পর্দা

নগ্নতা (মে ২০১৭)

ধ্রুব
পর্দা নেমে গেল।ব্যান্ড আর্টসেল স্টেজ থেকে নেমে আসছে চারিদিকে সবাই চিতকার করতেছে ওয়ান মোর ওয়ান মোর বলে বলে।কেউ আবার বলছে “এথ খম ঘান খরে ছলে যাচ্ছে যে”।জী আমি চিটাগাং এ আছি আপাততঃ এখানে আর্টসেল কন্সার্ট করতে এসেছে।আর পর্দার কথাটা আমি বলতে চাই নি।বেকুব-পেট মোটা নীল গেঞ্জি পড়া লেখক ধ্রুইব্বা এটা লিখছে।মেটাল কন্সার্ট এ বাল পর্দা দেয় কবে থেকে।দিস শিট ইজ নট ফর ভার্জিন ইয়ারস।হালায় কি গাঞ্জা লিখতেছে কিনা কে জানে।আমার কাহিনী লিখতেছে গাঞ্জা খাইয়া কত বড় সাহস।চাপা দিয়ে শালা নাড়িভুড়ি বাইর কইরা ফেলবো।

আমি কে ভাবছেন?আমি তেমন কেউ না আপনাদের এই পাগল-ছাগল লেখকের তৈরি একটা চরিত্র ছাড়া কেউ না।অনেক বেশী কথা বলতেছি আপনাদের সাথে গল্পটা আগাতেই পারতেছে না।এইবার আমি চুপ মারি।এখন উত্তম পুরুষে নিজের চিন্তার প্রকাশ শুরু করি। উত্তম পুরুষ বুঝেন তো?নাকি গোল্ডেন এ+ পেয়ে জীবন ধন্য?ইংরেজীতে এটা হল “first person”, দুঃখিত হিন্দীতে কি বলে আমার ঠিক জানা নেই।

আর্টসেলের সবাই চলে আসছে।ওয়ারফেজ রেডি হচ্ছে।আমি এই গ্যাপে স্টেজে উঠবো।আমি কেউ না।একজন ছা-পোষা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান।রিয়ালেটি টিভি শো তে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা কমেডিয়ান।জী না আমাকে শাড়ির উপর ব্লাউজ পড়তে হয় নাই,আমাকে কোমরের মাংস দেখিয়েও পাশ করতে হয় নি।আমার বাপ-মা রাস্তায় ভিক্ষা করে আমাকে কমেডিয়ান বানাইছে এই টাইপের ফাওল ইমোশনাল সেন্টিমেন্ট আমাকে বিক্রি করতে হয় নাই।নাহ অডিয়েন্স আমারে চোখের পানি মুছতে মুছতে ভোট করে নাই।হাসতে হাসতে অথবা শালায় আমার মনের কথাটা কইছে ভোট দে হালারে কইয়া ভোট দিছে।জাজরা বেকুব হয়ে গিয়ে ভোট দিছে।এরকম কেমনে হয়??তবে হ্যা,আমারে ফার্স্ট তারা বানায় নাই।ভালো হইছে একদিক দিয়া।ডিরকস্টার নামে একমাত্র ডিসেন্ট রিয়েলিটি শো তে যেই ব্যান্ড টা ফার্স্ট হইছিলো তাদের কি অবস্থা হইছে পরবর্তী তে সেটা আমরা সবাই জানি।গল্পের বইয়ের আর বাংলা নাটকের গ্রামের মা টাইপ অবস্থা।বিবাহের ১০ মাসের মধ্যে পুত্রসন্তানের জন্মদান করাতে না পারলে নারীত্ব নিয়ে টানাটানি।

