মুখোশহীন মানুষ

পার্থিব (জুন ২০১৭)

ছায়াপথ
রাত ১১:৩০। অন্ধকার রাস্তা।পাশ দিয়ে গাড়িগুলো সাইসাই করে চলে যাচ্ছে। কত্ত ব্যাস্ততা ,ঘরে ফেরার। আমারও ঘরে ফেরার কথা ,কিন্তু আমি রাস্তায় হাটছি। এইভাবে এই রাস্তায় হেটে-হেটে জীবনটা পাড় করে দিতে পারলে মন্দ হতো না।
কি আছে এই জীবনে ? অফিসে বসের ঝাড়ি ,বাসায় বৌয়ের। এর থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে জীবন পার করলেই ভালো। চোর-বাটপারের জন্যে একটু সমস্যা ,কিন্তু এই মুহূর্তে আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। আমার মধ্যে বৈরাগ্য ভর করেছে।
হাবিজাবি নানা কথা ভাবতে-ভাবতে যখন হাটছি , হটাৎ করে আমার থেকে দুই-তিন হাত দূরে বসে থাকা একটা ছালা-বাবা টাইপ লোকের উপর চোখ আটকে গেলো।
ছালা-বাবা দুই পা ছড়িয়ে একটা গাছের আড়ালে বসে আছে ,এই শীতেও কোমরে শুধু একটা ছালা জড়ানো। গায়ে আর কোথাও আর একটা সুতাও নাই। গাছের আড়ালে বসে আছে জন্যে হঠাৎ করে চোখে পরে আরেকটু হলেই আমার হার্ট এটাক হয়ে গেছিলো। এতো রাতে এই ধরণের লোক থেকে দূরে থাকাই স্বাস্থ্যকর। পিছনে ফিরবো ভাবতে ভাবতে লোকটার দিকে চেয়ে দেখি ডোরাকাটা দাঁতে আমার দিকে চেয়ে হাসছে। লক্ষণ ভালো না, বিপদ আসন্ন। যেই মুহূর্তে পিছন ঘুরে দৌড় লাগাবো ভাবছিলাম অমনি বাবা আমার সামনে পথ আগলে বললো - " টেকা দে। "
ভয়ের ঠেলায় আমার হার্ট কতগুলা বিট মিস করলো। অনেক কষ্টে পকেট খুঁজে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দিলাম। ভাগ্য ভালো পঞ্চাশ টাকা বের হয়েছিল! আমি ভীতু মানুষ ,পাঁচশো বের হলে সেটাই দিয়ে দিতাম। তখন আর আফসোসের সীমা থাকতো না।
টাকা পেয়ে ছালা-বাবা মহা খুশি। বললো -"তুই ভালো মানুষ।দুনিয়াডা চোর ছাচ্চরে ভইরা গেছে বুঝলি ।তর উপরে খুশি হইলাম ।দে তর চশমা দে। "
ভালো মানুষ হওয়ার জন্যে জীবনে অনেক বিপদে পড়েছি ,এইবারও পড়তে যাচ্ছি মনে হলো । পাগল-ছাগল মানুষ চশমাটা ভেঙে ফেললে আর বাসায় ফিরা লাগবে না। চশমা ছাড়া একবার আমার বৌকে শাশুড়ি ভেবে আম্মা ডেকে যে বিপদে পড়েছিলাম !!
তাও আল্লাহ সহায় ,উল্টাটা হয়নাই। তাহলে আমার গলায় ফাঁস নেয়া ছাড়া গতি ছিল না।
এতো কিছু ভাবছি দেখে ছালা-বাবা নিজেই উদ্যোগ করে আমার চোখ থেকে চশমা খুলে নিলো। এইবার আমি গেছি ,ভাবলাম।
আমার চশমাটা কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে ফিরত দিলো ,আমি কোনো চশমা ভাঙার শব্দ পেলাম না। ফেরত দিয়ে বললো - "যাহ ,তোরে দুআ দিয়া দিলাম কাইলকা সারাদিন মুখোশ ছাড়া মানুষ দেখবি। মজা পাবি। "
বলে হাঁসতে-হাঁসতে চলে গেলো।
কয় কি পাগলা ! মুখোশ ছাড়া মানুষ আবার কি ? ছোটকালে শখ করে বাচ্চারা মুখোশ পরে। আমিও পড়তাম । বাঘের মুখোশ পরতে বেশি ভাল্লাগতো, কেমন একটা বাঘ-বাঘ ফিলিংস হতো। বড় মানুষ আবার মুখোশ পরে নাকি !!!!
পাগলা মানুষ কি বলতে কি বলেছে তার কি ঠিক আছে !! আমি আর নতুন কোনো ঝামেলার অপেক্ষা না করে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
রাত-বিরাতে ঘুরাঘুরি করে ছালা বাবার দুআ নেয়ার থেকে আমার দজ্জাল বৌয়ের কাছে ফিরে যাওয়াই বেশ নিরাপদ মনে হলো ।

