অন্ধ বিবেকের কথকথা

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

ধ্রুব
  • ১৪
  • 0
হঠাৎ করে দম বন্ধ হয়ে গেল আমার।উঠে বসলাম।মাথা ব্যথা করছে কেন?কেন?কেন?আমিতো সারাদিন ঘুমালাম।হ্যা,একটা সময় ছিল সারাদিন ঘুমানর পরেও মাথা ব্যাথা বেড়ে যেত।এমনও হত আমি একদিন জেগে কাটাতাম আরেকদিন ঘুমিয়ে কাটাতাম।সারাটা শরীর ব্যথা হয়ে থাকত।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকত।চোখ লাল,চুল উষ্কখুষ্ক।সবসময় ঠোঁটে ঝুলত সিগারেট অথবা গাঁজার স্টীক।আর চলাচলের সময় সবার মুখের ধোঁয়া মারা ছিলো আমাদের প্রধান কাজ।না,ভুল বললাম।প্রধান কাজ ছিল সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার।আর আমাদের কথায় আমি পরে আসছি।
আজ … মাসের ১১ তারিখ।শনিবার।এখন বাজে রাত ১১টা।আমি বিছানায় উঠে বসে দুই হাতে মাথা ধরে বসে আছি।এই দৃশ্যের রূপায়ন হচ্ছে প্রায় ৫ বছর পর।তখন আমার মাথা ব্যথা করত তারপর আমি জিনাত কে ফোন করতাম আর আমার মাথা ব্যথাটা ওকে দান করে সুন্দর শিশুদের মত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।আমার এখন সন্দেহ হয় মেয়েটা মনে হয় আমাকে আসলেই ভালোবাসত।কারন রাত দুটো-তিনটের সময় মেয়েটা এক রিংয়ের মাথায় ফোন রিসিভ করত।ফোন না দিলে ও মেসেজ় আর মিসকল দিত।জিনাত এর কথা চিন্তা করে লাভ নেই আর,ওর বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে,এক ডাক্তারের সাথে।কয়েকদিন আগে ওর একটা বাচ্চাও হয়েছে শুনলাম।মেয়ে্টা সুখে থাকলেই ভাল।
১১.৩০ বাজে।ঘুমানো দরকার।পরেরদিন শো আছে।আমি একজন মিউজিশিয়ান।প্রায় ৪বছর ধরে গিটার বাজাচ্ছি।আমি উঠে দাড়ালাম ঘরের মাঝে।পানি খেলাম,ঘুমের অষুধ খেলাম।গিটার টার দিকে চোখ পরল।অনেক ঋণ আমার এই গিটারের প্রতি।আমি যে আজও বেচে আছি তা এই জিনাত ও গিটারের কারনেই।অনেক ধরনের চিন্তা মাথার কোষগুলোকে গ্রাস করতে থাকল।কিন্তু মিনিট ১০এর মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।অতীতকে আপাততঃ ভুলে গিয়ে।

১২ তারিখ…
সকালে উঠে দৌড়িয়ে গেলাম প্যাডে।প্র্যাকটিস করে গোসল করে শো করলাম।বিকালে গেলাম হাটতে হাটতে গেলাম নিকটতম চায়ের দোকানটাতে।আমি সবসময় যেখানে বসি সেখানে গিয়ে বসলাম।চায়ের অর্ডার দিতে যাব,সাথে সাথে কাধে হাতের স্পর্শ পেলাম,সেই সাথে পরিচিত এক কন্ঠস্বর বলে উঠল “অনেকদিন পর তোমাকে খুজে পেলাম।তোমাকে খুজে বের করতেই আমার সত্যিকার অর্থেই ঘাম ঝরাতে হয়েছে”।আমার ভয়ে শিড়দাড়া পর্যন্ত জমে গেল।মনে হল নিজের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলি,কারন এই মূহুর্ত থেকে বেঁচে থাকার আর কোন মানে নেই।এটা আমাদের মামার গলা।আমি মাথা ঘুরিয়ে ভয়ার্ত শুকনো হাসি দিলাম।দেখলাম সাথে আমার এককালের প্রিয় বন্ধু রঞ্জুও আছে সাথে।“আরে মামা বসেন” আর তিনটা চা দিতে বল্লাম।“নাস্তা দিতে বল্ব”?আমি জিজ্ঞাসা করলাম।মামা মাথা নেড়ে না বল্লেন।আমি রঞ্জু আর আমার জন্য ডালপুড়ি দিতে বল্লাম।আমরা চুপচাপ কিচ্ছুক্ষন বসে থাক্লাম।নীরবতা টা অসহ্য ও অনমনীয়।কারন কখন আমি ভাবিনি আবার এইভাবে অতীতের মুখোমুখি হতে হবে আমাকে।মানুষ সবসময় সুন্দর জিনিস ভাবতে ভালবাসে।আমি চিন্তা করতাম হয়তবা জিনাতের সাথে কোনদিন দেখা হবে।ও বলবে ও দাম্পত্য জ়ীবনে অসূখী,ও এখন আমায় ভালবাসে।কিন্তু বাস্তবতা হল সেস্নর বোর্ডের মত।যা আমরা দেখতে চাই তা কেটে ফেলে।যা দেখতে চাই না তাই দেখায় আমাদেরকে।বাস্তবতা ও কপালের ফেরে আমি এখন মামা আর রঞ্জুর সামনে নীরব হয়ে বসা।

নীরবতা ভঙ্গ করল প্রথম মামা।মামার আসল নাম আমরা কেউ জানি না।আমাদের সাথে পরিচয় ৫বছর আগের জ়ানুয়ারির বাম রাজনীতির বৈঠক থেকে।মামার কথাবার্তা শুনে আমাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।মনে হয়েছিল আমরা ঐবারেই ক্ষমতায় চলে আসব।আমি তখন মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।সহজেই আধুনিক কোন কিছু বিশ্বাস করে ফেলি।সহজেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।মামার বক্তৃতা শুনে আমি,রঞ্জু,জাহান,মিনা,নাজনীন,ফারা সবাই বাম রাজনীতির ভক্ত ঠিক বলা যাবেনা,আমরা সেই মামার ভক্ত হয়ে গেলাম।সারাদিন মামার দুই রুমের বাসাতেই বসে থাকতাম আমরা।প্রথম প্রথম বিকাল পর্যন্ত থেকে আমরা চলে আসতাম।বিকাল হলেই কিছু নর-নারী দল বেধে উনার কাছে আসত।আমরা বুঝতাম না।একদিন সকালে আমাকে মামা কল দিয়ে বললেন উনার বাসায় চলে আসতে।আমি গেলাম।গিয়ে দেখি আমার বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই মামাকে গোল করে ঘিরে হাসি ঠাট্টা করছে।আমি ঘরে ঢুকার সাথে সাথে মামা সবাইকে ইংগিত করলো চুপ করতে।আমাকে বসতে বল্লেন।আমি মেঝেতে বসলাম।মামা গলা খাকারী দিয়ে বলা শুরু করলেন “সবাই এসে গেছে তাহলে।আচ্ছা আমাকে তোমরা কতদিন ধরে চিনো?৪-৫ মাসের বেশি না নিশ্চয়ই।আমাকে আসলে তোমরা খুব বেশি একটা চিনো না।আমি আসলে বাম দল গুলোর সাথে কি করি?কেনো ঘুরি?বিপ্লবের জন্য?পরিবর্তনের জন্য?মোটেও না।বড়লোকদের ছেলেমেয়েদের guilty conscience থেকে আসা বিপ্লব আমি করিনা।আমার বাবা ভাড়া খাটা কৃষক ছিলেন।অন্যের জমি চাষ করে পড়ালেখা করিয়েছেন।আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি কলেজ পড়ার জন্য।তখন থেকেই আমি ব্যবসা করি।কিসের ব্যবসা শুনো।আমি বন্ধুর সাথে ফেন্সিডিলের ব্যবসা করতাম।আর সেই সাথে একটা টিউশনি তো ছিলোই। এই টাকাগুলো বাসায় পাঠাতাম আর সেই সাথে পড়ালেখার খরচ চালাতাম।আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শুরু করলাম ড্রাগসের ব্যবসা।নিজের জ়ীবন টাও ঠিক করার সময় এসে গিয়েছে।এইখান থেকে পুজি নিয়ে আমি একটা অষুধ কোম্পানি খুলব।ব্যাস আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে।তোমাদেরকে আমি ডেকেছি মার্কেট ধরার জন্য।তোমরা আমার হয়ে এগুলো বিক্রি করবে…আমার সেলসম্যান হবে তোমরা।আর চিন্তা করোনা পরবর্তীতে আমি তোমাদের কাউকে ভুলবোনা”।
শেষ কথাটা কি নির্মম সত্য সেটা আজকে বুঝতে পারছি।মামা গলা খাকারি আমার অতীত নিয়ে ধ্যানমগ্নতা কাটলো।“তা… কি অবস্থা তোমার?অনেকদিন পর দেখছি তোমাকে।পায়ের কি অবস্থা?আমি যে গুলিটা করেছিলাম সেটা বেশি ক্ষতি করেনিতো?”
