৬ই মার্চ। চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইউনুস তার হাতে ধূমায়িত চায়ের কাপ। তিনি কথা বলছেন ৪নং ই,পি আর এর উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর সাথে। মেজর সাহেব আপাদমস্তক খাটি দেশপ্রেমিক বাঙালি অফিসার। তাকে ভরষা করা যায়। তিনি গোপন মিটিংএ এসেছেন ইউনির্ফম বাদে সাধারণ পোষাকে। আগামি কাল ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দের্বা কথা দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলা যাচ্ছেনা যাই হোক না কেন মেজর আবু ওসমান দেশের পক্ষে কাজ করবেন।
২৬শে মার্চ। রাত ১.১৫মি. চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইউনুস ই,পি,আর ওয়ারল্যাস সেটে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনার মেসেজ পেলেন । আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন এমন কিছু ঘটতে পারে। তিনি দ্রুত টেলিফোনে মেজর আবু ওসমান কে ধরার চেষ্টা করছেন রিং হচ্ছে ও প্রান্ত থেকে কেউ রিসিভার তুলছে না... উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী অফিসের কাজে কুষ্টিয়া এসেছেন ২৫ শে র্মাচ সকালে। ঢাকার খবর তিনি রাতেই পেয়েছেন পরের দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই কুষ্টিয়া অফিসকে না জানিয়ে গোপনে চুয়াডাঙ্গার দিকে রওনা দিয়েছেন.... ২৬শে মার্চ। রাত ৩.৩০মি. চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ আসাবুল হক অস্থির ভাবে পায়চারী করছেন কিছুক্ষণ আগে টেলিফোনের ঢাকার খবর পেয়েছেন সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে ঢাকা শহর জুড়ে কারফিউ। তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় গুছিয়ে একটা চামড়ার এ্যাটাচী ব্যাগে ঢোকাচ্ছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করতে হবে। কোথায় যাবেন সেটা মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন তবে এই মুহুর্তে দলের কাউকে জানানো সম্ভব নয় পরে সময়মত যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন। ভোরের আলো চুয়াডাঙ্গার মাটি ছোবার আগেই তিনি বেরিয়ে পড়লেন..... ২৬শে মার্চ। ভোর ৫টা। ৪নং ই,পি,আর হেড কোয়াটার , চুয়াডাঙ্গা। উইং হাবিলদার মেজর মজিবর ওয়্যারলেসে খবর পেলেন উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান কুষ্টিয়া অফিসে নেই। তিনি সকল সৈন্যদের দ্রুত প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার নির্দেশ দিলেন। সৈন্যদের দু’দলে ভাগ করলেন বাঙালি ও অবাঙালি এবং দ্রুত অবাঙালি সৈন্যদের হল ঘরে বন্দী করে গোলা-বারুদে ভর্তি মালখানার চাবি নিজের জিম্মায় নিলেন....
২৬শে মার্চ। বিকাল ৪টা। শ্রীমন্ত টাউন হল, চুয়াডাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনসার সদস্য ও সাধারন জনগণ আসতে শুরু করেছে... উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান, ডাঃ আসাবুল হক ব্যারিষ্টার বাদল রশিদ, এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী ট্রেজারী থেকে পাওয়া অস্ত্র বেশীর ভাগ ৩০৩ রাইফেল ও গোলা বারুদ আনসার সদস্য ও যুবকদের মধ্যে বিতরণ করছেন। চুয়াডাঙ্গায় ঢোকার প্রবেশ পথ গুলিতে বড় বড় গাছ কেটে সুরক্ষিত করা হচ্ছে যাতে পাকবাহিনী সহজে আক্রমণ না করতে পারে....।