আমি স্টেজে উঠি এখন।চারিদিকে কিছু মাইক।আমার উপর লাইট এসে পড়ল।আমি প্রথমে অডিয়েন্সের দিকে তাকালাম।টিপিক্যাল ক্রাউড।নারী অংশে সেই আমার ছোটবেলার এক্সপেরিয়েন্স টা মনে হয়ে গেল।কনসার্টের একসাইডে ২-৩ জন মেয়ে থাকবেই।ওরা ইংলিশ মিডীয়ামে পড়বে।ইংলিশে আর বাংলায় মিশায় কথা বলবে।একটা দুটো পুচকা ব্যান্ডের মেম্বার দের ঘাড়ে চড়ে ঘুরবে।নো অফেন্স পুচকা ব্যান্ড গুলারে ভালোই লাগে।এবসেইল নামের একটা পুচকা ব্যান্ড ছিল অনেক ভালো।আজকের ক্রাউড অবশ্য একটু অন্যরকম।সালওয়ার কামিজ,পালাজো পড়া মেয়েরাও আছে।একটা দুইটা হিজাবি কেও দেখা যাচ্ছে।নাহ ভালোই।ছেলে দের ক্রাউডে মিক্স টা বেশি।নন মেটাল অডিয়েন্স অনেক বড়।ব্যাপারটা খারাপ না।
“হ্যালো হ্যালো হ্যালো...এই যে আমার দিকে একটু তাকান।চিনতে পারছেন আমাকে?এই দিকে আমি ভাই ওইদিকে নেই।
এক পোলা দেখি এক মেয়ের কোমর আর বুকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।গেঞ্জিতে আবার চে গুয়েভারার ছবি।আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল।ছেলেটারে একটু জাজ করবার ইচ্ছা হলো।
“এই যে বিপ্লবি ব্রাদার,এই দিকে তাকান।চে এর গেঞ্জি পড়ে আছেন যিনি।” ছেলেটা এদিক ওদিক তাকাইতেছে আর যাচাই করে নিচ্ছে তাকেই ডাকা হচ্ছে কিনা সেটা।
“জী ভাই,আপনারেই বলতেছি।ভাই,মাথা তো খুলে পরে যাবে আপনার।এভাবে করে যে মেয়ে যাইতেছে সামনে তার দিকে তাকায়া থাকলে মুন্ডুর স্ক্রু খুইলা যাবে এক্কেরে।সেই মুন্ডু দিয়া ফুটবল ও খেলা যাইবো।মাথা তো এক্কেরে গোল”।
ছেলেটা বলে উঠল “দেখালে তো দেখবোই।পুরুষ মানুষ না আমি।বুঝেন না?”চোখ টিপ দিয়া দিল এক্কেরে।
আমি না হেসে পারলাম না “তাই নাকি?এত ভালো যখন লাগে হাত দিয়া ফেলেন”।চুপ হয়ে গেল সবাই।লোকটার মুখ শুকাই গেল।মেয়েটা এতক্ষন কিছু বলে নাই।এখন বলে উঠল “পার্ভার্ট দিয়ে দেশ ভরে গেছে”।কথাগুলো আমাকে তাক করেই বললো।আমি আবারো হেসে বললাম “হাহা,আমি তো পার্ভার্ট।চে এর গেঞ্জি পড়া ব্যাক্তির মনের কথা কইয়া দিয়া আমি আজ পার্ভার্ট।আপনি নিশ্চয় ওখানে উনাকে নিজের দেহের উন্মুক্ত প্রদর্শনীর সুযোগ দিতে দাড়াননি নাকি?এই যে আমি লোকটাকে সার্কাজমের মাধ্যমে অপমান করে আপনার পক্ষ নিলাম সেটা আপনার ব্রেন বুঝেনাই।অবশ্য আপনি তো ফেসবুক-টুইটার-সেলফির দাম ভালো বুঝেন।সার্ক্যাজম বুঝার টাইম নাই।নাকি আমার কালো গায়ের রঙ আর পাঞ্জাবীতে আমি আপনার দিকে তাকানোর যোগ্যতাও রাখি না?কিন্তু চে এর গেঞ্জি পড়া “ভদ্রলোক” আপনাকে ফ্যান্টাসী করলেও সুখ।গ্রীক পুরানের মতন দেবতার সন্তান ধারনেও শান্তি/তাদের সাথে ফষ্টি নষ্টি করার সুখ টাও অন্যরকম।
আবারো সব নীরব।
কমেডি থেকে বের হয়ে আসবো নাকি সোশ্যাল সিনিসিজম চালায় যাবো।বিশাল এক প্রশ্ন নিজের কাছে।সোশ্যল সিনিসিজম উইথ কমেডি চলুক নাহয়।
“থাক অনেক কথা তো হল।আপনারা কেউ কি নর্থ সাউথে পড়েন?বলে ফেলেন লজ্জার কিছু নাই”।
ছেলেটা বলে উঠলো “আমি পড়ি”।
“বাহ চমতকার।তাহলে আর কি চিন্তা।ভাই আপনি আপনার মন মতন ওই আপুর সাথে যা ইচ্ছা করেন।আমি দুঃখিত এই কথা বলার জন্য।আপনারা জাস্ট মেইন স্টেইজ থেকে দূরে গিয়ে কন্সার্ট করেন।ওয়াফেইজ আসবে তো।ডিস্টার্বেন্স ক্রিয়েট হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের সীল দেওয়া কনডম টা আছে তো?আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কনডম বিতরণ এর ব্যাপারটা অস্থির একটা কন্সেপ্ট ছিল”।
এতক্ষনে কেউ কেউ মুখ টিপে হাসলো।
অডিয়েন্স আমার দখলে ভেবে আমিও হাসলাম।
“ঐ ভাই যে চে গুয়েভারার গেঞ্জি পড়েছেন তাকে আমরা সবাই চিনি কি?উনি একজন বিপ্লবী।সাম্যবাদী-সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী।আমাদের দেশের একটা বড় সমস্যা শুনবেন? আমাদের দেশে মানুষ আমার বাবার ছবি সম্বলিত গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ইভ টিজিং করে”।
সবাই বিচলিত হল।“আমার বাবাকে চিনলেন না??আরে,জাতির পিতা বংবন্ধু শেখ মুজিবের কথা কই আরকি”।
আরেক দফা হাসি।
“যা বলছিলাম,আমাদের দেশের অনেক মানুষ চে এর গেঞ্জি পইড়া ২পয়সা দান না কইরা মালয়েশিয়ায় যায় ছুটি কাটাইতে।দ্যাটস একচুয়ালি গুড।উনারা বৈশ্বিক দিকে আগুয়ান।মালয়েশিয়ান দের সাম্য ঘোষনা করছেন।আর অনেক মানুষ হয়েছে যারা কিনা মুখে ধর্মের কথা বলেও ধর্ম বিক্রি করে দিতে সময় নেয় না”।
তো এই দলটার নাম হইতেছে জামাআআত।চিনেন তো নিশ্চয়।স্বাধীনতা বিরোধী,যুদ্ধাপরাধী কুকুরের দল।১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রে কুড়ে কুড়ে খাইতেছে।বেশিই খারাপ”। এই বলে আমি থামলাম,চুপ করে তাকালাম সবার দিকে।যাক সবাই এখন জ্বলজ্বল মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।বেশ লাগছে।অনেক উপরে তুলে নিয়ে কোনকিছু নিচে ছুড়ে মারার মজাটাই আলাদা।“তো জামাত টিকে থাকার রহস্য টা আসলে কি?আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দুইটা দল মিলে জামাতকে যেভাবে পারে সেভাবে নিজের কাজে লাগাইছেন যার ফলে কি হইলো?গতকালের পরজীবি আজকের প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি। জয় বাংলা,বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”।আকাশ থেকে মাটির তলায় পোকা মাকড়ের সাথে স্থান হলো অডিয়েন্সের।আহা,জীবন কি সুন্দর।

"এই লেখক,ধ্রুইব্বা দেখিস গাঞ্জা খাইয়া লিখতাছোস ভালো কথা কিন্তু আমারে আবার মেরুদন্ডহীন বাঙলার বাম বানাইস না”।“আমাদের এখনকার প্রযুক্তিতে হাত পা,হৃদপিন্ড সবই বদলানো যায়।বদলানোর পরেও আমরা আমাদের সত্ত্বাতে বিরাজ করি।কারনটা আর কিছুনা,আমাদের মাথা।জ্বি এটাই সব।মাথার আবার ট্রেনিং লাগে।সেই ট্রেনিং নিতে হয় শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে। আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজীবনই একটা হাস্যরসের ব্যাপার।আগে ছিল নকলের ছড়াছড়ি আর এখন হইল প্রশ্ন ফাঁসের যুগ এবং এইডা কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী কুত্তার বাচ্চাদের কাজ না।এইডা আমার আর আপনার মতন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের কাম”। আবার তাকালাম অডিয়েন্সের দিক।এইবার সবকিছুই পরিবর্তিত।সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সবার দৃষ্টিতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকা।