আমি মাথা নাড়লাম।শেষ যেদিন মামার সাথে দেখা হয়েছিল মামা আমাকে গুলি করেছিল আমি পালাচ্ছিলাম দেখে।আমি এখনও পা টেনে টেনে হাঁটি।“একটু কষ্ট তো হয়ই”আমি বল্লাম।“আমার কাজগুলো বিপদজনক আগেও বলেছি”মামা হাসতে হাসতে বলল।আমি “হুম”বলে চুপ করে গেলাম।মামার কাজটা আমরা নিজেদের মাথা খেয়ে টাকার প্রয়োজনে করা শুরু করেছিলাম।নীতির প্রশ্নটা মাথায় আসেনি।বিপ্লব করতে গিয়ে নিজের বিদ্রোহী আত্মাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছি সেই কবে।এখন যা বিশ্বাস করতে চাই অথবা করা দরকার তাই করতাম।আমরা সবাই ভার্সিটিতে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করতাম ড্রাগসের।বিভিন্ন জাতের ড্রাগস।গাঁজা,হেরোইন,কোকেন,মারিজুয়ানা এগুলো আমরা ঘুরে ঘুরে বেচতাম ।স্টেরোয়েড,সীসা আর বিভিন্ন জাতের সেক্সুয়ালি স্টিমুলেটিং ড্রাগস গুলোর কেনাবেচা মামার ঘরেই হত।অনেকসময় কাপল রা নিজেরা এসে ড্রাগস খেয়ে একটা মামার বাসার একটা রুম ভাড়া নিয়ে অথবা বাথরুমে সেক্স করে আসত।এভাবে মামার ব্যবসা ভালোই হচ্ছিল।আমাদেরও লাভ হচ্ছিল ভালোই।মাঝে মাঝে আমরাও সেক্স পার্টি করতাম,ড্রাগস খেতাম।বয়সের জোরে ভালোই কাটছিল সময়।হঠাত একদিন……
আবার মামার কথায় চিন্তার সূত্র ভেঙ্গে গেল আমার।“দেখো আমি তোমাকে গুলি করতাম না।আমি গুলি করতে বাধ্য হয়েছিলাম।তুমি জাহানের কথা কাউকে বলতে আমি বিপদে পড়তাম।আমার সব পরিশ্রম জলে যেত।শালা মাদারী…সুন্দরী পেয়ে মাথা নষ্ট হয়ে গেছিলো ওর।বেশি ডোজ নেওয়ার কি দরকার ছিল?যতক্ষন পারত করত”।আমি আবার অতীত ভ্রমনে গেলাম।প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে সেইদিন।তারিখ টা ছিল ২৫-২৬,বর্ষাকাল।আমি মামার ঘরে দিকে যাচ্ছিলাম,গোড়ালির সমান জমে থাকা পানি ঠেলে।রুমের দরজা খোলাই ছিল।একটা নারীকন্ঠের কান্না শোনা যাচ্ছিল।আমি ভাবলাম কাউকে মনে হয় জোড় করে নিয়ে এসেছে জাহান।আমি ঘরে ঢুকে কান্নার উৎসের দিকে গেলাম।দেখি বাথটাবে জাহান এর নগ্ন দেহ যার চোখগুলো হারানো,আবেগহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।পাশে মিনা তোয়ালে জড়িয়ে কান্না করছে।মামা জাহানের পালস চেক করছে।আমি এটা দেখে ভাবলাম আর না…আমার বিদ্রোহী আত্মা যেন কবর খুঁড়ে বের হয়ে এল।তবে এখন বুঝি আসলে আমি চিন্তা করছিলাম নীতির চেয়ে জ়ীবন বড়।আমি এতদিন যা ভুল করেছি তা আর করা যাবেনা,না হয় আমার পরিণতি তেমন ভিন্ন হবেনা।আমি জ়ীবনের আশা ছেড়ে দৌড়ালাম।আর মোবাইল থেকে আমার নীরিহ রুমমেট কে কলদিয়ে বললাম কিছু টাকা আর আমার কিছু কাপড় চোপড় নিয়ে মেসের সামনে দাঁড়াতে।আমি দৌড়াতে লাগলাম।গেট থেকে একটা সিএনজ়ি তে উঠলাম।পিছন থেকে ফায়ারিং এর আওয়াজ শুনতে পেলাম।আমি প্রথমে বুঝিনি,কিসের ফায়ারিং?কেন ফায়ারিং?২-৩ টা গুলির আওয়াজ শুনার পর আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম।মামা,রঞ্জু আর অপরিচিত একটা ছেলে আরেকটা সিএনজি তে করে আমার পিছে পিছে আসছে।তাদের সবার হাতে পিস্তল।আমি বুঝলাম স্বাক্ষী না রাখার জন্য এই কাজ হচ্ছে।আমি মেসের সামনে থেকে রুমমেটের কাছ থেকে জিনিস গুলো নিলাম।মেসের পাশেই বাসস্ট্যান্ড,সেখানে অসংখ্য মানুষ।ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারন জনতা সবাই সেখানে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে।আমি এতো মানুষ দেখে একটু স্বস্তি অনুভব করলাম।যাক এখানে সবার সামনে হয়তবা আমাকে গুলি করবেনা।দুর থেকে মামাদের সিএনজি টা দেখা যাচ্ছে।আমি গোড়ালি সমান পানির মাঝে দাঁড়িয়ে আছি।অসংখ্য মানুষের মাঝে।বাস ঘুরাচ্ছে,আমি সবাইকে ঠেলে সবার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে সবার আগে বাসে উঠতেই হবে।নাহয় এইখানেই আমার কবর হবে।তুমুল বৃষ্টির আওয়াজে কিছুই শুনা যাচ্ছে না।হঠাত ধুপ করে একটা শব্দে আমার পাশের জন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আমি পিছনে তাকালাম,ওরা তিনজন চলে এসেছে।তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে।আমার আশেপাশে সবার গায়ে গুলি এখন আমার গায়ে একটা বুলেটও লাগেনি।জ়মে থাকা পানি মানুষের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে।কিছু মানুষ আর্তনাদ করছে কিন্তু বৃষ্টির শব্দে সব ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।বাসের ড্রাইভার এতো কিছু দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে চাইলে আমি লাল পানির মধ্য দিয়ে দৌড়ালাম।দরজ়ার হ্যান্ডল ধরার সাথে সাথে পায়ে যেন তীব্র হুল ফুটলো।ব্যথায় আমি চিতকার করে উঠলাম।কন্ডাকটর আমাকে হাত ধরে টেনে তুলল।আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বাসস্ট্যান্ডে লাল পানি জমে আছে তার মাঝে ১০-১২ জন মানুষ পড়ে আছে।আর আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।হ্যা,আমি জ্ঞান হারালাম।
