সিঁকি মানুষ

অর্জন (এপ্রিল ২০২৩)

মোঃ মোখলেছুর রহমান
  • 0
  • ৫৪
রফিক সাহেব একজন সিঁকি মানুষ। মাঝে মাঝে আধুলিও হয়। কখনো সখনো বারো আনাও হয় । কিন্তু একটাকা হতে পারে না, মানে ষোলআনা।
কেনো হতে পারেনা কিছু কিছু সে সেটা জানে; আবার পরক্ষণে বুঝে উঠতে পারেনা, তখন তার ভিতরে একটা দ্বিত্ব কাজ করে। দর্শনে অনার্স করা মানুষ তিনি। দর্শনকে তিনি যখন প্রদর্শন করেন তখন অনেকের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। মুখ বন্ধ থাকলেও কথা কিছু বন্ধ থাকেনা। ঘুড়ির প্যাচে যেমন ঘুড়ি কেটে যায় ; তখন কথার প্যাচে কথাও কেটে যায়। মানুষ তখন তাকে পাগল ভাবে। হাসে।  মুখ টিপে হাসে।

বৃষ্টির দিন এলে রফিক সাহেবের দার্শনিকতা বেড়ে যায়। দু'তালার বেলকনিতে বসে বৃষ্টি পড়া দেখেন। একবার উপরে একবার নীচে তাকান। আবার চশমার কাঁচ ঘষতে ঘষতে নাকের উপর সেটে বসান। বৃষ্টিরদিন কেনো ভালোলাগে তার একটা ঢাড্ডা মনের  আকাশে উঁকি মারে। দিকে দিকে পূর্বমেঘের ছড়াছড়ি।  ভাবতে ভাবতে জিনিয়ার মুখ ভেষে উঠে। জিনিয়াকে নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে তাঁর খুব ভালো লাগে।

গত বছর কলেজ থেকে অবসর নিয়েছেন। অবশ্য অবসর নেননি, অবসর দেয়া হয়েছে। হাফ-বেতনে নয় ফুল-বেতনে। মানে বসে বসে ফুল বেতন পান।  এমন অবসরেরও একটা ফিরিস্তি আছে।

প্রিয় বিড়াল জিনিয়া। জিনিয়ার নামে মামলা করকে গিয়েছিলেন থানায়। কেইস ফাইলও করেছেন। যখন দারোগা জানলো জিনিয়া তাঁর বেড়ালের নাম, তখন তিনি শুধু একটুখানি হাসলেন, আর রফিক সাহেব গেলেন রেগে। শুধু রেগে নয়, তেলেবেগুনে। রফিক সাহেব বার বার বুঝাচ্ছেন যে, দর্শনের সবকটি যুক্তি ফেইল। "দুধের বাটি উল্টে ফেলেছে"।  অথচ এ সময় দুধের বাটি উল্টে পড়ার কথা নয়, কারন তখন দুপুর ; আর দুপুরে ইঁদুর বের হয়না। দারোগা নথি করতে বাধ্য এবং করেছেরও।  জিনিয়া একন থানা হাজতে।

জিনিয়ার আরেকটি বদ অভ্যাস আছে, সেটি দোষ না গুণ ঠিক বুঝা যায়না। বিষয়টি আপেক্ষিক; কখনও দোষ হয়ে যায় কখনও গুণ হয়ে যায়। সেটা হলো তার মিঁউমিঁউ। রফিক সাহেব হয়তো খেতে বসেছেন তখন মিঁউমিঁউটা খিদের; কিন্তু যখন সবেমাত্র কলেজ থেকে ফিরেছেন তখন মিঁউমিঁউটা কি? রফিক সাহেবের মেজাজটা উঠানামা করে। কখনও সিকিতে কখনও আধুলিতে।