আবার শুরু করলাম “শিক্ষা ব্যবস্থার কথা যখন কইতাছিই তখন আরেক কাহিনী কই।দেশে এখন পিএসসি,জে এস সি বহুত পরীক্ষা।আমাদের দেশে তো টাকার চাইতেও দামী হইল জি পি এ।একটা ভালো আইডিয়ার চাইতেও জিপিএ এর দাম টা সমাজের কাছে অনেক বেশি। একটা গল্প কই শুনেন সবাই।এক পোলা ক্লাস ১ থেকে শুরু করে ৭ পর্যন্ত ফার্স্ট বয়। ক্লাস ৫ এ বৃত্তি ও পাইছে।পুরা মহল্লায় সবাই এক নামে। আশে পাশের আন্টিরা তাদের মেয়েদের ঠেলে যা বেটি ওই পোলার লগে বন্ধুত্ব কর।সৎ সংগে স্বর্গবাস,অসৎ সংগে সর্বনাশের একটা ব্যাপার আছেনা। তো এই ছেলের খাতা দেখতে গিয়ে ভুল হওয়ায় ছেলে ক্লাস ৮ এ পাইলোনা বৃত্তি কিংবা এ+। এখনতো সুন্দরী মেয়েদের মায়েরা তারে ধইরা নর্দমায় ফালায় দিলো।“আগেই বলছিলাম পোলার বেসিক ভালো না।মুখস্ত করে পিএসসি তে বৃত্তি পাইছে”।সুন্দরী মেয়েরাও ভুলে গেল তার কথা।বাপ-মার মান-ইজ্জত পুরা এলাকাতেই শেষ এবং বর্বাদ।ছেলে তখন থেকেই মাপা শুরু করল সিলিং ফ্যানের জোর কতদূর।তার ওজন সহ্য করতে পারবে কিনা।এরপর বাপের গামছা দিয়ে দিল ফাঁস।পরেরদিন অবশেষে বাপ-মার মনের আশা পূর্ণ।ছেলের নাম পত্রিকায় এসেছে”।অনেক কথা বলে ফেললাম আমি একটানে।ক্লান্তি তো গ্রাস করছেই না।বরং আরো ভাল লাগছে।সবাই উতসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তু ধ্রুব তুই যদি এত কিছু লেখোস তুই একটা আবাল লেখক ছাড়া কিছুই হইতে পারবিনা,শালা গাঁজাখোর।

অবশেষে আরো ৫মিনিট স্টেজে থেকে তারপর নামলাম। ওয়ারফেজ উঠলো। স্টেজ থেকে নামার সময় করতালির আওয়াজ কান পেতে শুনলাম।জী আমিও যেকোন পারফর্মার এর মতনই করতালির মরননেশায় আক্রান্ত।ভালো লাগলো।ভালো লাগার রেশ কাটতে সময় লাগলো না। গাল বরাবর চপেটাঘাত পড়লো প্রায় সাথে সাথেই।করতালি শেষ,চপেটাঘাত শুরু। “খা*কির পোলা,মা*রি,চু*#@নি তোকে এই কারণে স্টেজে উঠাইছিলাম?তুই গিয়ে আমাদের দলের বদনাম করবি,এইজন্যে তোরে উঠতে দিছি?হারামি।তুই রাজিবের ছোট ভাই বলে উঠতে দিছি।নাহয় শালার কমেডিয়ান উঠানোর কাম ছিলোনা।বঙ্গবন্ধুরে নিয়া হাসাহাসি করোস?”পাশের আরেকটা কণ্ঠ বলে উঠে “ভাই,ওরে আরো দুইডা লাগান কান বরাবর।হালার কত বড় সাহস কয় বংগবন্ধুর স্বপ্ন ছিল আমি কমেডিয়ান হব,তাই কমেডিয়ান হয়েছি,শালার পুত শালা”।আমি গালে হাত দিয়ে বললাম “ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি উনার স্বপ্নের অংশ হয়,আমার কমেডিয়ান হইতে দোষ কই”?বলেই বুঝলাম ভুল হয়ে গিয়েছে।এলোপাথারি চড়-থাপ্পর খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম।এবার প্রথমজন যার পরিচয় গাঁজাখোর লেখক দিতে ভুলে গিয়েছে সেই জন অর্থাৎ অর্গানাইজার ছাত্রলীগ নেতা বাকি ভাই পাশের ক্যাডারের কাছ থেকে পিস্তল নিয়ে আমার মুখে ঢুকায় দিলো। তারপর যা বললো তার সারমর্ম এই যে আমারে সে আর একটা সুযোগ দিবে।এইসব প্রোগ্রাম থেকে বের কইরা দেওয়ার আগে।কিন্তু কোনরকমের রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ।শুধু নর্মাল জোকস।

আমি সিনেমার মতন চিৎকার করে বলি নি, না আমি আমার সত্ত্বা বিক্রি করবোনা।আমি সব মেনে জীবন হাতে উঠে এলাম।মুক্তিযোদ্ধারা কি আমার জন্য আজ যুদ্ধ করতোনা আজ?আই মিন,চিন্তা চেতনার স্বাধীনতা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিতর ছিলোনা?হাটা শুরু করলাম।জীবনের দিকে প্রতিবারের মতন আবারো আলোকপাত।আমার বয়স ২৫।এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।পড়ি ফলিত পদার্থবিদ্যা।হ্যা,লেখক ধ্রুইব্বার মতনই। আমার আর ওর অনেক মিল।আমি কালো কুতসিত এবং কিছুটা স্থুলকায়,অর্থাৎ সামাজিক মাপের চেয়ে কিছুটা মোটা।পড়াশোনার চেয়ে অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত অনেক বেশি।কিন্তু বদ্ধ সমাজে মানসিক প্রশান্তি নিয়ে টিকে থাকার জন্য সার্টিফিকেটে ভালো কিছু অক্ষর ও সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।আসলেই কমেডি,মিউজিক,সিনেমা,গেমস এগুলা তো কাজ নয়।কাজ তো পড়াশুনা আর প্রেম।যদিও প্রেমটা আসলে কাজ হওয়া উচিত নয়।প্রেম হওয়া উচিত প্রেম।মনের টান থেকে আসা।এটা গল্পের বইতেই হয়।বাস্তবতা হল,প্রেম টিকিয়ে রাখা অনেক পরিশ্রমের কাজ।তবে এ থেকে প্রাপ্ত প্রশান্তির তুলনা নেই,এই আর কি।

