মেঘলা আকাশ। বিশাল আকাশটা জুড়ে আজ মেঘের ঘনঘটা। তিল পরিমান জায়গা খালি নেই, যেখানে নেই মেঘের একান্ত আনাগোনা। নীলের সাথে মেঘ মিশে একাকার। ঠিক তেমনই ধূসর নীল সাদাটে আকাশটির মতই বকুলের মনের অবস্থা কিংবা তারও বেশী। তার সাদা মনের সীমাহীন আকাশে কষ্টের নীল মেঘগুলি উড়ছে ডানামেলে। আর দু'চোখ বেয়ে টপটপ ঝরে পড়ছে অশ্রুর শতধারা জল।
বাড়ির দক্ষিণ পাশটায় বিরাট পুকুর। পুকুরের এক কর্ণারে একটি আমগাছ। সেই আমগাছের নীচেই বসে আছে বকুল। নিঃসঙ্গ। একা একা। ভাবনার অতল সাগরে সাঁতার কাটছে সে। ধূমকেতুর মতই আবির্ভাব ঘটল তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু সাইফুলের।
''কি ব্যাপার দোস্ত,মনের মধ্যে কাল-বৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে মনে হয়?''
বকুল কোন জবাব দিল না।
সাইফুল আবার জিজ্ঞেস করল,''কিসের এত কষ্ট,আমাকেও বলবি না?''
''সব কষ্ট সব সময় সবাইকে বলা যায় না।''
''কষ্টের কথা বললে কষ্ট হালকা হয়, সেটা জানিস বোকা? সু লক্ষ্মী ছেলের মত বল।''
'' দোস্ত,পৃথিবীতে এমন কিছু কষ্ট থাকে,যা বললে কষ্ট শুধু আরও বাড়ে। হালকা হয় না কখনো সে কষ্ট।''
‘’এই! রাখতো তোর এইসব ফিলোসফিক্যাল ডায়লগ! সত্যি করে বল,’’কি হয়েছে তোর?’’
বকুল তবু নিঃশ্চুপ রইল। কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছে না তার। তার মনের অবস্থা অনুধাবন করতে পারল সাইফুল। তাই সিচুয়েশনটাকে পাল্টাবার চেষ্টা করলো। ‘’জানিস বকুল, আজ মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আর একটা গান লিখে ফেললাম। শুনবি সেই গানটা?’’- বলেই প্রতিউত্তরের আশায় না থেকেই গাইতে আরম্ভ করল.........
এক ঝাঁক পাখি;কিছু এলোমেলো স্বপ্ন
আজো উড়ে বেড়ায় খেয়ালের আকাশে,
তোমার গায়ের খুশবু;মিষ্টি কথার সুর
আমি খুঁজে পাই শীতল বাতাসে,
তুমি যত দূরেই থাকো
তবু আছো আমারি আশেপাশে,
সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই
এমনি করে তোমাকে ভালবেসে............।।
প্রজাপতি দেখি আর ফুলই দেখি
শুধু তোমাকেই মনে পড়ে,
নিশুতি রাতেও চাঁদের বুকে
তোমার হাসির মুক্তা ঝরে//
তুমি যত দূরেই থাকো
তবু আছো..............................ঐ
সবুজ ঘাসকে জড়িয়ে রাখে
যেমন ভোরের শিশির বিন্দু,
আমার ভাবনাকে আঁকড়ে রাখে
তেমন তোমার স্মৃতির সিন্ধু//
তুমি যত দূরেই থাকো
তবু আছো..............................ঐ
বকুলের কানে শুধু রেশমার মায়ের কথাই প্রতিধবনিত হচ্ছে। আর বেদনার উত্তাল তরঙ্গের মাতম চলছে সারা রিদি-সাগরজুড়ে। তাই সাইফুল কি গেয়েছে তার এক শব্দও সে শুনেনি। এমনকি তাকে পাশে বসেও থাকতে দেয়নি। তাড়িয়ে দিয়েছে সে তাকে। শুধু একটি প্রশ্নই ঘুরে ঘুরে আসছে বকুলের খেয়ালে, ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে তার অবুঝ হৃদয়টা আর ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে কোমল বুকটা,’’কে আমার জন্মদাতা বাবা? কি আমার পরিচয়?’’ ১৯ টি বসন্ত পেরিয়ে গেছে অথচ নিজের জীবনের আসল সত্যটা সে জানতে পারেনি আজ অবধি। রেশমার মা আজ অকপটে জানিয়ে দিল তাকে তার লুকিয়ে থাকা চরম সত্যটি।