রফিক সাহেব  হোমিওপ্যাথি একজন ভালো ডাক্তারও। দর্শনের সাথে হোমিওপ্যাথির একটা নিগূঢ় সম্পর্ক আছে রফিক সাহেবও এটা জানেন। ডাঃ রতনদে তার শক্ষাগুরু আবার বন্ধুও। প্রথমদিন বিস্তর হাসাহাসি হয়েছিল  রতন দে'র চেম্বারে। রতন দে'র  কথায়- "যার নেই কোন গতি, সে করে হোমিওপ্যাথি"। পরক্ষণেই কথাটা ঘুরিয়ে বললেন- "যার নেই কোন গতি সে খায় হোমিওপ্যাথি"। প্রথম কথাটি হাসাহাসির হলেও পরের কথাটির ঢেড় গুরুত্ব রয়েছে।

মিসেস জেরিন রফিক সাহেবকে না প্রফেসর না ডাক্তার কোনটাই ভাবেননা। বড়জোড় সিঁকিমানুষ ভাবেন। এর বৈধ কারন থাকলেও থাকতে পারে। চলুন মিসেস জেরিনের মুখ থেকে কিছু শুনি।

" সেদিন কী একটা কাজে উপজেলাসদরে গিয়েছিল। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই আমাকে কাছে ডেকে বলে, বউ একটা হিসাব মিলাতে পারছিনা। আমি বললাম কী হয়েছে? তিনি বলতে শুরু করলেন, ' দুপুর ২টা লাঞ্চ টাইম,  অফিসের বারান্দায় বসে আছি।  অফিসের আয়া ভোজনশৈলির উচ্ছিষ্ট অংশগুলো বাইরে ফেলল। কোত্থেকে একটা কুকুর এসে তা খেতে শুরু করলো। ততক্ষণে আরও একটা কুকুর এসে তার খেতে শুরু করলো। মজার ব্যাপার হলো আগের কুকুরটি কোন বাঁধা দিলনা; পার্শ্বে খানিকটা সরে গিয়ে তাকে খেতে সুবিধে করে দিলো।  এখন কথা হলো কিন্তু কেনো? মানুষতো এরকম করেনা।
তবে কী-
কুকুর থেকে মানুষের বুদ্ধি বেশি
নাকি কুকুর থেকে মানুষের বুদ্ধি কম?"

জেরিন সেদিন ঠোঁটদুটো ত্রিভূজের মত ভাঁজ করে বলে, এইজন্যই মানুষ তোমাকে পাগল বলে। আর আমি বলি সিঁকি মানুুষ। রফিক সাহেবের ধাতে রাগ নেই, সেদিনও রাগ করেনি।

মাঝে মাঝে রফিক সাহেবের ভিতরের মানুষটার মনে মননে বাড়ে কমে,  মানে থার্মোমিটারের পারদের মতো উঠানামা করে। যেমন সকালে এক রকম, বিকালে এক রকম।  আবার রাতে আরেক রকম। এ ছড়াও আরও অনেক প্রকার হয়। বাসায় একরকম, কর্মস্থলে একরকম,  আবার  মঞ্চে এক রকম গ্যালারীতে আরেক রকম।  আরও.....। তবে বউয়ের সিঁকি মানুষের কাছে সব ফেল। সেখানে তিনি সিঁকি মানুষই।

গত রোববার একটি রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত ছিলেন রফিক সাহেব। নেতাদের ভাষনে তিনি বারো আনা মানুষ পরিনত হলেন।  বিকেলে বাসায় এলে বৌ বাজারের থলে ধরিয়ে দিলেন।মাস শেষ  বেতনের টাকাতো তলানিতে  সঙ্গে সঙ্গ সিঁকি মানুষে নেমে এলেন।

সুপ্রিয় ভার্যাদের একটা বাতিক আছে। তাদের দৃষ্টিতে সসীমের স্থান নেই ; অসীমও মানেননা; তবে তাদের চাই। চাই এবং পাই এ দু'টোর বিস্তর স্তূপে তাদের ভিত্তি। সংসার গাড়ি চালকও তারাই,
স্বামীরা শুধুই বলদ।

মেয়েদের শত্রু মেয়েরাই। ইতিহাসে এর প্রমাণের শেষ নেই। গ্রিকপুরানে এরিস ঝগড়ার দেবী। এথেনা হেরা ও আফ্রেদিতি রূপের দৌড় এরিসের কারসাজি। সখানে মিসেস জেরিনই বা কেনো বসে থাকবে। শ্যালিকার আবদার পূরণ করণই আজ রফিক  সাহেবের ট্রয় নগরী আজ হুমকির মুখে।

২||

রতন দে পালসেটিলার যাবতীয় রোগীচিত্র বর্ননা করলো। রফিক সাহেব লাফদিয়ে বরে উঠলেন-
> আমার গিন্নি তাহলে পালসের রোগী
> কেমন করে বুঝলেন?
> ঐ যে ছিঁচকাদুনে। নাইতে কাঁদে, খাইতে কাঁদে ; কারণে কাঁদে, অকারণে কাঁদে, কেঁদেই খালাস।
> বেশতো দেবতার আর্শীবাদ
> পালসের পর সাইলিশিয়া কিন্তু ভালো খাটে
> গিন্নির পর তাহলে শ্যালিকা কারণ শ্যালিকা সাইলিসিয়ার রোগী

দু'জনে হাসতে থাকে। এর মধ্যেই জেরিনের ফোন।
মার্কেটে যাওয়ার কথা পূণঃ স্মরণ করিয়ে দেয়।

জিনিষের দাম বেশি হলেই সেটি ভালো জিনিষ। এ দর্শনটি বেশিরভাগ বউদের জন্যই প্রযোজ্য, জেরিনও এর বাইরে নয়। আর স্বামীদেরও একটি  অভ্যেস আছে,  তা হল জিনিষের দাম বেশি বলা। আজ মার্কেটে সেটিই প্রমাণ হবে।

রফিক সাহেব রিক্সাযোগে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলেন। দরজা খুলতেই বউ অবাক তোমার মোটরবাইক! মোটরবাইক মানে! বাইকতো তোমার সামনেই বাসায় রেখে গেলাম। কেনো, তুমিনা এ মোরগগুলো কিনে দিয়ে এক ছাত্রকে বাইক নিয়ে যেতে বলেছ।

রফিক সাহেবের মনে পড়ে গেলো  'ইত্যাদির' বিখ্যাত চুরির কৌতুক।  ভাগ্যিস বউ সেদিন রাগ করে টিভি দেখেনি, তাহলে চোরের কপালে আজ কী জুটতো কে জানে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সাবিনা ইয়াছমিন শুভ কামনা প্রিয়কবি।
ফয়জুল মহী দারুণ অনুভবের প্রকাশ । শুভ কামনা রইলো ।
কষ্টকরে পড়েছেন এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। হ্যাঁ রফিক সাহেব তো একজন দার্শনিক। দার্শনিকদের জীবনে মাঝে মধ্যে নিয়মের বাইরে কিছু অযাচিত ঘটনা ঘটে থাকে। বিড়ালের নামে মামলা, কুকুরের খাবাব ভাগাভাগী সত্য ঘটনা নির্ভর। ## সব শেষে একজন দার্শনিক চরিত্রের সুখদুখ বিবৃত হয়েছে। তাঁর যা অর্জন মানুষকে ভাবায়। ধন্যবাদ প্রিয়জন।
বিষণ্ন সুমন কঠিন জীবন দর্শনে মোড়া লেখা। ঠিক গল্প হলোনা বোধকরি। পড়ার পর পাঠক মাথা চুলকাতে বাধ্য।
কষ্টকরে পড়েছেন এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। হ্যাঁ রফিক সাহেব তো একজন দার্শনিক। দার্শনিকদের জীবনে মাঝে মধ্যে নিয়মের বাইরে কিছু অযাচিত ঘটনা ঘটে থাকে। বিড়ালের নামে মামলা, কুকুরের খাবাব ভাগাভাগী সত্য ঘটনা নির্ভর। ## সব শেষে একজন দার্শনিক চরিত্রের সুখদুখ বিবৃত হয়েছে। তাঁর যা অর্জন মানুষকে ভাবায়। ধন্যবাদ প্রিয়জন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মানুষ মনুষত্বের গুণ নিয়ে জন্মায়না। নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তা অর্জন করে। রফিক সাহেবে চরিত্রে তা বিবৃত।

১৯ মার্চ - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৫৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