পকেটে রাখা ফোনটা কেঁপে উঠল।আমার প্রশান্তির নীড়ে কল।কল ধরে বললাম, “হ্যা কি অবস্থা”?ওপাশ থেকে-ফোন করছি কতবার ধরো না কেন?
-ব্যস্ত ছিলাম।
-কিসের ব্যস্ততা?
-এই তো।
-কি স্যারের সাথের প্রজেক্ট?
-না।স্যার এখন বাড়িতে।
-তাহলে পড়তেছিলা?
-না,পড়ালেখা সংক্রান্ত কিছু না।
-তাহলে?
- তেমন কিছুনা।
-বুঝছি,বলা লাগবেনা।
-কি বুঝলা?
-জুনিয়র মেয়ের সাথে ঘুরতেছিলা?
-নাহ।পারফর্মেন্স ছিল।আমি কারোর সাথে কথা বলি না এখন আর।কতবার বলতে হবে।
-তুমি এখনো পারফরমেন্স করো।তোমাকে কতোবার বলছি বন্ধ করতে।এসব আজাইরা কাজ বাদ দিয়ে,ভালো মতন পড়ো।আমি এখানে এখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে ভালো স্যারের সাথে,সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ভাইয়ার সাথে কত কষ্ট করে রিসার্চ করতেছি আর তুমি কিনা কমেডি করে বেড়াও।আবার আমাকে বিয়ে করার সাধ জাগছে তোমার?-----------নিরবতা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু এইসব ক্ষেত্রে।তাই চুপ করে গেলাম।ওপাশ থেকে আবারো শুরু হল।
-তোমার বাল-ছাল জোক এগুলা মানুষ শুনেও?তাও টাকা দিয়ে।আজাইরা সব জোক তোমার।আমাদের এখানে কমেডির লেভেল তোমার থেকে কত উচুতে তোমার আইডিয়াও নাই।ফালতু।রাখি,তোমার সাথে কথা বললেই তোমাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে।রেজাল্ট নাই,চেহারাও নাই, কিছুই নাই।রাখলাম।-আই লাভ ইউ।-আই ডোণ্ট।আর কল/টেক্সট দিবানা।

ফোন রেখে রিকশা নিলাম।বাসার দিকে যাবো।জীবন আসলে এভাবেই কেটে যাচ্ছে।হয়তোবা এভাবেই কেটে যাবে।স্বপ্ন গুলো সব জমিয়ে রেখে বাক্স বন্দি কাফনের কাপড় পেঁচিয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে যাবো।এরপর কয়েকশ বছর পর আর্কিওলজিস্টরা এটা বের করে সুন্দর করে ফেলে দিবে। বাতিল জীবন আমার,বাতিল
আমার
স্বপ্নেরাও...

ঘুম ভাংগলো।না কথাটা ঠিক না। সারারাত জেগে থেকে আধো ঘুম আধো জাগরনের তন্দ্রা ভাব টা ঝেড়ে ফেলে দিলাম।কপালে হালকা জ্বর।তো কি হইছে।আজকে নতুন দিন,নতুন শুরু।
কিসের যেনো আওয়াজ ভেসে আসতেছে।তেমন কিছু না। বড় আপু আবারো তার বেকার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়া করবে সেজন্য ঝগড়া করতেছে আব্বা-আম্মার সাথে।এগুলাই কোন সমস্যাই না।কতজনের বোন মানসিক রোগী থাকে নাহয় অন্য ছেলের হাত ধরে পালায় যায়,না হয় আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়।তার উপর আপুর পছন্দের এই ছেলে দেখতে শুনতে ভালো।খালি চাকরী নাই - রেজাল্ট ও নাই- এম্বিশন ও নাই।

আমি রেডি হচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসের জন্য।হ্যা,আমি সেইসব লুজার ছেলেদের একজন যে কিনা ঘরে বসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করতেছে।একদম হুবুহু এই লেখার লেখক ধ্রুবর মতন।পড়তেছি মোটামুটি মানের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে্র কঠিন এক সাবজেক্টে।রুম থেকে বের হলাম নাস্তাটা বানাবো।নিজেরই বানাতে হবে।মা উনার ন্যানোটেকনলজির উপর থিসিসের কাজ আছে সেটা নিয়ে সারারাত কাজ করে উঠেমাত্র আপুর সাথে ঝগড়া করতে বসছেন।তাও আপুই তাকে উঠাইছেন।

যথারীতি নাস্তা করে ড্রয়িং রুমে গেলাম সবাই কে জ্ঞাত করতে যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রওনা দিচ্ছি।তখন আমার বোন আমাকে দেখিয়ে সাথে সাথে বলে দেখ ওর মতন হলে একটা কথা ছিল।ও দেখতে শুনতেও ভালো না,পড়েও ফিজিক্স এ তাও আমার মতন ভালো কোথাও না।ওর মতন ছেলে হলে তুমি বিয়েতে না করতে পারতা।কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ড কত্ত সুন্দর তুমি দেখছো?আর চাকরী সেটা তো আজ-কাল হোক হয়েই যাবে।প্রাইভেটের বিবিএ চাকরী পাবেই।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আর চুপ করেই বের হয়ে পড়লাম।নিজেকে বুঝালাম,আরে ব্যাপার না।আপু বিয়ের জন্য পাগল হয়ে আছেন আর কি।প্রেমের বিয়ে তো।আমি বুঝি।আমি সবই বুঝি।আর আমি বাড়ির একমাত্র ছেলে আমি ইমোশন দেখালে কিভাবে হবে।আর আমি না হয় আপুর মতন ভালো জায়গায় পড়িনা তাতে কি হয়েছে?আমি আমার কাজ দিয়ে বড় হব।অনেক অনেক বড় হবো।আমি আমার কাজ দিয়ে আমার দেশ কে পালটে দিবো।আমাকে তখন আমার পছন্দের মেয়েটা আর কুতসিত বলতে পারবেনা।বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা আর আমাকে দেখে মুখ টিপি দিয়ে হাসবেনা।কোথাও খেতে বসলে সবাই আর হা করে তাকায় থাকবেনা।স্যার রা আর আমার গায়ের রঙ আর ওজন নিয়ে প্রশ্ন করবেনা।হেহেহেহে, দেখেছেন পাঠকবৃন্দ আমি কতটা মেকি পজিটিভিটির বুলি ছাড়া শিখছি।সবই ইংরাজি সিনেমা, স্পিরিট সায়েন্স আর ফেসবুকের ভং চং মেমের কারিকুরি।না হয় কি আর আপনাদের মতন ফেসবুক ইউজার রা লাইক দিবেন?এককাজ করি অপেক্ষা করেন।এই ধ্রুব।তুই টাইটেল টা লিখার সময় লিখে দিস “ মডেল স্পর্শিয়া সারারাত এ কি করলেন(ভিডিও সহ)। ভিতরে থাকবে স্পর্শিয়ার সাক্ষাতকার এর ভিডিও আর উনি বলবেন সেখানে এস এস সি এর সময় কিভাবে সারারাত পড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।তাইলে মাইনষে খাবে।লাইকের দরকার আছে জীবনে।

