় যামু, অ্যা ? কোতাও যামু না। বাঁচলে এহেনে বাঁচমু, মরলেও এহেনে মরমু।’ আমার স্বামী আমাগো রাইখ্যা দ্যাশ বাঁচানের লিগা চইলা গেলেন। আমরা তিনজন রইলাম। দিন রাইত খালি ভয়ে ভয়ে পার করি, এই বুঝি বাইত্যে আগুন লাগাইয়া দিল।

একদিন রাইতে আমরা তিনজন ঘুমাইতাছি। অমাবস্যা। চাইরধারে ঘন আন্ধার। হঠাৎ শুনলাম কারা জানি আইতাছে। পার আওয়াজ পাই। বাড়ি ঘিরা ফালাইল, আমাগো তিনজনরে ঘরের বাইরে আইনা ঘরে আগুন লাগাইয়া দিল। আমার চেখের সামনে দিয়া আব্বা, অাম্মারে গুলি কইরা মাইরা ফালাইল।আর আমার...! আমার সব কাইড়া নিয়া গ্যালো।

এ অবধি বলে রাহিমা কিছুক্ষণের জন্য থামলেন। তার অজান্তেই তার ভিতর হতে বেরিয়ে এল ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস। আর তার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝরে যাচ্ছে।

-একসুম শুনলাম, দ্যাশে গন্ডগোল শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। জানোয়ারের দল এই দ্যাশ ছাইড়া চইলা গ্যাছে। সবাই ফিরা আইতাছে। আমি অপেক্ষা কইরা বইয়া রইলাম, এই বুঝি হে আহে। না, হে আর আইল না! তয় কয় মাস পরে আমার আন্দার ঘরে আলো আইল। আমার মানিক জন্মাইল। আমি সব হারাইয়া আমার মানিকরে নিয়া বাইচ্যা রইলাম!

রাহিমা অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন, তবে নিঃশব্দে। কোনো চিৎকার নেই, শব্দ নেই। আজ আর কেউ তার কান্নার শব্দ শুনছে না।কেউ জানতেও পারছে না। এই কান্না দেখছে শুধুমাত্র লিপি আর আসমা। আসমা ভাত রাঁধবার জন্য উঠে গেল। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে, খোকন ভাত খেয়ে স্কুলে যাবে। লিপি রাহিমার একটা হাতের উপর হাত রেখে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর সেও উঠে চলে গেল। সে বুঝতে পারছে না শফিককে সে বলবে কি না ‘কাকিম্মার এতদিনের অজানা কারণে কান্নার পেছনের গল্প আজ আমি জানতে পেরেছি’।

আর রাহিমা ? সে সেই একই ভঙ্গিতে বসে রইল। নড়ল না। কেবল শুনতে পেল দূরে কোথাও একটা কোকিল ডাকছে। ‘কুহু’ ‘কুহু’। তবে কী আরেকটি বসন্ত চলে এল ? যে বসন্তের কোনো রং নেই। যে বসন্তে কোনো আনন্দ নেই, সুখের ছোঁয়া নেই। এক রঙহীন, কিছু কষ্টের আঁধারে ঘেরা বসন্ত ???
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধের গল্প যেখানেই পাই পড়ার চেষ্টা করি। খোঁজার চেষ্টা করি শিকড়ের কিছু তথ্যও পেয়ে যাই সে গল্পগুলো থেকে-পরবর্তীতে এ সকল উপাদান নিয়েই লেখার চেষ্টা করি মুক্তিযুদ্ধের কিছু গল্প। কিছু শোনা কথা, কিছু গল্প, কিছু তথ্য এসব একসুতোয় গাথার চেষ্টা করি মাত্র। আপনার গল্পটিতেও সেরকম কিছু উপাদান পেলাম। ভালো লাগল গল্পটি। অনেক শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৮
আমার লেখা গল্পে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য পেয়েছেন, যেটা আপনি আপনার মতো করে কাজে লাগাতে পারবেন- এটা শুনে বেশ ভালো লাগল। গল্পতি পড়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাই... আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা রইল...
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ আক্তারুজ্জামান বাহ্‌... .... খুব সুন্দর। অনেক অনেক শুভ কামনা।
এশরার লতিফ যুদ্ধকালীন ট্রমা নিয়ে সুন্দর গল্প লিখেছেন। এই মহিলা হয়তো কোনদিনই ট্রমা কাটিয়ে ওঠার মানসিক সাহায্য পাননি।
Fahmida Bari Bipu আপনার গল্পটি পড়লাম। বেশ সুন্দর ভাবে লিখেছেন। কিছু ছোটখাট জায়গায় অবশ্যই বেশ কিছু ফাইন টাচের প্রয়োজন আছে। যেমন, মানিক ও আসমা দুজনে রহিমার কান্নার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে গেল। করতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত একরাতের পরিচয়ে লিপি কীভাবে তা করে ফেললো? বিষয়টা খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হয়নি। শোকের মাত্রা কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। মানুষের জীবনে কিছু বিষয় খুব দাগ কাটে কথা ঠিক, কিন্তু জীবনের ধর্ম অনুসারে সব দাগ হালকাও হয়ে যায় একসময়। সে যাক, মোটকথা উপস্থাপনে বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে হবে আরো। নিয়মিত চর্চা অব্যাহত রাখুন। নিশ্চয়ই সফলকাম হবেন। শুভকামনা।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং আমিও এ বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন হবার চেষ্টা করব।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত পড়ে ভাল লাগল । ভোট সহ শুভকামনা । আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
ধন্যবাদ আর আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা।
মনজুরুল ইসলাম The description of the story is very nice.Waiting for the actual cause of crying of Rahima.yes, Some moments can't be forgotten. Congratulations for your story. Check the spelling `Lokkho' plz.
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী কাহিনীটা খুব ভালো লেগেছে, কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো- এই গন্ডগোলের জন্য তাকে সারা জীবন এভাবে কাঁদতে হয়? আমি ১মে মনে করেছি- কোনো ভূত- প্রেত, কিন্তু শেষে বুঝতে পেরেছি..... যা হোক, খুব ভালো লিখেছেন, এই জন্য মনের মত ভোট সহ শুভকামনা রইল....
কখনও কখনও মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যেগুলো কখনও অন্য ঘটনার ভিড়ে হারিয়ে যায় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘটনাগুলোকে বয়ে বেড়াতে হয়। যাঈ হোক গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কাজী জাহাঙ্গীর ভাল লাগল, ভালই টানে টানে নিয়ে গেলেন শেষ পয্যন্ত। অনেকেই হয়তো নস্টালজিক হয়ে পড়বে। অনেক শুভকামনা , ভোট আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।

২৮ এপ্রিল - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