সকাল বেলা বাবার কথা ভুলেই গেছি। ঘুম ভাঙলো বৌয়ের ক্যাচক্যাঁচানি শুনে। অনেক কষ্টে হাতড়ে চশমাটা খুঁজে চোখে দিয়ে আৎকে উঠলাম। দেখলাম একটা বেশ বড়সড় রামছাগল আমার ঘরময় ছুটে বেরাচ্ছে আর ভ্যাভ্যা করে যাচ্ছে। বুঝলাম ছালা-বাবার কেরামতি।
সারাদিন আরো না জানি কি কি দেখতে হবে আজকে কে জানে !
অফিস যাবার জন্যে রেডি হয়ে চশমাটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। একটা গাধা পিটপিট করে চশমার ভিতর দিয়ে মুখ হাসিহাসি করে তাকিয়ে আছে। এত্ত মন খারাপ হলো নাস্তাও ঠিকমতো করতে পারলাম না।
রাস্তায় বেরিয়ে নানান ধরণের প্রাণী দেখে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। এমন বিপদে পড়েছি চশমাটাও খুলে সুবিধা করতে পারছি না , আবার সত্যিটাকেও নিতে পারছি না। ঠিক করলাম কারো দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ আজকের দিনটা পার করে দিবো।
কিন্তু সবকিছু দেখতে চাওয়া যেমন কঠিন ,না দেখে থাকাটাও কঠিন ,এড়িয়ে যাওয়াটা আরো কঠিন।
অফিসে যাবার জন্যে বাসে উঠে চুপচাপ মাথা নিচু করে জানলার পাশে একটা সিট এ বসলাম। পরের স্টপেজে একটা চালবাজ ধরণের লোক উঠে আমার পাশে বসলো। কারো দিকে তাকানো যেন না লাগে এজন্যে একটা খবরের কাগজ কিনে পড়ার চেষ্টা করছিলাম। খবরের কাগজ এর ছবিগুলাতে ছালা-বাবার কেরামতি কাজ করছে না। আজকাল লোকজন ছবি এডিট-টেডিট করে যে দশা করে যে চেনার উপায় থাকে না ,নিখোঁজ হলে ভোটার আই -ডির ছবি ছাড়া খুজার অন্য কোনো উপায় থাকে না। তেমনি ছবির মামলায় এসে ছালা-বাবাও মার্ খেয়ে গেছে। যাক বাবা খবরের কাগজে মুখ গুঁজে যদি তাও এই নানান ধরণের পশু-পাখির মৃগয়া-ভূমি থেকে কিছুটা বাঁচতে পারি।
যাই হোক চালবাজ ধরণের লোকটা পাশে বসেই আমার খবরের কাগজে এমন ভাবে উঁকিঝুঁকি মারা শুরু করলো যে বাধ্য হয়ে আমার পড়া বন্ধ করে তার দিকে বাড়িয়ে দিতে হলো । দিতে যেয়ে দেখি আমার পাশে টাই পরে একটা কাক বসে আছে ,হাসি পেয়ে গেলো ।
ভাড়া দিতে যাবার সময় আমি ৫০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলে ষড়যন্ত্রীর মতো করে কাক বাবু বললেন ,"চেয়ে এখনই বাকি টাকা না নিলে কিন্তু স্ট্রেইট মেরে দিবে। " এমন একখানা ভাব নিয়ে বললো যেন এই কুটিলতা ভরা পঙ্কিল পৃথিবীর সকল জটিলতা তার বোঝা শেষ এবং তার একমাত্র পবিত্র দায়িত্ব আমাদের মতো নাদান জনতাকে শিক্ষা দান।
অনেক কষ্টে হাসি চাপতে চাপতে অফিস এ পৌঁছে দেখি আমার পাশের ডেস্ক এ একটা কচ্ছপ বসে আছে। কোনার দিকে একটা কুকুরকে জিভ বের করে বসে থাকতে দেখলাম।
এতদিনের পরিচিত এই অফিসটাতে নানান ধরণের পশু-পাখি ঘুরে বেড়াতে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সত্যিটা জানা সহজ কিন্তু মেনে নেয়া কঠিন।
কেও হিংস্র ,কেও আবার নিতান্তই গোবেচারা ধরণের। কয়েকটা নেকড়েকে ঘুরে বেড়াতে দেখলাম ছোট ছোট দলবেঁধে। অফিসের সবচেয়ে গা বাঁচিয়ে চলা লোকটার ডেস্কে দেখলাম একটা উট পাখি বসে আছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম উট পাখি বিপদ দেখলে মাথা গর্তে ঢুকিয়ে বসে থাকে ,আজকে এই ঘটনার সত্যতা টের পেলাম।
সারাদিন বেশ কয়েকবার কচ্ছপটাকে হালকা ঝামেলা দেখলেই খোলসের ভিতর ঢুকে পড়তে দেখলাম। অফিসার নানান ধরণের সমস্যা খুঁজে নালিশ করা লোকটা দেখলাম টিয়া পাখির মতো ট্যা-ট্যা করছে ,এক কোনায় বড় টেবিলটাতে একটা ঈগলকে চোখ লাল করে বসে থাকতে দেখলাম , ধান্ধাবাজ ধরণের লোকগুলোকে শকুন হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে দেখলাম।
কোনার কুকুরটাকে দেখলাম কখনো হেব্বি ঘেউ-ঘেউ করছে আবার কখনো লেজ গুটিয়ে জিভ বের করে মনিবের পিছন-পিছন ঘুরে বেড়াচ্ছে,একটাই সমস্যা সত্যিকারের কুকুরগুলা এতো মনিবের দাসত্ব করে না আবার সুযোগমতো দলপালটে মনিব পরিবর্তন করে না।
শেষ বেলায় বসের রুমে ঢুকে দেখি একটা জলহস্তী চেয়ারএ বসে দুলছে আর অফিসের সবচেয়ে ধুরন্ধর আর ধাপ্পাবাজ ধরণের লোকটা গিরগিটি হয়ে তার সামনে একটু পরপর সুযোগমতো রংএ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
বসের রুম থেকে বের হয়ে একটা চশমা পড়া গরুকে জাবর কাটতে দেখলাম। সারাটা দিন এভাবে মুখোশ ছাড়া লোকজন দেখে দেখেই কেটে গেলো, কাজকর্ম তেমন হলো না। সন্ধ্যার আগ দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে পাশের কোচিং সেন্টার থেকে বিশাল বিশাল বোঝা কাঁধে একপাল গাধা বেরোতে দেখলাম। মনটা এতো খারাপ হলো যে চশমাটা খুলে পকেটে রেখে দিলাম। এতো মন খারাপ করা দৃশ্য দেখার চেয়ে আন্ধা বাবা হয়েই বাসায় ফিরবো ঠিক করলাম।
বাসার নিচে পৌঁছে যখন রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতে যাবো পকেটে হাত দিয়ে দেখি ,সর্বনাশ !!