আজকে নতুন দিন আমি আবার নতুন করে শুরু করবো সব। সম্পর্ক ভংগের কষ্টে যে সারারাত জেগে ছিলাম সেটা ভুলে যাবো।আমার বোন যা বলেছে সেটা ভুলে যাবো। পরাজিত যুবক হিসেবে বেচে থাকার কষ্ট থেকে পালাবার উদ্দেশ্যে ছুরি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টায় হাত ফালাফালা করার যে চেষ্টা করেছিলাম সেটা ভুলে যাবো।মা-বাবা-বোনের কুতসিত সব ঝগড়া তাও ভুলে যাবো। বাবাকে যেভাবে পারি সুস্থ করে আনবো। আরে মানুষের আরো কত কষ্ট থাকে।আমার মামা-খালা দুইজনেই আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মারা গেলেন তারপরেও উনি ন্যানোটেকনলজীর বড় এক্সপার্ট তাই না?আমি না হয় একটু নিচু মানের জায়গায় পড়ি আর আমি পড়ি ফলিত পদার্থবিদ্যা।আমাকে আর কে ঠেকাবে।জি আর ই দিয়েই ফেলছি। আরি শালা,ধ্রুব তুই আমারে এরকম একটা চলমান ক্লিশের ডিব্বা বানায় দিলি।

এরপর ঢুকলাম ক্লাসে।গিয়ে বসলাম প্রিয়তির সাথে,তাকে ভালো বান্ধবী বলে আমি মনে করি।কিন্তু সে আমাকে দেখেই নাক কুচকালো।কিন্তু আবার কি মনে করে হাসিও দিলো।মেয়েটাকে বন্ধু হিসেবে বেশ ভালোই লাগে আমার।একথা ওকথা থেকে জানতে পারলাম তার দুই ভাই জি আর ই দিয়ে আমার চেয়ে প্রায় ২০ নাম্বার বেশি পেয়ে চলে যাচ্ছেন বাইরে।দুইজনেই অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।সব শেষে আবার আসবেন ফিরে।দ্বিতীয় খবর যেটা দিল সেটা হল তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ছেলে বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানী গুগলের বেশ বড় একটা পোস্টে চাকরী করেন।

বিবেক যেনো ব্যাংগ করে বলছে "হেহ,প্রিয়তিই তো তোরে বিয়া করবেনা।তুই তো ওর ভাই আর ওই প্রস্তাব পাঠাইছে তার নখের ও যোগ্যতা ধারন করস না।প্রিয়তির অর্ধেক ও তুই না।ওর জিপিএ জানোস?ও কোন কলেজের জানোস???বে্কুবের বাইচ্চা।আর বিয়া করলেও সে থাকবে তোর বাড়িতে?তোর মা আছে রিসার্চ আর তোর বোন রে নিয়ে।তোর বোন হইলো সাইকো আর বাপ তো নাই।তুই বিয়াই করিস না বুঝছোস?ওইযে তোর ওই গার্লফ্রেন্ডের নাম কি জানি?রুহি,তাই না?ওই ডাইনী ঠিক বলছিলো।ডাইনী বলা ঠিক না,মেয়ের ঘিলু আছে।তুই বিয়া করার যোগ্যতা রাখোস না।না আছে পরিবার, না আছে রেজাল্ট, না আছে চেহারা।বোন একটা আছে তাও মাথা নষ্ট।রুহির সমান যোগ্যতা তুই এই আর্থ-সামাজিক কাঠামোর ভিতর থাইক্যা শুধু ভালোবাসা দিয়া অর্জন করতে পারবি?আর্থ-সামাজিক কাঠামো কথা টা কেন আইলো জানোস গাধার বাচ্চা?আমি তো তোর বিবেক তাই তোর মতনই একটু পার্সোনালিটি দেখালাম।নিজের ব্যর্থতা অন্যের উপর কিংবা সমাজের উপর দিলাম দোষ চাপায়।হাহাহা। ওই,যারা লেখাটা পড়তাছোস শুন এই হালায় মনে করে কমেডি কইরা পরিবার চালাইবো জীবন চালাইবো।রিয়ালিটি শো তে গেছে।ভালো পজিশন পাইছে।এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক ও পরে।সমাজ-দেশ-রাজনীতি নিয়ে রিভিশনিস্ট কমেডিও করে কিন্তু গাধাটা জানেনা, মেয়েরা এরকম পোলাপানরে *দে বেড়ায় না।*দার কতো কিছু আছে। রেজাল্ট,বাড়ি-গাড়ি,চাকরী,টাকা-পয়সা,সম্মান,জমি-জমা।এসব জিনিস মেয়েরা শুধু *দে বেড়ায় তা নয় তাদের পরিবার পরিজন এগুলার জন্য আরো উন্মুখ হয়ে থাকে। বাঙ্গালী তো,অলয়েজ হট ফর ফা**।কিরে ধ্রুব চ-বর্গীয় গালি গুলাতে স্টার চিহ্ন দিচ্ছোস কেন?আজব।ইংলিশ এফ দিয়ে যে গালিটা ওইটাও এরকম সেন্সর করে দিলি? আরে ভাই ফেসবুক আর ব্লগেই তো দিবি।সেন্সর এর কি আছে?যারা পড়বে তাদের সবার তো “চুদে আমায় দিলি পাগল করে”, “ফেসবুক চটি”, “জীবন এখন ১৮+”, “যৌবনের জ্বালা বড় জ্বালা”, “নায়লা নাইম”থেকে শুরু করে বিদেশী সকল পর্নস্টারদের পেজে লাইক দেওয়া আছে।ওরা কেউ মাইন্ড করবেনা।করে দে আনসেন্সরড।নিজের তৈরি চরিত্রের মতন হয়ে যা দুঃসাহসী।