“তা শেষ পর্যন্ত প্রাইভেটে ভর্তি হলে?ভালোই।আমি তোমাকে অনেকদিন ধরে খুজছিলাম।তোমার ভার্সিটি তে আমার নতুন ব্যবসা টা ভালোই চলছে।পোলাপাইনগুলো তোমার চেয়ে ভাল”।মামা চা আর সিগারেট টানতে টানতে বল্ল।“হুমম”।যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো।মামা কথা বলতে লাগ্লেন, “আমার দুই জন মানুষ গতকাল ধরা পরেছে পুলিশের হাতে।আমার ব্যবসার একটা অংশে সমস্যা হয়ে গেল”।“ও আচ্ছা তাই নাকি?”
“হুমম,তাই।তোমার পায়ের কি অবস্থা বলোতো?আমার গাড়ি ড্রাইভ করার মত একজন দরকার।ড্রাইভ করতে পারবে তো?”
আমি বুঝে গেলাম আসলে মামা কি চায়।আমি বললাম “না,আমি ড্রাইভ করতে পারি না।আমার পায়ে সমস্যা”।
রঞ্জু এতক্ষনে নীরবতা ভেঙ্গে টেবিলের নিচে পিস্তল লোড করল “তোমার অভিমত জানতে আমরা চাই না।তোমার পায়ে এমনকিছু হয়নি যে তুমি ড্রাইভ করতে পারবেনা।তুমি তো তোমার ফালতু ব্যান্ডের হয়ে দাঁড়ায় থেকে প্রসেসর ব্যবহার করেই গীটার বাজাচ্ছো”।
মামা পাশ থেকে যোগ করল “আমি তোমার মতামতের জন্য আসিনাই।আমি তোমাকে দেখতে এলাম।নিজের হাতে আ্যপয়ন্টমেন্ট লেটার দেওয়ার মজাই আলাদা।হেহেহে।আর আবার পালানোর প্ল্যান থাকলে বাদ দাও।তোমার বাসা আমরা চিনি ওখানকার গার্ড আমাদের লোক”।
আমি কিছু না বলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাক্লাম।আমি চুপ করে থেকে ভাবলাম আমার আসলে কিছু করার নাই।পৃথিবী সুন্দর করার জন্য মরার মত সাহস বা “ত্যাল” আমার নাই।মামা টাকাও ভালোই দিবে।কিন্তু ৫ বছর আগের কথা তো ভুলতে পারিনা।যতকিছুই হোক মৃত্যুর মত খারাপ কিছু তো আর হবেনা।আর আমার এখন মরার ইচ্ছা নাই।ভবিষ্যতে কি হবে সেটা ভবিষ্যত আমি’র চিন্তা।জ়ান বাচানো ফরজ।তা ছাড়া আমি কই যাবো?বাবা-মা মারা গিয়েছেন গত বছর।আর কেউ নাই আমার।কিন্তু ওদের ইচ্ছা মত চললে আমার হবেনা।এই ভেবে আমি বললাম “আমার কিছু শর্ত আছে।আমি ২-৩ বছরের বেশি কাজ করবনা।এরপর আমাকে ছেড়ে দিতে হবে”।
মামা বললেন “বাহ বাহ।ছেলে কথা শিখসে…অন্য সময় এই শর্ত দিলে আমি তোমাকে এইখানেই গুলি করে মারতাম।কিন্তু আমার পঙ্গু বোনের বিয়ে দিচ্ছি আমি সাম্নে।আমার টাকা পয়সা লাগবে এখন।তাই বেচে গেলা।তবে আমি তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর তুমি কথা বেশি বললে ভালো হবেনা একদম।মনে রেখো।২০ তারিখ রঞ্জু এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।তখন কথা হবে।চায়ের জন্য ধন্যবাদ”।এই বলে মামা আর রঞ্জু উঠে চলে গেল।আর আমি ব্যর্থ,পরাজিত যুবক দীর্ঘ ৩ বছর পর সিগারেট নিয়ে ঠোটে নিয়ে রাস্তার ধারে মাথা নিচু করে বসে থাক্লাম।আস্তে আস্তে বৃষ্টি নামল।আমি বসে থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম……বৃস্টি টা আমাকে আর সবকিছুর মত আমাকে ডুবিয়ে ফেললে ভালোই হত।

7-8 মাস পরের কথা।আমি …বস্তির কাঁদামাখা রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি।গন্তব্য মামার গুদামঘর।আমি এখনো বেঁচে আছি আর মামার হয়ে ড্রাইভিং করে যাচ্ছি।আমার কোন অভিযোগও নেই।ভালোই কাটছে সময়।আমার কাজ তেমন কঠিন কিছু না।টেলিফোনে অর্ডার আসে আমি গিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা গুলোতে ড্রাগস দিয়ে আসি।এতটুকুই আমার কাজ।টয়োটা কোম্পানির গাড়ি চালাই,গান শুনি।ভালোই চলছে জীবন।টাকা পয়সাও খারাপ না।কিন্ত ন্যায়-নীতির প্রশ্নটা তেমন বিরক্ত করে না।
গুদামঘরে গিয়ে একটু অবাক হলাম।মামা বসে আছে।আমাকে দেখে খুশি হয়ে বললেন “আরে,আসছো তুমি?আসো-বসো।তোমার সাথে কথা আসে”।তাকিয়ে দেখি মামার বাকি ২ জন ড্রাইভারও উপস্থিত।আমি চেয়ার টেনে বসলাম “বল মামা।কি বলবা?”