২৭শে মার্চ। ভোর ৭টা। ৪নং ই,পি,আর হেড কোয়াটার , চুয়াডাঙ্গা। উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চরম উৎকন্ঠার মধ্যেও এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করছেন কিছুক্ষণ আগে তিনি পাকিস্থানী পতাকা নামিয়ে সামরিক কায়দায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন। বাঙালী সৈন্যরা গভীর ভালোবাসায় পতাকার প্রতি অভিবাদন জানাচ্ছে। তাদের চোখে দৃঢ প্রত্যয় স্বাধীন ভূ-খন্ডের... ৪নং ই,পি,আর হেড কোয়াটার থেকে কিছু অবাঙালি সৈন্যসহ একজন পাকিস্থানী অফিসার ক্যাপটেন সাদেক পালিয়ে সোজা যাদবপুর ক্যাম্পের দিকে গেছে বাঙালী সৈন্যদের শায়েস্তা করতে। ব্যাটা জানে না বীর বাঙালী কি জিনিষ! বঙ্গবন্ধুর ৭ই মাচের্র ভাষণের পর একদম তেঁেত আছে। যাদবপুর ক্যাম্পের প্রহরী তাকে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ক্যাপটেন সাদেক সরাসরি গুলি চালিয়ে দিয়েছে...আর কোথায় যাবে সাথে সাথে ক্যাম্পের বাঙালি সৈন্যরা জাপটে ধরে একদম গণধোলাই। গুলির শব্দে গ্রামের সাধারণ জনগণ ক্যাম্পে চলে এসেছে তারাও যোগ দিয়েছে গণধোলাই কর্মসূচীতে.... সন্ধ্যায় যাদবপুরবাসী ক্যাপটেন সাদেক ও তার সাথে আসা সৈনিকদের লাশ গ্রামের শেষ প্রান্তে মাটি চাপা দিয়ে আসলো...... ব্যারিষ্টার বাদল রশিদ বর্ডার পার হয়ে ভারতে চলে গেছে আর্ন্তজাতিক গণ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কথা বলতে।
২৮শে মার্চ। রেলওয়ে টেলিফোন অফিস দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা। টেলিফোন অপারেটর ক্রমাগত চেষ্টা করছে একটা বিশেষ নম্বরে যোগাযোগের। গতকাল পযর্ন্ত লাইন খারাপ ছিল কিছু বাঙালি টেকনিশিয়ান রাতদিন খেটে দর্শনা-ভারত রেল টেলিফোন লাইন চাুল করতে পেরেছে.. চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ আসাবুল হক চেয়ারে বসে অনবরত পা নাড়াচ্ছেন অজয় দার সাথে কথা বলা জরুরী। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় এর পি এস অপরপ্রান্তে ফোন রিসিভ করলেন....
৩০ শে মার্চ। কুষ্টিয়া সদর পাক বাহিনীর দখলে আছে। যে কোন মূল্যে কুষ্টিয়া সদরকে শত্রুমুক্ত করতে হবে। উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান ও চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ আসাবুল হক মেহেরপুর মহাকুমার প্রশাসক তৌফিক ইলাহির সাথে কথা বলেছেন। তিনি সব ধরনের সাহায্যে করার জন্য তৈরী আছেন.... ঢাকা থেকে তাজ উদ্দিন আহমেদ ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলাম কে সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গার এসেছেন। স্থানীয় নেত্ববৃন্দের সাথে আলাপ করছেন যুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। যুদ্ধ কালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গাকে অস্থায়ী রাজধানী করা যায় কি না সকলের সাথে মত বিনিময় করছেন... তাজ উদ্দিন আহমেদ ব্যারিষ্টার আমীরুল সন্ধ্যায় জীবন নগরের চ্যাংখালী সীমান্ত দিয়ে ভারতের দিকে রওনা হলেন....
৩রা এপ্রিল। মদন বাবুর মোড়। জেহালা বাজার, চুয়াডাঙ্গা। কাতেব আলী এসেছেন জেহালার মোড়ে। কেরোসিন আর ব্যাটারী কিনতে। ছাপোষা মানুষ পাঁচ কন্যা আর দুই পুত্র নিয়ে তার সংসার। কেরু এন্ড কোম্পানীতে কারনীক পদে চাকরী করেন। গতরাতে তিনি ঠিকমত রেডিও শুনতে পারেননি ব্যাটারী ডাউন ছিল। আকাশ বানী অলইন্ডিয়া থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গাকে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজধানী করা হবে। দুপুরের রোদে তিনি ঘেমে নেয়ে একাকার। মাথার উপরে যুদ্ধ বিমানের শব্দ। হটাৎ বিমান থেকে বৃষ্টির মত বোমা বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। তিনি দ্রুত কেরোসিনের বোতল আর এক ডজন ব্যাটারী নিয়ে প্রায় দৌড়ে বাড়ীর দিকে রওনা হলেন...