হইছে,বিবেক এবার অফ যাও,বাচাল কোথাকার।বড় বেশি বল।
-কি করবো?তোমার টিচার রা এত বাইক্কা হইলে আর কি করতাম।তোমারেই জ্ঞান দেই।
-আমারে জ্ঞান দেওয়া লাগবেনা।তুমি আমার বিবেক।আমারই অংশ।আমি যা ভাবি তুমি সেটাই।বেশি ভাব ধইরো না।
-হইছে বুঝছি।
-এখন চুপ যা।ক্লাস শেষ হইতাছে।অফ যা।
ক্লাস শেষ হলো।বন্ধু তোজো এসে বলল “ওই বীচে যামু।তোর ক্যামেরাডা নিয়া আয়”।
-আমার ভাংগা ক্যামেরা দিয়া কি করবি।
-বলছি আনতে,নিয়া আসবি,যা।
-সাথে থাকে,সবসময়।চিন্তা করিস না।
তোজো বন্ধু আমার বড় নেতা ছিল।এখন বেসিকালি রিহ্যাবে আছে।সরকারী দল করত।নিজের দলের পোলাপান যেদিন মারতে আসছিলো সেই দিন আমার ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো।তোজো বলেছিল “তোকেই একমাত্র ক্লোজ মনে করি।বুঝদার মনে করি।তাই তোর কাছে আসা”।আমি উত্তরে বলেছিলাম “ভুল।ক্যাম্পাসে একমাত্র আমিই হলে থাকিনা।তাই আমার কাছে আসছোস।এটা স্বীকার করতে কি সমস্যা?”
তোজো হেসে দিয়ে বলে “হ্যা,নিজের জীবনের তাগিদে আমিও স্বার্থপর। তো কি থাকতে দিবি?”
আমি রিকশা ডেকে বললাম “উঠে পড়”।
তো সেই থেকে তোজো সব ছেড়ে দেয়।আমাদের ও কাছের হয়ে যায়।সব বলতে আসলেই সব।মদ,গাঞ্জা,ইয়াবা,হেরোইন,মেয়ে সবকিছুই।সেই থেকে কোন রাজনৈতিক দলের অফিস রুম রাতের বেয়ায় হয়ে উঠে গ্রুপ সেক্সের সর্গ, হলের কোন মেয়ের কাছে ইয়াবা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় কোথায় স্বাধীনভাবে যৌনকার্য সম্পন্ন করা যায় সবই জানা হয়ে যায়।অবাক লাগতো না।মেয়েরা মাদক খেতেই পারে,তারাও তো মানুষ তাই না?শুধু ছেলেরা মাদক নিচ্ছে এইটা কেন ট্রেন্ডি হবে?সবাই মিলে চলেন মাদক নেই। এমন বিজ্ঞাপন হলে খারাপ কি?

“হিরো গাঞ্জা”
একলা কেন খাবেন,পরিবার নিয়ে খান
সম্পূর্ন পারিবারিক গাঞ্জা
কিংবা “দাদা-নাতি সবার জন্য রুস্তম ইয়াবা” অথবা “নাবিলা ফেন্সিডিলেই সবার জন্যেই সেরা ডিল;৮-৮০ বছরের মাঝের সবার জন্য”।

সে যাই হোক,এই গ্রুপের সাথে আসলে কোথাও যাইতে মন চায় না।এরা সবাই খুব ভালো।কিন্তু কথা হইলো গিয়াই সবাই মোবাইল টিপবে নাহয় আলাদা হয়ে বসে সিগ্রেটের ধোয়া ছাড়বে কিংবা একদল বসে মদ গিলবে।দল হিসেবে একসাথে কোথাও গিয়ে খন্ডে খন্ডে ভাগ হওয়ার মতন বিরক্তির মতন কিছু নাই।আবার আরেক দল থাকবে মেয়েদের পিছে পিছে।তাদের যেনো জন্মই হয়েছে মা-বোন জাতির সেবার উদ্দেশ্যে।এরাই সবচে স্মার্ট কিন্তু মনের দিক দিয়ে অদ্ভুত রকমের পিছে চলার প্রবনতা।আর কেউ নাই তাদের এই মা বোন জাতি ছাড়া।ওদের ডাকে যেকোন মূহুর্তে যে কোন কিছু করতে পারে তারা।মহিলা ছাড়া ছেলে কিংবা হিজরা বন্ধুদের জন্য সময় নেই তাদের।রুহির কথা মনে হল। ওর আশপাশেই এরকম মানুষের ভীড় টাই থাকতো বেশি ।যাত্রার শুরুতেই ওর কথা মাথায় আসলো যেহেতু দিলাম ফোন।সম্পর্কটা উষনতা নেই বললেই চলে কিন্তু মনটা আসলে মানেনা।গত ৩ দিন ধরেই যোগাযোগ নেই।