“শুনো যে কারনে তোমাদের ডাকছি।আমি আমার ব্যবসা এককথায় সম্প্রসারন করতেছি।আগে তো আমরা শুধু ড্রাগস সাপ্লাই দিতাম।এখন থেকে আমরা মেয়েও সাপ্লাই দিব।আমার হাতে আপাততঃ তিন জন আসে।তোমাদের তিন জন ঐ তিন জনের এক জন এক জন করে সাথে রাখবা।আমি অথবা রঞ্জু ফোন করে অর্ডার দিলে সেই অনুযায়ী ডেলিভারি দিয়ে এক ঘন্টা বা যতক্ষনের পেমেন্ট করে ততক্ষন পর নিয়া আসবা।বুঝছো”?এই বলে মামা আমাদের তিনজনের হাতে ঠিকানা গুলো ধরিয়ে দিল।“কালকে থেকে এই সার্ভিস শুরু।যাও এখন”।আমরা চুপচাপ চলে আসলাম।ড্রাইভাররা শুধু ড্রাইভ করে।প্রশ্ন করেনা।

পরেরদিন সন্ধ্যায়,রঞ্জুর ফোনে।রঞ্জু এখন মামার ডান হাত।মামার মতন ক্ষমতা তার।আমাকে বলল “স্পেশাল অর্ডার আসছে।এক্সট্যাসি ১০ পিস আর এসকোর্ট”।তারপর ঠিকানা বলে বলল ১ ঘন্টার মাঝে হাজির হতে।আর মেয়েটাকে নাকি বলা আছে ও রেডি থাকবে।আমি উঠে রেডি হয়ে গাড়ীতে উঠলাম।তারপর ড্রাইভ করলাম।মেয়েটা যেখানে দাড়ানোর কথা সেখানে হর্ন দিতে লাগলাম।হঠাত করে পরিচিত নারীকন্ঠ শুনতে পেলাম “সরি,আমার লেট হয়ে গেল।আমি গাড়ী চিনতে পারছিলাম না”।আমি ঠাস করে মাথা ঘুরিয়ে চিতকার করে উঠলাম “জিনাত???????????তুমি??????এখানে কি করছ????কেন???”মেয়েটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।তারপর গাড়ী থেকে নেমে গেল।আমি গাড়ির দরজা খুলে ওর পিছে পিছে ছুটতে লাগলাম।“জিনাত,দাঁড়াও।কোথায় যাচ্ছ?দাঁড়াও”।ও আমাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হেটে চলল।আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরলাম।আমি বললাম “কি ব্যাপার?তুমি কেন এখানে?তোমার স্বামী,বাচ্চা?ওরা কই”?ও মাথা কিছুক্ষন নিচু করে থেকে আমাকে ঠাস করে থাপ্পর লাগিয়ে দিল।“তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর আমি দিবোনা”চিতকার করে উঠল ও।“তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার নিয়ে যাও।কথা বলবানা”।আমি রাগে,ব্যথায় হতভম্ব হয়ে বললাম “আসো গাড়িতে উঠো”।ও গাড়ীতে উঠে শুধু একটা কথাই বলল“আমি কালকেই রঞ্জুকে বলে ড্রাইভার চেঞ্জ করব”।এতটুকুই কথা হল পুরো রাস্তায় আমাদের।ওকে খদ্দেরের বাসার সামনে নামিয়ে ড্রাগস গুলো ধরিয়ে পেমেন্ট নিয়ে এলাম ১ ঘন্টার।খদ্দের ব্যাটায় চালাক,দারোয়ান পাঠিয়েছে।আমি সাইডে গাড়ি দাড় করিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

আবার জিনাত এলো আমার জীবনে।আমার ভিতরে কেমন এক শিহরন কাজ করছে সেই তখন থেকে।ভালোলাগা,বিস্ময়,রাগ,অস্বস্তি সব মিলিয়ে আমার উদাস হয়ে গাড়িতে বসে radiohead এর creep শুনতে লাগলাম।জিনাতের প্রতি আমার অনুভুতি টা যে আসলে কি?সেটা আমি নিজেই বুঝিনা।মামাদের হাত পালিয়ে এসে আমি বাবা-মা’র কাছে মিথ্যা বলে মামার সাথে ব্যবসায় জমানো টাকা দিয়ে ভর্তি হলাম একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেখানে আমার বন্ধু,বান্ধবী,মন খুলে দুটো কথা বলার মত মানুষ যাই বলিনা কেন ছিলো একমাত্র জিনাত।জিনাতের প্রতি অন্যরকম একটা টান ছিল আমার।আমি ওর সাথেই সহজে মিশতে পারতাম,সহজে কথা বলতে পারতাম।হয়তবা দুই জনেই একে অপরের দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু আমি আসলে কিছুই বুঝতে চাইতাম না।বারবার ঝামেলা তৈরীর দরকার কি।হঠাত একদিন জিনাত যোগাযোগ কমিয়ে দিল।আমি ভাবলাম ওর বুঝি কোন সমস্যা হয়েছে।কয়েকদিন পর শুনি ওর বিয়ে।হৃদয় টা জানি কেমন করে উঠল।আমি সেদিন বুঝলাম আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি।আর বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন ও আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।আর আজ ও পতিতাবৃত্তি করছে আর আমি ওকে খদ্দেরদের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।পকেটে হাত দিয়ে পিস্তলটা বের করে নিলাম।বুলেট ভড়ে মাথায় ঠেকাতে গেলাম।সাথে সাথে জানালায় টোকা।দেখি জিনাত দাড়িয়ে।মেয়েটা আবার আমাকে বাচালো।আমি পিস্তল টা পকেটে ঢুকিয়ে দরজা খুলে দিলাম পিছনের।জিনাত কে জিজ্ঞেস করলাম ওর কি অবস্থা?ও বলল “চুপ করে গাড়ি চালাও”।আমার সারা শরীর রাগে জ্বলে গেল।আমি গাড়ি স্টার্ট না করে বললাম “আমি গাড়ি চালাবোনা।তোমার সাথে আমার কথা আছে।অনেক কথা আছে”।জিনাত “দুঃখ মেশানো তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “আমার সাথে কথা বলার আর কি আছে তোমার?আর এখন কথা বলেই বা কি হবে?আমি এখন ডিভোর্সি বেশ্যা।আমার যখন মানুষ হিসেবে সম্মান ছিলো তখনি তুমি আমাকে বুঝো নাই,আর এখন কিভাবে বুঝবে”?জিনাতের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।আমি কিছু বললাম না নাকি বলতে পারলাম না,বুঝলাম না।আমি কিছু বলার আগেই ও বলে উঠলো “আমি তোমার জন্য কত কাদছি,তুমি তা জানোনা।আমি ডিভোর্স কেন হইছে,তুমি জানো?বুঝো কিছু?বিয়ের পর আমি সারাদিন চুপচাপ থাকতাম।মন মড়া হয়ে থাকতাম।আমার হাজব্যান্ড কে তোমার কথা বলছিলাম।লোকটা এত ভাল তারপরেও কিছু বলেনাই আমাকে।কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পরেও আমি যখন এমন থেকে গেলাম বেচারী আমাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হল।এমনকি সপ্তাহে মাত্র একবার আমি বাচ্চার সাথে দেখা করতে পারি।তুমি বুঝো এগুলো কিছু?আর তুমি আমার সাথে যোগাযোগটা পর্যন্ত করো নাই।একবারও না।আমি স্টিয়ারিং হুইল ধরে বসে থেকে ওর কথা শুনছি,ওদিকে radiohead শেষ হয়ে tool এর the patient বাজছে।চেঞ্জ করে radiohead এর creep গানটা দিলাম।এরপর বললাম “চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি”।এই বলে গাড়ি ছাড়লাম আমি।ওর বাসার সামনে ওকে গাড়ি থামালাম একেবারে।পুরো রাস্তাতেই আমরা ছিলাম নীরব…পিন পতন নীরবতার চেয়েও বেশি নীরব………………

