তাঁহাকে দেখিবার মাত্রই আমার বক্ষের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমানে একটি ধাক্কা আসিয়া লাগিল। বুঝিতে পারিয়াছিলাম তাহার হৃদয় বসতে আমার উড়ন্ত মন বাসা বাধিয়াছে। সেটা তাহাকে বুঝাইতে পারিতেছিলাম না। কলেজের গেইট অতিক্রম করিতেই ডানহস্তপাশে চটপটি ওয়ালার চামচ এর সংক্ষিপ্ত শব্দে আমার চক্ষু তার দিকে লক্ষ্য করিতে বাধ্য করিয়াছে। দেখিতে পাইলাম চটপটিওয়ালা খুবই সুক্ষ্ণভাবে তার কার্য সম্পন্ন করিয়া যাইতেছে। কলেজে আসিয়া তাঁহার চটপটি না গিলিয়া কেহ বাড়ি ফিরে নাই, বিশেষ করে রমণীরা। কয়েকজনকে দেখিলাম অর্ডার দিয়া বৃক্ষের শিখরে বসিয়া পরেছে। আবার অনেকে আসিয়া তাহার বিল পরিশোধ করিয়া, মনের সুখে গান ধরিয়া বান্ধুবীর কনিষ্ঠ আঙ্গুলে আঙ্গুল ঠেকিয়া কলেজের গেইট পার হইতেছে। ইহা সচারচর ঘটিয়া থাকে। তা শুনিয়া চক্ষু কপাল অব্দি উঠানোর কোন দরকার পরিবেনা। চটপটিওয়ালার চতুর্দিকে ছোট-বড় অনেক বৃক্ষে সাঁরি দাড়িয়ে আছে। এমন এক বড় বৃক্ষের বক্ষে আমার উড়ন্ত মনের মানুষটি পিঠ হেলে দিয়ে বামহস্তে চটপটির থালা আর ডানহস্তে চামচ নিয়ে কয়েকজন রমণীর সাথে গল্প করিতে করিতে খাইয়া চলিছে। আমি আনন্দ মনে তাহার সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াইলাম। সে হঠাৎ করিয়া আমাকে সম্মুখে দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়া রহিল! কিছু বলিবার চেষ্টা করিয়াও বলিতে তাঁহার সক্ষম হইল না। সে বুঝিতে পারিলনা আমি তাঁহার সম্মুখে আচমকা দাঁড়িয়ে যাইব। আমি তাঁহাকে শান্ত করিবার চেষ্টা করিতে থাকিলাম। কিন্তু বৃথা হইলাম, তাহার সুমধুর কণ্ঠনালি দিয়ে কোন শব্দ আমার জন্য বাহির হইতেছেনা। আমি ক্ষণকাল দাঁড়িয়ে থাকিয়া কোন জবাব না পাইয়া ফিরিয়ে আসিতে চাহিলে আমাকে ভয়েভরা কন্ঠে ডাকিয়া কহিল, “আপনার নামখানা আমায় বলিয়া যাইবেন?” আমি খুশিতে আত্মহারা হইয়া আমার মন লাফাইতে আরম্ভ করিল। এত খুশি কোথা হতে আসিয়া আমার উপর ভর করিলো; আমি নিতান্তই বুঝিতে সক্ষম হইলাম। আমি অবলার নিকট দু’কদম ফেলিয়া ক্ষাণিক দূরুত্ব বজায় রাখিয়া দাঁড়াইলাম, আর খুব ধীরগতিতেই আমার নামখানা তাঁহার কাছে পেশ করিলাম। সে মাথা নাড়িয়ে কিছু একটি বুঝাতে চাইলেও আমি ইঙ্গিতের ভাষা বুঝিনাই বলে বুঝিতে পারিলাম না। ইহাতে আমার হতাশার বোঝা বাড়িয়ে গেল। তাঁহাকে চিনতে ভুল করিনাই আমি! দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিনকালে তাঁহাকে আমি দেখিয়াছি পরীক্ষার কক্ষে। একটি বড়মাপের বোরখা পরিধান করিয়া আমার বাম পাশের সাড়িতে চতুর্থ নাম্বার বেঞ্চির ডান পাশে বসিয়াছে। শুধু অক্ষি দেখে দেখে ষষ্ঠ পরীক্ষা সমাপ্তি হইল আমার। আমার আফসোসটা রহিয়া গেল। তাঁহার মুখকুণ্ডল কি আর দেখা হইবেনা? ইহা ভাবিতে ভাবিতে পুনরায় তাঁহার দিকে অক্ষি ফেরালাম! শুধু আমি একাই দেখিছি বলিলে একপক্ষ হইয়া যায়। আমি যখনি তাঁহার দিকে