‘’তুমি মেডিক্যালে চান্স পাও। ডাক্তার হও। তাই বলে আশা করো না আমার মেয়ে আমি তোমার কাছে বিয়ে দিব।‘’-এমন কথা বলার জন্য বকুলকে ডেকে পাঠিয়েছে তা ঘূণা-অক্ষরেও ভাবতে পারেনি সে। অপ্রত্যাশিত এমন কথা শুনে একেবারে নির্বাক। মাথা নীচু করে ফেলল বকুল। রেশমা-একটি মেয়ের নাম। যাকে ঘীরে দিবানিশি স্বপ্ন সাজায় বকুল। কল্পনার রাজ্যে সাজায় সাধের বাসর, সাজায় সুখের সংসার। আর তারই মা কথার জের না টেনে আরও বললো,’’প্রয়োজনে মেয়েকে কেটে টুকরা টুকরা করে নদীতে ভাসিয়ে দিব তবু তোমার কাছে দিব না।‘’ এ কথায় রীতিমত অবাক বকুল। লজ্জায় তার মুখ গোধূলীর অস্ত যাওয়া সূর্যটার মত লাল হয়ে গেছে । ‘’ কি আমার অপরাধ?’’-এমন প্রশ্ন মনের জানালায় উঁকি দিলেও মুখফুটে তা করতে পারল না বকুল। রেশমার মা আরও ক্ষীপ্র কন্ঠে বললো,’’দেখে-শুনেতো এক পিতৃ-পরিচয়হীন বেজন্মার কাছে আমার একমাত্র মেয়েকে দিতে পারি না!’’
বকুলের এবার টনক নড়লো। এ কি শুনছে সে! অভাবনীয়। অবিশ্বাস্য। কানে যেন আর শব্দ ঢুকছে না। কি একটা বলতে চেয়েও বলতে পারল না। মাথা ঘুরছে তার ভনভন করে। গায়ের হুদবুদ হারিয়ে কিভাবে যে বের হয়ে এসে এই গাছটার নীচে বসেছে নিজেই জানে না। নানা প্রশ্ন তাকে বিদ্ধ করছে। নানা বাজে খেয়াল উঁকি দিচ্ছে মনে। মনে পড়ছে অতীতের হাজারো স্মৃতি। মাকে কত জিজ্ঞেস করেছে,’’ মা,মাগো! আমার আব্বু আমাকে দেখতে আসে না কেন? আব্বু পঁচা।‘’ বকুলের মা অশ্রুসজল চোখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় জবাব দিত,’’তোমার আব্বু বিদেশ থাকে। তুমি যখন অনেক বড় হবে তখন তোমাকে দেখতে আসবে।‘’
মায়ের মিথ্যে আশ্বাসে বুক ভরে যেত বকুলের। আজ সেসব মনে করে বকুলের ঠোঁটের কোণে ম্লান হাসি ঢেউ খেলে গেল। সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে বকুল তত মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কেননা অনেক আগেই সে তার হাতের ধমনী শিরা কেটে দিয়েছে। অভিশপ্ত এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় না বকুল। একটি দিনও না। একটি মূহুর্তও না। মুক্তি চায় সে। চোখে ঝাপসা লাগছে তার সবকিছু। আস্তে আস্তে অবচেতনের দিকে চলে গেল। বৃষ্টির দু’একটা ফোটা পড়তে আরম্ভ করল। আচানক কে এসে যেন পিঠে হাত রেখে ডাকলো,’’বকুল,এই বকুল!!’’ বকুল হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। মুখ ফিরে তাকাতে চাইল। কিন্তু পারল না। মাটির কোলে ঢলে পড়লো বকুল!!!
০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