গাড়ি ওর বিল্ডিং এর সামনে রাখলাম।এরপর দরজা খুলতে মাথায় একসাথে অনেক চিন্তা মাথায় এসে গেল।মনে হল এইবার দরজা খুলে ওকে একবার বিদায় দিলে আর দেখতে পাবোনা ওকে।কোনদিন ক্ষমা চাইতে পারবোনা,নিজেকেও ক্ষমা করতে পারবনা।আমি দরজা না খুলে বললাম “একটু কথা ছিল।বসো”।জিনাত চিতকার দিয়ে বলল “না আমি বসবনা,আমাকে যাইতে দাও।এখুনি দরজা খুলে দাও।আমার তোমার কথা শুনার কোন ইচ্ছা নাই।আর না”।আমি বললাম “৫টা মিনিট,প্লীজ জিনাত।প্লীজ।শুধু ৫ মিনিট কথা বলব”।“আচ্ছা,ঠিক আছে ৫মিনিট শুধু”।আমি শুরু করলাম “দেখো আমি আসলে বুঝিনাই তুমি আমার প্রতি দুর্বল।আমি যে নিজেও যে তোমার প্রতি দুর্বল সেটাই বুঝিনাই।আমার মনে আসলে এই চিন্তা টা আসেনাই।কিন্তু তোমার যেদিন বিয়ে ঠিক হল সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার প্রতি আমার টান কতটুকু।গত বছর তো তোমার কথা ভেবে ভেবেই গেল।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি”।এতটুকু বলার পর জিনাত অট্টহাসি দিয়ে বলল “ভালোবাসা?????”তুমি বুঝো কি বলতেসো তুমি?আর তুমি অনেকদেরি করে ফেলেছো,অনেক।আমি শুধু তোমাকে না সবাইকে ঘৃণা করি এখন,সবাইকে”।“আমি ভালোবাসা না বুঝলেও এটা বুঝতে পারছি তোমাকে আবার না দেখলে আমি মরে যাবো,বেচে থাকা হবেনা আমার।আজকে যখন তুমি খদ্দের এর ঘরে গেলে আমি দুঃখে,কষ্টে,হতাশায় আত্মহত্যা করে ফেলতাম।আমি তোমার এই পরিনতি,কষ্ট চাইনা” এই বলে আমি ওর হাত ধরে বললাম “আমাকে একটা সুযোগ দাও,আমি তোমাকে ভালোবাসব,অন্তর থেকে,একটা সুযোগ”।জিনাত কিছুক্ষন চুপ থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরল আর বলল “এভাবে বলোনা,প্লীজ।আমি তোমাকে সেই কবে থেকে ভালোবাসি,আমি তোমাকে অবশ্যই সুযোগ দিবো,একবার না ১০০ বার দিবো।আমি জানি,বুঝি সব।আমি এতদিনের চাপা অভিমান থেকে এগুলা বলসি।কিন্তু আমার কাজ নিয়ে তোমার সমস্যা নাই তো”?আমি ওকে জড়িয়ে ই বললাম “চিন্তা করোনা একটা ব্যবস্থা হবে আমাদের”।

সেই রাতের পর থেকে আমি আর জিনাত আগের মতো হয়ে গেলাম।কাজ না থাকলে সারাদিন একসাথে থাকার চেষ্টা করি।আমি জিনাতকে জানিয়ে দিয়েছি আমার আর ২বছরের একটু বেশি সময় থাকা লাগবে মামার কাজে।জিনাতেরও প্রায় একই সময় লাগবে।আমরা দু’জনেই টাকা জমানো শুরু করলাম।টাকা গুলো নিয়ে পরে আমরা চলে যাবো মামার কাজ শেষে।তবে আমি এখনো জিনাতের কাজ টাকে মন থেকে নিতে পারছিনা।ওর প্রতি ঘৃণা জন্মাচ্ছে বললে ভুল হবে,বলা উচিত ওর জন্য কষ্ট হয় আমার।প্রচন্ড কষ্ট হয়।এইধরনের থাকাটাই মনে হয় ভালো।
২ বছরের একটু বেশি দিন পর…
“মামা আমার আর মাত্র তিন দিন আছে,আপনার সাথে কাজের।আর আমার জিনাতের আছে ১ মাস।মনে আছে তো”?আমি কাজে যাওয়ার আগে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম সন্দেহভরা কন্ঠে।“হেহেহে,মনে আছে মনে আছে।সমস্যা নাই,আমি নিজে রোমান্টিক মানুষ,ভালোবাসায় বাধা দেই না।আজকে কি বার?বুধবার তাই না?শনিবার রাতে এসে টাকা-পয়সা আর কিছু বোনাস আছে ওগুলো নিয়ে যেও।ঠিক আছে?এখন কাজে যাও”।আমি গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম।জিনাত কে পিকাপ করতে গেলাম।আজকে সচিবদের বিশাল পার্টি হবে,ওখানে মামার সঙ্গের ১০ জন মেয়েকেই ওখানে বিনোদন জোগানোর জন্য ডাকা হয়েছে।হায়রে,জনগনের করের টাকা সবাই এভাবে চিরকাল ফুর্তি করে উড়াচ্ছে,উড়িয়ে যাবেও।একটু বিষন্ন লাগলেও আমি জিনাত গাড়িতে উঠার সাথে সাথে চনমনে হয়ে উঠলাম।ওর সাথে ভবিষ্যতে প্ল্যান করলাম।আমার কাজ শনিবার টাকা পয়সা নিয়ে বাসা খুজা।তারপর কোন চাকরী,টিউশনি করা শুরু করব অথবা পরিচিত কাউকে বলে কোন কোচিং সেন্টারে পড়ানো শুরু করব।আর পরে জিনাত কিছু করবে।সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে ভালোই লাগে।
আমি জিনাতে বাসার সামনে এসে হর্ণ বাজালাম।ও বের হল।ওকে প্রতিদিনের মতোই সুন্দর ও সতেজ লাগছে।
ও এসে গাড়িতে উঠে বসল।আমরা বিভিন্ন কথা বলতে বলতে গন্তব্যের কাছাকাছি চলে আসলাম।একটু দূরে থাকা অবস্থায় সিগন্যালে আটকালাম।তখন জিনাত আমার গাড়িতে বাজতে থাকা tool এর jambi বন্ধ করতে বলল “কিসব ছাইপাশ শুনো?বন্যার রবীন্দ্র সঙ্গীত বা ইফফাত আরার নজরুল গীতি থাকলে ছাড়”।“আমি অরিজিনাল প্রোডাক্ট শুনি,১০০ বছর আগের বুড়া ব্যাটাদের লেখে যাওয়া গানগুলোর বিভিন্ন শিল্পির গাওয়া রিমেক আমি শুনিনা” আমি উত্তর দিলাম।“বেশি কথা বল তুমি।তোমার গান তুমি শুন।আমি অন্য কথা বলব”জিনাতের বিরক্তের সাথে বলল।“বলেন”।“দেখো,আমি গত কয়েক বছর যে কিভাবে কাটিয়েছি,তুমি জানোনা।বিবাহিত অবস্থায় নিজেকে লাগত অপরাধীর মত।আমার হাজব্যান্ড মানুষটা এত ভাল তাও ওকে ভালোবাসতে পারলাম না।তোমাকে ভুলতে পারিনা এজন্যে।বাচ্চা হওয়ার পর ভাবসিলাম ভুলে যাব।কিন্তু পারিনি।ডিভোর্সড হওয়ার পর বুঝলাম,জীবন কি।আমি আমার হাজব্যান্ডের টাকা নিতে পারছিলাম না,লজ্জায়।চাকরি খুজতে খুজতে জীবনটা নরকে পরিনত হল।একেক জায়গায় একেক সমস্যা।কত আশা করে গেলাম এক বিখ্যাত পত্রিকা অফিসে এমনকি ওখানেও আমাকে …”