১০ই এপ্রিল। ব্যারিষ্টার বাদল রশিদ ভারত থেকে ফোন দিয়েছেন মহাকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ আসাবুল হককে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তার কন্ঠস্বর খুব উত্তেজিত শোনাচ্ছে..আগামী ১৪ই এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গাকে অস্থায়ী রাজধানী করার। যতদ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম ও সিল তৈরী করতে হবে তাকে। এদিকে আকাশ বাণীতে খবর প্রচারের পর থেকে পাকবাহিনী ব্যাপক বোমা বর্ষণ শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গার উপর।
১৬ই এপ্রিল। চুয়াডাঙ্গা। স্থানীয় জনগণ দ্রুত শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে পালাচ্ছে। জলপাই রঙের ট্যাংক নিয়ে বিশাল পাকিস্থানী সেনা বাহিনী শহরে ঢুকে পড়েেেছ। মুক্তি বাহিনীর কাছে প্রতিরোধ করার মত অস্ত্র নেই তারা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রামের দিকে আত্মগোপন করছে। পাক বাহিনী নিরীহ মানুষের উপর গুলি চালাচ্ছে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে সন্ধ্যা নাগাদ পাকিস্থানী বাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহরের দখল নিয়ে নিল...
১৭ই এপ্রিল। বৈদ্যনাথতলা,মেহেরপুর। বিশাল আমবাগান। বাগানে অজস্র গুটি আমের সমারোহ। বাগানের মধ্যে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। মেহেরপুরের মহাকুমা প্রশাসক জনাব তৌফিক-ই-ইলাহী মহা ব্যস্ত । আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদের নাম ঘোষনা করা হবে। বেশ কয়েকদিন ধরে উপর মহল থেকে তার কাছে বার্তা প্রেরণ করা হচ্ছে একটি নিরাপদ স্থান নির্বাচন করার জন্য। ভারতীয় বাহিনীর লেফটিন্যান্ট কর্নেল চক্রবর্তীর সাথে আলোচনা করে সিমান্তবর্তী স্থানটি নির্বাচন করেছেন তিনি। ঘন আমগাছে ঢাকা বাগানে বিমান থেকেও কিছু গোচরীভূত হবে না তাছাড়া ভারত সীমান্তের অতি নিকটে অবস্থিত হওয়ায় নিরাপদও বটে। সমস্ত পরিকল্পনা করা হয়েছে অতি গোপনে। তৌফিক-ই-ইলাহী আছেন মহা চিন্তায় উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান এখনো সভা স্থলে আসেননি। তার বাহিনী নব নির্বাচিত মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। সকাল ৯টায় সভার আনুষ্ঠিকতা শুরু হবার কথা। তিনি কয়েক জন স্থানীয় আনসার সদস্যকে ডেকে নিলেন যাদের অভিবাদন জানানোর অভিজ্ঞতা আছে। ঝিনাইদহের এসডিও বন্ধু মাহবুব কে ডেকে একবার রিহার্সাল করিয়ে নিলেন । ভবের পাড়ার একটি মিশনারী হাসপাতাল থেকে কিছু চেয়্যার টেবিল ধার করে আনা হয়েছে। মঞ্চে আটটি চেয়্যার পাতা হয়েছে তার মধ্যে একটি চেয়্যার বঙ্গবন্ধুর জন্য খালি রাখা আছে। তিনি আছেন পাকিস্থানের কারাগারে। অন্য আসন গুলিতে অতিথি বৃন্দ আসন গ্রহণ করেছেন। কয়েক শত সাংবাদিক এসে উপস্থিত হয়েছেন তাদের মধ্যে বিদেশী পত্রিকার সাংবাদিকও আছেন। মাইক্রোফোনে কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তিনি প্রথমে প্রধান মন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ কে পরিচয় করিয়ে দিলেন তারপর একে একে মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের নাম ঘোষনা করছেন। প্রচন্ড করোতালিতে মঞ্চ কেঁপে কঁপে উঠছে। গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী উপস্থিত আছেন তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে নব নির্বাচিত মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির শপথ বাক্যে পাঠ করাবেন। আনসার বাহিনী নব নির্বাচিত মন্ত্রি পরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদান করছেন...
বিউগলে বেজে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের দামামা...মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকানন থেকে ইথারে ইথারে সেই সুর ছড়িয়ে পড়লো সারা বাংলায়.... র্দীঘ নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ লক্ষ মাবোনের সম্ভ্রম এর বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ । আমার পেলাম একটি স্বাধীন ভূ-খন্ড। বাংলাদেশ। জয় বাংলা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
সমগ্র গল্প জুড়ে মুক্তিযুদ্ধ -সন ১৯৭১
১৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।