রাত্রি এক টা। টিভিতে একটা হরর ফিল্ম দেখছিলাম। সবেমাত্র শেষ হল। গা ছমছম করছে। শীতের রাত। চারিদিক নিস্তব্ধ। কোথাও একটু টুঁ শব্দ নেই। বাড়িতে আমি একা। সবাই গেছে গাড়িভাড়া করে এক আত্মীয়ের ছেলের বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে বেলাকোবা। কুচবিহার থেকে ঘন্টা তিনেকের পথ। আমাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছিল না বলে আমি গেলাম না। ওরা এখনও ফেরেনি। আসার পথে গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় কোন গ্যারেজে দাঁড়িয়ে রিপেয়ার করাচ্ছে, একটু আগে ফোন করে জানালো। আমাকে বলল শুয়ে পড়তে। কিন্তু এখন আমার যা অবস্থা, তাতে ঘুম আসার কথা নয়।
টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে কেন যে হঠাৎ ভূতের সিনেমায় আটকে গেলাম নিজেও জানিনা। দেখে ভয় পাচ্ছিলাম তবু চ্যানেল পাল্টাতে ইচ্ছে করছিল না। অগুনতি ভূতের বিটকেল চেহারা আর তাণ্ডব নৃত্য দেখে এখন আমার জবুথবু অবস্থা। বাথরুমে যেতেও ভয় করছিল। অনেকক্ষণ ধরে প্রস্রাব আটকে রেখেছি। ভয়ে ভয়ে বাথরুমে গেলাম। বারবার মনে হয় পেছনে যেন কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি বাথরুম করে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। ছোটবেলায় খুব ভূতের ভয় পেতাম। এখন আর তেমন কিছু মনে হয় না। কিন্তু আজকে হঠাৎ ভূতের সিনেমা দেখার পর ভয়টা চাগাড় দিয়ে উঠল। অনেক রাত হল, ঘুমিয়ে পড়ব ভাবছি কিন্তু আলো নেভাতে ভয় করছে। আবার আলো জ্বালিয়ে রাখলেও ঘুম আসবে না। সাহস করে আলো নিভিয়ে বিছানায় উঠে পড়লাম। ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। ঐ বুঝি মাথার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করলেই সিনেমায় দেখা ভূতের ভয়ঙ্কর মূর্তিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। আজকে ভয় করছে আর আজকেই বাড়িতে কেউ নেই। কেন যে ওদের সাথে নেমন্তন্ন খেতে গেলাম না। অনেক কষ্টে ভয়টা বুকে চেপে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে খসখস শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। শীতের রাত। ভয়ানক নিস্তব্ধতা। ঠাণ্ডা যাতে না আসে সেজন্য দরজা-জানালা আগেই বন্ধ করা ছিল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। ভুল শুনেছি বোধ হয়। চোখ বুজে ঘুমনোর চেষ্টা করলাম। আবার খসখস শব্দ পরিস্কার শুনতে পেলাম। ভয়ানক আতঙ্ক এসে গ্রাস করল আমাকে। ঘরের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু আছে। বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটাতে আরম্ভ করে দিল আর এই ঠাণ্ডার রাতেও ঘামতে শুরু করলাম। সমস্ত নিস্তব্ধতার বুক চিরে আবার খসখস শব্দ। বাঁচাও ভগবান! এত বড় বাড়িতে কেউ নেই। বিছানা হাতড়াতে লাগলাম মোবাইলটা খুঁজে আলো জ্বালাবার জন্য। কিন্তু কোথায় রেখেছি কিছুতেই খুঁজে পেলাম না। এবার বিছানা থেকে উঠে আলো জ্বালানো ছাড়া আর উপায় নেই। বিছানা থেকে নামতেও ভয় করছে। পাছে খাটের তলা থেকে কেউ পা টেনে ধরে। ভয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। অনেক সাহস করে বিছানা থেকে নামলাম। আস্তে আস্তে অন্ধকারে হাতড়ে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে সুইচটা অন করলাম। মুহুর্তে টিউবলাইটের আলোয় ঘর ঝলমল করে উঠল। আলো পড়ার সাথে সাথে একটা ছুঁচো চিকচিক করতে করতে আমার পায়ের উপর দিয়ে তীব্র গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। লাফিয়ে উঠলাম। যাক বাবা, ধড়ে প্রাণ এলো। সকালবেলা বিস্কুট খেয়ে বিস্কুটের প্যাকেটটা কৌটোতে না ঢেলে একটা প্লাস্টিকে মুড়ে রেখে দিয়েছিলাম মেঝের উপরেই। দরজার নীচের ফাঁকা দিয়ে বিস্কুট খেতে এসেছিল ছুঁচো। কাল থেকে দরজার নীচে একটা সরু লাঠি গুঁজে দিতে হবে যাতে ঘরে ছুঁচো ঢুকতে না পারে। ভোর প্রায় হয়হয়। বাইরে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম। এতক্ষণে ওরা বুঝি এলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।