“চুপ,একদম চুপ।এগুলো আর বলার দরকার নাই।আর মাত্র একমাস।মামার সাথে কথা হয়েছে আজ আমার।উনি আমাদের ছেড়ে দিবে বলেছেন।সব ঠিক হয়ে যাবে।দেখো”আমি ওকে হাত ধরে বললাম।এরপর ও শান্ত হয়ে বসল।তারপর বলল “তোমাকে ধন্যবাদ,আমাকে নতুন একটা জীবন দেওয়ার জন্য”।এরপর আমরা হালকা কথা বলতে বলতে চলে এলাম গন্ত্যব্যে।দারোয়ান আমাকে টাকাটা ধরিয়ে দিলো জিনাতের।আমি ওকে নামিয়ে দিলাম।ও বলল “আমি কাজ শেষ করে কল দিব তোমাকে”।“আচ্ছা,ঠিক আছে”।প্রতিবারই আমি এই কথাটা মাথা ও গলা নিচু করে বলি।লজ্জা,অপমানের আর শেষ থাকেনা আমার,প্রতিবার,প্রতিবার।আমি গাড়ি টা একটু দূরে রাখলাম।এরপর গান ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
প্রায় তিন ঘন্টা পর ঘুম ভাংগলো।আমি উঠে সাথে সাথে মোবাইল চেক করলাম।কিন্ত কোন কল নেই জিনাতের।আমি একটু অবাক হলাম।ব্যাপারটা কি?এতক্ষনের টাকা তো আমাকে দেওয়া হয়নি।বিপদের আশংকায় মনটা ঢেকে গেল।হঠাত করে আসা ঝড়ের ন্যায়।আমি উঠে জিনাতের মোবাইলে কল দিলাম।“এই মূহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।অনুগ্রহ…”
“আমি তোর অনুগ্রহের গুষ্টি কিলাই”।এই বলে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।যেখানে জিনাত কে রেখে গিয়েছিলাম সেখানে গেলাম।চারদিকে তাকিয়ে দেখি পুলিশ,সাংবাদিক দের ভীড়।আমি গাড়ি থেকে নেমে ভীড় ঠেলে সামনে এগুলাম।দুই-তিনটা এ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে।এ্যাম্বুলেন্স গুলো খালি এখনো।আমি পাশে দাঁড়ানো প্যারামেডিক কে জিজ্ঞেস করলাম “কি সমস্যা ভাই”? “আরে বইলেন না তো,আজাইরা ব্যাপারস্যাপার।ফুর্তি করবার জন্য ড্রাগস নিছিলো বুড়া ব্যাটায় আর মাইয়াডি।কিন্তু কি জানি ভেজাল আছিলো।মোট ৪ জন কামের সময় এক্কেরে স্পট ডেড।এগুলারে ধইরা চাবকানো দরকার।ওই যে লাশ লইয়া আনতেছে”প্যারামেডিক সাহেব দৌড়ে গেলেন সামনে স্ট্রেচার আনাতে সাহায্য করার জন্য।আমিও ছুটে গেলাম।দেখি মামার ভাড়ার একটা মেয়ে ফারাহ নাম।পিছে পিছে আসলো আরো ২ জন পুরুষের লাশ।আমি তখন ভাবতে লাগলাম এই ড্রাগ তো আমরা ছাড়া কেউ দেয় না।আজকেও তো আমি দিলাম।এরপর যা হল সেটা ছিল আমার জ়ীবনের সবচেয়ে কঠিন মূহুর্তগুলোর এক্টা।জ়িনাত এর লাশ বের হচ্ছে স্ট্রেচারে।আমি মাটিতে বসে পড়লাম।মাথায় হাত দিয়ে।আমি মামাকে কল দিলাম।মামা রিসিভ করলনা।রঞ্জুকে দিলাম,সেও রিসিভ করলনা।আমি চুপচাপ জিনাতের লাশ সহ এ্যাম্বুলেন্সটাতে উঠে পড়লাম।মামা তাহলে এভাবেই লাভ উঠাচ্চ্ছে এক্সট্রা।আমি চুপচাপ হাসপাতালে গেলাম।চুপচাপ করে জিনাত কে বাচানোর জন্য ডাক্তারদের ব্যর্থ প্রচেষ্টা অবলোকন করলাম।জ়িনাতের স্বামী,বাবা,মা,বাচ্চাকে খুজে বের করলাম।স্বামী বেচারা জিনাতকে আসলেই ভালোবাসত।আমরা দু জনে কবর দিলাম।কবরের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম দুজনে চুপচাপ।জিনাতের স্বামী নীরবতা ভেঙ্গে বলল “আপনি অনেক লাকি।বিয়ে না করেই সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছিলেন।তাও জিনাতের।আমি চাইনি ওর এই পরিনতি হোক।আমি ওকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছিলাম ওর চাপেই।আমার কাছ থেকে কখনো কোন সাহায্য নেই নি সে।আর আজকে ওর এই অবস্থা”।কথা বলতে বলতে লোকটার চোখে পানি চলে আসে।আমার কাদা উচিত ছিল।কিন্তু জিনাত মারা যাওয়ার পর থেকে আমার কান্না আসেনা আর,ঘুমও আসেনা আর।আমি যেন ভয়াবহ ঘোরের মাঝে দিন কাটাচ্ছি।ঘুমাবো আমি পড়ে।ঘুমানোর সময় বাকি আছে অনেক।আমি কিছু না বলে চলে আসি।আমার এখন অনেক কাজ,অনেক।

১০ মাস পর…
একটি বহুল দর্শিত টেলিভিশন সেন্টারের ভিতর কাজ চলছে।চীফ নিউজ এডিটর মাসুদ তার সেক্রেটারি নাজনীন কে ডাকলো।নাজনীন ছুটে আসল।“জ়ী স্যার?আমাকে ডেকেছেন”?”হুম,টেলিফোন করে আমাকে জানানো হয়েছে,আমার নামে একটা খাম আসার কথা।ওইটা কি আসছে?দেখোতো?এসে থাকলে নিয়ে আসো আমার কাছে”।নাজনীন ৫ মিনিটের মাঝে খাম নিয়ে এল।সাথে একটি প্যাকেট।মাসুদ খামটা খুললো।একটা ছোট চিঠি।
চিফ এডিটর সাহেব,
আমার সালাম নিবেন।আমি বেশি কথা লিখছিনা।আমি একটি ডিভিডি পাঠালাম।দেখবেন।এই কয়েকদিন ধরে যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন।আর চেষ্টা করবেন টেলিভিশন এ দেখিয়ে ফেলার কেননা দেশের প্রতিটা চ্যানেলের কাছে আমি একটি করে ডিভিডি পাঠিয়েছি।ভালো থাকবে্ন।ধন্যবাদ।

মাসুদ একটু অবাক হল।পুরাই বেওয়ারিশ একটা চিঠি।আর কিছুই লেখা নেই।“নাজনীন,এদিকে আসো।ডিভিডি প্লেয়ার টা আনো।আমি ডিভিডি দেখবো”।ডিভিডি প্লেয়ার এনে দিল নাজনীন।মাসুদ ডিভিডি টা ছাড়লো।১০ মিনিট পর মাসুদ চিতকার করতে লাগলো “এয়ার এ কি হচ্ছে?এখুনি বন্ধ করে এইটা ডিভিডি টা না ছাড়লে সবার চাকরী আমি একসাথে নট করে দিব।হারামখোরের দল”।