টাকার জন্যে দুঃখ লাগছিলো না ,আমার বদঅভ্যাস চশমা সারাজীবন শার্টের পকেটে না রেখে প্যান্টের পকেটে রাখি। ব্যাটা পকেটমার টাকার সাথে আমার চশমাটাও মেরে দিয়েছে।
সকাল বেলা আয়নাতে এক্কেবারে ঠিক দেখেছিলাম ,খুব মেজাজ খারাপ হলো নিজের উপর।
আশপাশের মানুষ গুলোকে তো দেখা হয়েই গেছে আর কি দরকার ,এই ভেবে বুঝ দিলাম মনকে। ছাগল বৌ হিসাবে খারাপ না। গাধা -ছাগল জুটি বেশ চলে।
বাসায় এসে রিকশা ভাড়া পরিশোধ করে দিলাম। কিন্তু আবারো মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমার শাশুড়ি আম্মা বাসায় এসেছেন। ছাগলের মা কি ছাগল ই কিনা জানার বড় ইচ্ছা ছিল।
ইশ , চশমাটা যদি এখন থাকতো !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পুস্পিতা আখি সুন্দর গল্প............।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পের থিমটা বেশ চমকপ্রদ। অনেক নতুন ভাবনা সৃষ্টি হলো। বেশ ভালো লাগলো। ভোট দিলাম। শুভকামনা ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো.....
রুহুল আমীন রাজু বেতিক্রম ভাবনার গল্প ...। অনেক ভাল লাগলো । শুভ কামনা নিরন্তর ...
আহা রুবন উদ্ভট ভাবনা নিয়ে গল্প! আমরা সবাই কোনও না কোনও সময় এমন ভেবেছি, আবার মনে মনে হেসেছি—যদি এমন আমি পারতাম। চমৎকারভাবে আমাদের চরিত্র তুলে ধরেছেন। শুরুতেই দেখলাম “কি আছে এই জীবনে ?” কী হবে। তুমি কী খাও? উত্তর হতে পারে—ভাত, আম, বিস্কুট... তুমি কি খাও? উত্তর হবে হ্যাঁ অথবা না। শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য।এরপর থেকে মনে রাখব
নাদিম ইবনে নাছির খান ভালোলাগল,, বিষয়বস্তুুর চমৎকার উপস্থাপন,,, শুভকামনা,,, আমার পাতায় স্বাগতম

১৯ এপ্রিল - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