ফোন দিলাম।রিং বাজছে।রিসিভ হল।
-হ্যালো।রুহি?
-তুমি ফোন দিছো কেন?কি চাও?
-এত হোস্টাইল কেন?
-হোস্টাইলের কি দেখছো?তোমাকে আমি খুন করব।শুধু তোমাকে না তোমার ১৪ গুষ্টিরেও করবো
-কি হইছে বলোতো?
-তোমার বোনের কোন খবর রাখো?
-কেন কি হইছে?
-শুধু ভালো জায়গায় পড়লে,ভালো রেজাল্ট থাকলেই সব হয় না।চরিত্র থাকা লাগে।
-মানে?
-ও তুমি জানো না?
-না।
-আমাদের হলে আজকে রি রি পড়ে গেছে।হায় হায় করতেছে সব।আপু এইটা কি করলো?
-মানে?
-সঞ্জয় ভাইয়ার কথা তোমাকে বলছিলাম।ওইযে ভাইয়া তার গার্লফেন্ডকে ১০০০টা গোলাপ দিছিল,রিলেশনের ১০০০ তম দিনে।
-[চুপ থাকলাম অল্পকিছুক্ষন]হ্যা।
-উনি তো তোমার বোনদের ব্যাচে।
-হুম
-উনি উনার গার্লফ্রেন্ড রে একটা খবর দিছেন।সেইডা নাও আগে।
-বলতে সমস্যা আছে তোমার?
-হ্যা,আছে।রুচিতে বাধে।তোমার সাথে কথা বলতে রুচিতে আটকায়।কেমন ভাই তুমি,কেমন পরিবার তোমার?তোমার কি লজ্জা নেই?আমার হলের সবাই তোমাকে চিনে এবং আমাদের ব্যাপারটা জানে।আমার এখানে মরে যেতে ইচ্ছা করতেছে।লজ্জায় আমি রুম থেকে বের হচ্ছিনা।তুমি নিজে কি?আর এখন?আর কি বলবো?তুমি মরে যাও বুঝছো?
-[উত্তেজিত গলায়] আমার কি ভাল্লাগে খুব?আমার নিজের বোন বলে কথা।
-চুপ কর।করার মতন কিছু হইলে তুমি কিছু করতা।তোমার ভেড়া বাপ-মা কি করেন?ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় কাজ শেষ?ও ভুল বললাম তোমার বাপকে তো তোমরাই শেষ করে দিছো।আর তুমি তো আর কি বলতাম?পার্সোনালিটি-এচিভমেন্ট বলতে নাই কিছুই।
-[দীর্ঘশ্বাস ফেলে]জানি আমাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য,আমাকে নিজের প্রতি সজাগ করে তোলার জন্য এতকিছু বলা।তবে এরকম বলায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার চেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি বেশি।
-পারো তো একটাই কাজ।লুজার।আর কথা বলবানা।
এই কথা বলার পরেও আমরা দুইজনেই ফোন টা ধরে রাখলাম।প্রায় ৪৫ সেকেন্ড এভাবেই কাটলো।এরপর আমি বললাম “রাখি” তারপর ফোন লাইন কাটলো।হায়রে অবাধ্য-অরাধ্য ভালোবাসা।জীবন কাটবে এভাবেই।না পারা যাবে টিকিয়ে রাখতে,না পারা যাবে ছেড়ে দিতে। বাসার কথা,বোনের কথা ভুলে খুবই টিপিক্যাল আত্মচিন্তায় চিন্তিত টিপিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ন্যায় বন্ধুদের সাথে মিলে রওনা হলাম সাগর পাড়ে।মোবাইল সাইলেন্ট হয়ে গেল।বাস্তবতা থেকে আবারো পালিয়ে গেলাম।কি আর হবে কয়েক ঘন্টায়।তাই না?
বড় আপুর সাথে আগেও কথা হইছে উনার সম্পর্ক নিয়ে।কি আর হবে উনার?খুব বেশি হলে হয়তোবা আবারো একসাথে দেখা গেছে উনাদেরকে।সেটা নিয়ে কানাঘুষা।প্রাইভেটের ছেলের সাথে কেন ঘুরে।ছি ছি ছি।সিরিয়াস আর কি হতে পারে?নিজের বোনের উপর তো এতটুকু বিশ্বাস আছে তাই না?আর রুহী সবসময় বেশি বেশি করে।সব বাদ।আমি এখন হারিয়ে যেতে চাই সবার সাথে,সাগর পাড়ে।
ESCAPISM_RULEZ


[এক মাস ও ৭ দিন পর]
ঘরটা ছোট।চিপা টাইপের।সারা ঘরে কেমন ভ্যাপসা টাইপের গরম। আবার ঘরের বাতাস জুড়ে কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ।মল-মুত্র-ঘাম মিশ্রিত প্রকট একটা দুর্গন্ধ।নাক উলটে যাচ্ছে শরীফের।সে একবার উপরে আরেকবার নিচে আরেকবার ডানে আরেকবার বামে তাকাচ্ছে।এরপর আবার নিচের দিকে তাকিয়ে এক বৃদ্ধ তেলাপোকা চলাচল লক্ষ করছে।হাটার ধরন টা দেখে বলছে।তেলাপোকাটা আমাদের দেশের পেডোফেলিক বুড়াদের মতন। ওই যে মোড়ে বইসা থেকে কম বয়স্ক মেয়েদের কাপড়ের উপর দিয়ে ভাজ গুলা খেয়াল করতে থাকে ওই টাইপের বুড়োদের মতন হাটা।তেলাপোকাটা আরেকটু সামনে গিয়ে আরেকটা মরা তেলাপোকার উপর হামলে পড়ল এবং তাকে কামড়ে খাওয়া শুরু করল।শরীফ অবাক হলো না।বাংলাদেশী তেলাপোকা বাংলাদেশী আচরন করতেছে এতে অবাক হবার কি আছে?