শহরের অদূরে এক চায়ের দোকানের সামনে হঠাত করে একটা বাইকে করে এক লোক এসে নামল।“মামা চা আর বিস্কুট দাও” লোকটা এসেই ফরমাস শুরু করল।লোকটা টিভির দিকে তাকালো।“জরুরী একটি ভিডিও ক্লিপ সম্প্রচারের জন্য চলমান অনুষ্ঠানের প্রচার স্থগিত করা হল।পরবর্তীতে বাকি অংশ পরবর্তীতে প্রচার করা হবে”।
“ধুরু,কি আর হইব।প্রধানমন্ত্রীর ভাষন ছাড়া?দেই চ্যানেল পা্লটাইয়া” দোকানের মালিক চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে এইসব বকতে থাকে।কিন্তু সবখানেই একি অবস্থা।“শালার কপাল টাই খারাপ।আচ্ছা দেখি কি দেখায়……পুতরা” গালিগালাজ করতে করতে এই কথা বলে লোকটা।
টেলিভিশন স্ক্রীনে একটা বড় গ্যারাজ জাতীয় ঘর দেখায়।প্রায় ১০-১৫ জন লোক কে হাটু গেরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।তাদের কেউ কান্না করছে,কেউ গোংগাচ্ছে যন্ত্রনায়,কেউ চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে।কিন্তু কারোর মুখ দেখা যাচ্ছেনা।সবার মুখে কালো কাপড় পরানো।এবার হঠাত একটা গলা শুনা যায়।“গত কয়েকদিন ধরে যে কিডন্যাপিং বা গুম করার যেসব ঘটনা ঘটছে তা তো সবাই আশা করি জানেন।প্রায় ১৫ জন ক্ষমতাশীল ও প্রভাবশালী ব্যক্তি কে এখানে আনা হয়েছে।অনেকটা রি ইউনিয়নের মত।হাহাহা”।কাষ্ঠ হাসি জিনিসটার বাস্তবিক উদাহারণ দেখলো এবং শুনলো সবাই।এবার গলার মালিকের চেহারা দেখা গেল।ও ক্যামেরার সামনে চলে এল।“আমার মুখ দেখাতে সমস্যা নাই।কারন আপনারা যখন দেখবেন ততক্ষনে শো শেষ হয়ে যাবে।শো এর পাত্র পাত্রীদের সম্পর্কে বলি।আমি একজন সাধারন মানুষ।এখানে যাদের দেখছেন তাদের সবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে আজ আমি এখানে এসে দাড়িয়েছি।আমি নিজেও আছি এই পার্টির অংশ হিসেবে।না,আমি কোন পাগল,স্যাডিস্টিক সিরিয়াল কিলার না।আমি আপনাদের মতোই একজন মানুষ।আমি কোন হিরো না যে এই দেশ কে বাচাতে এসেছে।আমি সবার সেই কাংখিত বিপ্লবি না।আমি নিজের সৃষ্ট যুদ্ধের সর্বশেষ সৈনিক,যুদ্ধ শেষ করতে এসেছি।আমার হাতে এইটা একে-৪৭।এটাই আমার সম্বল আজ।তো চলুন মেহমানদের সাথে পরিচিত হই আমরা”।এই বলে লোকটা এগিয়ে গেল সবচেয়ে ডানের লোকটার দিকে।তারপর মুখোশ টা খুলে দিল।“একে তো আপনারা চিনেন,তাই না”? এরপর আস্তে আস্তে সবার মুখোশ খুলে দিল।“এদের সবাইকেই আপনারা চিনেন।এরা আমাদের প্রতিনিধি।আমরা এদের কে এত কিছু দিয়েছি।আসলে ওদেরও দোষ নেই।আমাদের মত মানুষ দের প্রতিনিধিরা আর কতোই বা ভালো হবে।আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছি।আর আমাদের প্রতিনিধিরা আর কি করবে”?এখানে আমাদের মন্ত্রী,রাজনীতিবিদ,ছাত্রনেতা সবাই আছে।এদের অনেকে জনগনের টাকা দিয়ে ফুর্তি করে কাটাচ্ছে।দেশ কে বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা করে।আফসোস আফসোস আফসোস” ঠোট দিয়ে চুকচুক করে শব্দ করে লোকটা এই কথা গুলো বলল।“আর বাকিরাও কিন্তু খুব পুণ্যের কাজ করছেনা।এরাও কম যায় না।পড়ালেখার উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে যাওয়া নিরীহ ছাত্রদের কোরবানি দিয়ে এরা এসির বাতাস খায়।জনগনের টাকার এসির বাতাস।এদের কেউ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখায়।কেউ বা ঈশ্বরের নামে কেউ বা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে।কিন্তু কেউ বুঝেনা মানুষ শুধু বাচতে চায়।ঈশ্বরকে নিয়ে,বিশ্বাসকে নিয়ে,ধর্ম কে নিয়ে কেউ কেনা-বেঁচা করতে চায় না।শুধু ৩ বেলা ভাত চায়।আর কিছুই না।কাজের নিশ্চয়তা চায়।আর কিছুই না।তারা চায়ের কাপ হাতে দেওয়া তত্ত্ব কথা শুনতে তারা চায় না।তারা বাচতে চায়।এতকথা বলে লোকটা দম নিল।বন্দুক লোড করে নিল লোকটা।ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে আবার শুরু করল “হ্যা আমি তুলনামূলক ভাবে কম শিক্ষিত।হয়তবা আমি ভুল আর সবাই ঠিক।কিন্তু আমি আমি যা বললাম তা দৃড় ভাবে বিশ্বাস করি।আর সেই অনুযায়ী কাজ করি।সবাই বিপ্লব চায়।এই নাও তোমাদের বিপ্লব।এই নাও মুক্তি।এই নাও স্বাধীনতা।তোমাদের প্রতি আমার উপহার”।এই বলে গুলি করা শুরু করল সে।এরপর বন্দুক ঘুরিয়ে নিজের দিকে তাক করে বলল “আর সবচেয়ে বড় কালপ্রিট কে জানেন?আমি,আমি নিজে।আমি এতকিছু বুঝেও সুন্দর কোন উপসঙ্গহার দিতে পারলাম।ধ্বংস আর মৃত্যুই সব না।কিন্তু আমি আসলে অন্ধ মানুষ।আমার বিবেক অন্ধ।অন্ধ বিবেক এতকিছু বুঝেনা।অন্ধ বিবেকের ধ্বংস আর মৃত্যুই সত্য।বিদায়”।নিজের মাথাতেও গুলি করে ফেলল লোকটা।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্ক্রীনের দিকে।বিস্ময়,হতবাক,বিস্ফারিত দৃষ্টিতে।লাশ গুলো সব লাশ ঠান্ডা কনক্রীটের মেঝেতে রক্তের বন্যার মাঝে পড়ে আছে।হঠাত করে কোথা থেকে পানি আশা শুরু করল।আস্তে আস্তে পানির উচ্চতা বাড়তে লাগল।ওখানে শেষ হয়ে গেল,ভিডিও ক্লিপটা।
হঠাত করে সেই বাইক আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে লাগলো।সবাই অবাক হল,কিন্তু কিছু বললনা।বিল দিয়ে বের হওয়ার সময় একজন পিছন থেকে তাকে ডেকে উঠলো “ভাই,শুনেন”।“কি?”