লেখা বন্ধ করিয়া তাঁকাইতাম, ঠিক সেই প্রহরে তার লুঁকানো নয়নের চাহনি আমার অক্ষির নিকট ধরা পরিত। সঙ্গে সঙ্গে আবার মুখমন্ডল ফিরিয়া নিত। আমাকে বুঝাইতে দিত না। বাসায় ফিরিয়া তাঁহাকে নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থাকিতাম। তাহাকে নিয়ে ভাবিলে মনের মাঝে ভালো লাগার স্বপ্নের মুহূর্ত আসিয়া দেখা দিত। আর একটি অংক কসিতে থাকিতাম অদ্য কে কাহার দিকে কতবার পলক ফেলিয়াছে। অংকের হিসাবখানা কখনওই মিলিত হইতনা। অবলার বিচিত্র রঙ্গের বোরখা আমার সৃতিতে গেঁথে গিয়েছে। দীর্ঘ দুই ক্রোশ দূর হতেও আমার অবলাকে আমি চিনিতে পারিব। ইহা এমনভাবে আমার আয়তচিত্র হইয়াছে। আর চক্ষুর কথা নাহি কহিলাম। তবে এইটুকু কহিতে চাই তাহার চক্ষু আমার চক্ষুর নিকট এমনভাবে ধরা দিয়েছে যাহা আমি ইচ্ছা করিলেও কখনো ভুলিতে পারিবনা। আর শেষ অব্দিও ভুলিবেনা। সপ্তম কিম্বা শেষ পরীক্ষা শুধু হইল! পরীক্ষা কক্ষে ঢুকিয়া অবলাকে অন্বেষণ করিতে লাগিলাম, দেখিলাম আগের ন্যায় বোরখা পড়িয়া আছে। খুবই হতাশায় স্ব-আসনে বসিয়া পরিলাম। ঘন্টা অব্দি পরীক্ষা চলিলে মন সাড়া দিল তাহার দিকে লক্ষ্য করিতে, যখনি অক্ষি তাঁক করিয়াছি তখনই আমি আনন্দে ভাসিতে থাকিলাম। আমার শেষ ইচ্ছা পূরণ হইল। যাহাকে সর্বদা মুখশের আঁড়ালে দেখিতে দেখিতে হঠাৎ করিয়া মুখশবিহীন দেখা মিলিবে তখন আপনার কি অনুভূতি ফীল করিয়া লইবেন তাহা আপনিই ভালই বুঝিবেন। আমার মুখ বলিবার জন্য কোন ভাষার শব্দ খোঁজিয়া পাইছে না। কলেজে ঠিক সাত আট মাস পর গিয়া তাঁহাকে দেখিবার সৌভাগ্য আমার হইয়াছে, আমি প্রথমে অবলার বোরখা দেখিয়া সামনে বাড়িয়া চক্ষুর মিলিয়া আমি চিনে যাই যে, সেই আমার উদাস মনের অবলা। তাঁহার নাম আমি সেই প্রথম দেখাতেই জানিয়া নিয়েছি। তার সংক্ষিপ্ত নামসহ। তাঁহাকে দেখিলে বড় আপন মনে হয়! মনে হয় আমাদের অনেক বছরের চেনাজানা। প্রেমে পরিলে মনে হয় ইহাই ঘটে থাকে সবার জীবনে। আর একটি কথা খানিক না মানলেও সত্যি যে, রূপসী ললনা দেখিলেই আপন আপন মনে হয়। আমার পক্ষে তাহা হলেও ইহা সত্য বলিয়া বিবেচনা করা হইবে। আমি সত্যি সত্যিই তাঁহাকে ভালবাসিয়াছি। আমাদের মাঝে খানিক কথোপকথন করিয়া দু’জন দু’জনার কাজে চলিয়া যাই। তাঁহার ফোন নাম্বর আমি খুবই কৌশলে সংরক্ষন করিয়া লই; রাতে ফোন করিয়া নিজের সকল কথা বলিয়া ফেলিলাম। সে যে আমার পছন্দ করিতো! সে কথা সুন্দর সরল মনে আমার নিকট শিকার করিল। অবশেষে বুঝিতে পারিলাম এই কুচ্ছিত ছেলেটিকেও পছন্দ করা কেহ রহিয়াছে.......! নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
বাহ! মনে হয় অসাধারণ প্রেমের ফেরিওয়ালা, ভাই সে প্রেম নিয়ে প্রেমের ফেরিওয়ালা হতে পারছেন? হে হে.... খুব খুব চমৎকার হল। আমরা চাই সে প্রেমের জয় হোক। যা হোক, অনেক অনেক শুভকামনা, ভোট আর আমারর পাতায় আমন্ত্রিত.......
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।