ঘরটাতে মানুষ ঢুকল এইবার।দুইজন একইসাথে আসলো।একজন সাদা পোশাক পড়া,আরেকজন একটা লাল-কালো শার্ট পড়ে ঢুকলো।
-আপনার নাম শরীফ?
-জী
-কমেডিয়ানের ক্লাস মেট?
-হুম।
-ও যে এভাবে আত্মহত্যা করবে এটা আগে বলছিল?
-জী মাইক দিয়ে এনাউন্স করছিল।ডিপার্টমেন্টের ছাদে উঠে।
শরীফ এই কথা বলার পর গোয়েন্দা দুইজন নিজেদের দিকে তাকালো।ও আচ্ছা পাঠক আমি মনে হয় বলিনি আমি আত্মহত্যা করেছি।এখনো অবশ্য মরতে পারিনি।হাসপাতালে শুইয়া আছি।কি যে উল্টাপাল্ট হইলো বুঝে উঠতে পারছিনা।বেচে থাকার কথা মোটেও না।কি থেকে যে কি হইল বুঝতে পারছিনা।এতক্ষন ধ্রুব আপনাদের কে স্রেফ থানার ভিতরে জিজ্ঞাসাবাদের কক্ষের ভিতর থেকে ধারা বিবরনী দিয়ে আসছে।শরীফ ছেলেটা আমার ক্লাসমেট ওইদিন আমার লাস্ট শো তে উপস্থিত ছিল।এজন্য ওরে উইটনেস হিসাবে প্রশ্ন করবার জন্য নিয়ে আসছে।তেমন কিছু না।
পুলিশের লোক দুইজন তাকিয়ে থাকল শরীফের দিকে কিছুক্ষন,বুঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে ব্যাপার টা।শরীফ ওদেরকে বোকা বানাচ্ছে কি না বুঝার চেষ্টা করছে।
-আপনি কি আমাদের বোকা বানাচ্ছেন?
-না
-আপনার চোখ দেখি
-দেখেন
-[ঠাস করে চড় মেরে]শালা গাজাটি।এখানে ঢুকার আগেও গাছ খাইয়া ঢুকছোস,হারামজাদা।
-[নিজেকে সামলে নিয়ে]এতক্ষনে পুলিশের মতন আচরন করতেছেন।বেতন ভাতা আন্দোলনের কথা মনে পড়ে গেল।লাঠিপেটা খাইছিলাম।বেশি অস্থির ছিলো।সেসময় ডিএসএলআর আর ফেসবুকে সেলফির প্রচলন একেবারেই ছিলো না।সো আসলে খেত একটা আন্দোলন ছিল সেইটা।এখন তো বাংলার ঘরে ঘরে গাই ফক্স।ভি ফর ভেনডেটা সিনেমা সবার মুখস্ত কিন্তু কেউ অরিজিনাল রাইটার এলান মুর রে কেউ চেনার দরকার মনে করে না।সবাই কুল পিপল।আন্দোলন মানেই সাদা কালো প্রো-পিক, ব্যানার নিয়া পিছনে ঘোলা ঘোলা করা ছবি আর সেলফি।এই ছবি গুলাই বিভিন্ন ফটোগ্রাফি গ্রুপে দিয়া লাইক কুড়ানো এই না হল বর্তমান বাংগালির আন্দোলন।শাহবাগ থেকেই তো দেখতেছি।
-[ঠাস করে চড় মারার আওয়াজ] হালায় আসলেই টাল।প্রশ্নের উত্তর দে।
-[রাগত স্বরে] বললাম তো।বিসিএস পইড়া আইছেন কথা বুঝেন না।
-[ঠান্ডা গলায়]সিরিয়াস?
-হা।পাবলিসিটি স্টান্ট হিসাবে এই কাম টা সে করছে।ডিপার্টমেন্টের ছাদে উইঠা বলতেছিল “প্রানপ্রিয় বন্ধু বান্ধবী ও সম্মানিত শিক্ষক বৃন্দ আমি আগামী সেপ্টেম্বর ১৩ তারিখ সুইসাইড করবো বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে সবাই দেখতে আসবেন কিন্ত।নাস্তার প্যাকেটের ব্যবস্থা থাকবে”।ওর সুইসাডের দিনে এতো ভিড় কেন হইছিলো বুঝতেছেন না?বিসিএস কইরা পুলিশ হইছেন এতটুকুও কি মাথায় নাই?নাকি বাপে গাছ থেকে পাক বাহিনীর দিকে ঢিল মাইরা মুক্তিযোদ্ধার যে সার্টিফিকেট টা পাইছিলো সেইডা বেচে চাকরী নিছেন?
এতক্ষন সাদা পোশাক পড়া অফিসার চুপ করে ছিলেন।উনি উঠে দাড়ালেন।শরীফরে কলার ধরে উঠিয়ে ফেললেন।
-[ফিসফিস করে] কুত্তার বাচ্চা তোরে সেবা করতাছি নূন্যতম টাকায় ভাল্লাগতেসেনা না?বিসিএস এর কথা যে কইলি জানোস তো তোকে ইচ্ছা করলেই র‍্যাবের কাছে দিয়া কমু হালায় জংগী।দাড়িও আছে।ক্রসফায়ার মারো।
-[ভীত স্বরে]না মানে কেন করবেন?এখন কি আর ক্রসফায়ার আছে?
-ক্রসফায়ার বানামু তোর জন্য,খানকা হালা।কথা কম কইয়া প্রশ্নের উত্তর দে।
শরীফ বন্ধু আমার ফার্স্ট ইয়ার থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কিন্তু প্রতি সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনের আগের রাতে গাজার আসর বসায়।আর কোথাও বেড়াতে গেলে ওর কাছেই মদের বোতল থাকে।অদ্ভুত এক চরিত্র তাই না?অবাক হওয়ার কিছু নাই।এরকম শয়ে শয়ে ছেলেমেয়ে দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি।ব্যাপার না।আমার বাবা বলেছিলেন একবার “ইউনিভার্সিটি শব্দটা ইউনিভার্সাল এর সাথে সম্পর্কিত।এইটা একটা ইউনিভার্সাল জায়গা।সব ধরনের চিড়িয়া আছে”। আমি কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।আমি নিজেই তো এর মাঝে একজন তাই না?মানে কয়জন পারে নিজের সুইসাইডের ঘোষনা দিতে,তাই না।এইরে,আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে শরীফরে তো ছাইড়া দিলো। কি করবো লেখক হালায় ঘুম যাচ্ছে,আর কি এক ন্যার‍্যাটিভ ধরছে।ঘোড়ার ডিম
-এই ধ্রুব,এই হালা মোটা উঠ।
-আরে সারা রাত ঘুমাই নাই।
-খালি এক্সকিউজ তোর।
-জীবন অনেক কঠিন রে।
-*ক ইউ এন্ড *ক ইউর জীবন।এগুলা কেউ *দে না।পাঠক রা বইসা আছে,উঠ শালা।
যাই হোক,এইবার রুমে ঢুকল আমার ক্লাসমেট প্রিয়তি।হ্যা,ওই যে বান্ধবী।
পুলিশের লোক গুলা তার দিকে তাকালো।ইশারা দিলো বসতে।
-বসেন
-ধন্যবাদ।
-কমেডিয়ান নাকি আপনার বেশ কাছের বন্ধু?
-বন্ধু,বলা ঠিক না।ক্লাসমেট।
-ওর ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে কিন্তু আপনি আছেন।
-হ্যা,ওইটাতো গ্রুপ ছবি।
-আপনার প্রো-পিক ও তো ওর তুলে দেওয়া।
-হ্যা,তো?ওর ক্যামেরা আছে তুলে দিবেনা?আর আমাদের তুলে দিলে তো ওর নিজেরি এক
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ দারুন সম্ভাবনাময় লেখা।
রুহুল আমীন রাজু অনেক ভাল লাগলো গল্পটি । ( আমার লেখা ' মেকআপ করা বৃষ্টি ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রন রইল )
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমৎকার হয়েছে.... অনেক অনেক শুভকামনা, ভোট ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) উফ্ : শেষ পর্যন্ত পড়তে সক্ষম হয়েছি। অনেক কিছু বুঝেছি, যা মন্তব্যে বলে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে না। শুভেচ্ছা...
মিলন বনিক দীর্ঘ গল্প...তবুও টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো মুন্সিয়ানা ছিলো লেখকের...ধন্যবাদ এবং শুভকামনা...
মোঃমোকারম হোসেন বেশ ভাল লিখেছেন আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল
প্রতীক অনেক বড় কিন্তু ভীষণ ভালো একখানি গল্প।

০৮ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