“ভাই আপনি কাদলেন কেন?আপনার কেউ আছিল নাকি”?
“হুম।যে ছেলেটা সুইসাইড করছে ওই টা আমার ভাগিনা লাগে”।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# দুর্দান্ত লিখেছেন ভাই। তবে গল্পের পরিধিটা আরো একটু খাটো হওয়া পয়োজন ছিল। আপনার গদ্যের হাত অসম্ভব শক্তিশালী। ধন্যবাদ।
আহমেদ সাবের শুরুটা দেখে ভেবেছিলাম, একটা মিষ্টি প্রেমের বা বিরহের গল্প হবে। তারপর এলো মামা বিপ্লবী প্রসঙ্গ। মাঝখানে " ওরা তিনজন চলে এসেছে।তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে।আমার আশেপাশে সবার গায়ে গুলি ......" - অনেকটা হিন্দি ছবির স্টাইলে। জিনাতের অতীত বর্তমান জানার পরও "সেই রাতের পর থেকে আমি আর জিনাত আগের মতো হয়ে গেলাম।" - ব্যাপারটা আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটু বিশ্বাসযোগ্য হয় নি। শেষটা অতি নাটকীয়, অনেকটা আমেরিকার র‍্যান্ডম শুটিং স্টাইল। সব মিলিয়ে দারুণ একটা গল্প পড়লাম। অনেক উল্লেখযোগ্য উক্তির মধ্যে একটা - "কিন্তু বাস্তবতা হল সেস্নর (সেন্সর) বোর্ডের মত।যা আমরা দেখতে চাই তা কেটে ফেলে।যা দেখতে চাই না তাই দেখায় আমাদেরকে"।
বিশ্বাসযোগ্য হবার জন্য তো লিখছিনা...গল্প বলার বলছি...এরকম অবিশাস্য অনেক লেখাই ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে...তবে পরার জন্য অনেক ধন্যবাদ...আপনার ভালো লাগলেই আমি সার্থক.
মামুন ম. আজিজ একটু লাফিয়ে লাফিযে পড়ে গেলাম। বাস্তবতার ছোঁয়া পেলাম। বর্ননা আরেবটু গাল্পিক হলে ভাল বেশি হতো
মিলন বনিক ঘটনা বহুল অনেক গুলো চিত্র, গল্পের অবয়বটা বিশাল. উপসংহারটা কল্পনা প্রসূত হলেও একটা সত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছেন..একটানা পড়ে গেলাম..ঘটনাগুলো কেবল একের পর এক ছবির মত মনে হচ্ছে..বাস্তবতার নগ্ন অভিষেক...খুব ভালো লাগলো ভাই..প্রিয়তে নিলাম..আর ভোট তো আছেই..শুভ কামনা থাকলো....
ধন্যবাদ...বাস্তবতাকে নিজের মত করে দেখা টাই তো আমাদের কাজ,
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অপঠিত রাখলাম ।সময় করে আবার আসবো ভাই ধ্রুব।
অবস্যই.
গল্পের পরিকল্পনা আনুযায়ী আনুজীব্যগুলো যথার্থভাবে এগিয়েছে। সহজ সরল ভাষা, কাহিনীর গতিময়তা গল্পটিকে সুখপাঠ্য করেছে। আমরা আপনার মাঝে ভবিষ্যতের একজন বড় লেখককে দেখতে পাচ্ছি। অনেক অনেক শুভকামনা ভাই ধ্রুব।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Kahini Khub Valo Laglo tobe lekhuni ta ro Valo Hote hobe ta chhara Vasar babohar ...jemon..bolteso..blbo...kortechhi...// asober jonno kharap legechhe.....ate kore lekhar man khunno hoyechhe.....amnite Valo...........beshi kotha bole fellam taina........?.
হমম...ধন্যবাদ.
মারুফ মুস্তাফা আযাদ ভাই, মনে হল একটা সিনেমা দেখে উঠলাম। ভালো হয়েছে, বেশ ভালো হয়েছে। আর একটা ব্যাপার, এরকম লম্বা গল্পে সাধারনত পাঠকদের ধৈর্য থাকেনা। পাঠককে ধরে রাখার কৌশল অবশ্য তুমি জান, এটা ভালভাবে রপ্ত কর।
হাহা,হ্যা আমি আসলে প্রকার সিনেমা দেখি,এজন্য আমার লেখা তে একটু সিনেম্যাটিক টাচ থাকে...অনেক ধন্যবাদ.
মাহবুব খান অনেক ভালো /৫ দিলাম
অনেক ধন্যবাদ.
Abu Umar Saifullah দারুন হয়ছে
দিগন্ত রেখা কথা বলতে বলতে লোকটার চোখে পানি চলে আসে।আমার কাদা উচিত ছিল।কিন্তু জিনাত মারা যাওয়ার পর থেকে আমার কান্না আসেনা আর,ঘুমও আসেনা আর।আমি যেন ভয়াবহ ঘোরের মাঝে দিন কাটাচ্ছি।ঘুমাবো আমি পড়ে।ঘুমানোর সময় বাকি আছে অনেক।আমি কিছু না বলে চলে আসি।আমার এখন অনেক কাজ,অনেক।--------সুন্দর
অনেক ধন্যবাদ...

০৮ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী